কবিতা


নারী তুমি এখনো
নারী তুমি কি ভুলে গেছো?
পাবলিক বাসে ছাড়া
কোনো কিছুতেই অগ্রাধিকার
নেই।
একটু বড় হলেই বাবা মায়ের অধীন।
একা বাইরে যেও না -
সবার আগে খেও না-
তারা না থাকলে দাদা ভাই
এর সাথে মিশবি না
ওর সাথে কথা বলবি না
ঘরের বাইরে চোখ -
একটু অগোছালো হলেই
শতেক চোখ।
বস্ত্র ভেদ করে অন্দরমহলে-
যৌবন আসার সঙ্গে সঙ্গে
বাড়ি থেকে সরানোর ব্যস্ততা।
ভুলে যেও না।
তুমি যে সবার অধীন-
পন্য।
বাজারে মাংসের দোকান -
তেমন তোমার মান-
রোজ কাটছে, আর বিক্রি করছে।
যতই তুমি প্লেন চালাও
যতই তুমি পুরুষ খেলাও?
তুমি সেই অন্তরালে-আঁধারে।
==
=
ভালোবাসা
ভোরের মিঠে রোদ্দুরে
হেমন্তের হিমেল পরশ
গালে মেখে-
তোমার ভালোবাসা খুঁজি
অদ্ভুত  আবেগে আজো-
কেন?
বাঃ কেন জানো না?
পুরো বছরটা সুধু বিছানায় পেয়েছি অন্তরে নয় -
বিনিময়হীন ভালোবাসা।
আমি দিয়েছি, তুমি দাও নি-
আমি দিয়েছি, তুমি পাও নি-
আমার চঞ্চল মন,
তোমার অঞ্চলে চাপা পড়ে আছে দেখো -
খুঁজে দেখো -
ভালোবাসার মন পাবে সেথা।
যে জড়িয়ে ধরবে তোমাকে আবেগে-
গভীর  ভালোবাসার টানে ।।
তুমি আমার বসন্তের পলাশ ফুল -
আমার কপটহীন ভালোবাসার লাল পলাশ
আমার হৃদয় নিঙ্গাড়ানো প্রেমসুধা-
তোমার আঁচলে বাঁধা পড়ে যায় আজো -
===
=
পিঁয়াজ
পিঁয়াজ তুমি অন্তঃসত্ত্বা?
মহাজনী অন্ধকূপে বেঁধে রেখে
ক্রমাগত তোমাকে ধর্ষণ করেছে মহাজন,
তুমি বলোনি কেন?
ভয়ে?
নালিশ করো।
জনে জনে কত বেশী দামে তোমায়-
বেচেছে মহাজন।
যত দিন গেছে তোমার মুল্য বৃদ্ধি করেছে
দালাল-
নালিশ করো নি?
তুমি যে গরীব ঘরের বউ।
পান্তা ভাতে,মুড়ির সাথে-
ছাতু গুলে-
ছিঃ -
তুমি মহাজনের বারবনিতা
হয়ে গেলে-
===
=
নিরাপত্তা
এবার আমরা কি করব?
আপনারাই বলে দিন।
আমি প্রিয়াঙ্কা বলছি
আমি টুইঙ্কিল বলছি
আমি অমিতা বলছি
আমি র্নিভয়া বলছি
শুনতে পাচ্ছেন?
একটা দেশ
একটা রাজ্য
একটা শহর
একটা গ্রাম
একটা পাড়া বলে দিন
যেখানে জন্মালে আমরা সম্পূর্ন নিরাপদ।
বড় ভয় করছে -জানেন?
গলিটা রাস্তার মোড়
যে বাস স্ট্যান্ড-
অন্ধকার গলি, ওখানে কেউ নেইতো ওঁত পেতে?
যে গাছের ছায়ায় বসে কে?
ওরা কি ভালো মানুষ?
যে ওখানে রাস্তার ধারে -
একটা জায়গা নেই?
একটু নির্ভয়ে বাঁচতে চাই -
==
=
ধূমকেতু
উত্তরের জানালাটা বন্ধ করে দাও সম্পা।
বড় হিমেল বাতাস আসছে এবার।
তুমিও কিছু গায়ে দাও-
সর্দি লাগে তোমার।
আগুনের মতো করে জাপটে ধরো-
উষ্ম হোক দেহ-
তোমার আমার -
উত্তাপ ঢেলেদি একবার-
তোমার দেহে জন্ম নিক অগ্নিকুন্ড-
সমাজের পাপতাপ গুলোকে
পুড়িয়ে ছাই করে দিক সে।
কিংবা বসুক পাহারায়-
কৃষ্ণের মতো -মহাভারতে -
আরো একবার হোক কুরুক্ষেত্র-
গীতার বানী বাজুক সবার মনে।
ধর্মযুদ্ধ হোক একটা -
পুনঃস্থাপন হোক আবার।
এতে অসুবিধা নেইতো সম্পা?
