Posts

Showing posts from February, 2022

সুখের জলপ্রপাত

সুখের জলপ্রপাত দেবপ্রসাদ জানা সেদিন নীল আকাশে,মেঘ ছিল কালো। মেঘের ভেলায় ছিল,বৃষ্টিতে সাজানো। নীলাভ সাগরে তার ঢেউ ছিল ভালো। জলের খেলায় মন কি করেছে জানো? গোধূলি লগনে ঝাউ,বনটার ধারে,  মনের পাখিরা সব, দুষ্ট আচরণে। স্তব্ধতার অন্ধকারে,কোমল অধরে। সুস্বাদু আহার করি,ওষ্ঠ আকর্ষণে। ঝড় উঠেছিল মনে,দেহের অঙ্গনে। মিষ্টি হাওয়ায় চুল,হালকা উড়িয়ে। অরজা প্রথম প্রেম,এসেছিল মনে। বৃষ্টি মূখর গোধূলি গিয়েছে হারিয়ে। সুখের জলপ্রপাত,হলো দেহ মনে। প্রথম প্রেমের ফুল,ফোটে ঝাউবনে।

এই বসন্তে

 এই বসন্তে আজ রোদ্দুরের চিঠি পেয়েছি একটা, বসন্ত আসছে,তার সঙ্গে সে আসবে। গনগনে রোদ্দুরের সোনালী মুখটা বসন্তের দীপ্তি,ক্রোধে রক্তবর্ণ হবে। হ্যাঁ এমনই লিখেছে,আলোক সম্রাট বড় শাসকের ভাষা,উপেক্ষার জ্বালা  অপ্রতিরোধ্য হুঙ্কার,ভীমনাদ ঠাট। নীরস করিবে বিশ্ব, সিন্ধু নদীনালা। কোকিলের সুমধুর কণ্ঠে ককা ধ্বনি, বাজবে তা ভোররাতে,অকাল খরায়, বৃদ্ধ বসন্তের দ্বারে,বাজবে খঞ্জনি। প্রিয় আমের মুকুল , লইবে বিদায়। সাধের বসন্তে দেবো,অকাল বৈশাখী। রঙহীন বসন্তের কি রহিবে বাকি?

জীবাশ্ম

 জীবাশ্ম দেবপ্রসাদ জানা একটা জীবাশ্ম পেয়েছি, হৃদয়ের খনি খুঁড়ে। তিনশ বছর পুরানো,মরা প্রেমের জীবাশ্ম। ফাল্গুনের প্রস্ফুটিত,রক্তিম শিমুলের শেকড় - জড়িয়ে ছিল তায়। জীবন্মুক্ত প্রেমাঙ্কুর,বসন্ত বিলাপের মায়ায়- পলাশ আগুনে পোড়ানো ,কতগুলো ভুল, ছিল মমি হয়ে। বসন্তের নীরব আলাপের রঙ মাখা বেদনা, মহাঔষধি প্রেমগাথা বুকের ভিতরে- আপন অঙ্গনে দুখের পরশ লাগা সুগন্ধি অবহেলা। নাম না জানা কতক গুলি ষড়যন্ত্র,হিংসা, মমির আনাচে-কানাচে রাখা অশান্তির তরল, পলাশ কৃষ্ণচূড়ার প্রশংসা ভরা স্বর্ণকুম্ভ। শিমুলের খোঁজ পাওয়া গেল না তাতে, বসন্ত উৎসবের মাতাল মাদক ঠাসা লাল হৃদয়।  কালো হৃদয়ের গোলাপ ফসিল।

সতী মন্দোদরী

 সতী মন্দোদরী দেবপ্রসাদ জানা সমুদ্রমন্থন কালে,সুলক্ষণা নামে, সুন্দরী এক রমণী আর্বিভুত হন। পার্বতীর সখি হয়ে থাকে সেই ধামে। পার্বতীর সঙ্গে সঙ্গে,থাকে সর্বক্ষন। একদিন স্নান শেষে,কহিলেন তাকে, পরিধেয় বস্ত্র আনো,যাও মোর ঘরে। সুলক্ষণা বস্ত্র নিতে,শিবালয়ে ঢোকে, করিল সম্ভোগ শিব,একা পেয়ে তারে। বস্ত্র এনে দিলো দাসী পার্বতীর হাতে। দেরি কেন সুলক্ষণা জানিতে কি পারি? তারে দেখে শিবজায়া পারিল বুঝিতে। অভিশাপে সুলক্ষণা,হলো মন্দোদরী। অদৃষ্টে যা লেখা ছিল কে খন্ডাবে তারে? বিধাতার লীলাখেলা,কে বুঝিতে পারে।

