শ্রুতি নাটক।। চিঠি।।

অনুশ্রুতি নাটক


।। চিঠি।।

দেবপ্রসাদ জানা


চরিত্রলিপি


অপরাজিতা 

শুভ


অপা- শুভ শুভ আর কতদিন অপেক্ষা করব শুভ।

শুভ- কেন অপেক্ষা করবে কেন? আমি তো তোমায় বলে দিয়েছি,আমার দ্বারা তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।

অপা- তুমি বলে দিলেই হবে? আমার কোনো বক্তব্য থাকতে পারে না? দিনের পর দিন আমাকে উত্যক্ত করেছ।

শুভ-উত্যক্ত করেছি? এখন সব আমার দোষ?

অপা-উত্যক্ত করো নি? সব প্রমান আছে আমার কাছে,তোমার সুন্দর হাতের লেখায় প্রেমপত্র।

শুভ- প্রেমপত্র ! আমি তোমাকে লিখেছি?

অপা- হ্যাঁ প্রেমপত্র,আমাকে লিখেছ। 

শুভ- দেখো অপরাজিতা তোমার সঙ্গে আমার এমন কোন সম্পর্ক হয়নি যে,তোমাকে বিয়ে করতে হবে। তা ছাড়া তোমার মতো মেয়ে,কোনদিন একডালে বাসা বাঁধে না,সেটা আমি ভালো করে জানি। 

অপা- তাই নাকি? তাহলে আমার মতো মেয়েরা কি করে? 

শুভ- তা তুমি নিজেই বলো। এই পাঁচ বছরে কত জনের সঙ্গে সম্পর্ক করেছ ভুলে গেছো?

অপা - হ্যাঁ করেছি, তাবলে তোমাকে ভালোবাসি না সেটা কে বলল?

শুভ- ভালোবাসো? ছিঃ অপরাজিতা, তোমার মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না। তুমি পাঁচ বছর আগের কথা ভাবো একবার,যখন আমার কাছে কিছু ছিল না, কি বলেছিলে তুমি? আমার মতো ছেলেকে সহানুভূতি দেওয়া যায়,ভালোবাসা দেওয়া যায় না।

অপা- হ্যাঁ বলেছিলাম। কোন মেয়ে তোমার মতো কাঙালকে বিয়ে করতে চাইবে? চাল নেই চুলো নেই। থাকতে তো একটা বস্তিতে,জঙ্গলের মধ্যে। আমার বাবা মা দেখলে বিয়ে দিত? 

শুভ- কেন? আমরা কি ভালোবাসার জোরে থাকতে পারতাম না?

অপা- ভালোবাসার জোরটোর কিছু না বুঝলে?টাকাটাই সব। না হলে ওই বিয়েটা শুধু দেখানো হোতো। এক দেড় বছর পর আমার কোলে একটা বাচ্ছা দিতে, তাই নিয়ে আমি চার পাঁচ বাড়ি ঝিয়ের কাজ করতে যেতাম, আর তুমি সারাদিন রাজমিস্ত্রির লেবারের কাজ করে, মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতে, আর বাচ্ছাকে পাশে শুইয়ে দিয়ে আদরের অছিলায় রেপ করতে। এই হোতো আমাদের জীবন। তাছাড়া সব মেয়েদের একটা স্বপ্ন থাকে।

তার স্বামী সুন্দর বা পয়সা ওলা হবে। তুমি তার মধ্যে একটাও ছিলে না। তখন তোমার অল্প বয়স দুদিন আমার সঙ্গে কাটানোর পর, আমাকে আর ভালো লাগত না। আবার অন্য মেয়ের পাল্লায় পড়তে। তখন সংসারে নানান ঝামেলা। একে তো অভাবের সংসার, তার ওপর এই ঝামেলা। কি করে আমি তোমার চিঠির জবাব দিতাম? তার থেকে এই ভালো হলো, এখন তো আর সেই সমস্যা নেই?

শুভ- আছে অপরাজিতা আছে, আমার চিঠির মতো, প্রমান সহ তোমার কিছু প্রেম লীলা আমার মস্তিষ্কে ঢুকে গেছে। তা নিয়ে যে সারাজীবন আমাকে তোমায় সন্দেহ করতে হবে, হতে পারে তোমার সেদিনের কারণে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে, আমি ভাগ্যের চাকাটাকে বেশ ভালো ভাবে ঘুরিয়েছি। 

অপা- ঠিকই, ভুল কিছু নয়। আমি যদি সেদিন অমন কথা না বলতাম, আজকের শুভজিৎ কি হতো? 

শুভ- সবই তো বুঝলাম,সেদিন যেমন আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারনি, আমি ভবিষ্যতে কি তোমাকে বিশ্বাস করে উঠতে পারব।  আজ আমার ও কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না,তুমি আমার সংসার করতে পারবে, তোমাকে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।

আর চিঠি? ওগুলো নিয়ে তুমি আকাশবাণীতে পড়তে পারো। 


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