বশিষ্ঠ
"মৃত্যু সবার জন্য পূর্ব নির্ধারিত"
-
"সত্য যুগে এক বার বশিষ্ঠ মুনি বিশাল এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলো। সেই যজ্ঞে স্বর্গ মর্ত্যের সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিলো। সেই যজ্ঞে চৌদ্দ ভূবনের ঋষিগণ, মুনিগণ ও সনাতন ধর্মের মহাজনরা সবাই আসতে শুরু করে।
-
সেই সময় যমরাজাও এই যজ্ঞে আসেন, তবে তিনি প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার সময় দেখেন একটি টিয়ে পাখি সেই ফটকের উপরে বসে আছে এবং তিনি একটু ভালো করে পাখিটিকে দেখলেন। টিয়ে পাখিও যম রাজাকে দেখলো এবং এও দেখলো যে, যমরাজা তারদিকে তাঁকিয়ে কি যেনো ভাবছে।
-
এতে পাখিটির অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। কারন পাখিটি জানে যমরাজা যার দিকে দৃষ্টিদেয় তার মৃত্যু অনিবার্য। পাখিটি দুঃখিত হয়ে তার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
-
এই সময় পাখিটিদের ইষ্ট দেবতা গরুর পাখিও এই অনুষ্ঠানে আসতে ছিলো। টিয়ে পাখি গরুরদেবকে দেখে তার চরণে উড়ে এসে বসলো এবং তাকে আসন্ন মৃত্যুর থেকে রক্ষা করার জন্য গরুরদেবের নিকট অনুনয় বিনয় করতে লাগল।
-
গরুরদেব তাকে রক্ষা করার জন্য পাখিটিকে তার পিঠে চরিয়ে ভুবর্লোকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে অনেক উপরে উঠার জন্য উড়ে গেলো।
-
ভুবর্লোকে গিয়ে দেখে তার পিঠে বসা পাখিটি নেই। গরুরদেব ধ্যান করে জানতে পারলেন যে, টিয়ে পাখিটি পনর হাজার মাইল উপরে উঠার সময় সে বায়ুর অভাবে মৃত্যু বরণ করেছে।
-
গরুরদেব দুঃখিত হলো। গরুরদেব যখন সেই যজ্ঞে যমরাজার সাথে দেখা হলো, তখন তিনি যমরাজাকে প্রশ্ন করলেন,''হে যমরাজ। আপনি বলুন, এখানে আসার সময় ঐ ছোট্ট টিয়ে পাখিটির দিকে কেনো অপলক তাকিয়ে ছিলেন।"
-
তখন যমরাজ হেঁসে হেঁসে বললেন, ''ঐ টিয়ে পাখিটিকে দেখে আমি ভাবতে ছিলাম যে, ওর মৃত্যুহবে পনেরো হাজার মাইল উপর আকাশে কিন্তু ও এই গেটের উপর এখনও কি করছে।"
-
এইগল্প থেকে আমরা বুঝলাম আমাদের মৃত্যু নির্ধারিত হয়ে আছে আগে থেকেই তাই উদ্ধিগ্ন হয়ে লাভ কি?
-
মানুষ তার পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে তার আত্মা এই জনমে কোন বিশেষ দেহ লাভ করে এই ভাবে।
-
আত্মা জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জন্ম-মৃত্যুর চক্রে বারবার দেহ পরিবর্তন করতে থাকে।
-
সামাজিক ভাবে আমরা মানুষ চিড়িয়াখানার বাঁদরের মত লাফালাফি করি। কারও মৃত্যু হলে কাঁদি, জন্ম হলে আনন্দ করি। আমরা স্বীকার করি না ভগবানের ইচ্ছার ফলে এ জগতে সব কিছু সৃষ্টি ও ধ্বংস হয়।
-
আমরা আত্মীয় স্বজনের বিয়োগে ভীত অথবা শোকান্বিত হই। বিশেষ করে বৃদ্ধকালে মৃত্যু ভয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মৃত্যুকে অস্বীকার করার বৃথা চেষ্টা করি।
-
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
-
''জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যু র্ধ্রুবং জন্ম মৃত্যুস্য চ''।
(গীতা ২/২৭)
অর্থাৎ, যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী।
-
ত্রিকালজ্ঞ বংশীদাস বাবাজী তার পূর্ব নির্ধারিত মৃত্যুর কথা জেনে, বর্ষাকালে নৌকা করে তার নিজগ্রামে ফিরে আসার সময় গান বেধেঁছেন,
-
''যার মৃত্যু যেখানে,
নাও বাইয়া যায় সেখানে।।"
Comments
Post a Comment