আত্মাহূতি

 আত্মাহূতি দেবপ্রসাদ জানা আলোর খোঁজে সন্ন্যাসী,নীরব চকিতে, তপোবনে কাপালিক,হয়ে ওঠে বন্য। উল্কাপিণ্ড ঝরে পড়ে,ছায়ালোক হতে। অশনিসঙ্কেত দেখে, তিমির অরণ্য। ঈশান কোনে তমসা চিত্র, ক্ষণস্থায়ী। ইন্দ্রিয় মুক্তির সুপ্ত,বাসনা ক্রমশ। নিগুঢ় নিটোল শিষ্ট,পাখি পরিযায়ী। শরীরের সাধনায়, পাবোই অবশ্য। অগ্নি বলয়ের নিচে,প্রতীক্ষার পালা। নাস্তিকতা জীবনের,শেষ ভাবনায়। অগ্নিগর্ভের আহুতি,দেখে কালবেলা। কালবৈশাখীর ঝড় তুলেছে ব্যাথায়। আত্মাহূতি দিতে হবে,অশ্বমেধ শেষে। মহাশূন্যে অট্টহাস্যে ভিখারির বেসে।

হৃদয় মাঝারে

 হৃদয় মাঝারে দেবপ্রসাদ জানা হৃদয় মাঝারে তারে,রেখেছি লুকিয়ে। রূপালী আলোয় যারে,দেখেছি একদা। মনস্তাত্ত্বিক আলোকে,রেখেছি ভরিয়ে। বোধিবৃক্ষের আঙিনা,সাজানো সর্বদা। আকাশ মেঘের সাথে একি আচরণ। চাঁদ যেথা গুপ্ত রাখে,রূপালী জোছনা। মেঘেরা শিউরে উঠে,করেছে রোদন। হৃদয়ের যন্ত্রণা যে,দেখতে চায় না। জীবনে সঞ্চিত থাকে,দুখের পাহাড়। প্রশ্বাসের গভীরতা বুঝেছে কজন? অবাক হয়েছি দেখে,অকালে আঁধার।  চোখে চোখ রেখে বুঝি,কতটা আপন। জীবন চিহ্নিত করে,হিসেবি বার্ণিক। তারে বার্তা দিয়ে গেছে,ব্যাথিত প্রেমিক।

অসভ্য কবিতা

 অসভ্য কবিতা দেবপ্রসাদ জানা অশ্রুজল ফোঁটাফোঁটা,শুষ্ক স্তন বেয়ে। যে স্তনের বৃন্তমুলে, শিশু সদ্যজাত। মায়ের কুচাগ্র শুষে, দুগ্ধ নিচ্ছে খেয়ে। দুগ্ধহীন বক্ষে তার,নোনা সুধামৃত। মায়ের চোখের জল,মোটে মিথ্যে নয়। দুধের অমৃত স্বাদ সে,পাবে না জানি। ক্ষুধার্ত মায়ের স্তনে,নোনা দুগ্ধ বয়। এই ভেবে সদ্য শিশু,তাও নেবে মানি। অবাক পৃথিবী কহে,ওরে মাতা শোন। ক্ষুধার সাম্রাজ্যে শিশু,রাত্রি জেগে রয়। যত ক্ষুধা বিশ্বভরা,নিয়েছে আসন। মানদণ্ড হাতে নিয়ে,দেখিও না ভয়। মনেরেখো দণ্ডধারী,এ যেন না কহে। মায়ের দুধের স্বাদ, সুধামৃত নহে।

ঐক্য ভাবনা

 ঐক্য ভাবনা রাতের কালিমা কাটে,দিনের আলোয়। বৃক্ষগর্ভ ভেদ করে, জন্ম নেয় ফুল। নব সূর্যালোকে হাসে,তরুন হৃদয়। ধ্বনিময় মহাকাশে,নাই ধর্মকুল। কুলষিত জাতধর্মে,এক ঐক‍্যতান। দিকে দিকে জাগরণ,বর্ণ অনাসক্তি। ঐক্য ভাবনায় বাজে,বৈরাগ্যের গান। এক সুর,এক তালে, এক ধর্মে ভক্তি। হীন নিরক্ষরতার ,হোক অবসান।  অশিক্ষা অধর্ম আজি,স্তব্ধ স্থানচ্যুত। মুখের ভাষায় ঘোরে,স্বচ্ছ উপাখ্যান। অজ্ঞানতার আঁধার কাটে অবিরত। জেগে উঠেছে আশার ঋদ্ধ অভিপ্রায়। পৃথিবীর মাটিতে কি, সেটা দেখা যায়?

