Posts

Showing posts from March, 2022

ঐক্য ভাবনা

 ঐক্য ভাবনা দেবপ্রসাদ জানা রাতের কালিমা কাটে,দিনের আলোয়। বৃক্ষগর্ভ ভেদ করে, জন্ম নেয় ফুল। নব সূর্যালোকে হাসে,তরুন হৃদয়। ধ্বনিময় মহাকাশে,নাই ধর্মকুল। কুলষিত জাতধর্মে,এক ঐক‍্যতান। দিকে দিকে জাগরণ,বর্ণে অনাসক্তি। ঐক্য ভাবনায় বাজে,বৈরাগ্যের গান। এক সুর,এক তালে, এক ধর্মে ভক্তি। হীন নিরক্ষরতার ,হোক অবসান।  অশিক্ষা অধর্ম আজি,স্তব্ধ স্থানচ্যুত। মুখের ভাষায় ঘোরে,স্বচ্ছ উপাখ্যান। অজ্ঞানতার আঁধার,কাটে অবিরত। জেগে উঠেছে আশার,ঋদ্ধ অভিপ্রায়। পৃথিবীর মাটিতে কি, সেটা দেখা যায়?

চোখের জল

 চোখের জল দেবপ্রসাদ জানা অশ্রুজল ফোঁটাফোঁটা,শুষ্ক স্তন বেয়ে। যে স্তনের বৃন্তমুলে, শিশু সদ্যজাত। মায়ের কুচাগ্র শুষে, দুগ্ধ নিচ্ছে খেয়ে। দুগ্ধহীন বক্ষে তার,নোনা সুধামৃত। মায়ের চোখের জল,মোটে মিথ্যে নয়। দুধের অমৃত স্বাদ সে,পাবে না জানি। ক্ষুধার্ত মায়ের স্তনে,নোনা দুগ্ধ বয়। এই ভেবে সদ্য শিশু,তাও নেবে মানি। অবাক পৃথিবী কহে,ওরে মাতা শোন। ক্ষুধার সাম্রাজ্যে শিশু,রাত্রি জেগে রয়। যত ক্ষুধা বিশ্বভরা,নিয়েছে আসন। মানদণ্ড হাতে নিয়ে,দেখিও না ভয়। মনেরেখো দণ্ডধারী,এ যেন না কহে। মায়ের দুধের স্বাদ, সুধামৃত নহে।

আত্মাহুতি

 আত্মাহূতি দেবপ্রসাদ জানা আলোর খোঁজে সন্ন্যাসী,নীরব চকিতে, তপোবনে কাপালিক,হয়ে ওঠে বন্য। উল্কাপিণ্ড ঝরে পড়ে,ছায়ালোক হতে। অশনিসঙ্কেত দেখে, তিমির অরণ্য। ঈশান কোনে তমসা চিত্র, ক্ষণস্থায়ী। ইন্দ্রিয় মুক্তির সুপ্ত,বাসনা ক্রমশ। নিগুঢ় নিটোল শিষ্ট,পাখি পরিযায়ী। শরীরের সাধনায়, পাবোই অবশ্য। অগ্নি বলয়ের নিচে,প্রতীক্ষার পালা। নাস্তিকতা জীবনের,শেষ ভাবনায়। অগ্নিগর্ভের আহুতি,দেখে কালবেলা। কালবৈশাখীর ঝড় তুলেছে ব্যাথায়। আত্মাহূতি দিতে হবে,অশ্বমেধ শেষে। মহাশূন্যে অট্টহাস্যে ভিখারির বেসে।

হৃদয় মাঝারে

 হৃদয় মাঝারে দেবপ্রসাদ জানা হৃদয় মাঝারে তারে,রেখেছি লুকিয়ে। রূপালী আলোয় যারে,দেখেছি একদা। মনস্তাত্ত্বিক আলোকে,রেখেছি ভরিয়ে। বোধিবৃক্ষের আঙিনা,সাজানো সর্বদা। আকাশ মেঘের সাথে একি আচরণ। চাঁদ যেথা গুপ্ত রাখে,রূপালী জোছনা। মেঘেরা শিউরে উঠে,করেছে রোদন। হৃদয়ের যন্ত্রণা যে,দেখতে চায় না। জীবনে সঞ্চিত থাকে,দুখের পাহাড়। প্রশ্বাসের গভীরতা বুঝেছে কজন? অবাক হয়েছি দেখে,অকালে আঁধার।  চোখে চোখ রেখে বুঝি,কতটা আপন। জীবন চিহ্নিত করে,হিসেবি বার্ণিক। তারে বার্তা দিয়ে গেছে,ব্যাথিত প্রেমিক।

জীবন বালুচর

 জীবন বালুচর দেবপ্রসাদ জানা অলক্ষ্যে পাথর জমে,ভিতরে ভিতরে। নদীর প্রত্যক্ষ স্রোতে,ভাটার উজান। বিষন্ন আঁধার জমে,আলোর অন্তরে। মরা নদী ধরা দেয়,শস্য ভরা প্রাণ। খরস্রোত,একাকিত্ব,হাজার চিন্তায়, নদীর মরার ক্ষতে,জমে বালুচর। আপন ভূবন জুড়ে,একাকিত্বে পায়। এক পাশে জলরাশি,খিদের কাঁকর। জীবনের দীর্ঘ পথে,অভ্যস্ত হয়েছি। স্বাধীনতার বেদনা,স্তব্ধ স্বপ্নময়। একাকিত্বের আস্বাদ,সম্পূর্ণ করেছি। অনুভবে আকাঙ্ক্ষায়,স্নিগ্ধ বায়ু বয়। জীবনের প্রতি বাঁকে,ক্ষমার পরাগ। মিলনের সন্ধিপত্রে,প্রেমের সোহাগ।

জীবাশ্ম

 জীবাশ্ম দেবপ্রসাদ জানা একটা জীবাশ্ম পেয়েছি, হৃদয়ের খনি খুঁড়ে। তিনশ বছর পুরানো,মরা প্রেমের জীবাশ্ম। ফাল্গুনের প্রস্ফুটিত,রক্তিম শিমুলের শেকড় - জড়িয়ে ছিল তায়। জীবন্মুক্ত প্রেমাঙ্কুর,বসন্ত বিলাপের মায়ায়- পলাশ আগুনে পোড়ানো ,কতগুলো ভুল, ছিল মমি হয়ে। বসন্তের নীরব আলাপের রঙ মাখা বেদনা, মহাঔষধি প্রেমগাথা বুকের ভিতরে- আপন অঙ্গনে দুখের পরশ লাগা সুগন্ধি অবহেলা। নাম না জানা কতক গুলি ষড়যন্ত্র,হিংসা, মমির আনাচে-কানাচে রাখা অশান্তির তরল, পলাশ কৃষ্ণচূড়ার প্রশংসা ভরা স্বর্ণকুম্ভ। শিমুলের খোঁজ পাওয়া গেল না তাতে, বসন্ত উৎসবের মাতাল মাদক ঠাসা লাল হৃদয়।  কালো হৃদয়ের গোলাপ ফসিল।

