Posts

Showing posts from September, 2022

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৬

 বনপর্ব-৪৬ যেথা যাবে যেই ভাবে, দেশের বাহিরে। চিনিবে না কেউ সেথা তোমরা পাণ্ডব। ধর্ম কর্ম সব হবে, ফিরিবে অচিরে। ন্যায়কার্যে ন্যায় ধর্মে, রবে পরাভব। এই বলে ধর্মরাজ বাতাসে মেলায়  অরণী মন্থের কথা ভোলেনি পাণ্ডব। হাতে করে পাঁচজনে ফিরিল বেলায়। ব্রাহ্মণের হাতে দিল, মিটে গেল সব। পাঁচভাই ফিরে গেল নিরাপদ স্থানে। বনপর্ব শেষ করে যাইবে অজ্ঞাতে। পরামশ্র চাই কিছু আপনার সনে। গোপনে নির্জনে সব,বসে এক সাথে। কোথায় কিভাবে রবে একটি বছর। চিনিতে পারিলে কেউ,জেনে যাবে চর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৫

 বনপর্ব-৪৫ যারে তুমি মনে করো,তোমার অধীন। একজন ফিরে পাবে, কহ কারে নেবে? নকুলেরে পেতে চাই, তারে দিয়ে দিন। সব ভাই ছেড়ে কেন, ও জীবন পাবে? মাদ্রী মায়ের স্মৃতিও রবে মোর সনে। কুন্তী মায়ের দুলাল আমি আছি বলে। ধন্য যুধিষ্ঠির তুমি খুশি মনে মনে, ধর্ম আমি ধর্মরাজ, পিতা এক কালে। ইচ্ছামত বর চাও,তা কি নেবে বলো? মনোবাঞ্ঝা পূর্ণ হবে, মুহূর্তের পর। বার বছরের শেষ, বনবাস গেলো। অজ্ঞাতবাসের দিন, একটি বছর। চিনিতে না পারে কেউ একটি বছরে। অধর্মের পরাজয়, হবে ঘরে ঘরে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৪

 বনপর্ব-৪৪ অধর কাঁপিছে ভয়ে কি কহিব মাকে? চারপুত্র তার আর, নেই ধরাধামে। অকালেই চলে গেছে, বীর বলো যাকে, অবলা নরম তৃণ, মূর্ছা যাবে ভ্রমে। পৃথিবীর থেকে ভারি সকলের মাতা। বাতাসের চেয়ে দ্রুত, মানুষের মন। আকাশের থেকে উঁচু,জন্মদাতা পিতা। তৃণের সংখ্যার থেকে,চিন্তা আগমন। এই জীবনে সুখী কে? যার নাই ঋণ। আশ্চর্য এমন কি টা, এই পৃথিবীর। মরণ আছে জেনেও, চায় চিরদিন- বেঁচে রবে আজীবন, তাতেই অস্থির। খুশি হয়ে যক্ষ কহে, ওহে যুধিষ্ঠির। এই চারে বেছে নাও, এক মাত্র বীর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪৩

 বনপর্ব-৪৩ অযথা ওদের প্রাণ কেন নিলে কাড়ি? অবাধ্য অশিক্ষার যে, ফল এই রূপ। শোনেনি আমার কথা,এত বাড়াবাড়ি। মরণের ফল ওরা, ভোগে অনুরূপ। নীরস হইল কণ্ঠ স্বর নাহি সরে। যক্ষের বিকট কণ্ঠে,ওষ্ঠাধর কাঁপে। মরিল সকল ভাই,প্রশ্নের উত্তরে। কেমনে সহিবে দুঃখ,দেহমন কাঁপে। পৃথিবীর থেকে ভারি বলতে হবে কে? উচ্চতায় দীর্ঘ বলো,কেবা হতে পারে? বাতাসের থেকে দ্রুত, চলতে পারে কে? তৃণের চাইতে সংখ্যা, বেশি চরাচরে? এই কয়টি প্রশ্নের,করিও উত্তর। ভয়ে কেন কাঁপিতেছে তোমার অধর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪২

 বনপর্ব-৪২ কেগো তুমি দেবদৈত্য নয় কি অসুর। চারভাই মৃত কেন, বলিতে কে পারো? হে বনদেবতা শোনো, আছ কত দূর? মহাবীর অর্জুনের প্রাণ নাশ করো? কি জবাব দেবো মাকে, কি কহিব তারে? নয়নের মনি তার, আর নাই ভবে? একা আমি ফিরিয়াছি,সব শেষ করে। এতে মোর মাতা কিগো আর বেঁচে রবে? দৈবের বানী শুনিল প্রথম পাণ্ডব। কিছু প্রশ্নের উত্তর,দাও দয়া করে। পুকুরের জল তুমি নিয়ে যাও সব। নইলে মরণ হবে, পুকুরের ধারে। কহিল যুধিষ্ঠির তা,লুকানো দেবতা। আপনার প্রশ্ন গুলি,কিসের বারতা?