স্বর্ণস্বর্গ প্রাপ্তি

 স্বর্ণস্বর্গ প্রাপ্তি দেবপ্রসাদ জানা মরণে মেলেনি ছুটি,আরো আছে গান। জীবন্ত গানের ছোঁয়া,আজো লেগে আছে। কায়াহীন ছায়ারাও,দিয়ে গেছে প্রাণ। অশরীরী গায়কেরা,দেহ ছেড়ে গেছে। কালের কোকিল কন্ঠ,গেলে রুদ্ধ করে। হে সুরের কারিগর লতা সন্ধ্যা বাপি। ছেড়ে গেলে স্বর্ণস্বর্গে হাতে হাত ধরে। উল্লসিত ইন্দ্রপুরী সারারাত্র ব্যাপি। আকাশের ময়দানে,নেমে পড়ো সব। সুরের পসরা নিয়ে, দেবদেবী সনে। সুরের ঝংকারে ওঠে,নতুন বিপ্লব। সুর তাল লয় মিলে,কলকন্ঠ তানে।  কর্ণ কন্ঠ বাদ্যযন্ত্রে,মধুর মিলন। একেএকে সব গেলে,এতই আপন।

বন্দী বিপ্লব

 বন্দী বিপ্লব মুক্তির সীমান্ত ঘেরা,বিস্তীর্ণ প্রান্তরে। বিপর্যস্ত গনতন্ত্র করে আর্তনাদ। কন্ঠরূদ্ধ বিস্ফোরক,পর্বত অন্তরে। বিপ্লবের বৈশ্বানর,গুনেছে প্রমাদ। পদানত জনতার, ছিন্ন প্রচ্ছাদন। প্রগতির ঘরে ঘরে,পড়ে জ্যান্ত লাশ। প্রতীকচিহ্নের রঙে,মরে জনগণ। গনতন্ত্রের পতাকা,আজ ক্রীতদাস। হুঁসিয়ারী ঘরে ঘরে রক্তের তরঙ্গে। আশ্চর্য উদ্দামে আসে,চিহ্নিত মরণ। ভোগের লালসা বাড়ে গদিটার সঙ্গে। বুভুক্ষু কুকুর যেন ঘোরে সর্বক্ষণ। সযত্নে মুখোশধারী করে আস্ফালন। বিশ্বব্যাপী প্রতীক্ষায় হবে আন্দোলন।

জোছনার আলো

 জোছনার আলো শিশু জোছনারা মাঠে,দিচ্ছে হাতছানি। সবুজ ঘাসের বুকে,হাসে কলানিধি। দীর্ঘ এক অন্ধকারে,বিধু অভিমানী। নিরাভরণ নির্লজ্জ,বাচাল কৌমদী। জোছনাকে ভালোবেসে,মোহগ্রস্ত রাত। অমৃতগঙ্গার ঘাটে,ভেবেছিল ইন্দু। কথা,হবে তার সাথে,দিয়ে হাতে হাত। স্নিগ্ধ রজনীর পাশে,জোছনার সিন্ধু। কালো মেঘ এসে বলে ওরে অভিমানী। বাতাসের সাথে মোর নেই বনিবনা। কাল আমি ঢেকে দেবো,রূপালী জোছনা। বাতাসের তাড়নায় , সরে যাবো জানি। আবার জোছনা ভরা,সবুজের মাঠ। পৃথিবীর বুকে রবে, জোছনার হাট।

নাট্যমঞ্চ

 নাট্যমঞ্চ অন্ধকারে জেগে থাকে,নীল সাজঘর। দিগন্তরে মগ্ন কায়া,ঠায় দেখে যারে- লালনীল আলো জ্বেলে,করে কালান্তর। বিশ্বমঞ্চে আনাগোনা,নাটক আকারে।    সর্বনাশে লোক হাসে,কাঁদে অভিনেতা। হাসিকান্না পাপতাপ, মঞ্চ ভরা সঙ। লোকশিক্ষার প্রসঙ্গে,গল্প গানে গাথা। কালো পর্দা অন্ধকার, চরিত্রের ঢঙ। ঘন্টা দুই স্বপ্নঘোরে বদ্ধ পরিখায়। মুগ্ধ দর্শকের বুকে, সীমাহীন চাপ।  বসে থেকে,খুব কাছে,শুনেছে আলাপ। মুখে হাসি চোখে জল,নিয়েছে বিদায়। তীব্রতার স্বেচ্ছাচারে দর্শকেরা চুপ। সমাজ সংসারে দেখা পাশাপাশি রূপ।