সতী মন্দোদরী

 ১ সতী মন্দোদরী দেবপ্রসাদ জানা সমুদ্রমন্থন কালে,সুলক্ষণা নামে, সুন্দরী এক রমণী আর্বিভুত হন। পার্বতীর সখি হয়ে থাকে সেই ধামে। পার্বতীর সঙ্গে সঙ্গে,থাকে সর্বক্ষন। একদিন স্নান শেষে,কহিলেন তাকে, পরিধেয় বস্ত্র আনো,যাও মোর ঘরে। সুলক্ষণা বস্ত্র নিতে,শিবালয়ে ঢোকে, করিল সম্ভোগ শিব,একা পেয়ে তারে। বস্ত্র এনে দিলো দাসী পার্বতীর হাতে। দেরি কেন সুলক্ষণা জানিতে কি পারি? তারে দেখে শিবজায়া পারিল বুঝিতে। অভিশাপে সুলক্ষণা,হলো মন্দোদরী। অদৃষ্টে যা লেখা ছিল কে খন্ডাবে তারে? বিধাতার লীলাখেলা,কে বুঝিতে পারে। ২ মেঘনাদ দেবপ্রসাদ জানা অদ্ভুত পূরাণে কথা,বড়ই অদ্ভূত। ময়দানবের কন্যা হল মন্দোদরী রাবণের জায়া হতে হইল প্রস্তুত। তার ঘরে জন্ম নিল শ্রীলঙ্কা কেশরী। চন্দ্রকলা সুলক্ষণা, গুনিল প্রমাদ। শিব তারে বর দেন,যতদিন হোক, বিবাহের পরে তার,পুত্র মেঘনাদ। রাবণের পুত্র বলে,জানবে ভুলোক। বাল্যকালে মেঘনাদ তপস্যার বলে। ব্রহ্মাস্ত্র, পাশুপতাস্ত্র,বৈষ্ণবাস্ত্র তার। মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করে ছলে। দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য নিল তার ভার। পুরাণের গীতগাথা অতি যাদুগরী। ময়দানবের কন্যা,ছিল মন্দোদরী।

হারিয়ে গেল

 হারিয়ে গেল হারিয়ে গেল আমার কবিতাটা, যে কবিতায় তোমাকে ধরেছিলাম, ফাগুন মাসে, রাঙা শিমুল পলাশে- রঙের মেলায়,এক কিশলয় গুচ্ছ বাংলা শব্দে ঢেকে গেছে, আমার প্রাণ। আমার মিষ্টি প্রেমে কবিতা। সবুজ পাতার ফাঁকে লাল নীল ফুল গুলো  তোমার অস্তিত্বকে ঢেকে দিচ্ছে ক্রমাগত। মনের আঙিনায়,প্রথম গোলাপ গাছের - প্রথম প্রেমের ফুল। ফাগুন মাসে, আগুন রাঙ্গা মনের ভেতরে, পুড়িয়ে দিচ্ছে তোমাকে,উথাল পাথাল শব্দ জোড়া হৃদয়ের ভাষা, তোমাকে বিলীন করে দিতে চাইছে, রক্তে রাঙা মাটির রঙিন স্বপ্ন চোখে, যে বিদ্রোহী ছেলেটি একদিন তোমার, অকালে ঝরে পড়ার কবিতা লিখেছিল, ফাগুন মাসে, রঙিন ফুলের দেশে, রঙিন স্বপ্ন গুলো ধরে রেখেছিল কবিতায়, তোমার দৈহিক আবেদনের সুচারু বৈশিষ্ট্য, হাজার কবিতার ভিড়ে, ফুল পাখি আর তোমার ছবি, অস্পষ্ট হচ্ছে দিনে দিনে- না মানতে পারছিনা আমি,মানা যায় না,  কি করে পারি বলো? কিশোর হৃদয়ের বাসনা তুমি, কৈশোরের ভাবনা তুমি, হাজার স্বপ্নে ঘেরা কিশোরী বর্ষা তুমি, তুমি যে আমার প্রথম প্রেমের গোলাপ কুঁড়ি। অব্যক্ত মনের সোনালী রোদ, বিদ্রোহী মনের বাসনায় ছিলে তুমি,

স্বর্ণস্বর্গ প্রাপ্তি

 স্বর্ণস্বর্গ প্রাপ্তি দেবপ্রসাদ জানা মরণে মেলেনি ছুটি,আরো আছে গান। জীবন্ত গানের ছোঁয়া,আজো লেগে আছে। কায়াহীন ছায়ারাও,দিয়ে গেছে প্রাণ। অশরীরী গায়কেরা,এক হয়ে গেছে। কালের কোকিল কন্ঠ,গেলে রুদ্ধ করে। হে সুরের কারিগর লতা সন্ধ্যা বাপি। ছেড়ে গেলে স্বর্ণস্বর্গে হাতে হাত ধরে। উল্লসিত ইন্দ্রপুরী,সারারাত্র ব্যাপি। আকাশের ময়দানে,নেমে পড়ো সব। সুরের পসরা নিয়ে, দেবদেবী সনে। সুরের ঝংকারে ওঠে,নতুন বিপ্লব। সুর তাল লয় মিলে,কলকন্ঠ তানে।  কর্ণ কন্ঠ বাদ্যযন্ত্রে,মধুর মিলন। একেএকে সব গেল,এতই আপন।

এই বসন্তে

 এই বসন্তে দেবপ্রসাদ জানা আজ রোদ্দুরের চিঠি পেয়েছি একটা, বসন্ত আসছে,তার সঙ্গে সে আসবে। গনগনে রোদ্দুরের সোনালী মুখটা বসন্তের দীপ্তি,ক্রোধে রক্তবর্ণ হবে। হ্যাঁ এমনই লিখেছে,আলোক সম্রাট বড় শাসকের ভাষা,উপেক্ষার জ্বালা  অপ্রতিরোধ্য হুঙ্কার,ভীমনাদ ঠাট। নীরস করিবে বিশ্ব, সিন্ধু নদীনালা। কোকিলের সুমধুর কণ্ঠে ককা ধ্বনি, বাজবে তা ভোররাতে,অকাল খরায়, বৃদ্ধ বসন্তের দ্বারে,বাজবে খঞ্জনি। প্রিয় আমের মুকুল , লইবে বিদায়। সাধের বসন্তে দেবো,অকাল বৈশাখী। রঙহীন বসন্তের কি রহিবে বাকি?

