শূর্পনখা
শূর্পনখা
১
বিশ্রবা ও নিকষার কন্যা শূর্পনখা।
জন্মকালে মীনাক্ষী ও দীক্ষা,চন্দ্রকনা।
চাঁদের আকৃতি নখ বলে চন্দ্রনখা।
মাতামহী কেতুমতি,সম সুদর্শনা।
বিদ্যুজ্জিহ্বা স্বামী,দানবের গোত্রে।
কলকেয় দানবেরে,গোপনে বিবাহ।
রাক্ষস রাবণ ক্রুদ্ধ,শত্রুতার সুত্রে
দানব কুলে বিবাহ,ভ্রাতা গাত্রদাহ।
শূর্পনখা সনে তার বড় অভিমান।
অসবর্ণ বিবাহের কঠিন বিরোধ।
সম্পর্ক করিল ত্যাগ রাক্ষস রাবণ।
শাস্তি তারে দিতে গিয়ে,এল প্রতিরোধ।
মন্দোদরী বাধা দেন,তিষ্ট দশানন।
দানবকুলে আত্মীয়,করুন বরণ।
২
রসাতল জয় করে,রাক্ষস রাবণ।
ভগিনীর সঙ্গে দেখা,করিতে গেলেন।
ভগ্নীপতি বিদ্যুজ্জিহ্বা,রাগের কারণ।
আক্রমণ করে তারে,মারতে গেলেন।
শূর্পনখার কপাল মন্দ,সেইক্ষণে,
রাবণের হাতে তার স্বামীর মরন।
অকালে বিধবা হয়ে,ভারতের বনে।
বৈমাত্রেয় ভাই তার,খর ও দূষণ।
বৈধব্যকালে দীক্ষার,পুত্র আগমন।
শাম্ভূ নামে পুত্র সেই,বিধবার কোলে।
লক্ষ্মণের হাতে যার,অকাল মরণ।
পুত্রহারা শূর্পনখা,কি আছে কপালে?
শোকাতুরা শূর্পনখা, ভ্রমণের কালে।
পঞ্চবটীবনে তিনি শ্রীরাম দেখিলে।
৩
হে শ্রীরাম,রাবণের ছোট বোন আমি,
রূপে গুণে সুদর্শনা,চন্দ্রকনা সম।
আমি তব রূপে মুগ্ধ, দীপ্ত যুবা তুমি।
আমার পানিগ্রহণ,করো প্রিয়তম।
দেখো মোর কোমলাঙ্গ,লাস্যময়ী নদী।
মনোরম তুমি, ঋদ্ধ,ললিত সুন্দর।
অনুপুষ্ট কলকন্ঠ, চন্দ্রিকা কৌমুদী।
হে মানবশ্রেষ্ঠ,আমি বদ্ধ পরিকর।
ত্রিলোকেশ্বর রাবণ,জ্যেষ্ঠভ্রাতা মোর।
রাক্ষস বংশীয় আমি,কৈকসী নন্দিনী।
শিবভক্ত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা,দয়ার সাগর।
রাবণের লঙ্কাধাম, স্বর্ণ আবরণী।
কহ আর্য কথা কও,সহিছে না তর।
রক্ষকুলে জামাতার,বড়ই আদর।
৪
বৈমাত্রেয় ভ্রাতা মোর,খর ও দূষণ।
সঙ্গে আছে তারা মোর,দেবে অনুমতি।
হাসি দিয়ে রাম কহে,হে ভ্রাতা লক্ষন।
শুনেছ,চন্দ্রনখার আকুল মিনতি?
শুন নারী যেই হও,রাবণের বোন।
বিবাহিত আমি দেবী,পত্নী সীতা মোর।
তার সাথে বেইমানি!নেইতো কারণ।
না শুনে চন্দ্রনখার,কাঁপিল অধর।
ক্রোধে লাল চন্দ্রনখা,জানকীর প্রতি।
আঘাত হানিতে চায়,মাতা জানকীরে।
ক্রোধ বসে লক্ষণের,হইল দুর্মতি।
নাক কান কেটে দিয়ে,তাড়াইল তারে।
অপমানে সূর্পনখা অভিযোগ করে।
অভিযোগ শুনে খর,আক্রমণ করে।
৫
রাম লক্ষণের কাছে পরাজিত সব।
চোদ্দ হাজার সৈন্য, নস্যির মতন।
একে একে পরাজিত,করে কলরব।
নিহত রাক্ষস ছিল,অমূল্য রতন।
সুমালীর পুত্র আর নিকষার ভ্রাতা।
দুজনে জীবিত যারা,লঙ্কা পালাইল।
কহিলেন সূর্পনখা,শুনো জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।
জনক নন্দিনী সীতা,মোরে কাঁদাইল।
অপরূপ রূপ তার, রামের ঘরনী।
বনবাসে দিনকাটে,তবুও গুমোর।
চূর্ণ করো জানকীর,দাম্ভিক তরণী।
হরণ করহ বাঁধি, বিবাহ আসর।
প্ররোচিত করে বোন,রাক্ষস রাবণে।
বিভীষন বাধা দেয়,সীতার হরণে।
৬
সূর্পনখা অকম্পন,রাবণের কানে-
প্রতিক্ষণে মন্ত্র দেয়, বিবাহ করিতে।
রাজরানী হয়ে রবে,সীতা এই স্থানে।
সীতার হরণ হবে, রাবণের হাতে।
হে অপরূপ সুন্দরী,ভিক্ষা দাও ত্বরা।
ক্ষুধার্ত সন্যাসী আমি,ক্ষুধায় কাতর।
পঞ্চবটীবনে ঘুরে,হই দিশাহারা।
আর কত ঘুরিব এ, বনের ভিতর।
লক্ষণের গন্ডি পারে,হারাইল ঘর।
সীতা হরণের কালে, রাম ও লক্ষণ।
সোনার হরিণ খোঁজে,বনের ভিতর।
নানা ছলে জানকীরে,হরিল রাবণ।
মনুষ্য বানর মারে,রাক্ষস রাবণ।
সূর্পনখা জলে ডুবে,আত্মঘাতী হন।
Comments
Post a Comment