স্বপ্নডিঙা

 স্বপ্নডিঙা স্বপ্নডিঙ্গা ভাসিয়ে দিলাম - সোনালী রূপালী আলোকের স্বপ্ন নিয়ে, দেশ দেশান্তরে -স্বপ্ন বিক্রি করি। প্রেমের স্বপ্ন।  যার চোখের তারায় কিশোরী চাঁদ। যার হৃদয় ভরা গোলাপের চাষ। লাল গোলাপের। যার ঘরে প্রেম নেই, যার মনে অশান্ত ভাবনা, যার মন বিষন্নতায় ছুঁয়েছে,অক্ষর মেঘের  রসাল প্রেম, প্রথমে বিনে পয়সায় দি- প্রেমে অভ্যস্ত হলে, চড়া দামে বিক্রি করি । মুনাফা অনেক। আজকাল চাহিদা অনেক। উৎপাদন কম।  ফলে মজুত করে, রেখেছি। কিশোরী,যুবতী,বিবাহিত বৌদি- অনলাইন অফলাইন সব লাইনে কিনছে প্রেম। পরকীয়া ও আছে সাথে, যদি বিক্রি হয় - হচ্ছে, তবে চুপিচুপি। কখনো সখনো। চেনা অচেনা পরিচিত অপরিচিত সকলে। প্রেম কিনছে প্রতিদিন।  কেউ ফেসবুকে, কেউ ওয়াটস অ্যাপে - ম্যাসেঞ্জারে ও- যারা প্রেমে আঘাত পেয়েছে বেশি - তাদের জন্য চোখের জল রয়েছে মজুত। বিনে পয়সায় দিতে পারি।  পাউচ প্যাকে পাওয়া যায়। টেট্রা প্যাক। প্লাস্টিক বর্জিত প্যাক।  ইদানিং প্রেমের থেকে পরকীয়া বিক্রি বেশি। মাঠে ঘাটে ফ্লাটে চড়া দামে বিক্রি করি।  স্বপ্নডিঙ্গায় প্রেমের স্বপ্ন- লাগলে বোলো, অনলাইনে পাবে। কুড়ি মিনিটে হাতে, নইলে ফ্রি। এক...

সীতার অভিযোগ

 সীতার অভিযোগ  কহ রাম রঘুশ্রেষ্ঠ অযোধ্যা নৃপতি। কোন পাপে,তুমি মোরে দিলা নির্বাসনে? মোহিনী রূপসী বেশ,দেখিলে ভূপতি? দেখোনি এগার মাস,পুড়েছি আগুনে। মিথিলার রাজা মোর,পিতা ধর্মজ্ঞানী। রাজলক্ষ্মী,ধন-স্রোতে,মম ভাগ্যতরি। সেই আমি রাজরানী,রঘু কুল মনি। হরধনু ভঙ্গ করে,করিলে ভিখারী। সন্দেহের বশে মোরে,অগ্নিদগ্ধ করো। প্রজাভয়ে প্রাণপ্রিয়,দিলে নির্বাসন। রাজাসন রাজছত্র,আঁকড়িয়ে ধরো। এত কি সংশয় তব,এই আচরণ।   কহ রাম কহ মোরে কোন অধিকারে। অযত্নে রাখিলে মোরে,মনের ভাণ্ডারে।   

ভালো দিন

 ভালো দিন দেবপ্রসাদ জানা যে রাতে তোমার আমার দেহগত বিনিময়, সেই রাতেই রজনী গন্ধার আর নীলপালকের ফুল্ল কুসুমিত অবোধ মৈথুন। সেটাই ত দিন মনে রাখার। এ যে নষ্ট গল্প,নষ্ট শব্দে লেখা। দিন গুলো আর,মনে থাকে না বুঝলেন। ভালোবাসার আবার দিন হয় নাকি ? কানে ঝিঁঝি পোকার মতো শব্দ করে- কে যেন বলে গেল ভালোবাসি। হৃদয় জুড়ে অসাড়ে রক্তপাত। মনের সাদা গোলাপ খানা রক্ত গোলাপ হলো। উথাল পাথাল রক্ত স্রোতে শরীরি অবগাহন। অনাকাঙ্ক্ষিত আলিঙ্গনে। নগ্ন স্পর্শে,গোপনতম সুখের সেই নষ্ট-রূপরেখা। সেই ফেলে আসা দিনের কিশোরী বিকেলে- আটপৌরে নতুন শাড়িতে প্রথম- এই বলে ডাকা, শুনছো- নীলাম্বরী শাড়ির গন্ধে মাতায়ারা মন, একাকীত্ব কাটিয়ে, জীবনের সব থেকে ভালো দিন। হাতে হাত রেখে নীরব রমণগাথা - এর থেকে ভালো দিন হয় নাকি?