নাকি বীরগর্ভা হতে ভয় পাচ্ছো?
ভয় নেই-
সব ক্লীবলিঙ্গ হয়ে আছে
আমার উত্তাপ তোমার উত্তাপ মিলে
একটা ধুমকেতু হোক না-
আর আছড়ে পড়ুক পৃথিবীর বুকে -
মুছে যাক সব গ্লানি।
==
=
ইচ্ছামৃত্যু
আমি আর কী করবো ?
ঘরের ফিরে দেখবো
বউ কাঁদছে
পিঁয়াজের ঝাঁজে নয়?
তার দামে -
বাজারে আর বড় থলে নিতে হয় না -
পাঞ্জাবির পকেটই যথেষ্ট।
এক মুঠো টাকা হাতে নিয়ে গেলে
পকেট ভর্তি হয় না -
খুচরো পয়সা বাজারে চলছে না-
একশ টাকার নোট এখন নুন্যতম।                                
পেঁয়াজের কিলো দেড়শো টাকা।
"
আচ্ছে দিন"
একজন উৎসবে বিলীন।
আর আমরা?
আলু কুড়িটাকা
ষাট টাকা বেতো শাক-
লক্ষ্য করি -
বাজার যেন আগুন -
রোজ ঝাঁপ দি তাতে-
ইচ্ছা মৃত্যু।
==
=
সে অমর
এই শোনো সবাই আমার কলম
বিষ খেয়েছে।
মরবে বলে -
এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য
কে দায়ী?
সকলে বলছে
দাদাকে বলো
দিদিকে বলো
ওরা বাঁচাক আমার কলমকে
সে লজ্জায়,ঘৃনায়,চলে যেতে চাইছে -
এত প্রতিবাদ,এত বিদ্রোহ-
এত আন্দোলনের পরেও-
বাঁচাতে পারেনি প্রিয়াঙ্কাকে
বাঁচাতে পারেনি টুইঙ্কিলকে
বাঁচাতে পারেনি র্নিভয়ার মত আরো -
কত শত জীবন।
পরিবর্তন করতে পারেনি সমাজ -
বাজারের দাম-
কালোবাজারি,জাল নোটের কারবার।
আনতে পারেনি শিক্ষায় বদল।
তাই আত্মহত্যা করে প্রতিশোধ নিতে চায়।
আপনারা একটু দয়া করে বলুন
"
কলমের মৃত্যু নেই "
সে অমর।
==
=
আতঙ্ক
আতঙ্কের পাখি গুলো ক্রমশ বাসা বাঁধছে
পাঁচিলের গায়,
শেওলা ধরা কার্নিসের ওপর,
গাছের ডালে,নৌকার পালে,
ঘরের চালে, মাঠে-
দিনরাত আতঙ্ক গুলো পাশ দিয়ে উড়ে -
কিছু বলতে চায়।
"
মাষ্টার মশাই আপনি কিছু দ্যাখেন নি" -
কিন্তু আমি যে দেখেছি -
মাওবাদী হামলা-
হারমাদের শাসানি-
সিন্ডিকেটের হানাহানি -
আমি যে দেখেছি-
আসিফা টুইঙ্কিলের সর্বনাশ
নির্ভয়া প্রিয়াঙ্কার মৃত্যু -
"
মাষ্টার মশাই আপনি কিছু দেখেননি " বলতে চায় আমাকে -
আতঙ্কের পাখি গুলো অনায়াসে উড়ে গিয়ে বসে।
টোল প্লাজায় -
বড় মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে
অন্ধকার কোনো পথে -কিংবা মাঠে -
আগুন হয়ে পোড়ায় উন্নায়ের রাজপথে-
আতঙ্ক !