সুখের জলপ্রপাত

 সুখের জলপ্রপাত দেবপ্রসাদ জানা সেদিন নীল আকাশে,মেঘ ছিল কালো। মেঘের ভেলায় ছিল,বৃষ্টিতে সাজানো। নীলাভ সাগরে তার ঢেউ ছিল ভালো। জলের খেলায় মন কি করেছে জানো? গোধূলি লগনে ঝাউ,বনটার ধারে,  মনের পাখিরা সব, দুষ্ট আচরণে। স্তব্ধতার অন্ধকারে,কোমল অধরে। সুস্বাদু আহার করি,ওষ্ঠ আকর্ষণে। ঝড় উঠেছিল মনে,দেহের অঙ্গনে। মিষ্টি হাওয়ায় চুল,হালকা উড়িয়ে। অরজা প্রথম প্রেম,এসেছিল মনে। বৃষ্টি মূখর গোধূলি গিয়েছে হারিয়ে। সুখের জলপ্রপাত,হলো দেহ মনে। প্রথম প্রেমের ফুল,ফোটে ঝাউবনে।

কনে দেখা

 কনে দেখা রোদ দেবপ্রসাদ জানা চা,এলো পাত্রীকে সঙ্গে করে,আমি বাবা আর মা পাত্রীকে ছবিতে দেখেছি,তবে ছবির সাথে খুব একটা পার্থক্য নেই। মাথা নিচু করে সামনের চেয়ারে বসল,আমি মাঝে মাঝে পাত্রীর দিকে তাকাচ্ছি আড়চোখে,সেও বোধ হয় তাই করছিল, ফলে তার চোখে চোখ পড়ে গেল একবার। মা জিগেশ করল - নাম কি? - সুনন্দা বোস। নামটা বেশ ভালো। গলাটা খুবই নিচু, খুব আস্তে। আমাদের বাড়িতে সকলেই জোরে কথা বলে। এত আস্তে বললে শুনতেই পাবো না। যদিও এটা কনেদেখা স্বর কিনা জানা নেই। -আমার মেয়ে চাকরি করতে চায়। মেয়ের মা তন্দ্রা দেবী কথাটা বলে  মায়ের দিকে তাকাল। - তাহলে বিয়ে দেবেন কেন? চাকরি পাক,তারপর নয় বিয়ে দেবেন।  - না মানে বয়সটাওতো হচ্ছে, এরপর ওর বয়সি ছেলে পাওয়া যাবে না। এম এ পাশ করে বসে আছে, কয়েকটা চাকরির পরীক্ষাও দিয়েছে, - চাকরিটা কি খুব দরকার হবে? বিয়ে যখন চাকরি করার আগেই দিচ্ছেন। যাকে বিয়ে দেবেন সেতো চাকরি করেই। তাছাড়া আপনি কি করে ভাবলেন যার বাড়িতে বিয়ে দেবেন তারা ওকে চাকরি করতে দেবে, - কিন্তু চাকরিতো ওকে করতেই হবে। - কেন? - চাকরি বাকরি না করলে আমাদের বা দেখবে কে? আমার দুই মেয়ে, ছেলেতো নেই, ওর ওপরেই ভরসা,তাই কষ্ট...

এসো আমার বাড়ি

 এসো আমার বাড়ি একবার এসো আমার বাড়ি,  আমার ঘরে,দখিনা বাতাস ঢোকে না ঘরে। একটা চাঁদ এনো সঙ্গে। এ বাড়িতে জোছনা আসে না, এখানে অনেক তারার মাঝে একটা চাঁদ, যদি এনে দাও,এখানে অনেক ফুল, গোলাপ নেই একটাও, একটা গোলাপ এনো সঙ্গে, লাল গোলাপ। গোলাপ আছে,তবে লাল নয়, সাদা- যদি পারো একটা ফাল্গুন মাস এনো, এখানে বসন্ত আসে না, জানলা দিয়ে পড়ে না সোনালী রোদ। পলাশ ফুল ফোটে যদি তোমার বাগানে, শিমুল ফুল,যদি চাও পারো বুকে এনো সাথে, নানা রঙের ফুলের মাঝে তুমি,সোনালী রোদে- তোমার সোহাগী মুখ, রূপালী জোছনায় তোমার হাসি, মেঘবালিকারা যদি থাকে তোমার আকাশে, ধরে এনো তাদের, তোমার আঁচলে বেঁধে, কোকিল দেখেছি অনেক,  ডাকতে শুনিনি একবারও, গাছের ডাল ধরে,কত টানাটানি করেছি পলাশ পাড়তে পারিনি একটাও, একটা বাঁশি এনো, আড়বাঁশি - কৃষ্ণের মতো করে বাজাব আমি,কদমতলায়, রাধার মতো জল আনতে বেরোবে তুমি- কলসী কাখে, যমুনার তীরে,  যদি দেখো মেঘবালিকারা বৃষ্টি হয়েছে, বোলো,একটু দেরি করো, এখনো কান্নার সময় আসনি, শত বেদনার মনপাখিটা আসতে পারে নি, একটু হাসি এনো বাটি ভরে, মিষ্টি সৌরভ ভরা আছে ফুলের বাগানে, তোমার মিষ্টতা বাড়াতে। কথা দাও কাছে আসবে, ...

একটি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন

  একটি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন বাসুর ঘর ঠিক আমার বাড়ির পেছনের বস্তিতে। বাড়ির পেছনে একটা উঁচু ইটের দেয়াল,তারপর একটা বড় নর্দমা,তার পাশে বস্তি,কারো আধা ইটের,কারো দরমার বেড়ার, কারো আধা অ্যাডবেস্টর, কারো টালি, এই দিয়ে মোটামুটি গোটা চল্লিশেক ঘর বারান্দা, তাতে দুশো জনের মত থাকে ওই বস্তিতে। বাসুর বাবা-মা কেউ নেই দুজনেই বিষ খেয়ে  আত্মহত্যা করেছে।  কেন তা আমি জানি না, বছর চারেক আগে,আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, ওই বস্তির একদিকে বড় একটা লেক। আরেকদিকে বড় একটা ঝোপঝাড় ভরা মাঠ। প্রাচীর ঘেরা। রাতের বেলা সেখানে শিয়াল ডাকে,শীতে পরিযায়ী পাখির ভিড় হয়। আমি আর মা ওখানে অনেকবার গেছি,পরিযায়ী পাখির সৌন্দর্য দেখতে, ওই বস্তির লোক সেখানে পাখি মেরে বাংলা মদের চাট বানিয়ে খায়।  সকাল থেকে ওই বস্তিতে শুরু হয়,লোকের বাড়ি কাজে যাওয়ার তাড়া, বাসু  রাজমিস্ত্রি জোগাড়ে কাজ করে। সারাদিন সিমেন্ট বালির কাজ করে । আর বিকেলে ফিট বাবু হয়ে ঘুরে বেড়ায়। বেশ ফুটফুটে ছেলে। তাকে দেখে সবারই ভালো লাগবে, আমারও ভালো লেগেছিল, ভালোবাসা কি না জানিনা। তবে ভালো লাগে, বেশ মিষ্টি কথা বলে, আরো একটা গুনছিল বাসুর। ভালো...

