বজ্র
ইন্দ্রের বজ্র
দেবপ্রসাদ
দেবতারা জগতের কল্যাণকামী ও ঈশ্বরপরায়ণ। দানব বা অসুররা নিজেদের কল্যাণ ছাড়া আর কারো কল্যাণ বোঝে না; তারা দেহ-সর্বস্ব, ভোগ-সর্বস্ব। দেবাসুরে যুদ্ধ চিরন্তন। অসুররা কখনো কখনো প্রবল হয়ে সাময়িকভাবে দেবতাদের পরাজিত করলেও পরিণামে ঈশ্বরের ইচ্ছায় দেবতারাই বিজয়ী হন। দেবতাদের জয়ে জগতের কল্যাণ, আর অসুররা প্রবল হলে মহা অকল্যাণ। তাই জগতের কল্যাণকামীরা সর্বদাই দেবতাদের বিজয় কামনা করে থাকেন।
পুরাকালে কালকেয় নামে একদল অতি দুর্ধর্ষ দানব ছিল। তারা বৃত্রাসুরকে অধিপতি করে চতুর্দিক থেকে স্বর্গরাজ্য আক্রমণ করল। ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতারা যুদ্ধ করতে এলেন, কিন্তু, এই অমিতবিক্রম বৃত্রাসুর বা কালকেয়দের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠলেন না। দেবগণ সর্বত্র পরাজিত হতে লাগলেন।
তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা ব্রহ্মার আরাধনা করলেন। ব্রহ্মা তুষ্ট হয়ে বললেন, "বৃত্রাসুর মহা শক্তিমান। তাকে তোমরা সহজে বধ করতে পারবে না। দধীচি বলে একজন মহর্ষি আছেন; তোমরা সকলে মিলে তাঁর আশ্রমে যাও, তাঁকে প্রসন্ন করো। প্রসন্ন হয়ে তিনি যদি নিজের অস্থি দান করেন, তাহলে সেই অস্থি দিয়ে অস্ত্র নির্মাণ করাবে। একমাত্র সেই অস্ত্রেই বৃত্রাসুরের মত মহাবলকে নিহত করা সম্ভব। দধীচি অতি উদারহৃদয়; তোমাদের মনোকামনা পূর্ণ হবে।"
পুণ্যেতোয়া সরস্বতী নদী পার হয়ে দেবতারা দধীচি ঋষির আশ্রমে উপনীত হলেন। দধীচির আশ্রমে শান্তি ও আনন্দের পরিবেশ, দেবতারা আশ্রমে অপরূপ শ্রী এবং তন্মধ্যে দিব্যকান্তি দধীচিকে দেখে মুগ্ধ হলেন ঋষি-সমীপে উপনীত হয়ে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাঁর চরণ-বন্দনা করলেন। দধীচির কাছে দেবগণ তাঁদের প্রার্থনা জানালেন। বললেন
"বৃত্রাসুরকে কিছুতেই দমন করা যাচ্ছে না। ব্রহ্মা বলেছেন আপনার অস্থি-নির্মিত অস্ত্র ছাড়া আর কোন অস্ত্রেরই শক্তি নেই যে বৃত্রাসুরকে বধ করে।"
দধীচি হাসিমুখে বললেন, "আমার অস্থি পেলে যদি আপনাদের উপকার হয়, আমি সানন্দে অস্থি দান করব।" দধীচি ধ্যানস্থ হয়ে দেহত্যাগ করলেন। দেবগণ তাঁর অস্থি নিয়ে এসে অস্ত্র নির্মাণ করালেন। অস্ত্রটির নাম বজ্র। ইন্দ্র বজ্র পেয়ে দেবতাদের নিয়ে অসুরগণ-বেষ্টিত বৃত্রকে আক্রমণ করলেন। অসুররা প্রচণ্ড বিক্রমে প্রতি-আক্রমণ করল। তাদের প্রভাব সহ্য করতে না পেরে দেবতারা পলায়ন করলেন।
ইন্দ্র প্রথমে বৃত্রাসুর এবং কালকেয়দের এই দুর্জয় পরাক্রম প্রকাশে সাহস হারিয়েছিলেন। পরে নারায়ণের কৃপায় সাহস ফিরে পেয়ে বৃত্রাসুরের ওপর বজ্র নিক্ষেপ করলেন। বৃত্র বজ্র প্রহারে নিপাতিত হল।
দেবরাজ ইন্দ্র বৃত্রকে বজ্রের প্রহারে পড়ে যেতে দেখেও বিশ্বাস করতে পারলেন না যে, সে নিহত হয়েছে। রুদ্ধ হয়ে এখনি সে প্রতি-আক্রমণ করবে ভেবে ভয় পেয়ে জলের মধ্যে প্রবেশ করে লুকিয়ে ছিলেন। এতেই বোঝা যায় বৃত্রাসুর কতখানি শক্তিশালী ছিল, আর যে অস্ত্রে সে নিহত হল, তার শক্তিই বা কত প্রচণ্ড।
বৃত্রাসুরকে নিহত হতে দেখে কালকেয়গণ সমুদ্রের ভেতর আশ্রয় নিল। দেবতারা পরে তাদের যুদ্ধে নিহত করেন।
Comments
Post a Comment