শেষ ইতিপূর্বে

 শেষ ইতিপূর্বে। দেবপ্রসাদ জানা আকাশের নিচে গোটা এক গোল পৃথিবী। কোথাও সবুজ গাছে ঘেরা বনভূমি, কোথাও হলুদ বালুকারাশি, কোথাও নীল জলের উচ্ছাস, আর সাদা বরফের চাঁই। এই নিয়ে আনন্দে ঘুরছে শিশুর মতো। একফালি বাতাস চুমু দিয়ে আছে,তার গালে। আশ্চর্য হয়ে যাই, তাদের ভালোবাসার সংসার দেখে। তুমি বুঝতে পারছো বসুন্ধরা ? আমি আর তোমার মায়ায় গড়া,সুন্দরী মন। হেঁটে যাচ্ছি সেই গোল পৃথিবীর বুকে। সভ্যতার ইতিহাস লিখতে লিখতে। নদীর মতো পথ পরিবর্তন করতে করতে, পাথুরে পথ ভেঙে। কখনো সরষে ফুলের ক্ষেতে,   কখনো ঘন জঙ্গলে সবুজ ছাওয়া - আকাশটাকে বিশাল নখের আঁচড়ে, রক্তাক্ত করতে করতে, সময়ের শেষ দিকে। হেঁটে যাচ্ছি। শুধু আমি আর তোমার সোহাগী মন। হলুদ বালুকারাশির ওপরে,  নৃত্যরত বালিকাদের আনন্দগান থামিয়ে, চোখের ইশারায় অগ্নিদগ্ধ করে,  চলেছি উত্তরে বরফের মন গলাতে। ইচ্ছেরা উঁকি দিচ্ছে মনের আকাশে রোমাঞ্চিত হচ্ছিলে তুমি, পরকীয়ার নীলাভ পথে। মনের সাগরে ঢেউ উঠেছে, অবৈধ সন্তান আশায়। ইতিহাস হতে হবে তোমার সন্তানদের। তাদের হাতে মরবে প্রকৃতি,গড়বে চেঙ্গিস খাঁ। ঘাড়ে হাত রেখে এক কোপে কেটে ফেলবে গর্দান। রেশমী কালো অন্ধকার গুহা...

ভালোবাসার বীজ

 ভালোবাসার বীজ দেবপ্রসাদ জানা এক সমুদ্র প্রেম নিয়ে একদিন  লাল গোলাপের ভালোবাসায়,   তোমার হাতে হাত রেখে বলেছিলাম ভালোবাসি। সেটা ছিল গোলাপ দিবস। রোদ্র মেঘের খুনসুটি ছিল, রামধনু ছিল আকাশে। অগুনতি কথার স্রোতে বুনেছিলাম  ভালোবাসার বীজ,   আঁকড়ে ধরবো বলে, বাড়িয়ে ধরেছিলাম হাত। বুকের মাঝে ভালোবাসার মায়ায় সেদিন  উঠেছিল ঝড়। ভেবেছিলাম আমায় রাখবে যতনে ।  প্রতিশ্রুতি পাইনি সেদিন - ভেঙ্গে গেছিল মন। শরীর নয়,চেয়েছিলাম সুন্দর  হৃদয় ।   তোমার ভালোবাসায় দূর হবে, আমার একাকীত্ব, আমার শূণ্যতা।   আমার দুঃখ,আমার কষ্ট, অতীতের সব আশায় জল ঢেলে, আমাকে সরিয়ে দিয়েছিলে দূরে। হারিয়ে দিয়েছিলে,আমাকে- আমার আশাকে। স্মৃতিরা আজ শব্দহীন।  কবিতায় বসন্ত আসে না। ঝরা পাতার মতো পড়ে থাকি,গাছের তলে।      