একটা ভুল

 একটা ভুল  আজ আর বিধু আসেনি। একা একাই চা করে খেতে হলো। সকাল ছটায় উঠি, সূর্য ওঠা না দেখলে দিনটা ভালো যায় না। শীতকাল ভোরের কুয়াশা কাটতে কাটতে সূর্য দুপুরের মাঝপথে চলে এলো। আজ রবিবার তাই কোনো তাড়া নেই।বাড়িতে কেউ নেই।শ্রীমতি ঝগড়া করে বাপের বাড়ি।একটু আধটু ঝগড়া রোজ করি।কিন্তু কাল যেন একটু বেশি হলো।সচরাচর ঝগড়া হলে,সঙ্গে সঙ্গে মিটে যায়,খাবার কথা বলে,কাল আর বলেনি।আমিও জোর করিনি ,বিধুকে বলেছিলাম,কাল আসতে হবে না।কারণ রবিবার একটু ছুটি পেতে চায় ও।  বাড়িতে আমরা পাঁচজন।আমি শ্রীমতী বিধু,আর দুই মেয়ে। বিধু আমাদের বাড়ির কাজের লোক নয়। আমার মামার ছেলে।একটু বোকাসোকা।মামা মরে যাওয়ার পর,ও একাই থাকে,বিয়ে করেনি, যদিও বিয়ের বয়স এখনো  যায়নি।খুব ভালোবাসে। আমাকে না হলেও,বৌদিকে খুব ভালোবাসে। হাতে হাতে কাজ করে দেয়। রান্নাবান্না  সব পারে। ওর বৌদি না থাকলে,আমার কোনো অসুবিধা হয় না,বাজার করা ভাত বেড়ে দেওয়া,সব ঐ করে। কথায় কথায় একটা কথা মনে পড়ল,বিধুর মাথায় একটা টিউমার আছে। সেটা ও জানে না। মাঝেমধ্যে অজ্ঞান হয়ে যায়। এটাই ভয়ের কারণ। কখন যে কোথায়,ওই ব্যাধিটি এসে জুটবে,বলতে পারি...

অন্ধকারে এরা

 অন্ধকারে এরা দেবপ্রসাদ জানা তোমরা দেখেছো কেউ ঘন অন্ধকারে  ক্ষুধার্ত হায়না খোঁজে তাদের খোরাক। রাতের আঁচলে মোড়া নিভৃত বিকারে। সন্তর্পণে খোলে তার বোধের পোষাক। চোখের গোলক দেখো লাল রক্ত জবা। কিঞ্জল চোখের কোনে হিংসার আগুন। লক্ লক্ করে তার ক্ষুরধার জিহ্বা। গোপনে ক্ষয়ের কথা বলে সে তরুণ। লোমশ থাবায় থাকে ক্ষুরধার নখ। অশ্লীল বাক্যের ভারে,কামনার অগ্নি। নরক যন্ত্রণা দেয় লালসার চোখ। ছদ্মবেশে অন্ধকারে খুলেছে বিপনি। দুর্নিবার দুর্নিরোধ্য উদ্ধত দুর্বৃত্ত। চিরদিন চিরকাল আঁধারে আবৃত্ত।

একটা বিস্কুট

  একটা বিস্কুট  দেবপ্রসাদ জানা  আমি সাধারণত চায়ের দোকানে চা টা খাইনা। বাড়িতে সেদিন আমার মেসো শ্বশুরের ছেলে পিন্টু দা এসেছিল, সে বলল- চলো চা খেয়ে আসি।মোড়ের  মাথায় বৌদির দোকানে চা খেলাম। সাথে দুটো বিস্কুট নিয়েছিলাম,একটা কালো কুকুর অনেকক্ষণ ধরে আমার চারপাশে ঘুরছে দেখে, তাকে একটা বিস্কুট দিয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছি। কিন্তু কুকুরটা কিছুতেই যাচ্ছে না,আমি তাড়া দিলাম কুকুরটা চলে গেল, অফিস ফেরতা  প্রতিদিন আমার বেশ রাত হয়,বেলঘড়িয়া থেকে হেঁটে আসতে হয় অনেকটা । সেই দিনের পর থেকে কুকুরটা প্রতিদিন আমার সঙ্গে আসে। কখনো আগে আগে, কখনো পিছু পিছু। ভাবলাম খাবারের লোভে আসে।  তাই স্টেশন থেকে কটা বিস্কুট কিনে ওকে দেই। আর হাঁটতে থাকি। বাড়িতে কথাটা বলতে মা বলল - একটু সাবধানে আসিস,ওসব বিস্কুট টিস্কুট দিস না,তাড়িয়ে দিবি।  রাস্তার কুকুর কামড়ালে চোদ্দটা ইনজেকশন দিতে হবে। পরের দিন থেকে তাঁকে আর বিস্কুট দিই না, তাড়িয়ে দিই। তাও আমার সঙ্গে সঙ্গে আসে।  একদিন প্রচুর বৃষ্টি,রাস্তা ঘাটে জল জমে গেছে, স্টেশন থেকে নেমে রেল লাইন ধরে হাঁটছি, অন্ধকার,তবু আকাশের আলোয় রেললাইনের ...

মাতৃরূপে নারী

 মাতৃরূপে নারী দেবপ্রসাদ জানা নারী তুমি কালো হও,কলঙ্ক নিও না। নারী কালী মহাকালী,প্রেমিকা ঘরনী। পবিত্র বিশুদ্ধ  নারী, মৃন্ময়ী জননী। তোমার অন্তরে মাতা,বিনম্র চেতনা। প্রজন্ম প্রজন্ম তুমি,মায়ার বীক্ষণে, প্রবাহিত শান্তনদী নির্বাক আকাশ। মায়ার বন্ধনে থাকে,গভীর প্রয়াস। শীতল বাতাস আনে,উত্তপ্ত অঙ্গনে। পবিত্র গঙ্গার জল,ভগবত গীতা। তার চেয়ে শুদ্ধনারী,তুমি মাতৃরূপে, কুৎসিত কালো রূপ,তবুও যে মাতা। দেবদেবী পুজা করে,ধুনো আর ধুপে। সৃষ্টির প্রলয় হোক,তবু রবে মাতা। প্রতিটি যুগের নারী,থাকে মাতৃরূপে।

