কুরুক্ষেত্র

কুরুক্ষেত্র

সঞ্জয় কহিছে ধৃতরাষ্ট্রে
বেজে উঠল কৃষ্ণের শঙ্খ পাঞ্চজন্য-
ভীষ্ম শঙ্খে ফুঁ দিয়ে অপেক্ষায় 
রথে রথে উড়ছে রঙিন ধ্বজা 
দামামা বাজলো।
হাতে হাতে তোমর শক্তিশেল 
গদা বল্লম ভালা,
অর্জুনের স্কন্ধে গাণ্ডিব -
আঠারো অক্ষোহিনী সেনার উল্লাস 
শত শত ঘোড়ার ক্ষুরের গর্জন 
রথের চাকার ক্রন্দন, হস্তীর হু হুঙ্কার -
সারি সারি সৈন্যের গুঞ্জন দুর্যোধনের উল্লাস -
শকুনির মনে প্রতিশোধের আগুন।
নিরানব্বই ভ্রাতার বলিদান
কুরুক্ষেত্রের আকাশে কালোমেঘ
উড়ন্ত ধুলোর দুরন্ত প্রবাহ
ভীমের বুকে দ্রৌপদীর অপমান
যতুগৃহের আগুন ডাকছে, 
বারো বছরের বনবাস 
এক বর্ষ যাবৎ অজ্ঞাতবাস
কালকুটের জ্বালা, কর্ণের কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত 
সব কুরুক্ষেত্রে এসে জড়ো হয়েছে
আগুনের ফুলকি ছুটছে ঘোড়ার ক্ষুরে ক্ষুরে।
অর্জুন মাথা নত করে কৃষ্ণের সম্মুখে 
হে কৃষ্ণ, কি করছি আমি? কাদের বধিব যুদ্ধে?
অস্ত্র গুরু দ্রোণাচার্য, পিতামহ ভীষ্ম,
শতভাই সহ দুর্যোধন, এরা সব আপনার।
আপন রক্তধারা কি রূপে বধিব চক্রধর?
হঠাৎ উঠিল ঝড় 
কালো মেঘের আড়ালে বিদ্যুতের চমক
মেঘের কুণ্ডলী এসে প্রবেশিল কৃষ্ণের শরীরে
দ্রুত বেড়ে চলেছে তার দেহ ভীষণ দ্রুত
হাজার হাতে, হাজার অস্ত্র, এ যে মহাকাল।
আকাশ প্রমান শরীরে অগ্নিসম তেজ
কুরুক্ষেত্র জুড়ে সুদর্শন চক্রের দাপট
চক্কর দিচ্ছে অনবরত,
সব শেষ সব মৃত এক নিমিষে
রক্তাক্ত কুরুধাম, বইছে রক্তনদী স্রোত
কি আশ্চর্য কি আশ্চর্য অবাক অর্জুন
নিঃস্পলক চোখে আকাশপানে তার দৃষ্টি
কোথা থেকে এলো এ শক্তি? মহাকাল -
ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ দুর্যোধন - সব শব।
অগ্নি দগ্ধ অগ্নিবাণে, 
মুণ্ডহীন অস্ত্র তোমরে, শক্তিশেলে বিদগ্ধ।
লক্ষ কোটি অধর্মের লাশ, প্রাণহীন, 
একা ভীষ্ম পাহারা দেন, নিঃস্তব্ধ
রক্ত ঝরা লাল কুরুক্ষেত্র।
হে পার্থ, দেখো, দেখো একবার চর্তুদিকে
সব মৃত, ওই যে দেখেছিলে বিস্তৃত কুরুক্ষেত্রে
লক্ষ লক্ষ শয়ে শয়ে অজুতে অজুতে 
তোমার সম্মুখে, সব মৃত। 
সঞ্জয় কহিছে ধৃতরাষ্ট্রে। 

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