বেদ পুরানে নারী শিক্ষা

বৈদিকযুগে নারী শিক্ষা

দেবপ্রসাদ জানা

নারী শিক্ষার জন্য অন্য কোনো প্রমাণের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। 

পুরানে আছে সমস্ত ঋষিদের মধ্যে যারা বেদ সংকলন করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রায় চল্লিশজন ঋষিক বা মহিলা ঋষি ছিলেন।  সেই ঋষিকরা যারা ঋগ্বেদে অবদান রেখেছেন।

এটি "প্রমাণ" যা মহিলাদের শিক্ষা সম্পর্কে যে কোনও যুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্রাম দিতে পারে। 

এমন নারীদের যথেষ্ট জ্ঞানী বিবেচনা করা হতো।  

গার্গী, মৈত্রেয়ী ইয়ামি, লোপামুদ্রা, উর্বশী, অদিতি, ইন্দ্রাণী, লোপামুদ্রা, অপালা, কাদ্রু, বিশ্ববা রা, ঘোষা, জুহু, বাগঞ্জিনি, পৌলমি, যমী, ইন্দ্রাণী, সাবিত্রী, দেবযানী, নোধা, গৌপায়না, অস্তৃনী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এখন নারীদের শিক্ষার অধিকার ই না থাকে তাহলে তাঁরা বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা হলেন কি করে!

পৃথিবীর সকল দেশে বিশেষত যেসকল জায়গায়

শিক্ষার হার কম অথবা মানুষ অর্থনৈতিকভাবে

পশ্চাদপদ সেখানে এই ধরনের ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীরা

নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে এই ধরনের

কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হল

সাধারন মানুষকে সত্যটা জানতে না দেয়া।

বৈদিক যুগ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম।

মহর্ষি গৌতমের স্ত্রী অহল্যা ছিলেন তাঁর ছাত্রী, 

মহান ঋষিদের প্রায় সব পত্নীই  ছিলেন যারা সমানভাবে বিদ্বান হয়েছেন। যজুর্বেদ তার একটি শ্লোকে বিশেষভাবে বলেছে যে একজন বিদগ্ধ নারীকে শুধুমাত্র একজন সমান বিদগ্ধ পুরুষের সাথে বিয়ে করা উচিত। বিষয় হল অধিকাংশ মহিলারা রাজ্যের শাসক ছিলেন না বা ব্রাহ্মণদের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন ছিল না। 

ফলে তাদের শিক্ষা সম্পর্কে খুব কম জানা যায়।

শিবের ভক্ত মহানন্দের নিজস্ব গুরুকুল ছিল যেখানে তিনি সঙ্গীত ও নাচ শেখাতেন। কুন্তী ঋষি দূর্বাসার ছাত্রী ছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকে যে কোনো দেবতা থেকে পুত্র লাভের জ্ঞান লাভ করেছিলেন। দ্রৌপদী সমস্ত গ্রন্থে পারদর্শী ছিলেন এবং প্রায়ই পাণ্ডবদের উপদেশ দিতেন। মোদ্দা কথা হল, এখানে রয়েছে প্রচুর নারী এবং নারী শিক্ষার উদাহরণ। 

এটা ঠিক যে আমরা সর্বদা রাম এবং কৃষ্ণ ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত পাঠ্যগুলিতে মনোনিবেশ করেছি এবং তাও আমাদের শোনা গল্পের উপর ভিত্তি করে এবং আসল প্রামাণিক পাঠ্য নয়। কিন্তু আপনি যত বেশি সূক্ষ্ম বিবরণ সম্পর্কে জানতে পারবেন, তত বেশি আপনি বড় ছবি দেখতে শুরু করবেন।

অর্থাৎ নারীরা বেদ পড়ে ব্রহ্মবাদিনী হয়েছেন, যজ্ঞের মন্ত্র শিক্ষা পেয়ে যজ্ঞ করেছেন এবং সন্ন্যাস গ্রহন করেছেন।

মহাভারতে ১২.৩২০ শ্লোকে সুলভা নামক একজন বিদুষী ব্রহ্মবিদ্যা অর্জনকারী নারী ঋষির কথা পাওয়া যায় যিনি এতই জ্ঞানী ছিলেন যে ওই সময়ে তাঁকে বিয়ে করার মত কোন যোগ্য পুরুষ ই পাওয়া যায়নি।

মনে আছে রামায়ণে যখন শ্রীরাম তাঁর বনবাসের খবর নিয়ে কৌশল্যার গৃহে গেলেন তখন কৌশল্যা কি করছিলেন?

"অগ্নিং জুহোতি স্ম তদা মন্ত্রবৎ কৃতমঙ্গলা"

অর্থাৎ বেদমন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করছিলেন। (বাল্মীকি রামায়ণ ২.২০.২৪-২৫)

প্রাচীনকালে পিতা ও ভ্রাতাদের সাথে কন্যাদেরও ও উপনয়ন হতো, পৈতা পরত

শতপথ ব্রাহ্মণ বলছেন, "অধ্যাপনঞ্চ বেদানাং সাবিত্রীবচনং তথা..."

অর্থাৎ শুধু পড়াই নয় বরং ওই সময় নারী জ্ঞানীগণ বেদ অধ্যাপনার কাজ ও করতেন! নারী ব্রহ্মচারীগণ মূলত নারী শিক্ষিকাগণের নিকটই গুরুকুলে পড়াশোনা করতেন।

শতপথ ব্রাহ্মন ২.৬.২.১৩ তে দেখা যায় নারীগণ যজ্ঞে বেদের বিখ্যাত মহামৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র পাঠ করছেন।

উত্তররামচরিতমানস এর ২.৩ এ পাওয়া যায় ঋষিকা অত্রেয়ী বলছেন, "এই অঞ্চলে অগস্ত্যসহ অনেক বিখ্যাত মহর্ষি আছেন। আমি মহর্ষি বাল্মীকির আশ্রম থেকে এখানে এসেছি তাঁদের কাছ থেকে বেদ অধ্যয়ন করতে।"

অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্রের ৩.৮.১০.১৪ তে বৈদিক উপনয়ন, গুরুকুল পাঠ শেষ করে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায় নারীদের।


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