জঙ্গলে জঙ্গলে

 জঙ্গলে জঙ্গলে  ঘুরতে গেছিলাম সুন্দরবন। হঠাৎ বর্ষা,সারাদিন ঘুটঘুটে  অন্ধকার,নোয়াখালী জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা চারপাশে উঁচু উঁচু গাছগাছালি, ঘনঘন ঝোপঝাড়, নদীর জলে প্রবল টান। লঞ্চ,ঘাটে দাঁড়িয়ে পড়েছে, আর এগোনো যাচ্ছে না। বনদপ্তর থেকে বারণ করেছে। ঠিক এ সময় সচরারচর বৃষ্টি হয়না। ঘনঘন মেঘ ডাকছে, কোথাও কোথাও বাজ পড়ছে। আমরা ছয়জন, বন্ধুরা মিলে একটু, মদ মাংস নিয়ে ফুর্তি করতে বেরিয়েছি তিনদিন। প্রত্যেকের ব্যাগে একটা করে বোতল। বন মুরগীর খোঁজ করতে চলেছি বনের মধ্য দিয়ে ভেতরে, বন মুরগীর কষা মাংস আর সুরা। আমরা কেউ সুরা পানে অভ্যস্ত নই, তবে মাঝে মাঝে অকেশনে সুরা পান করে থাকি, সকলেই আনন্দের জন্য এসেছি। সকলেই বিবাহিত, আমাদের তিনজনের পাঁটটা বাচ্ছা। আমার দুটো মেয়ে, অসিতের একটা, গৌরবের দুটো ছেলে। বাকি তিনজন, বাবু প্রলয়, আর অনন্ত। বাবুর চার বছর বিয়ে হয়েছে বাচ্ছা কাচ্ছা হয়নি, তবে চেষ্টা চালাচ্ছে। অসিত অনন্তের দেড় বছর বিয়ে হয়েছে, দুজনের বউ অন্তঃসত্ত্বা। মাসচারেক। আমরা সকালের দিকে বেরিয়ে ছিলাম, এখন প্রায় দুপুর, কিন্তু পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে, সন্ধের পরের রাত। জঙ্গলের মধ্যে আরো অন্ধকার। সাপ খোপ থ...

অদিতি

 অদিতি - কেমন আছো গোবিন্দ? গোবিন্দ সম্পর্কে আমার দূর সম্পর্কের ভাই হয়। বহুদিন কোভিট নাইনটিনে ভুগে সবে বাড়ি ফিরেছে। চারমাস, আই সি ইউ, অক্সিজেন, সকলে ভেবেছিলাম ও আর বাঁচবে না। যমে মানুষে টানাটানি। বেশিদিন আর বাঁচবে না। এরকম অবস্থা, সেই গোবিন্দ আজ বিয়ে করতে যাচ্ছে। -তোমার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে? - হ্যাঁ  - কবে হলো? জানলাম না কিচ্ছু। আমাকে একবার বলতে পারতে? - বলতাম, কিন্তু সত্যিই বিয়েটা হবে কিনা, সেটাই তো জানা ছিল না। আমার বোনাই ঠিক করেছে। বাড়ির সকলের পছন্দ। বোনাই এর বাড়ির পাশে। তারই কেমন আত্মীয় হয়।  - ও তা ভালো। তোমার শরীর তাহলে এখন ঠিকই আছে।  - আছে, কিন্তু খুব দূর্বল। খাওয়া দাওয়া ভালো করতে বলেছে। - আর তোমার অদিতি একের পর এক সম্বন্ধগুলোকে নাকচ করে দিচ্ছে যে । - অদিতির সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই দাদা।  - তাহলে পিতৃহারা ওই মেয়েটার কি হবে?  - কি হবে তা আমি কি করব?  - ওর মা কত চোখের জল ফেলেন। তোমার তো কোন কিছু অজানা নয় গোবিন্দ। - ও চোখের জলের কোনো দাম নেই। - এতটা স্বার্থপর তুমি? দিনের পর দিন তুমি ওদের বাড়িতে সমস্ত সুযোগ নিয়েছ। হোস্টেলের বদলে ওদের বাড়...

মায়ের বন্ধু

 মায়ের বন্ধু ওষুধ লাগিয়ে,জিজ্ঞেস করে - -বয়স কত? -ঊণিশ, ডাক্তার হাসতে হাসতে বলেন, -তাহলে ভেউ ভেউ করে কাঁদছো কেন? আমি ভাবলাম পাঁচ ছয় হবে। - ঊণিশে কেউ কাঁদে না? - কাঁদেতো, তবে অল্প সল্প। সহ্য করে নেয়। এরপর চাপ দিয়ে,অনিতার কাছে থেকে ডাক্তার সব কথা শোনেন। সব শুনে বেশ গম্ভীর ভাবে ডাক্তার বলেন,  - ব্যাপারটা কবে? - আগামী শুক্রবার। - তার মানে এখনো তিনদিন।  ডাক্তার অবনীকান্ত তালুকদার আমাদের পাড়ার বাসিন্দা, সকালে নিজের বাড়িতেই চেম্বার করেন, ওনার একটা পুরানো মডেলের গাড়ি আছে, উনি বাইরে ছিলেন বলে, গাড়িটা পড়েই ছিল। সদ্য এখানে এসেছেন, ছেলে আমেরিকায় থাকে, তিনজনের সংসার, স্ত্রী হার্ড স্পেশালিষ্ট, মেডিকেলে আছেন। দুজনে বেশ কম্প্রোমাইস করে চলেন। অবনী ডাক্তারের নামও কম নয়, উনি সব রুগি দেখেন, জ্বরজারি, কাটাছেঁড়া, গাইনি, পেট ব্যথা পেট খারাপ সব। একবার ওনার ওষুধ খেলে দ্বিতীয় বার আর যেতে লাগে না। গরীব মানুষের চিকিৎসা উনি বিনা পয়সায় করেন। কিন্তু যেদিন বিনা পয়সায় যার চিকিৎসা করবেন তার বাড়ির লোককে তার ডিসপ্নেসারি সাফ সাফাই করে দিতে হবে। যদিও সেই মানুষের যা ওষুধ পত্তর লাগে সব উনি দিয়ে দেন। উনি বলেন...

সন্দেহ

 সন্দেহ  ভোর পাঁচটায় এসেছে বাসন্তী। তোমার ঘুম ভেঙে যাবে বলে আস্তে আস্তে দরজা খুলেছি। আজ কী ফুর্তি বাসন্তীর। গান গেয়ে গেয়ে বাসন গুলো মাজল। ছাদ থেকে নিচতলা পযর্ন্ত পুরোটা ঝাঁট দিয়ে মুছে কাপড় কাচতে বসেছে। কথা গুলো প্রফুল্ল তার নিদ্রারত বউকে গ্রীনটি দিতে দিতে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল।  - গুড মর্নিং  চা করে বিছানায় বউকে চা দিয়ে গুড মর্নিং বলাটা প্রফুল্লর প্রতিদিনের কাজ। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বউ কি শুনল তার অপেক্ষা না করে, বিস্কুটের কৌটোটা হাতে নিয়ে বলল, -আজ কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি বেরব। রোজ অত দেরি করলে চলে না। সরকারি অফিসেও কেউ এত দেরি করে যায় না। - সে সব পরে বুঝব, ইদানিং দেখছি, বাসন্তীর সঙ্গে তোমার ও খুব ফুর্তি বেড়েছে, সকাল সকাল বাসন্তীও আসছে আর তুমিও ভোর ভোর উঠে ওর আগুপিছু ঘুরছ। প্রফুল্ল শাসনের সুরে বেশ মোলায়েম করে বলল, - কি যে বলো তুমি? ও একটা কাজের লোক তার সাথে সন্দেহ?  সন্দেহটা অমুলক নয়, সত্যিই বাসন্তীর ওপরে প্রফুল্লর একটু দূর্বলতা আছে। তাবলে এমন কিছু নয়, যে বউ তাকে যখন তখন পিন করবে।  প্রফুল্ল চায়ে আর একটা চুমুক দিতে যাবে, বাসন্তী এসে বলল, - বাবু বৌমনির শাড়িতে আমি আজ ...

