নিয়তি
।। নিয়তি।।
১৮ দিনের যুদ্ধ শেষ, পিতামহ ভীষ্ম এখনো শরশয্যায়। কৃষ্ণ প্রতিটি মানুষের সঙ্গে দেখা করে তাদের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার কথা জানছিলেন। 'দ্রৌপদীর' শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। হস্তিনাপুরের মহারানী 'দ্রৌপদী' নিজের মহলে একাকী মনোকষ্টে ছিলেন।
ঠিক তখনই, "ভগবান শ্রীকৃষ্ণের" আগমন...*
দ্রৌপদী':- এ কি হয়ে গেল সখা? আমি এমনটা
ভাবিনি কখনো, বলো কার কুছায়ায়
গোটা বিশ্ব অন্ধকারে ডুবে গেল আজ?
দারুণ দুর্নীত দুষ্ট দুরাত্মার লোভে
সাধের হস্তিনাপুর আজ জনশূন্য,
অধার্মিক দুরাচার বিশ্বাসঘাতক ।
কপট লম্পট শঠ, দুষ্ট দুর্যোধন -
ন্যায়ান্যায় বোধহীন কূর প্রবঞ্চক।
শান্তি হেতু দিলো না সে মোটে পাঁচগ্রাম।
সন্ধি অভিলাষে আসা ভগবান কৃষ্ণ-
তারে বেঁধে রাখে দুষ্ট, এমনই মূর্খ?
সভামাঝে তব তেজ বাড়িল বিশাল
মহাকাল রূপে তুমি হলে, আর্বিভূত।
এ কিসের প্রলোভন ভগবান কৃষ্ণ?
শ্রীকৃষ্ণ":- নিয়তি বড় নিষ্ঠুর, নিয়তি, কখনো
আমাদের ভাবনার অনুরূপ নয়।
নিয়তি 'কর্মকে' যথা যথা পরিণামে
বদলে দেয়। তুমি তো প্রতিশোধ নিতে
চেয়েছিলে যাঞ্জশ্রেনী, সফল হয়েছো।
প্রতিশোধ পরিপূর্ণ হয়েছে তোমার।
'দুর্যোধন 'দুঃশাসন' নয়, সেই ক্রোধে
সমস্ত 'কৌরব' আজ, বিলুপ্ত সমাপ্ত।
তোমার তো সুপ্রসন্ন হওয়া উচিত।
দ্রৌপদী':- হে শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব, আমায় সান্ত্বনা
দিতে এসেছো তো? নাকি কাটা ঘায়ে
লবণের ছিঁটে দিচ্ছো ?
শ্রীকৃষ্ণ:- না সখী দ্রৌপদী,
আমি তো তোমাকে বাস্তব ঘটনা
জানাতে এসেছি। সব কু-কর্মের
পরিণামকে আমরা দূর-দূরান্তেও
দেখতে পাই না, আর যেই কু-কর্মের
ফল পেতে শুরু করি, মেনে নিতে কষ্ট
হয়, তখনই এই হাতে আর কিছু-
করার থাকে না।
দ্রৌপদী':- তবে কি, এই যুদ্ধের
জন্য সম্পূর্ণ আমিই দায়ী হে মাধব?
শ্রীকৃষ্ণ :- না কৃষ্ণা, তুমি নিজেকে যে গুরুত্বপূর্ণ
ভাবছো, সেটাতো অন্য কারোর ভাবনা।
কিন্তু তুমি যদি নিজে কর্মের ওপর
একটু দূরদর্শিতা দেখাতে; তাহলে
স্বয়ং তুমি, এতো কষ্ট কখনই পেতে না।
দ্রৌপদী':- আমিই বা কি করতে পারতাম সখা ?
মহারাজ যুধিষ্ঠির, জুয়ায় হারেন,
বাজি রাখার জন্য আমাকেই বেছে
নিলেন তখন, সেই উন্মুক্ত সভায়
আমার বস্ত্র হরণ, একি ধর্ম রক্ষা?
সে অবস্থায় আমি কি, করতাম কৃষ্ণ?
শ্রীকৃষ্ণ:- তুমি অনেক কিছুই করতে পারতে..
তোমার প্রতিহিংসায়, কৌরব কুলের
যে ক্ষতি হলো তা, তুমি বুঝতে পারছো
কৃষ্ণা, যখন তোমার স্বয়ংবর হলো-
কর্ণের মত বীরের অপমান করে-
প্রতিযোগিতার থেকে, বাদ না দিলেই
দেখতে যে পরিণাম কিছু অন্য হতো।
যখন 'কুন্তী' তোমায় পঞ্চপাণ্ডবের
স্ত্রী হতে আদেশ দিলে; তখন তুমি তা
যুক্তিপূর্ণ অস্বীকার করতে পারতে।
তাহলেও পরিণাম কিছু অন্য হতো!
তুমি নিজের মহলে, 'দুর্যোধনকে' বা
অপমানিত করলে কেন? হে দ্রৌপদী
'অন্ধের পুত্র অন্ধই' বলার কি ছিল?
এ কথাটা না বললে হয়তো তোমার
বস্ত্রহরণের চেষ্টা, তখন হতো না।
হয়তো পরিস্থিতিও আজ অন্য হতো।
দ্রৌপদী- আমাকে হাসালে সখা, তোমার ছলনা
তোমার কূটনৈতিক, চিন্তাধারা তা-কি
আমাদের বোধগম্য? কখনো তোমাকে
দেখে মনে হয় তুমি, সাধারণ, অতি
সাধারণ একজন, কখনো আবার
মহাকাল, ভগবান, তুমি যে কি আমি
এখন বুঝতে পারি, একটি টুকরো
কাপড়ের ঋণ তুমি, সহস্র কাপড়
দিয়ে শোধ করো, কুরুক্ষেত্রে তুমি
একাই লড়াই করো, যে অস্ত্র ধরোনি
তুমি, সেই অস্ত্রে গোটা কুরুক্ষেত্র পরে
অনায়াসে যুদ্ধ করো, পাণ্ডবের কোন
ক্ষমতা ছিল যে ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণদের
পরাজিত করে, এতো তোমারই খেলা।
অর্জুনও তুমি, কর্ণ, সেও তুমি, কার
দেহ, কে মরছে, সেতো তুমি গদাধর।
তবু এই যুদ্ধে তুমি আমাকেই দোষী
সাজালে, ইতিহাসের পাতায় পাতায়
লেখা থাকবে দ্রৌপদী, একা অপরাধী।
শ্রীকৃষ্ণ - এমন করে ভাবছো কেন যাজ্ঞশ্রেনী?
দোষী তুমি নও, আর অপরাধী আমি
নই, তবু যে প্রতিজ্ঞা তুমি করেছিলে
সেতো ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা, এতো ভয়ানক
সেতো তুমি জানো কৃষ্ণা, কি হতো আগুনে
ঘি না ঢেলে, অপমান নীরবে তা সহ্য
করে নিলে? মহাবলী ভীমের সমীপে
অপমানের
Comments
Post a Comment