গণেশের জন্ম

 গণেশের জন্ম



স্নান ঘরে,স্নান করে,দূর্গতি নাশিনী।

নন্দী দ্বারে পাহারায়,শিব অনুগত।

আদেশ করিল মাতা,শোনো মোর বানী।

দেবদৈত্য প্রিয়জন,রাখিবে বিরত।


অসময়ে শিব সেথা,করে আগমন।

নন্দী তারে বাধা দেয়,করিতে প্রবেশ।

হাসিয়া কহিল শিব,করিব দর্শন।

তব মাতা,পত্নী মোর,দয়িত মহেশ।


মোরে কেন বাধা দাও,সামান্য বাহন।

জানো নাকি দেবীগৌরী,মোর অর্ধাঙ্গিনী 

তারকাছে যেতে কেন করিছ বারণ?

এইক্ষণে যেতে দাও,হবে প্রাণ হানি।


ভয়ে নন্দী পথ দেয়,ভেতরে যাবার।

বেঘোরে এবার বুঝি,প্রাণ যায় তার।।



শিবের ঘরনী গৌরী,রেগেই আগুন।

আদেশ অমান্য করে,সাহসের সনে।

নন্দীর দণ্ডার্হ দণ্ড, কি হবে বলুন।

দণ্ডনীয় অপরাধ,করিল কেমনে?


ক্রোধে লাল শৈবলিনী,দেখে দণ্ডবৎ।

ভয়ে কাঁপে দ্বারিনন্দী,ভুল করে চালে।

ক্ষমা করো দূর্গামাতা,দেই নাক খৎ।

এরকম কাজ আর,করিব না ভূলে।


দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বর,রবে অপেক্ষায়?

নিজগৃহে প্রবেশের,তার অধিকার।

কেমনে বাঁধিব তারে,কোন অভিপ্রায়?

দেব নয় দৈত্য নয়,সে শ্রেষ্ট সবার।


যুক্তি তার মন্দ নয়,কহে মহেশ্বর।

কেন ক্রোধ পুষে রাখো,মনের ভিতর।




উপাস্য দেবতা তার,অনুনয় করে।

কেমনে রাখিবে রাগ,দনুজদলনী।

অভিমান ছিল বটে, শিবের উপরে।

সকলের গণ আছে,সে কেন রাখেনি।


একদিন স্নানঘরে,নিমজ্জিত মন।

এমন এক রক্ষক,রবে তার দ্বারে।

শুধুই তার আদেশ,করিবে পালন।

কেমনে হইবে তাহা,বলিবে কাহারে।


হলুদ বেটেছে গায়ে,মাখিবার তরে।

খেলার ছলে পুতুল,গড়ে মহেশ্বরী।

প্রাণ দিল,শক্তি দিল,বুদ্ধি দিল ভরে।

সব গুণ তারে দিয়ে,করে দিল দ্বারি।


গণ থেকেই গনেশ নামে,সিদ্ধিদাতা।

বিশ্বজোড়া নাম তার,করিল বিধাতা।



পার্বতীর স্নানঘরে,সদা পাহারায়।

নিষ্ঠাবান গণেশের,কর্মে বড় খুসি।

নিশ্চিন্ত পার্বতী,তার পূর্ণ অভিপ্রায়।

কৈলাশের সিংহদ্বারে,বসে পূর্ণ শশী।


একদিন এলো ফের.ভোলা মহেশ্বর।

প্রবেশপথে,গণেশ কড়া পাহারায়।

অন্দরমহলে যাবে,কহে জটাধর।

মায়ের আদেশ নেই,লহ হে বিদায়।


বার বার কহে তারে,দেনা প্রবেশিতে।

কেরে তুই দ্বারে বসে,বুঝিতে না পারি।

নাবালক ক্ষান্ত হও,বলি তোর হিতে।

তিনি যদি মাতা হন,পিতা হই তোরি।


রক্তচক্ষু দেখে গণা,তবু নাহি ডরে।

পিতা হও যাই হও,ঢুকিবে না ঘরে।



কোপে লাল মহাদেব,গণেশের প্রতি।

শিবসেনা আক্রমণে,করিল আদেশ।

গৌরী পুত্র গণেশের,কি করিল ক্ষতি।

সবসেনা জোট বেঁধে,পালাইল বেশ।


অবাক হলেন শিব,গণেশেরে দেখে।

সামান্য বালক নয়,পার্বতীর ছেলে।

অত্যন্ত রাগের বসে,মারিলেন তাকে।

মস্তক ছেদন করে,দূরে দেন ফেলে।


হায় হায় গৌরীমাতা,কোথা গেলে তুমি?

গণেশের প্রাণ নিল,ভোলা মহেশ্বর।

গণেশের ধড়মাথা,ছুঁয়ে গেছে ভূমি।

একধারে মাথা আর,অন্যধারে ধড়।


শতাধিক মহেশ্বর, এত ক্রোধ মনে?

দুধের বালক জানে,আদেশ পালনে।



গনেশের অবস্থায়,জ্বলিল অনল।

বালকের ধড়মাথা,দেখিল পার্বতী।

গৌরিরক্রোধে সৃষ্টি,যাবে রসাতল।

ক্ষমা করো,বলে ব্রহ্মা,করিল মিনতি।


শান্ত হতে গৌরীদেবী,করিল আপত্তি।

দেবতারা এলো সব,করিতে মিনতি।

ক্ষান্ত হও দূর্গামাতা, ভীষন বিপত্তি।

প্রাণের বদলে প্রাণ,দেবে রাতারাতি।


ততক্ষণে হয়েছিল,শান্ত জটাধর।

অনুনয় বিনয়ের,হলো কিছু ফল।

ক্ষমা করো মহাদেবী,বলিলেন হর।

প্রাণ ফিরে পাবে করো মুণ্ডের বদল।


কথা শুনে হতবাক দেবদৈত্য গণ।

বিপদের দিনে প্রভু,এই আচরণ?