প্রথম দর্শনে

 প্রথম দর্শনে  প্রেম মানে আকর্ষণ। প্রেম মানে মোহ। প্রেম মানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। প্রথম দর্শনে প্রেম,শুধুমাত্র একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মধ্যেই  সীমাবদ্ধ থাকবে, তা মনে করার কোন কারণ নেই। স্কুল কলেজ,বাসস্ট্যান্ড, মেলা, কোচিন সব জায়গাতেই এই প্রেম আসতে পারে। আমার প্রেম এসেছিল কনে দেখতে গিয়ে। আমি তখন আঠাশ। যাকে দেখতে গেছি সে সবে ফাস্ট ইয়ার পরীক্ষা দিয়েছে,  হ্যাঁ আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম  প্রথম দর্শনে।সেই প্রেম আজও অনড় আছে। আমাদের ভালোবাসা প্রকৃতই অন্তরের ছিলো বলেই,আমরা সাময়িক কষ্ট থেকে,পুনরায় তা অমলিন ভালোবাসায় পরিনত হয়েছিল।         সবার নিশ্চয়ই বেশ কৌতূহল হচ্ছে,আমার কার সাথে প্রথম দর্শনে প্রেম হয়েছিল?  আমার জীবনে প্রথম কনে দেখার আনন্দটা ছিল অকৃত্রিম। বেশ ফুরফুরে মন সকাল থেকে, বিকাল চারটেতে যাবো সেই বহু প্রতিক্ষিত জীবনের সঙ্গী টিকে পছন্দ করে নেওয়ার মুহূর্ত।  আমার বোন,বোনাই,আমি আর আমার খুড়তুতো দুইভাই লালু কালু। যে ঘটক নিয়ে গেছিল, তাকে বলেছিলাম মেয়ে যেন মোটা না হয়, কালো,রোগা যাই হোক আমি রাজি হয়ে যাবো,কিন্তু মোটা হলে সোজা না করে দেবো।  ...

ঋণী

 ঋণী দেবপ্রসাদ জানা তোমার কিঞ্জল চোখে,গভীর সাগরে। কলকল্লোল জোছনা রাতের ছায়ায়। ভেসেছে জীবনতরী,দুখের মায়ায়। সেই পাথরের মতো একটা বছরে। ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে গাছে ফুল ধরে। ফোটে ফুল ভালোবাসে রাতের নেশায়। ফুলের ঝরার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। ফুলের কেশর জাগে,নিশি জাগা ভরে। করতলে চাঁদ ধরে, দিয়েছ জোছনা। খুব কাছে চাঁদ দেখে,রাত পাখি বলে। এ কেমন দিন এলো,লাজ লজ্জা হীনা। সুন্দরের হাত ছুঁয়ে,কোথা যায় চলে? ফুলেদের কোলাহলে,পিক গাহিবে না। বসন্তের জোরাজুরি,চলে ভোর হলে।

নাট্যমঞ্চ

 নাট্যমঞ্চ দেবপ্রসাদ জানা অন্ধকারে জেগে থাকে,নীল সাজঘর। দিগন্তরে মগ্ন কায়া,ঠায় দেখে যারে- লালনীল আলো জ্বেলে,করে কালান্তর। বিশ্বমঞ্চে আনাগোনা,নাটক আকারে।    সর্বনাশে লোক হাসে,কাঁদে অভিনেতা। হাসিকান্না পাপতাপ, মঞ্চ ভরা সঙ। লোকশিক্ষার প্রসঙ্গে,গল্প গানে গাথা। কালো পর্দা অন্ধকার, চরিত্রের ঢঙ। ঘন্টা দুই স্বপ্নঘোরে,বদ্ধ পরিখায়। মুগ্ধ দর্শকের বুকে, সীমাহীন চাপ।  বসে থেকে,খুব কাছে,শুনেছে আলাপ। মুখে হাসি চোখে জল,নিয়েছে বিদায়। তীব্রতার স্বেচ্ছাচারে,দর্শকেরা চুপ। সমাজ সংসারে দেখা,পাশাপাশি রূপ।

কলম সৈনিক

 ।।কলম সৈনিক।। দেবপ্রসাদ জানা    ২০.০৩.২০২২ ভালো আছতো সৈনিক,কলম সৈনিক? কালের রুদ্ধতা ভাঙো,বীর আত্মোপম । কলম করিছে রণ,সাহিত্যে দৈনিক। পরিবর্তন আসিছে,অতি মনোরম। কাঁটাতারে দেয় প্রাণ,দেশের সৈনিক। পায়ে তার মাথা ঠোকে,গোটা বিশ্বভূমি।  প্রাণ ভয়ে কোনঠাসা,অসুর চৈনিক। ভাবনা সজাগ রাখো, ভগবান তুমি , হাতে আছে তরবারি,কলমের বল। যত খুশি অত্যাচার,আসুক মরণ। এক এক করে আজ,পাকিয়েছি দল। সাত সহস্র টোপকে,আটেতে চরণ। কলম সৈনিক দল,করেছিল পণ। বছর দুই পরে সে, ছুঁইল গগন। দুই সৌমেন,দেবু নাজির,রশ্মি পরিবারে। মুরারী মোহন বাবু,যিনি সভাপতি। উপদেষ্টা মণ্ডলীরা, উপদেশ করে। অর্পিতা ঘোষ পালিত,সহ সভাপতি। বাকি সব সেনা মোরা,মসি পরিবারে, স্বাগতম তথ্য রাখে,নানা কারিগরি। পরিবারে নক্ষত্র সে,সূর্য একেবারে। মানিক সন্তু মধুদা,পরিবারে ফেরী। আরো আছে চন্দ্রকনা,জোছনায় ভরা। পরিবারের রতন,জোনাকির আলো। পারমিতা বিলাসেরা, আকাশের তারা। নূপুর,দিলীপ,স্নিগ্ধা, হিরন্ময় ছিল। কলম সৈনিক এরা,সাহিত্যে অনন্য। পরিবার রত্ন সব প্রতিভাসম্পন্ন। তিন নীলাভ পালকে লেখা,কলম সৈনিক। ধনুকের ছিলা টেনে,কলমের তীর। কলম হাতে লিখছে,সাহিত্য দৈনিক। গল্প কবিত...

