বিচার চাই ধর্মাবতার-৩

বিচার চাই ধর্মাবতার-৩


রতনের স্বপ্নটা যে কি, কি করতে চেয়েছিল সে, এখনো ধরতে পারলাম না, তার ফাইলে আমি যে টুকু পেলাম তাতে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়ে ছিল সে। সে স্কুল-এ খুব চুপচাপ থাকতো। কারো সাথে বন্ধুত্ব তেমন ভাবে করতে পারে নি।  কোন মেয়ের সাথেও তার বন্ধুত্ব হয়নি। তাই এগার ক্লাসটা কলেজেই ভর্তি হলো। মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়া শোনা করে ব্যারিষ্টার হবে, রতন পড়াশোনায় ভালোই ছিল, মাথাটা খেয়েছিল গোবিন্দ, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে নিজের স্বপ্ন গুলোকে সে জলাঞ্জলি দিতে চায়নি। কলেজের সব বন্ধুরা কত গল্প করে গার্লফ্রেন্ডের নিয়ে, ফোনের সোসালে কত বান্ধবী, একটা ফোন কেনার টাকাও তার মা তাকে দিতে পারে নি, 

রাত তখন আটটা, গলির ধারে দাঁড়িয়ে আছে রতন, এই রাস্তা দিয়েই মেয়েটি রোজ যায়, গোবিন্দ সেইরকমই বলেছে, একে তুলে নিয়ে গেলেই কেল্লা ফতে, আর কারোর কাছে হাত পাততে হবে না, ফোন কেনার টাকাটা এখান থেকেই হয়ে যাবে, 

 এবার একটা ফোনের খুব দরকার তার, এই নিয়ে মায়ের সঙ্গে তার বচসা, অঙ্গনআড়ির কাজ করে শুধু পড়া খরচটা দিতেই হিমশিম খাচ্ছে মা, এটাও রতনকে কোনো কষ্ট দেয় না, বাপকে সে ছেড়ে কথা বলে না,

- কিছু দিতে পারবে না যখন জন্ম দিয়েছিলে কেন?
- জন্ম ! 
মা, বাপের মুখটা চেপে ধরে বাইরে নিয়ে গেল, রতন বেড়ার ঘরের দড়িতে ঝোলানো জামাটা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল, বাপমায়ের সঙ্গে এমন কথা মন থেকে বলতে চায়নি, রাগের মাথা মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে, তবু কেন যে তার অনুশোচনা হচ্ছে না, বুঝতে পারেনি রতন। পাড়ার সব থেকে বদমাইস ছেলে গোবিন্দ, এখন রতনের বড় শুভাকাঙ্খী, পাড়ার কাউন্সিলর পবিত্র সরকারের ডান হাত, রতনকে বলেছে একটা চাকরি তার হবেই, কদিন পাটির কাজ করা খুব দরকার।
সামনাসামনি রতনের সঙ্গে পবিত্র সরকারের এখন দেখা হয় নি। তবু তাকে ভগবানের মতো মনে হলো রতনের, একটা ফোন তার দোলতে পেয়েছে রতন, এখন বেশ কয়েকজন মেয়েদের সঙ্গে রতনের কথা হয়, ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ খুলে দিয়েছে গোবিন্দ, অনেক বান্ধবী, ভারি রসিকতা হয়, সারাদিন বেশ খোশমেজাজে কাটে, জোর করে গোবিন্দ নিয়ে এলো লেবু বাগানে, রতন বোঝেনি এমন নয়, লাইন ধরে মেয়েরা বসে আছে, ডাকছে, হাত ধরে টানছে, একটা ছোট্ট ঘরে রতনকে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, 
- নে মৌজ কর, সারারাত। ভয় পাস না, এই গীতা খুশ করে দে, যা চাইবি পাবি।
ভয় পেয়ে সেদিন পালিয়ে এলো। 
পাড়ায় বজ্জাতি করতো গোবিন্দ, পাড়ার মেয়েদের সাথেও তার সম্পর্ক বেশ গভীর। হঠাৎ গোবিন্দ তাকে বলল, 
- তোর জিএফ নেই? 
রতন সরাসরি উত্তর দিতে পারল না। অনেক কথা হলো। রতন কিছুতেই গোবিন্দর সাথে মন খুলে কথা বলতে পারছিল না, পাড়ারই একটা মেয়েকে দেখিয়ে গোবিন্দ রতনকে বলল,
- বল মালটাকে কি রকম লাগে রে তোর।
বেশ ভালো লাগত, কিন্তু রতন লজ্জা পেলো, সাহস হয়নি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে, অনেকবার চেষ্টা করেছে কিছু বলার, সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই সব গোলমাল হয়ে যায়, গোবিন্দ বলল,
- একটা বাংলা খেয়ে যা, দেখবি সব বলতে পারবি
সেদিন প্রথম মদ খেয়ে সেই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে গেলো, রতন তার মনের সব কথা মেয়েটিকে বলল, ভালোবাসার কথা, ঘরের পরিস্থিতির কথা, মায়ের কথা, বাপের কথা, 
 কষ্ট পাওয়ার গল্প 