==
=
আজব শহর
বাতাসে টায়ার পোড়া গন্ধ
ফুটপাতে পুড়ছে ভাতের
হাঁড়ির তলায়-
খুদ চালের ভাত -
অরন্ধনে তেতে যাওয়া
দীর্ঘতম রাত।
চাঁদ তারা মেঘেদের সঙ্গে
লুকোচুরি খেলছে আজ-
ফুটফুটে জোছনা
গাছে ডালের ফাঁকে -
শিরশিরে শীত,
খালি ফুটপাতে ঘুমন্ত শিশু -
ছেঁড়া প্লাস্টিকে ঘেরা রাজ প্রাসাদ -
তার নিচে কাগজের ফরাস্ পাতা।
কলকাতা তুমি ভালো আছ তো?
হাওড়ার প্লাটফর্মে -
শিয়ালদা স্টেশনে সুলভ সৌচালয়ে-
ভালো আছতো কলকাতা?
শীতের রাতে রাজমহলের-
তোমার কেমন লাগছে?
তিলোত্তমা -
কল্লোলিনী কলকাতা -
==
=
উষ্ণতার ছবি
একি!
তুমি এখানে কেন?
তোমার তো এখানে আসার কথা নয় -
বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা -
যাক,এসেই যখন পড়েছ থাকো।
এসো ভেতরে এসো
খুব ঠান্ডা।
দরজাটা বন্ধ করো।
এসো আমার পাশে বসো।
এখানে -
একি !
শরীর যে বরফ -
এসো তোমাকে উত্তাপ দি -
আমার শরীরের উত্তাপ।
ভাবনার গ্রন্থি বেয়ে-
যখন তোমার শরীরে বয়ে যাবে,
আমার উত্তাপ -
তাতে তোমার শরীরে জন্ম নেবে-
বিদ্রোহের আগুন -
মুক্ত করবে তোমায় শীতের নাগ পাশ হতে।
ধারাবাহিক চেতনার সুপ্ত বাসনা গুলো-
ক্যানভাসে ছবি হয়ে থাকবে।
উষ্ণতার ছবি।
==
=
আমাকে বলেনি
কই ওরাতো আমাকে বলেনি?
আকাশের  সাথে ওদের মৈত্রী আছে।
নদীর জল,ডোবার জল,
সাগর-
মেঘের দল-
ওরা নাকি খেলা করে বাতাসের সাথে?
ওরা নাকি ঘুরে বেড়ায় দেশ দেশান্তরে?
বলেনি?
পাখিদের সাথেও নাকি ওদের ভাব?
গাঙ চিলেরও নাকি খুব ভালোবাসা?
বলেনি কখনো?
চাতক নাকি ডাকে ওদের?
মেঘেদের।
সে বলল, “এটা কিছু নয়।
বলেনি তো কি?
এটাই প্রথা নিশ্চয়,
তুমি জানো না?
মেঘেদের সঙ্গে ওদের মিত্রতা।
আমি বললুম, এত কাছে থাকে আমার,
তবু বলেনি।
এটা ছল।
সে বলল, “না, না, এটা ঠিক নয় -
মেঘেদের দল বইছে এখানে।
পবিত্র বাতাসে ভর করে
তুমি জানো না?
পবিত্র !
বাতাস পবিত্র ! না গো -
ওরা যে দূষিত -
ওদের শরীরে জীবাণু -
ওরা আর সুদ্ধ নেই
পৃথিবী ওকে কলঙ্কিত করেছে -
ওকে জোর করে বন্দী করে -
অন্ধকারময় জগতের দিকে ঠেলে দিয়েছে -
ওই সরল সোজা মেঘ গুলোকে বার্তা দাও-
যেন বাতাসের সাথে না মেশে-
কি সর্বনাশ করলে বলো তো?
=====
=
তৃণ
না -
এখনো শেকড় গুলোকে মাটিতে গুঁজে দিতে পারেনি -
ভালো করে-
মেরুদন্ডটাকে সোজা করে উঠতে পারেনি -
জলের ভারে লুটিয়ে পড়ে এখনো -
ঠিক যেন ছোট্ট শিশুটি-
চলতে চলতে ঢুপ করে পড়ে যায় ঠিক তেমন।
চারা !
অঙ্কুরিত পালং-
মানুষের তো, পাশে মা থাকে
ওদেরতো মাও নেই-
পাশে
সবুজ একেবারে সবুজ-
তাও ওরা অক্সিজেন দেয়-
আমাদের জীবনের জন্য-
নিজের খাদ্য নিজেরাই করে-
কেউ বাটিতে দুধ গুলে খাইয়ে দেয় না।
বুকের দুধ দেয় না কেউ -
তবুও ওরা বড় হয়ে ওঠে।
পৃথিবীকে বাঁচার রসদ দেয়।
আমার অঙ্কুরিত পালং -
==
=

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