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪১

 বনপর্ব-৪১ বহুক্ষণ চলে গেল দীঘি কত দূর? সহদেব যাও দেখো কি করে নকুল। পাশেই তো পুষ্করিনী কেন গেল দূর? সহদেব গেল বটে সেও করে ভুল? চিন্তার পাহাড় জমে কহে যুধিষ্ঠির। দুইভায়ে মিলে কোথা কাটিছে পুকুর? যাও দেখো ভীম ত্বরা, হয়েছি অধীর। চারভাই একে একে, গেল কত দূর? অগত্যাই যুধিষ্ঠির,শেষ কালে যায়। নিকটেই দীঘি পারে পাইলেন সবে। মৃত কেন চার ভাই কি করিবে হায়? দীঘির জলেতে বুঝি বিষ মেশা হবে। দৈব্যবানী হলো ফের শোনে ধর্মজ্ঞানী। প্রশ্নের উত্তর দাও,তবে পাবে পানি।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৪০

 বনপর্ব-৪০ পাণ্ডবেরা সবে মিলে ধরিবে হরিণ। ছুটতে ছুটতে সব, পরিশ্রান্ত হলে। পিপাসায় বুক ফাটে,কণ্ঠস্বর ক্ষীণ। পাচঁজন শ্বাস নিতে,বসে বৃক্ষতলে। ত্বরা করি দীঘি ঘাটে চলিল নকুল। পাশে ছিল জলাশয়, নামিল সত্বর। দৈব্যবানী হলো সেথা,ছাপিয়া দুকুল। তিনটি প্রশ্নের দাও,সঠিক উত্তর। তারপরে যতখুশি জল খাও এসে। না দিয়ে উত্তর হেথা যদি জল খাও। মরণের কোলে যাবে,বুঝে নিও শেষে। আদেশ অমান্য করে, মৃত্যু ফল পাও। তৃষ্ণায় কাতর এবে, কন্ঠ জল চায়। নকুলের মৃত্যুটাকে ,কে মানিবে হায়।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৯

 বনপর্ব-৩৯ বারটি বছর গেল, নানা উচাটনে। পাণ্ডবেরা দৈতবনে,শেষ দিন রবে। তপস্বী ব্রাহ্মণ এক,ছিল সেই বনে। অরনী মন্থের খোঁজ,তারে দিতে হবে। গাছের ডালেতে ঝুলে, ছিল বহুদিন। সারঙ্গ হরিনী এক, পিঠ ঘষেছিল। সিঙের শাখায় সেঁটে, পালাল হরিণ। অরণী মন্থের নাম, কেউ শুনেছিল? অদ্ভুত ঘটনা সব ,পাণ্ডবের সনে? এমন সামান্য কাজ, কি লাগে করিতে। দুই খণ্ড কাঠ সেটা, দুয়ের ঘর্ষণে, অগ্নি উৎপাদন করে,মশাল জ্বালিতে। সহদেব কহে শোনো, তিষ্ঠ মহারাজ। আমি গিয়ে ধরে আনি,বৃদ্ধ মৃগরাজ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৮

 বনপর্ব-৩৮ কবজ কুণ্ডল ধারী কর্ণ সুতপুত্র। সরল সুধীর বন্ধু রাজা দুর্যোধন। অর্জুনে বধিবে মনে,প্রতিজ্ঞা পবিত্র। নয়নে চাঞ্চল্য লয়ে,প্রখর এমন। দান বীর নামে খ্যাত, তবু মনে ব্যথা। একবিন্দু মিথ্যে নয়,তার অঙ্গীকার। কবজ কুন্ডল দেহে,কীর্তি যশোগাথা। ইন্দ্রের ছলনা যারে, করিল বেকার। মনের আরাধ্য যার দীপ্তি দিবাকর। তারে কে বধিতে পারে, সম্মুখ সমরে। ব্রাহ্মণের বেশে ইন্দ্র, মাগিল যে বর। কবজ কুণ্ডল খুলে দিতে হবে তারে। প্রতারক জেনেও সে সব দিলো খুলে। জীবন রক্ষার কাজ, তাও গেল ভুলে।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৭