সুখের মানচিত্র

 সুখের মানচিত্র  সুখের মানচিত্রটা,আঁকি দিনভর। নিজেই লড়াই করি,নিজের বিরুদ্ধে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়,প্রশ্নের ভেতর। দুখের পাহাড় ভাঙি,সমতার যুদ্ধে। সর্বদা যার ওপর, ভরসা রেখেছি। মায়ার বাঁধন খানি,আকাশ পাতাল। আমার সর্বস্ব আমি,অযথা দিয়েছি। দাঁড়িয়ে থেকেছি আমি,সকাল বিকাল। দেখা হয় যদি সেই,রাস্তাটার বাঁকে। যে রাস্তায় দেখা হতো,বার প্রতিবার। আগের মতন দিতে পারি না যে তাকে- লালগোলাপের বুকে, হাতে তুলে তার। সময় এখন উল্টো পথ ধরে হাঁটে। তুষের আগুনে পোড়ে,দেহ পাটে পাটে।

পথে বিলীন

 পথে বিলীন  দেবপ্রসাদ জানা যদি পথ হয়ে যায়,পথে বিলীন। মনে করো না,থাকব  সেদিন। আকাশভরা সূর্য তারা। হবে যেদিন দিশাহারা। আমায় তুমি দেখতে পাবে ক্ষীণ। তোমার চোখের চাহিদা মতো। পিছন পকেটে ভীষণ ক্ষত। অকারণে দামি দামি। কিনে ফেলেছি আমি। শাড়ি গাড়ি বড়লোকের মতো। লোকের কাছে ঋণ হয়েছে। অফিসে কিছু লোন রয়েছে। দোষ বলোতো কার? মুখ দেখানো ভার। কাবলিওয়ালাও দাঁড়িয়ে আছে। চরণ যুগল সামলে রাখো। পারলে একটু সামনে দেখো। চাদর পাতা জমি। তার নিচে ভুমি। যতটা পারো সামিয়ানায় থেকো। অহংকারের ইতিহাস খানা। ধুলির সাথে মিশেছে ডানা। ধনদৌলত পয়সাকড়ি। সবই নেবে এরা কাড়ি। সময়ের পথে কেউ থাকে না।

সভ্যতার চিতায়

 সভ্যতার চিতায় দেবপ্রসাদ জানা বিষাদের ঐ জলন্ত,চিতায় পুড়ছে- মৃত সভ্যতার দেহ,ইতিহাস হবে। পঙ্কিলাবৃত পৃথিবী,উল্লাসে হাসছে। শ্বাপদ আঁধার দেখো,নীরবে পস্তাবে। দেখো,নেমেছে সন্ধ্যায়,রাতচোরা পাখি। রাতের মুখোশ পরে, নীল স্তব্ধতায়। দরজায় ছিল খিল,অকস্মাৎ দেখি। মৃত্যুর মিছিল চলে, কি বিসন্নতায়। সহস্র পাণ্ডব পোড়ে,জতুগৃহ মাঝে। একশ কৌরব নয়,আছে লক্ষাধিক। গৃহবন্দী জনতারা সকলে তা বোঝে। ওরে পাষণ্ড উদ্ধত, নৃশংস সৈনিক। বাঁচার স্ফুলিঙ্গ গুলো,প্রতিদিন নগ্ন। গোপন অস্তিত্ব গুলো, উত্তাপে উদ্বিগ্ন।

সব খেলা শুরু

 সব খেলা শুরু দেবপ্রসাদ জানা এই ভাবেই সব খেলার শুরু হয়। আগুনের গায়ে আগুনে লাগে, রাতের সঙ্গে রাতের লড়াই - অন্ধকার আরো অন্ধ হয়, চোখের আলোতে গ্রহণ লাগে। ভোরের আকাশে ফাগুনের বদলে- আগুন আসে ধেয়ে। পুড়িয়ে দেয় ভাবনার ঘর, আশার অট্টালিকা। নিয়তি হাসে নিভৃতে নীরবে। এই ভাবেই সব খেলা শেষ হয়  নির্মল বাতাস হয় ঝড়। সকালের সূর্য হয় আগুন। কড়িকাঠে ধরে যায় উই- পুড়ে যায় আকাঙ্ক্ষার আগুন। হারিয়ে যায় ইতিহাসের - সেলাই ছেঁড়া পাতা। তবু বাসনার আগুন বাসন্তী রঙের, ফাগুন আনে দেহে। শূন্য থেকে শূন্য এর ভিতরে সে এক অজানা বিপুল বিস্ময়। মনের ভিতরে ভিতরে কঠিন ছদ্মবেশ। সবটুকু জেনেছি নির্জনে। কি জানি কেন যেন সব অজানাই থেকে গেল গভীর বিস্ময়ে।

ক্ষয়ের বৃক্ষটি

 ক্ষয়ের বৃক্ষটি  দেবপ্রসাদ জানা ফুঁ দিয়ে ওড়াই অন্ধকার। তবু কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের ভারাক্রান্ত মেঘ। স্মৃতিক্ষতে তাচ্ছিল্যের মুহূর্ত। মুখোশে ঢেকেছি মুখ এতদিন। নগ্নতার মান অপমানের সামাজিক দায়বদ্ধতা  বাঁচার স্ফুলিঙ্গ গুলো এই ভাবেই  কঠিন থেকে কঠিনতর হয়, প্রতিদিন নগ্ন করে পোড়াই মনের পাপ।  বদলায় চেনা অজানা-অচেনা পাথুরে মুখ। আলো বাতাস অন্ধকার আর? তার থেকে পাওয়া অচেনা সুখের মুহূর্ত গুলো। সব স্মৃতির গভীর কালো গুপ্ত কক্ষে - হারিয়ে যায় একদিন। মৃত্যু হয় আলোর, ঘনিয়ে আসে অন্ধকার।  সত্যিই কি ভয়ংকর মৃত্যুর খেলা। গভীর গোপন সত্যি উন্মুক্ত শাণিত তরবারি যেন  ক্ষয়ের বৃক্ষটি রোজ কেটে কেটে নির্মূল করি। তবুও অলক্ষ্যে জন্মে যায় স্মৃতির পাহাড়ে।

কিন্তু কেন?

 কিন্তু কেন? দেবপ্রসাদ জানা কিন্তু কেন? কেন এই শূন্যতা? স্বপ্নময় হেঁটে যাবো - এক জীবন থেকে অন্য জীবনে - যদি নির্বাক থাকি, যদি পাথর হয়ে থাকি, পাবো, বুক জুড়ে এক রাশ বঞ্চনার ধুসর প্রস্তর। প্রতিদিনের তুচ্ছ ত্রুটি গুলি, এক এক করে পোড়াই অন্তর্দাহে। বুক জুড়ে এক রাশ গ্রহ নক্ষত্র ছুটে বেড়ায়, দিনের আলোয় হারিয়ে যায়, আবার আসে রাত হলে,  স্বপ্নের মত ঢুকে পড়ে মনে, ঘুমের ঘোরে কিংবা জাগরণে, জানি শব্দগুলো পৌঁছায় না সেখানে,  কোথাও কালো অন্ধকার আসে, মহাকাশেরও অন্ধকার কালো গর্ত,শূন্যতা। বুক ভরা শূন্যতা। কেন? তার কি এমন দুঃখ? কখনো কখনো ধুমকেতুরাও আত্মহত্যা করে। ভীষণ দুঃখে হারিয়ে যায় তার পথ। ঝরে পড়ে মহাকাশ হতে। আত্মহত্যা করে নক্ষত্রেরাও। নিঃশব্দে মৃত্যু হয়,মহাকাশ যানের। কিন্তু কেন?

