আর একটা পালকের মৃত্যু

আর একটা পালকের মৃত্যু 
দেবপ্রসাদ জানা

গৃহস্থের ঘর থেকে মৃতদেহ চলে গেলে সকলেই
যেমন বানপ্রস্থে যাওয়ার আমন্ত্রণ পায়।
শুধু কয়েকজন ঋণগ্রস্ত বোকা সৎ মানুষ চৌকাঠে
দাঁড়িয়ে মৃতদেহের চলে যাওয়া দেখে, -
পৃথিবীর সব থেকে বড় কবির কলম জেগে ওঠে।
ওদের চোখের চারপাশের পেশীগুলো টান টান হয়ে যায় অজান্তেই - 
ওরা নেশাখোর মাতালের মতন হুমড়ি খেয়ে বলে- 
উঃ কি ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গ মৃত্যু।
সোনালি সুতোর ফাঁস দিয়ে দিয়ে- 
বাঘবন্দী খেলার ছক, মস্তিষ্কের অন্ধকার উপত্যকায়, যেখানে তার চিহ্নিত উপহাসে,
ভেসে আসে- মৃত্যু বড় নিষ্ঠুর শব্দ।
একটা সর্বগ্রাসী ক্ষুধা।
মৃত্যুকে ভয়ানক এক চিত্রের মত করে, বেসাতি।
প্রদীপের তেল ফুরিয়ে আসার আগে-
জোর করে নিভিয়ে দেওয়া আরো ভয়ানক।
যদি শুধু ঝরা পালকের প্রতিশব্দ হয়
এক নমনীয় হিমজা আলোর  চপল ইশারায়,
আমোদিনী শিউলির বন আর ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে পলিগ্যামী-পাঠশালায়।
ছেনাল হাওয়ার বেলেল্লা এক্কা-দোক্কা খেলার,
অগোচরে অবিচ্ছিন্ন অরিগ্যামী,
ছবি আঁকে ক্যানভাসে-
সেই আশ্চর্য হিম অন্ধকারে জেগে থাকে, 
পালকের নীল সাজঘর। 
সাজঘরে শিউলি চোঁয়ানো আলোয়, 
হা-নগ্ন একা সে পাগলিনী,
অন্ধকারে জেগে থাকে শরীরি অপেরা। 
ঘরময় বেওয়ারিশ পালকের অসতর্ক ওড়াউড়ি অনায়াসে ভাসে- পালকের শেষ নিঃশ্বাস।
আলো-আঁধারি ভোরের বাগানে আলোরীণায়,
একা একা শিউলি কুড়োয় পালক। 
তার কিশোরী শরীরে একটু একটু করে ফুটে ওঠা,
নম্র কুসুমকলির অমল আভাস। 
সোঁদামাটির নাভি জুড়ে তার অপরূপ স্থাপত্য। স্থাপন ও যাপনে বিভাজিত।
আলতো সেজে ওঠে কুড়োনো শিউলির সাদায়।
প্রতিটা মিথুনমুদ্রার সোহাগী জ্যামিতি। 
ওর বুকের গহন থেকে দলা দলা লজ্জা আর ভয়,
একটা চুপি চুপি সুখ কেমন আলতো চারিয়ে যায়,
শরীরের প্রতিটা রক্ত-নলির আনাচে-কানাচে।
যখন জোছনা পোয়াতি রাতের পেট খসিয়ে, 
একটা বেজন্মা ভোর জন্ম হয় আতঙ্কের।
যেকোনো সদ্যজাতর মতোই উদোম, চঞ্চল 
অথচ মোহময় তার নরম গোলাপী অবয়ব।
শিউলি বনে কুয়াশিত সেই ভোরে, 
প্রত্যন্ত কুসুম আলোর অবকাশে 
অবলীলায়িত লীলার সব অবৈধ ছবির 
নীলাভ শীৎকার জুড়ে জুড়ে...। 
সারারাত পালকের নরম উষ্ণ রোয়া গুলো
ছিঁড়ে ছিঁড়ে সোহাগ রেখে দেয় কাঁচি ছুরির পাত্রে।


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