 বনপর্ব-৩৭ অর্ধচন্দ্র বাণ মেরে, মাথা কামাইল। অপমানে জয়দ্রথ,কথা নাহি চলে। পাঁচজন পাঁচঝুটি কেন বানাইল? বিকট রূপের তরে, ভুলভাল বলে। শিবের তপস্যা করে বর মাগে তারে। পাণ্ডবের পরাজয় তার হাতে হবে। চারভাই পরাজিত,হলে হতে পারে। অর্জুনের পরাজয় কিছুতে না হবে। একদিন একবার হারাবে তাহারে। দেবের ক্ষমতা নেই অর্জুনে হারায়। এই নিয়ে সুখী হও,যাও ফিরে ঘরে। মনোদুখে জয়দ্রথ,শিবেরে ফেরায়। শিব তবু বর দিয়ে, করিল আশিস। বিকট রূপের কথা, মনে জাগে বিষ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৬

 বনপর্ব-৩৬ পাঁচভাই রথ নিয়ে, ছুটিল পিছনে জয়দ্রথ যেই দিকে,গিয়েছেন ধেয়ে। কিছুদূর গিয়ে দেখে, অন্ধকার বনে। পাঞ্চাল দুহিতা সেথা,কত দুঃখ সয়ে। পঙ্গপাল সম সৈন্য দল বেঁধে ধায়। জয়দ্রথের সৈন্যরা,পড়ে ঘূর্ণিপাকে। শ-শতাধিক সৈন্যের মৃত্যু হলো হায়। বিপদে পড়িল রাজা নারীর বিপাকে। মার খেয়ে জয়দ্রথ মরণের মুখী। যুধিষ্ঠির কহে ভীমে ছেড়ে দাও ভাই। গান্ধারী মায়ের মনে দুঃখ দেবে দেখি। হাজার হোক বংশের একটা জামাই। ওরে ভাই জয়দ্রথ, মিছে করো রণ। বিপদে পড়িলে দেখো নারীর কারণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৫

 বনপর্ব-৩৫ দুর্যোধনের ভগিনী সেই দুঃশলার। বিবাহ হয়েছে যার,জয়দ্রথ সনে। শাল্বদেশ যাওয়ার পথে অনাচার। জয়দ্রথ দ্রৌপদীরে দেখিল অরন্যে। কাম্যকবনের মাঝে, সুন্দরী রূপসী। অপ্সরা মোহিনী দেবী পাঞ্চাল নন্দিনী। অলক্ত আরক্ত শোভা,প্রভাতের হাসি। পাণ্ডব মৃগয়া করে, কোনখানে জানি? জোর করে জয়দ্রথ,ধরে পাঞ্চালীরে। মানিনীর মুখ দেখে, বাসনা কামনা। জয়দ্রথ তারে নিয়ে গেল জোর করে। ধৌম্য ঋষির চিৎকারে,ভীষণ বেদনা। মৃগয়ায় পাণ্ডবের লাগিল না মন। ফিরিল কুটিরে তারা,শোনে বিবরণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৪

 বনপর্ব-৩৪ স্নান শেষে ঋষিদিগে পেট ভরে গেল। কৃষ্ণের লীলার ধার,কে বুঝিতে পারে। অত্যধিক পেট ভরা, মুনিরা দেখিল। দুর্বাসা কহিল সেথা,কি কহিবে তারে। লজ্জায় ঋষিরা কহে,কেমনে খাইব? একটি অন্নও পেটে,ধরাবার নাই। এমন কেমনে হলো, কি করে বুঝিব? চলো মোরা হেথা হতে সকলে পালাই। শ্রীকৃষ্ণের আগমন, বড়ই অদ্ভুত। দ্রৌপদীর আহ্বানের,উপেক্ষা না করি। পরম মিত্রের ডাকে, সদাই প্রস্তুত। বিপদে স্মরণ করে, তারে রক্ষা করি। পাণ্ডবদিগের প্রতি, কৃষ্ণের ভুমিকা। বিদায় নিলেন তিনি নিজের দ্বারকা।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩৩

 বনপর্ব-৩৩ সেদিন দুর্বাসা এল কৌরবের দ্বারে দশ সহস্র শিষ্যরা ছিল তার সনে। দুর্যোধন দুর্বাসারে আপ্যয়ন করে। খুশিতে দুর্বাসা,বর দিবে বলে মানে। দুর্যোধন খুশি হয়ে কহে মহামুনি। দ্রৌপদীর খাদ্য শেষে যান তার ঘরে। দশ সহস্র শিষ্যের,খাদ্য পাবে মানি এই শুধু চাই ঋষি, অন্তরে অন্তরে। হাসিল বিধাতা মনে,নির্বোধ নির্দয়। দ্রৌপদীর খাদ্য শেষে শূণ্য হয় হাঁড়ি। দশ হাজার শিষ্যের হইল উদয়। কৃষ্ণের ভগিনী সখী,সত্যি সতী নারী। এক কণা সব্জি খণ্ড,হাঁড়ির ভিতর। কৃষ্ণ খেয়ে ভরালেন, সবার উদর।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩২