যখন রোদ্দুর

 যখন রোদ্দুর  দেবপ্রসাদ জানা অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে,সাধের পৃথিবী। আলো শুষে নিচ্ছে রোজ,সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। প্রকৃতির মৃত্যুযজ্ঞে, হয়ে যাক ছবি। মহাশূণ্যে মহাকাশে ,ঝুলুক বসুধা। মহাকাশে রজনীর,মালা দিয়ে গলে, মহান পৃথিবী ঝুলে থাক অভিমানে। ধূসর ধুলায় মিশে যাক না তাহলে।  প্রভাতী বাতাস পাবে,মহাকাশ যানে। অমৃতসুধায় মাখা,আলোকের বুক। রাতের আঁধার কাটে,রোদ্দুর ছোঁয়ায়। লাগুক না প্রাণে, আসুক না সুখ। পৃথিবী আবার জাগে নতুন আশায়। যদি রোদ্দুর ছড়ায়,অন্ধকার প্রাণে। আলোর বাতাস লেগে,প্রেম আসে মনে।

কালপুরুষ

 কালপুরুষ দেবপ্রসাদ জানা ইহজন্মের প্রতিটা,বিষাদ নির্মাণে। অবকাশে হারিয়েছে,মধুর সম্পর্ক। মানুষের মত যেন,হলুদাভ বর্ণে। অত্যাবশ্যক ভাবেই,এসেছে বিতর্ক। কাঁপিয়ে দিয়েছে এই,সুস্থ জগতকে। ছায়াপথের বিকীর্ণ,নীহারিকা নামে। এ কোন কালপুরুষ, হাতের ধনুকে। আঁধার আকাশ ভাঙে,উচ্ছাসে উদ্দামে। লড়াকু সৈনিক যেন, যুদ্ধের শুরুতে। তৈরী হচ্ছে কটি বেঁধে,দক্ষ সৈনিকেরা। নগর রক্ষার কাজে,তরবারি হাতে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নক্ষত্রের,সাথে আলোকেরা। অন্ধকারের ভেতরে,রয়েছে আলোক। যুগে যুগে সাধনায়,দেখেছে ভূ-লোক।

স্বপ্নের ভীড়ে

 স্বপ্নের ভীড়ে দেভপ্রসাদ জানা উদাসীন বারান্দায়,রূপালী জোছনা। রজনীগন্ধার ফুলে,আতরের গন্ধ। মার ছবিটায় তার, বিবর্ণ চেতনা। পূর্ণিমার চাঁদে লাগে,ভাবনার ছন্দ। স্বপনের পথ ধরে,ডেকে আনে মাতা। স্মিত নয়নের দিশা,আছে মোর দিকে। আপ্লুত বিস্ময়ে আমি,রয়েছি অযথা। আদর আল্পনা এঁকে,যাচ্ছে চোখে মুখে। রাতের আকাশ যেন,মায়াবী হরিনী জোছনার শাড়ি পরে, প্রকৃতি অদ্ভূত। মায়ের ছোঁয়ায় তার,খুলিয়াছে বেনী উড়ন্ত মেঘের মত, হাসিতে প্রস্তুত। নির্মলচিত্তে নিয়েছি,স্বপ্নের আবেশ। মোহিত করেছে সদা, ভাবনার দেশ।

নীল পালক

 নীল পালক দেবপ্রসাদ জানা নীলাভ পালকে লেখা,কলম সৈনিক। ধনুকের ছিলা টেনে,কলমের তীর। কলম হাতে লিখছে,সাহিত্য দৈনিক। গল্প কবিতা প্রবন্ধ লেখে মসি বীর। শনিবারের কলম, গল্প ম্যারাথন। সাপ্তাহিকে সাহিত্যের নানান চমক। সাহিত্যের লীগে খেলে,সর্ব সাধারণ। ভুল হলে কড়া হবে,পাঁচ বিচারক। স্মৃতি পুরস্কার আছে,শুভ্রনীল দের। কচিকাচা এঁকে ফেলো মন চায় যেটা। কাব্যগ্রন্থ থাকে যদি কোনো কবিদের। তুলসী জানার স্মৃতি, পুরস্কার ওটা। শশাঙ্ক শেখর নন্দী স্মৃতি পুরস্কারে। তিনজন পাবে সেটা, এই পরিবারে।

কোকিল

কোকিল  দেবপ্রসাদ জানা কোকিলের ডাকে ঘুম,ভেঙেছিল আজ। এতদিনে কোকিলের,খুলেছিল দিল। বসন্ত যে অহংকারী,সেযে ঋতুরাজ। তাই এতদিন আর,ডাকেনি কোকিল। কতসখী আছে তার,বলে ভালোবাসি। চিরসাথী কোকিলের,কিযে হলো ভুল। কালো রঙ দেখে তার,করে হাসাহাসি। আছে তার দাসদাসী, নানারঙে ফুল। দেখেছে কোকিল তবু,মিথ্যা অভিমানে। ভেবেছিল বসন্তের,সব অভিনয়। কালো বলেই বসন্ত,কটুবাক্য হেনে- জর্জরিত করেছিল, করেনি প্রণয়। কোকিলের ঘর নাই,রঙ তার কালো। কেমনে বসন্ত তারে,ভালোবাসে বলো?

