অন্ধকাসুর
অন্ধকাসুর
১
বরাহ পুরাণ' মতে, কৃতিবাস শিব
হাতির চামড়া তার, দেহের বসন।
তন্ত্রসার' শাস্ত্র মতে,অন্য এক জীব।
বাঘের চামড়া তার,অঙ্গের ভূষণ।
কৈলাসে দেবীপার্বতী,শিবের ঘরনী।
চক্ষু মুদে ধরেছিল, স্বয়ম্ভু শিবের,
অসুর নাশিনী দূর্গা, বুঝতে পারেনি
এত তেজ অগ্নি ছিল,ভিখারী শিবের।
শিবঘাম পড়ে জন্মে,বিশাল অসুর।
অন্ধ সে,অন্ধকাসুর,ভীষণ সাহস।
হিরণ্যাক্ষ বর চেয়ে, স্মরনে প্রভুর।
শিবের বরে পাইল,অন্ধক রাক্ষস।
শিবের পুত্র হলেও,হিরণ্যাক্ষ পিতা।
চরিত্রে রাক্ষস তিনি,মনেতে ক্রুরতা।
২
বরাহ পূরাণ নিয়ে, বলিব জরুর।
কৃতিবাস নাম তার, কেমনে হইল।
সে-বার অন্ধক নামে, এই যে অসুর।
মহা মাতব্বর হয়ে, মাথায় উঠিল।
অন্ধ হলেও,অসুর তিনি, প্রতিপক্ষ।
দেবগনে অত্যধিক করে অত্যাচার।
ভুতপ্রেত দেবদৈত্য, সবেতেই দক্ষ।
ইন্দ্রের সভায় বলে, স্বর্গরাজ্য তার।
ব্রহ্মার বরেই তার, হাঁক ডাক যত।
কঠোর তপস্যা করে, করেছিল তুষ্ট।
ব্রহ্মার বর পাইয়া, রাবনের মত।
দেবদৈত সকলেরে, দিয়েছিল কষ্ট।
ব্রহ্মার আশিসে তিনি, মহা বলবান।
শিবের হাতেই তার, মৃত্যুর বিধান।
৩
তিন শর্ত অন্ধকের, মরণের গন্ডি।
একমাত্র শিব-ছাড়া, মৃত্যু নাই হয়।
বর মাগে বুদ্ধি করে, এই ছিল ফন্দি।
অস্ত্রহীন মৃত্যু হবে না, সেটাই ভয়।
অন্ধকের দেহ যেন, মাটি নাহি ছোঁয়।
এক ফোঁটা রক্ত যেন, মাটিতে না পড়ে।
অন্ধক রাক্ষস তায়, হইল প্রত্যয়।
স্বর্গমর্ত পাতালের, অধীশ্বর করে।
দেবতারা স্বর্গ ছেড়ে, পালাল কৈলাশে।
স্বর্গের অপ্সরা নিয়ে, আমোদ প্রমোদ।
কামিনী ভাবিনী সহ, উল্লাস বিলাসে।
ফন্দি আঁটে মনে মনে, অন্ধক অবোধ।
শিবকে হত্যা করেই, পার্বতীকে বিয়ে।
ব্রহ্মার বরেই দম্ভ, আশির্বাদ পেয়ে।
৪
ওইদিকে দেবতারা ঘরছাড়া হয়ে।
বিপদে পড়ল মহা, দেবতারা সব।
কোথা কোথা ঘুরবেন, অত্যাচার সয়ে?
ব্রহ্মলোকে এসে তারা, করে কলরব।
একমাত্র মহেশ্বর, করবে উদ্ধার ।
এইমত বর তারে, দিয়েছিনু আমি।
কহিলেন ব্রহ্মদেব, কি কহিব আর?
ধ্যানে মগ্ন মহাদেব, উঠিবেন স্বামী?