 বনপর্ব-৩২ অনুতাপ নেই মনে,দর্পী দুর্যোধন। বৃথা আস্ফালন করে,আপনার মনে। প্রতিজ্ঞা করিল কর্ণ, নিজে আমরণ। মদ মাংস ছোঁবেন না,বধিবে অর্জুনে। দেখেছি উষ্ণতা তার রবি মহাশয়। কর্ণের প্রতিজ্ঞা হেথা, হইবে বিকল। অলক্ত আরক্ত প্রভা প্রভাত সময়। প্রার্থীর প্রার্থনা জেনো,পুরিবে সকল। ফিরে গেল হস্তিনায়,দলবল সহ। কাম্যক অরণ্য ফের,চলিল পাণ্ডব। অভেদ্য দূর্গম পথ, কার সাধ্য লয়। চারিদিক অন্ধকার,পক্ষী কলরব। প্রভাত হইলে নিশা উঠিল তপন। দ্রৌপদীর ম্লানমুখ,সজল নয়ন।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩১

 বনপর্ব-৩১ যুধিষ্ঠিরের অতুল্য, অত্র আপ্যয়নে। সকলেই ছাড়া পেয়ে ঘরে মুখি হন। অপমানে দুর্যোধন,কেঁদে ফেলে বনে। এর প্রতিশোধ আমি,লইব কখন? মাতুল শকুনি দিলো, ভুল পরামর্শ। সহিতে হলো এমন ঘোর অপমান। এর থেকে শ্রেয় ছিল,মরণের স্পর্শ। শত্রুর ভীষণ ফাঁদে,চলে যেত প্রাণ। পাঁচ ভাই মিলে মোর বাঁচাইল প্রাণ। মূর্খ আমি কখনোই, সহি না আঘাত। সহস্র সৈনিক এনে,করি অবসান। পাণ্ডব বংশের নাম, করিব নস্যাৎ। মাতুল শকুনি কহে,ওহে দুর্যোধন। চিন্তা নাই পাণ্ডবেরা, ধুইবে চরণ।

মহাভারতম্ বনপর্ব-৩০

 বনপর্ব-৩০ যেই স্থানে পাণ্ডবেরা বসবাস করে। সরোবর তট সেথা, মনোরম ছিল। কিছুতেই দুর্যোধন ঢুকিতে না পারে। গন্ধর্বেরা সেই স্থানে,কেমনে পশিল। ভীষণ ক্রোধের বসে,কহে দুর্যোধন। দূর হয়ে যাও ত্বরা, সরোবর হতে। দুই দলে ভারি যুদ্ধ, বাঁধিল তখন। কৌরবেরা পালাইল,ভীষণ ভয়েতে। গন্ধর্ব রাজার হাতে,বন্দী দুর্যোধন। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির সেথায় আসেন। কৌরবদের মুক্তির,করে আবেদন। গন্ধর্বদের রাজার,নাম চিত্রসেন। চিত্রসেন অর্জুনের গানের শিক্ষক। স্বর্গের হতে ইন্দ্রই, গন্ধর্ব প্রেরক।

মহাভারতম্ বনপর্ব-২৯

 বনপর্ব-২৯ এদিকে হস্তিনাপুরে,দুর্যোধন বলে পাণ্ডবেরা এইক্ষণে আছে দ্বৈতবনে। নরকযন্ত্রণা ভোগ করিছে সকলে। এইক্ষনে যদি যাই পরিবার সনে? আমোদ প্রমোদ করে কষ্ট দেবো সই। কর্ণ ও শকুনি তাতে দিলেন সম্মতি। দূতক্রীড়ায় হারিয়ে শান্তি হলো কই? অরাজি ধৃতরাষ্ট্রের পেলো অনুমতি।  কর্ণ কহে,ওহে বন্ধু রেখেছ স্মরণে। দ্রৌপদীর হস্তিনায় যেই কষ্ট পায়। তার থেকে বেশি কষ্ট পাবে দ্বৈতবনে। দাসদাসি সহ চলো, অলঙ্কার গায়। শত্রুর কঠিন কষ্টে,মন শান্তি পায়। শকুনির পরামর্শে, চলিল সেথায়।