তারপর

 তারপর দেবপ্রসাদ জানা তারপর বৃষ্টি নামে,গভীর জঙ্গলে। ভিজে যায় হৈমন্তীর,কিশোরী শরীর। জঙ্গলের পথ ধরে,বাড়ি ফেরে বলে, দেরি হলেই মা হয়,অনতি অস্থির। একা একা অন্ধকারে,ঘন বৃক্ষ বনে। কোনমতে সিক্তদেহ,খোলে অপিনদ্ধ। কোথা হতে অলর্কের মতো,আগ্রাসনে। আচম্বিতে হস্ত কার, কুচাগ্রে আবদ্ধ। ষোড়শী হৈমন্তী কাঁদে,তীক্ষ্ণ বিদলনে। অসহায় অনাবৃত,কিশোরী হৈমন্তী, মুর্ছা যায় বেদনায়, অন্ধকার বনে। মাতরিশ্বা বেগে এলো,পশু অগুনতি। কে বলে জঙ্গলে শুধু,হিংস্র পশু ঘোরে। আছে, মুক্ত জনারণ্যে ,গাঢ় অন্ধকারে।

অনাকাঙ্ক্ষিত

 অনাকাঙ্ক্ষিত  আজ যদি প্রশ্ন করো,শীতের পাখিকে। পাখা মেলে কত দূরে যাও অনায়াসে। মেঘেদের সাথে উড়ে, আকাশের দিকে। ধ্বন্যাত্মক শব্দ করে, ঐ বাতাসে ভেসে। অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির,শীতল ছোঁয়ায়। হিমশীতল বাতাসে, ধূর্ত  শিহরণে - একদণ্ড জিরিয়েছ,কিনা নিরালায়? উষ্ণ লেপের তলায়,প্রেমের আগুনে। দেখো আমি শুয়ে আছি,তপ্ত বালাপোষে। শীতের আগুন আজ,দিয়ে গেছে ফাঁকি। সেও যেন লুকিয়েছে, কুয়াশার দেশে। জানালার পাল্লাগুলো,বন্ধ করে রাখি। যে পালকের চাদরে, ঢাকা দেহখানি। কোমল হৃদয়ে হয়,উষ্ণ প্রতিধ্বনি।

জোছনার আলো

 জোছনার আলো শিশু জোছনারা মাঠে ,দিচ্ছে হাতছানি বসে আছি সূর্যগঙ্গার বাঁধানো ঘাটে। তোমার নামটা ঠিক কবিতার মতো না, তাই বদলে নিলাম আমি। নীলা বসে আমার পাশে। পুকুরের কলমী লতা গুলো,  বলল, জোছনাকে,ভালোবাসি তোমায়। আমি তার হাতটা নিয়ে হাতে,বললাম- নীলা,একবার বলো। কি বলবে নীলা? কোথায় তার হাসি? জোছনা রাতে,এই সূর্যগঙ্গার ঘাটে, ভেবেছিল বলবে কথাটা। বলতে পারেনি - জোছনালোকিত স্নিগ্ধ রজনী  নীলা আমার পাশে। মেঘের পরে মেঘ,  মাঠের পরে বন,ঘন জঙ্গল। কোথাও কেউ নেই। শুধু ঝিরিঝিরি বাতাসের স্পর্শ।  হাতে হাত রেখে নীলা বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। এই ভাবেই ত্রিশ বছর চলে গেল, নীলা আর এলো না। আজ আমি বড় একা। একাকীত্ব আর নিসঙ্গতা  আমাকে কুঁড়ে  কুঁড়ে খাচ্ছে। কাঁচের দেয়ালের মতো সে প্রেম বালুচরে লেখা দু'টি নাম, আজ আর নেই। জানি, নীলা, আমি সব জানি,  তুমি সেই দিনের স্মৃতি ভুলে ভালই আছো বহুদূরে।  আর আমি------ এই তো বেশ আছি। অপেক্ষা করো, আগামীকাল তোমার কাছে  হয়তো বা আমার মৃত্যুর খবর  যথারীতি পৌঁছে যাবে। ভাল থেকো কষ্টের সীমানায়।।