এ সেই মধ্যবিত্ত ক্ষত

 এ সেই মধ্যবিত্ত ক্ষত। দেবপ্রসাদ জানা সে এক মধ্যবিত্ত ক্ষত। তাদের খিদে বাড়ে,খাবার দেখলে। দুঃখ হয় অন্যের কষ্ট দেখলে। হিংসে হয়,কারোর উন্নতি দেখলে। ভয় হয় মৃত্যু দেখলে। বুকের রুদ্ধতায় জন্ম নেয় স্বপ্ন, বিসন্নতায় ছুঁলে,বাতাসে মারণ মন্ত্র ভাসে। লুকোচুরি চলে মারণ উৎসবের। নীল আলো জ্বেলে, জোনাকিরা ঢুকে পড়ে-শয়ন কক্ষে। অন্ধকারে খোঁজে প্রেয়সীর খোলা চুল। প্রতীক্ষায় জাগে প্রত্যাশার-মন। সফলতার সিঁড়ি ভেঙ্গে- শেষে গ্যাস অম্বল আর ব্লাড সুগারের সাথে- গোপনে লড়াই করে। দৈহিক কষ্ট তবু মৃত্যুকে ভয়। সে এক মধ্যবিত্ত চেতনায় -নিঃশব্দ বিচরণ। ভিজে মাটিতে, স্যাঁতসেঁতে ঘরে,  কিংবা শীততাপহীন বদ্ধ নোনা ধরা - পূর্ব পুরুষের চল্লিশ ইঞ্চি দেওয়ালের ঘরে- জীবনের শেষদিনটার অপেক্ষায় থাকে। পুরাতন আসবাব পত্র, পূর্ব পুরুষের চিহ্ন বলে, সাজানো থাকে ঘরে। মঙ্গলঘট পেতে সবর্দা মঙ্গল কামনায়- ভিক্ষা করে অমৃত পাত্র। দুধে ভাতে থাকতে দাও ভগবান। শরীরে উষ্ণতা কুড়ায়,লড়াকু সংলাপে। শোকযুক্ত অন্ধকারে,রজনীগন্ধার মালা- পলকা কাঠের ফ্রেমে ঝুলিয়ে, সারাজীবন শোক প্রকাশ করে অম্লান চিত্তে। এ এক মধ্যবিত্ত ভাবনা। শুধু আলো, শুধু রোদ, শুধু বৃষ্টি, শুধু...

কনে দেখা রোদ

 কনে দেখা রোদ দেবপ্রসাদ জানা চা,এলো পাত্রীকে সঙ্গে করে,আমি বাবা আর মা পাত্রীকে ছবিতে দেখেছি,তবে ছবির সাথে খুব একটা পার্থক্য নেই। মাথা নিচু করে সামনের চেয়ারে বসল,আমি মাঝে মাঝে পাত্রীর দিকে তাকাচ্ছি আড়চোখে,সেও বোধ হয় তাই করছিল, ফলে তার চোখে চোখ পড়ে গেল একবার। মা জিগেশ করল - নাম কি? - সুনন্দা বোস। নামটা বেশ ভালো। গলাটা খুবই নিচু, খুব আস্তে। আমাদের বাড়িতে সকলেই জোরে কথা বলে। এত আস্তে বললে শুনতেই পাবো না। যদিও এটা কনেদেখা স্বর কিনা জানা নেই। -আমার মেয়ে চাকরি করতে চায়। মেয়ের মা তন্দ্রা দেবী কথাটা বলে  মায়ের দিকে তাকাল। - তাহলে বিয়ে দেবেন কেন? চাকরি পাক,তারপর নয় বিয়ে দেবেন।  - না মানে বয়সটাওতো হচ্ছে, এরপর ওর বয়সি ছেলে পাওয়া যাবে না। এম এ পাশ করে বসে আছে, কয়েকটা চাকরির পরীক্ষাও দিয়েছে, - চাকরিটা কি খুব দরকার হবে? বিয়ে যখন চাকরি করার আগেই দিচ্ছেন। যাকে বিয়ে দেবেন সেতো চাকরি করেই। তাছাড়া আপনি কি করে ভাবলেন যার বাড়িতে বিয়ে দেবেন তারা ওকে চাকরি করতে দেবে, - কিন্তু চাকরিতো ওকে করতেই হবে। - কেন? - চাকরি বাকরি না করলে আমাদের বা দেখবে কে? আমার দুই মেয়ে, ছেলেতো নেই, ওর ওপরেই ভরসা,তাই কষ্ট...

এসো আমার বাড়ি

 এসো আমার বাড়ি একবার এসো আমার বাড়ি,  আমার ঘরে,দখিনা বাতাস ঢোকে না ঘরে। একটা চাঁদ এনো সঙ্গে। এ বাড়িতে জোছনা আসে না, এখানে অনেক তারার মাঝে একটা চাঁদ, যদি এনে দাও,এখানে অনেক ফুল, গোলাপ নেই একটাও, একটা গোলাপ এনো সঙ্গে, লাল গোলাপ। গোলাপ আছে,তবে লাল নয়, সাদা- যদি পারো একটা ফাল্গুন মাস এনো, এখানে বসন্ত আসে না, জানলা দিয়ে পড়ে না সোনালী রোদ। পলাশ ফুল ফোটে যদি তোমার বাগানে, শিমুল ফুল,যদি চাও পারো বুকে এনো সাথে, নানা রঙের ফুলের মাঝে তুমি,সোনালী রোদে- তোমার সোহাগী মুখ, রূপালী জোছনায় তোমার হাসি, মেঘবালিকারা যদি থাকে তোমার আকাশে, ধরে এনো তাদের, তোমার আঁচলে বেঁধে, কোকিল দেখেছি অনেক,  ডাকতে শুনিনি একবারও,গাছের ডাল ধরে, একটা বাঁশি এনো, আড়বাঁশি - কৃষ্ণের মতো করে বাজাব আমি,কদমতলায়, রাধার মতো জল আনতে বেরোবে তুমি- কলসী কাখে, যমুনার তীরে,  যদি দেখো মেঘবালিকারা বৃষ্টি হয়েছে, বোলো,একটু দেরি করো, এখনো কান্নার সময় আসনি, শত বেদনার মনপাখিটা আসতে পারে নি, একটু হাসি এনো বাটি ভরে, মিষ্টি সৌরভ ভরা আছে ফুলের বাগানে, তোমার মিষ্টতা বাড়াতে। কথা দাও কাছে আসবে, বুকে রাখবে, সোনালী রোদ এলে হাসবে, শুকিয়ে গে...