আপনি নিজেও জানেন ও মানেন সব মেয়ে যেমন খারাপ বা হৃদয়হীনা হয় না, তেমন সব ছেলেরাও কিন্তু ধোয়া তুলশীপাতা নয়। অনেক ছেলেই কিন্তু চরম খারাপ।
আমি নিজেই একজন।
আমি হয়ত কারোর সাথে সেক্স করে ভিডিও ইন্টারনেটে দিতে পারব না, অতোটা খারাপ না।
কিন্তু অনেক ছেলেই যে এটা করছে তাতো প্রতিদিনই দেখছি।
ছেলেটা খুব ব্যাস্ত বিয়ের কেনাকাটা নিয়ে। 
মেয়েটার কোন ব্যস্ততা নেই। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘ দ্যাখে, বৃষ্টি হলে দুহাত প্রসারিত করে বৃষ্টি ধরে। তারপর সেই বৃষ্টিস্নাত হাতটা মুখে মাখে, নদীর ধারে যায়, নদী দ্যাখে। 
ছেলেটা মহাব্যস্ত জেনেও মেয়েটা ফোন করে। 
ফোন করে ভাবে, ব্যস্ত ছেলেটা কী ফোন ধরবে? ওমা! ধরলোতো।
রিসিভ করলে মেয়েটা বলল, একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
- কী কথা? 
- কী করছো? 
- বিয়ের কেনাকাটা। 
- শাড়ি? 
- শাড়ি, সাথে আরও সব। 
- কার? 
- কার আবার! ঘরে যে নতুন আসবে তার। 
- আর? 
- উফ! বললামতো সব। 
- বিরক্ত হচ্ছো? 
- না। 
- উফ! বললে কেন? 
- উফ! ঠিক আছে আর বলবোনা। তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বলো। 
- আমি জানি বিয়েটা মেয়েটার বাড়িতে হচ্ছেনা। 
- তো? কোথায় হচ্ছে জানতে চাও? 
- না না। খবরদার আমাকে বলবেনা। 
- কেন? 
- আমি যদি বিয়ের সময় হাজির হয়ে যাই! যদি ওখানে গিয়ে পাগলামী করি? যদি তোমাকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করি?
- তুমি করবেনা আমি জানি। 
- না না। আমিতো পাগলি। পাগলিরা কখন কী করে তা তারা নিজেরাও জানেনা। 
- এটাই তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা? 
- না। 
- তো? 
- আজকের পর আমি যদি তোমাকে ফোন করি তাহলে তুমি রিসিভ করবেনা। 
- আচ্ছা। 
- শোনোনা, আমি কিন্তু বারবার ফোন করব। আমার নিজের ভেতর কোন কন্ট্রোল থাকবেনা। কিন্তু তুমি ফোন রিসিভ করবেনা। আমি কিন্তু শত শত ম্যাসেজ করবো, তুমি ম্যাসেজগুলো ওপেন করবেনা। কারন ম্যাসেজ পড়ে তুমি ইমোশনাল হয়ে যেতে পারো। তোমার মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। 
- গুরুত্বপূর্ণ কথা শেষ? 
- না। আরো আছে। 
- বলো। 
- বিয়ের আগের দিন তুমি সিম চেইঞ্জ করে নিও, ঠিক আছে? 
- কেন? 
- আমারতো মাথা ঠিক থাকবেনা। আমি বারবার ফোন করবো। এরচেয়ে তোমার নাম্বার বন্ধ পেলে সেটাই ভাল। আর হ্যাঁ আমি বারবার ফোন করাতে যদি তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে কে ফোন করছে, তুমি বলবা আননোন নাম্বার, বখাটে ছেলে ডিস্টার্ব করছে। 
- হু। 
- আর শোনোনো। 
- বলো। 
- তুমি নাম্বার চেঞ্জ করলেও কিন্তু আমি নাম্বার খোঁজার চেষ্টা করবো। তোমার যে বন্ধুদের আমি চিনি তাদের কাছে তোমার নতুন নাম্বার দিওনা। আর দিলে ওদের বলে দিও ওরা যেন আমাকে তোমার কোন ইনফরমেশন না দেয়। 
- হু। 
- আর একটা কথা। কেউ কেউ তোমার কাছে বলতে পারে আমি ভালো নেই বা অসুস্থ হয়ে গেছি। তুমি কিন্তু এটা ভেবে মন খারাপ করবেনা। আমি কিন্তু ভালোই থাকবো। আর অসুস্থ বা মন খারাপ হলেইবা কী! বাবা-মা মরে গেলেও তো মানুষ বেশিদিন খারাপ থাকেনা, তাইনা? আমি হয়তো কয়েকদিন মুখ ভার করে থেকে তারপর দিব্যি সুস্থ হয়ে যাবো। তুমি একদম চিন্তা করবেনা। ঠিক আছে? 
মেয়েটা আর কথা বলতে পারেনা। সে ফোন কেটে দেয়। তার দু-চোখ বেয়ে অঝোরে জল পড়তে থাকে। 
মেয়েটা আবার ফোন করে। 
ছেলেটা রিসিভ করেনা। 
মেয়েটা আবারো ফোন করে।
ছেলেটা কস্ট পায় কিন্তু রিসিভ করেনা। 
মেয়েটা ম্যাসেজ পাঠাই, প্লিজ, একবার রিসিভ করো, প্লিজ...।
ছেলেটা ম্যাসেজ খোলার সাহস পায়না। সে জানে ঐ ম্যাসেজের মধ্যে কী লেখা আছে! 
মেয়েটা আবার ফোন করে। 
ছেলেটা ফোন কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে। 
শপিংয়ের তালিকায় যুক্ত করে, নতুন সিম!।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