দেখতে দেখতে কুড়ি

 দেখতে দেখতে কুড়ি দেবপ্রসাদ জানা দেখতে দেখতে কুড়ি বৎসর ধায়। সন্তর্পণে হিমস্বরে,জীবন কার্ণিশে- জোছনা মোড়া রাতের,স্মৃতিময়তায়। জমে যাওয়া ধুলোর,সেই মজলিশে। আমার জীবনে এলে,নিয়ে সুপ্রভাত। বোধের দরজা খুলে,অবিরত টানে বাড়িয়ে দিয়েছ তব,প্রত্যাশার হাত। বুঝতে বুঝতে কুড়ি,কেমনে কে জানে? কিশোরী শরীরে সেই,সুকুমারী স্পর্শ। বিনিময় বিনিয়োগ, আতীব্র আকুতি। ভালোবাসা দেয়ানেয়া চরিত্রে আদর্শ। নীলাভ আকাশে হাসে,বিরহ বিবৃতি। সময় চলেছে পিছে,গুপ্তচর হয়ে। বালুচরে অবিরত,নদী যায় বয়ে।

সরস্বতী দেবী

 সরস্বতী দেবী দেবপ্রসাদ জানা দ্বিভূজা,শ্বেতবরণী,শ্বেতাম্বরা নারী হে শ্বেতদল বাসিনী,বিদ্যেধরী মাতা। শ্বেত হংসবিহারিণী,বীণা হস্তধারী। পুস্তক-হস্তে প্রথিত,ব্রহ্মার দুহিতা। কমলধারিণী দীপ্তি,কৌমুদী চন্দ্রিকা। জয় জয় সরস্বতী,বাগ্দেবী সারদা। হে কুচযুগশোভিত,কামিনী ঝটিকা। শুভ্র সরসিজ হস্তে, ভামিনী নর্মদা। প্রকৃতি ভারতী বাণী,গলে মুক্তাহার। হে বীণা পুস্তকধারী,বসি পদ্মাসনে। ভগবতী মহাশ্বেতা, দেবী বিদ্যাধার। জ্ঞান দাও ধৈর্য্য দাও,শব্দ দাও মনে। বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী,করি পত্রাঞ্জলি বুদ্ধি দাও,শিক্ষা দাও,করো শক্তিশালী। *** সরস্বতী পুরাণ অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মের প্রধান তিন দেবতার একজন হলেন ব্রহ্মা। সরস্বতী ব্রহ্মার মেয়ে পরে তার বাবারই স্ত্রী। সরস্বতী পুরাণে তার জন্ম নিয়ে দুই ধরনের গল্প রয়েছে, একটি হল, ব্রহ্মা নিজেই জীবনীশক্তি বা বীর্য থেকে সরাসরি সরস্বতীর জন্ম দেয়। অন্যটি হল- ব্রহ্মার বীর্য থেকে অগস্ত নামে এক ঋষির জন্ম হয়, সেই ঋষি পরে সরস্বতীর জন্ম দেয়। ব্রহ্মার মেয়ে মতান্তরে নাতনী, বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী হিন্দুদেবী।  সরস্বতীর রূপ দেখে ব্রহ্মা আর নিজেকে সামলাতে পারেনি, বাবা বা ঠাকুরদাদা ব্রহ...

আসেনি ফাগুন

 আসেনি ফাগুন যদি পাতাগুলো ঝরে যায় একদিন- যদি ফুল নাই ফোটে,গোলাপের ডালে। যদি কোকিলের কুহু,না ডাকে সেদিন। তবে মনে রেখো আমি নেই এ সকালে। আবীরের রঙ হয়,ফ্যাকাশে বিবর্ণ। সূর্য সমুূদ্রের খেলা,হয়ে থাকে বন্ধ। সারাদিন আকাশের, ধায় মেঘচূর্ণ। দেখো মোর দেহ হতে,পাবে মৃত্যুগন্ধ। তোলপাড় হৃদয়ের ঢেউ হলো স্থির। তচনচ করে গেছে,আয়লার ঝড়। মৃত্যুঘন্টা বেজে গেছে, হয়েছি অধীর। অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা ঘোরে মনের ভিতর।  পূর্ণিমা আকাশে লাগে বাসন্তী আগুন। ছেড়ে যেতে হবে দেখে আসেনি ফাগুন।