আমি মেঘ
মেঘ
এই ঘনকালো রূপে যে আলোর ঝলকানি,
বাতাসের সাথে প্রতি নিয়ত লড়াই,
তোমার আকাশখানা ঢেকে রাখি কিছুক্ষণ,
স্বপ্ন গুলোকে এক সাথে বেঁধে,
উড়ে যাই বাতাসের সাথে,
দূর থেকে দূরান্তে,
সূর্যের তাপ, এলোপাথাড়ি বাতাসের-
অপ্রতিরুদ্ধ লড়াই তোমরা বোঝনি,
বুঝেছ স্বপ্ন, তৃষ্ণার্ত মানুষ-
জতুগৃহ থেকে বেরিয়ে শান্তির পরশ।
না না আমি বৃষ্টি দেবো না।
কেন বৃষ্টি দেবো?
বৃষ্টি দিলে আমার কি সুখ?
বৃষ্টি দিলে তোমাদের সুখ।
তোমাদের সুখে আমার কি প্রয়োজন!
দেখো, আমার কি যন্ত্রণা নেই?
এই নিদারুণ বিদ্যুতাগ্নি,
আমি অহরহ আমার হৃদয়ে ধারণ করছি।
আমার হৃদয়ে সেই সুহাসিনীর উদয় দেখিয়া তোমাদের চক্ষু আনন্দিত হয়, কিন্তু ইহার স্পর্শ মাত্রে তোমরা দগ্ধ হও। সেই অগ্নি আমি হৃদয়ে ধরি। আমি ভিন্ন কাহার সাধ্য এ আগুন হৃদয়ে ধরে?
দেখ, বায়ু আমাকে সর্ব্বদা অস্থির করিতেছে। বায়ু, দিগবিদিক্ বোধ নাই, সকল
দিক্ হইতে বহিতেছে। আমি যাই জলভারগুরু, তাই বায়ু আমাকে উড়াইতে পারে না। তোমরা ভয় করিও না, আমি এখনই বৃষ্টি করিতেছি পৃথিবী শস্যশালিনী হইবে।
আমার পূজা দিও।
আমার গর্জন অতি ভয়ানক তোমরা ভয় পাইও না। আমি যখন মন্দগম্ভীর গর্জন কবি, বৃক্ষপত্র সকল কম্পিত করিয়া, শিখিকুলকে নাচাইয়া, মৃছ গম্ভীর গর্জন করি, তখন ইন্দ্রের হৃদয়ে মন্দারমালা দুলিয়া উঠে, নন্দসূনুশীষকে শিখিপুচ্ছ কাঁপিয়া উঠে, পর্ব্বত-গুহায় মুখরা প্রতিধ্বনি হাসিয়া উঠে। আর বৃত্রনিপাতকালে, বজ্রসহায় হইয়া যে গর্জন করিয়া-ছিলাম, সে গর্জন শুনিতে চাহিও না-ভয় পাইবে।
বৃষ্টি করিব বৈ কি? দেখ, কত নবযুথিকা-দাম আমার জলকণার আশায় উদ্ধমুখী হইয়া আছে। তাহাদিগের শুভ্র, সুবাসিত বদনমণ্ডলে স্বচ্ছ বারিনিষেক, আমি না করিলে কে করে?
বৃষ্টি করিব বৈ কি? দেখ, তটিনীকুলের দেহের এখনও পুষ্টি হয় নাই। তাহারা
যে আমার প্রেরিত বারিরাশি প্রাপ্ত হইয়া, পরিপূর্ণ হৃদয়ে, হাসিয়া হাসিয়া, নাচিয়া নাচিয়া, কল কল শব্দে উভয় কূল প্রতিহত করিয়া, অনন্ত সাগরাভিমুখে ধাবিত হইতেছে, ইহা দেখিয়া কাহার না বর্ষিতে সাধ করে?
আমি বৃষ্টি করিব না। দেখ, ঐ পাপিষ্ঠা স্ত্রীলোক, আমারই প্রেরিত বারি, নদী হইতে কলসী পূরিয়া তুলিয়া লইয়া যাইতেছে, এবং "পোড়া দেবতা একটু ধরণ কর না
বলিয়। আমাকেই গালি দিতেছে।
আমি বৃষ্ট করিব না।
Comments
Post a Comment