শৈ

শিল্পকলা বা আর্টের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সহজাত। মানবমনের সূক্ষ্ম সুন্দর অনুভূতিকে নাড়া দিতে পারার অদ্ভুত সক্ষমতাই শিল্পের অনন্য শক্তি যাতে প্রভাবিত হয় বলেই কেউ নিজে সরাসরি নতুন শিল্প সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ হয়, আবার কেউ সৃষ্ট শিল্পের সৌন্দর্য একান্ত নিজের মত করে অনুধাবন করার মাঝেই অপার আনন্দ খুঁজে পায়। আমি মূলত এই দ্বিতীয়গোত্রের মানুষ- নিজের একাডেমিক ও প্রফেশনাল জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও সবসময় শখ ছিল আলাদাভাবে সময় করে পছন্দের কিছু শিল্পকর্মকে একান্ত নিজের মত করে উপভোগ করার।

ছোটবেলায় স্ট্যাম্প, ভিউকার্ড, বিদেশি কয়েন কেনা বা সংগ্রহের পাশাপাশি গল্পের বই, কমিকস, ম্যাগাজিন কিনে বা সংগ্রহ করে পড়ার মত নানা ধরনের শখ ছিল। কিছু কিছু শখ এখন আর আগের মত নেই বা থাকলেও আগের মাত্রায় নেই। একসময় মনভরে টেবিল টেনিস, ক্রিকেট খেলেছি-টেবিল টেনিসে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডও ছিল কিন্তু একাডেমিক বা প্রফেশনাল কারণে খেলাধুলার সে শখ অনেকদিন হলো মেটাতে পারছিনা। গল্পের বই পড়ার ধরনে একটু পরিবর্তন এলেও অন্যতম প্রিয় শখ হিসেবে সেটা এখনো টিকে আছে।

তবে শিল্পকলার যে শাখাটিকে সেই স্কুল জীবন হতে আজো পর্যন্ত এক অনন্য ভালোবাসায় দেহ-মন-সত্তা দিয়ে উপভোগ করছি তা হলো গান বা মিউজিক। না, আমি কোন ধরনের গান গাইনা বা কোন ইন্সট্রুমেন্টও বাজাইনা। আমার পরম ভালো লাগার বা আবেগের জায়গাটা আসলে শুধুই মিউজিক বা গান শোনায়-দেশি,বিদেশি গান বা ইনস্ট্রুমেন্টাল যাই হোক না কেন!মানব মনের একান্ত গহীনে বা হৃদয়ের অন্ত:স্থলে জমে থাকা সূক্ষ্ম আনন্দ, সুখ, দু:খ, বেদনা, অভিমান বা ক্ষোভের অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলে এক অনিন্দ্য সুন্দর ছন্দে আপন কল্পনার রাজ্যে দেহ-মনকে ভাসিয়ে নেবার মত ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা সংগীতের মত আর কোন শিল্পে বোধ হয় নাই! একান্ত নিভৃতে বা বন্ধু সংসর্গে পছন্দের কোন সুন্দর সুর বা গান আমাকে দেয় নিজের সেই একান্ত কাল্পনিক জগতে অবাধ বিচরণের অবারিত সুযোগ।

সময়ের বিবর্তনে টেকনোলজির ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, জীবনের নানাধাপ পেরিয়ে শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনেরও বেশ কয়েক বছর পার হলো। সংসার হয়েছে, ব্যস্ততাও বেড়েছে। কিন্তু মিউজিকের প্রতি কৈশোর তারুণ্যের সেই উচ্ছলতা, অনুরাগ, টান বা ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি আজো! সেই আবেগের জায়গা থেকেই কয়েকটি কিস্তিতে আমাদের শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের গান সংগ্রহ, রেকর্ডিং বা শোনার কিছু স্মৃতি শেয়ার করতে চাই।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উৎকর্ষে নিজের পছন্দমত গান শোনার পাশাপাশি নতুন কোন মিউজিকের খোঁজ পাবার ব্যবস্থা তো এখন অনেকটাই হাতের মুঠোয়। অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন সোর্স হতে নিমিষেই পছন্দমত গান ডাউনলোড করে ল্যাপটপে বাজিয়ে কিংবা স্মার্টফোনে ‘স্পটিফাই’ বা ‘অ্যাপল মিউজিক’ অ্যাপ ব্যবহার করে আঙুলের এক চাপেই বিশ্বের নানান প্রান্তের নানান সংস্কৃতির মিউজিকের সাথে পরিচিতি ঘটছে। ইউটিউবের মাধ্যমে অডিও গানের পাশাপাশি পছন্দের আর্টিস্টের মিউজিক ভিডিও বা লাইভ পারফরমেন্সও দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ৮০ ও ৯০’র দশকে ঢাকা শহরে আমাদের স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটি জীবনে বিষয়টি অত সহজ ছিলনা। ইন্টারনেট ছিলনা, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনও ছিলোনা। গানের উৎস ছিল সীমিত এবং শোনার মাধ্যমও ছিলো ভিন্ন।

গান শোনার নানা মাধ্যম:
আমরা যারা আশি-নব্বইর দশকে শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের দিনগুলো পেরিয়ে এখনো গান শুনছি তাদের মোটামুটি বেশ কয়েকটি মাধ্যমে গান শোনার অভিজ্ঞতা হয়েছে- রেডিওতে ওয়ার্ল্ড মিউজিক শোনার বাইরে ক্যাসেট বা সিডি প্লেয়ারে কম্প্যাক্ট ক্যাসেট, সিডি চালিয়ে যেমন গান শোনা হয়েছে তেমনি হালের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইপড , mp3 প্লেয়ারে mp3 ও অন্যান্য ডিজিটাল ফরমেটের গান, কিংবা অতি সাম্প্রতিক সময়ে অ্যামাজনের ‘অ্যালেক্সা’ বা ‘গুগল প্লেয়ার’ এ শুধু মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েই অনলাইন মিউজিক লাইব্রেরি হতে সরাসরি গান শুনতে পারছি। আমাদের সময়ের গান শোনার দুটি প্রধান ও জনপ্রিয় মাধ্যম-কম্প্যাক্ট ক্যাসেট ও সিডি এখনতো মোটামুটি উঠেই গিয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