কার মুণ্ড কোথা পাবে?বলো চন্দ্রনাথ।

উত্তরে গমন করো,যদি চোখে পড়ে।

দেখিতে পাইলে আনো,করিয়া আঘাত।

তার মুণ্ড দাও তুলে,গনেশের ধড়ে।


পুত্র বলে এইক্ষণে, দিলাম স্বীকৃতি।

পৃথিবীর ঘরে ঘরে যার পূজা হোক।

অগ্রভাগে গনেশের পূজা করা রীতি।

স্বর্গ হতে পুষ্পবৃষ্টি করে দেবলোক।


ব্রহ্মার দায়িত্ব পড়ে,সেই প্রাণী খোঁজা।

স্বর্গমর্ত খুঁজে পেল,সে হস্তীর মাথা।

তাই নিয়ে ত্বরাকরি,ফিরে এলো সোজা।

গনেশের ধড়ে দিয়ে,তারপরে কথা।


আশির্বাদ করে তারে,দেবতারা সব।

গজানন নামে ডাকে,পৃথিবী মানব।



অন্যমতে গনেশের,আবির্ভাব কালে।

সিদ্ধিদাতা গনেশের মুণ্ড ছেদ হলো,

মামা শনি তার দৃষ্টি,দিয়েছিল বলে।

সেইক্ষণে হস্তীমুণ্ড শ্রীগনেশ পেলো।


গজাসুর নামে এক,হস্তী মুণ্ড ধারী

আর এক মতে পাই,কাহিনী দারুণ।

একনিষ্ট তপস্যায়,তুষ্ট জটাধারী।

বর মাগে গজাসুর,শরীরে আগুন।


আরো বর ছিল তার, ঝুলিতেই রাখা।

ভোলানাথ পেটে রবে,করিল মঞ্জুর।

স্বামীহারা গৌরী খোঁজে,শম্ভুনাথ কোথা?

শ্রীবিষ্ণুর ছলনায়,ভোলে গজাসুর।


গজাসুরের মস্তক,করিল বদল।

শিবপুত্র হস্তীমুখী,হাতির আদল।



আরো এক বর দিল,শিব গজাসুরে।

মৃত্যর পরেও তার,পূজা হবে দেশে।

সেই বর পূর্ণ হলো,গনেশের তরে।

হিন্দু শাস্ত্র মতে কত,কাহিনী বরষে।


ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর,সব দেবতারা।

বিপদে পড়েছে তারা,অসুরের চাপে।

তপস্যায় তুষ্ট করে,বর পেল যারা।

সাধারণ দেবদৈত্য,মরে তার কোপে।


বেদ-পূরাণের কথা,অমৃত সমান।

যুগে যুগে অবতার,নিয়েছে দেবতা।

মুনিঋষি দেবতারা,বর দিয়ে যান।

স্বর্গমর্ত পাতালের,হয়েছে বিধাতা।


কত নামে দেবতারা,ঘটনা ঘটায়।

অসুর রাক্ষস মরে,তার ইশারায়।


১০


ব্রহ্মবৈবর্ত পূরাণ অন্য কিছু কয়।

শিব দূর্গা পুত্র চেয়ে,বিষ্ণু পূজা করে।

এই ব্রতে তুষ্ট হয়ে, হইল  সদয়।

প্রতি কল্পে পুত্ররূপে,ভিন্ন অবতারে।


পার্বতীর কোলে এক,পুত্র জন্মাইল।

উৎসবে মাতিল তারা,আনন্দে উল্লাসে।

সূর্যের পুত্র,শনিরে, আহ্বান করিল।

শনির দৃষ্টিতে শিশু,মাথা শূণ্যে ভাসে।


পুত্রহারানো পার্বতী,শোকে মুহ্যমান।

গড়ুরের পিঠে চড়ে,শ্রীবিষ্ণু আসিল।

পুষ্পভদ্র নদীতীরে,হস্তী শিশু পান।

তার মাথা কেটে নিয়ে,সেথা বসাইল।


কত না কুকাজ,করে,বিষ্ণু ভগবান।

এক শিশু বাঁচাইতে,শিশু বলিদান।


১১


একদন্ত মহাকায় লম্বোদর গজা

বিঘ্নবিনাশক দেবতা,হেরম্ব স্মরণে।

নমো নমো গজানন গণপতি রাজা।

খর্ব স্থূলাদেহে গজা,সৌন্দর্য বদনে।


গন্ধলুব্ধ দেবতারে,করিনু স্মরণ।

জন্মের কাহিনী তারে,নানা রূপ দেয়।

বুদ্ধিসিদ্ধি তার দুই দেহ আবরণ।

শিবপুত্র বিনায়ক,সদা সবিনয়।


গজমুণ্ড বুদ্ধি শক্তি চরিত্রে বিশ্বস্ত।

একদন্ত বিদারিতা, মন্থর মনস্বী

সুতাসুত গণপতি সিদ্ধিপ্রদ স্বহস্ত ।

চর্তুভুজ গণেশায়, কন্দর্প তেজস্বী।


মুষিক বাহন যিনি,সুরলোক বাসি।

মাতঙ্গ মুখ মণ্ডল,পয়োনিধি হাসি।


ওঁ গাং গণেশায় নমঃ 



Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