ভালোবাসা
ভালোবাসা
দেবপ্রসাদ জানা
বস্তির সকলের ঘরের জল অরুনের ঘরের দরজার সামনে পড়ে, বর্ষাকালে অরুনের বউ বড় কষ্ট করে, বস্তির মহিলা সমিতির নেতা বানী মাসিকে বলেও কোনো সুরাহা হয়নি। অরুন এই সব ব্যাপারে খুব একটা মাথা গলায় না। সারাদিন হোটেলে সাফ সাফাই এর কাজ করে রাত এগারটার সময় বাড়ি ফেরে। বউ রাতে একটু ঝগড়াও করতে চায়, কিন্তু অরুন ভয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়ে, একটা জর্দা দেওয়া পান খেয়ে তবেই ঘরে আসে অরুন, মুখে মদের গন্ধ পেলে বউ আর রক্ষে রাখবে না। রাতে যখন আজ বৃষ্টি নামল জোরে, চেল্লামেল্লিতে অরুনের ঘুম ভেঙে গেল। সারা ঘরে এক হাঁটু জল, বউ একটা গামলা নিয়ে জল তুলে ফেলছে। ঘুমের ঘোরও তখন কাটেনি অরুনের, চৌকি থেকে এক হাঁটু জলে নেমে বুঝতে পারল না কি করবে? অরুন লাফ দিয়ে বৃষ্টিতেই বেরিয়ে পড়ল ঘরের বাইরে এত জল কোথা থেকে আসছে, বস্তির সবার চালের জলতো পড়ছেই, তবুও এত জল হওয়ার কথা নয়। অরুনদের বস্তির পেছনে একটা বড় ফ্লাট হয়েছে পাশেই, অরুন ভিজে ভিজে বোঝার চেষ্টা করছে কি ব্যপার? এর আগেও বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এত জল হয়নি। অরুন ওদের ঘরের পেছনে গিয়ে দেখল, বেড়ার ঘর, বর্ষায় বেড়া আর প্লাস্টিকের প্রাসাদে এই বন্যা বস্তিতে অরুনের বউ একাই উপলব্ধি করত, কারোর কোনো মাথা ব্যথা ছিল না, এখনো কারোর নেই, পাঁচতলা ফ্লাটের জলের পাইপ খানা নর্দমায় নামানো ঠিকই, কিন্তু জলের স্রোত এসে পড়ে অরুনদের ঘরের ভেতর। পাইপটাতে একটা বড় প্লাস্টিক বেঁধে দিল অরুন। ব্যস জলে স্তর কমতে থাকল, বউয়ের পরিশ্রম আর সহ্য হলো না অরুনের, নিজ হাতে সব জল তুলে ফেলতে তার দশ মিনিট লাগল, যেমন করে হোটেলে ঘর গুলো মোছে তেমন করে মুছে শুকনো করে, তবেই শুতে গেল দুজনে। রাত তখন তিনটে বাজে। আজ বউটা এত ভালোবাসলো এমনটা আর কোনোদিন অনুভব করেনি অরুন।
Comments
Post a Comment