কৈলাসে শঙ্কর শিব, বিনা আয়াসেই -
দেবতারা নিজেদের, বিপদের কথা
তাঁর কাছে নিবেদন করিল এসেই।
মহেশের গুণগান,করিল বিধাতা।
অন্ধকাসুর নিধনে অনুরোধ করে।
নহিলে দেবতা সব,বেঘোরেই মরে।
৫
স্বর্গভূমি তচনচ্, সে অন্ধকাসুর।
ভয়পেয়ে ইন্দ্রপুরী, ছেড়েছে দেবতা।
কোথা তুমি মহাদেব, সামনে অসুর।
রক্ষাকরো ভোলানাথ,তুমি প্রাণদাতা।
রাতদিন মাস গেল, চলছে লড়াই।
শিবের ও নিদ্রা ছুটে গেল সেইরুপ।
সব দেবদেবী মিলে, কিছু করা চাই।
সেইক্ষণে দেবতারা, একেবারে চুপ।
মহাদেব রুষ্ট হয়ে, ধ্বংস করে সব।
রক্তবন্যা বয়ে গেল, অন্ধকের কুল।
অসুর মহলে ওঠে, মহা কলরব।
সব রক্তপান করে, অন্ধক আকুল।
ব্রহ্মদেবের বরে সে, বলিয়ান জানে।
তৃপ্ত নাহি হয়ে লাগে, ত্রিলোক ভক্ষণে।
৬
মারমুখো অসুরটা অকস্মাৎ এসে।
দেবতাদের উদ্দেশ্যে করে হাসাহাসি।
মহাদেব তোমাদের রক্ষা করে কিসে।
বিচ্ছিরি তাচ্ছিল্য করে,আনন্দেতে ভাসি।
ওকেই কে রক্ষা করে তার ঠিক নেই!
এক্ষুনিই তোমাদের চোখের সামনে।
ওকে মেরে পার্বতীকে রানি করবই,
মহাদেব বসে হাসে, বৃথা আস্ফালনে।
অন্ধ অন্ধকাসুরের, এই আচরণে।
মহাদেব রাগে ক্রুদ্ধ হলো শেষমেষ।
যুদ্ধে আহ্বান করল, তিনি সেইক্ষণে
সাপেরা আসল ছুটে, শুনিয়া আদেশ।
নন্দী এসে,পিষ্ঠে তারে, করল ধারণ।
ত্রিশূলের আবির্ভুত, হল সেইক্ষণ।
৭
শিব অনুচরেরাও ছুটে এসে তাঁর।
পিছনে প্রস্তুত হয়ে, দাঁড়াল তখন।
শিবের সে রুদ্ররূপ, দেখিব আবার।
বাজল শিঙ্গা-দুন্দুভি- যুদ্ধের গাজন।
নীল নামে অনুচর মায়াবলে এসে।
হাতির রূপ অমনি করল ধারণ।
অন্ধকের অনুচর, কম যায় কিসে?
শুঁড়ে ধরে আছড়াবে, বীরের মতন।
শিবে পরশ করার আগে অবরুদ্ধ।
সিংহরূপে বীরভদ্র পড়ল ঝাঁপিয়ে।
শুরু হল হাতি সিংহে ঘোরতর যুদ্ধ।
সিংহ হাতির লড়াই, পৃথিবী কাঁপিয়ে।
রাগ-অপমান লয়ে, সে অন্ধকাসুর-
শিবের আঘাত সয়, অচর অঙ্কুর।
৮
অন্ধকাসুরের রক্ত, মায়ার বাঁধনে।
বহিল রক্তের ধারা, শিবের ত্রিশূলে।
ভূমি স্পর্শ নাহি করে, ধরে দেবগণে।
অতিদর্পে অন্ধকের, প্রাণ গেল চলে।
শান্ত হলো মহাদেব, ক্রোধ প্রশমিত।
জয়ধ্বনি করে সব,'কৃত্তিবাস' নামে
নব-নাম পেয়ে শিব, হলো বিগলিত।
হস্তীচর্ম পিঠে নিয়ে, নন্দী চলে বামে।
অন্ধকের জন্ম নিয়ে,নানা মত আছে।
সব মতই শাশ্বত, আমি মনে করি।
পূরাণেই সব কথা, লিপিবদ্ধ আছে।
ভুল যেন নাহি হয়, সেই ভয়ে মরি।
কৃত্তিবাসী' মহেশ্বর সহজ সরল।
রেগে গেলে ত্রিনয়নে, দেখেছি অনল।
Comments
Post a Comment