Posts

Showing posts from November, 2023

ভালোবাসা

ভালোবাসা স্বর্ণহংস জাতক যন্ত্রণার কথা নয়,  কোনো নিরাশা ব্যথা নয় ভালোবাসা শুধু হাহাকার,  কেন ঝরে অশ্রুধারা? কেন কণ্টকের কূপ প্রণয়ের পথে?    বিস্তীর্ণ প্রান্তর মাঝে-  প্রাণ খোঁজে আকুল ব্যাকুল সাথী একজন,    নিয়তি কেনরে, মিশাতে দেয় না দুইটি জীবন?   অনুলঙ্ঘ্য বাধা রাশি, সম্মুখে দাঁড়ায়, নৈরাশ্যপূরিত ভবে,  একটি প্রাণের তরে, আর একটি প্রাণ   কাঁদিবে প্রণয়ের আকাঙ্ক্ষায়।

প্রথম দেখায়

প্রথম দেখায় দেবপ্রসাদ জানা অদ্ভুত কোনো কারণে আজ যখন,  আকাশটা আয়নার মত।  আয়নায় প্রতিফলিত হচ্ছে সূর্যের ক্রোধ।  চারপাশে বিভ্রান্তি, মরীচিকা ভাবনাগুলো  উল্টে পাল্টে আসে বারবার। অস্থির অতিরিক্ত ক্রোধ,  জীবনে আপাদমস্তক কালো চাদরে মুড়ে  শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। ভালোবাসা অদ্ভুত এক বাঁধন।  অজানা অচেনা এক ভয়ানক আকর্ষণ,  কাছে টেনে আনে ভালোবাসা।  যার কাছে মন খুলে সব কিছু বলা যায়,  পরম নির্ভরতায় ধরা যায়, যার হাত।  নিজের সুখটা গৌণ হয়ে দাঁড়ায় তখন,  পাগলের মত তার মায়াভরা মুখটা, হাসিটা। চোখের তারায় ভালোবাসাটুকু দেখতে ইচ্ছে করে। অস্ফুটে হাজারবার বলতে ইচ্ছে করে –  ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি ... প্রথম দেখায় কি প্রেম হয়?  তবু হয়েছিল সেদিন- মায়ার আকর্ষণে মোড়া, ডিমের কুসুমের মত,  তুলতুলে গাঢ় মায়া।  যদিও তখনও অনিশ্চয়তার মেঘ।  আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার প্রতিফলন দেখি, প্রথম দেখার ভালো লাগাটুকু অব্যক্তই থেকে যায়। অশান্ত মনের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই আয়নায়। ভালোবাসা সেদিন বয়স মানেনি, কেমন যেন একটা স্নিগ্ধতা ঘিরে ছিল।  সেই...

অপরাধ

অপরাধ  দেবপ্রসাদ জানা অনেকদিন দেখা হয়নি তোমার সাথে কথা হয়নি কিছু। বছরের পর বছর ঘুরে গেল, কত বসন্ত চলে গেল, একটা অবাধ্য চুম্বন, চিলে কোঠার ঘরে জড়িয়ে ধরার অপরাধে- পাথর যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল তোমাকে। আমি হারিয়ে ছিলাম সেদিন, কি অপরাধে? তোমার আঁচলে ঢাকা মুখ, মন-বেদনায় হারিয়ে যাওয়া হাসি, সারাদিন গুমরে গুমরে চোখের জলে প্রেম হারানোর কষ্ট, আজও ভেসে ওঠে চোখের সামনে, সবাইকে সঠিক পথে আনতে, তোমার সেই রাতদিনের সাধনা- এক লহমায় শেষ হয়ে গেল চোখের সামনে, শুধু একটা চুম্বন, ভালোবাসার চুম্বন, 'বিচার দিলে, সময়কে - যত আদরে তুমি শিখিয়েছিলে ভালোবাসা, ঠিক ততটা অনাদরে হারিয়েছিলে,সম্মান। কিন্তু তাতেও বাধা, বোঝেনি কেউ তোমাকে, বুঝতে চায়নি কোনো দায়িত্ব নেয়নি কেউ? তুমিও দিতে পারেনি, সঠিক ব্যখ্যা।  সমাজের আশীর্বাদ নিতে পারোনি, বাধার দেওয়ার চেষ্টা করতে,  যা ছিল অসম্ভব। মানুষের উপর যখন ধ্বংস নেমে আসে, তখন বিবেক মারা যায়। প্রচণ্ড গর্জন করে, তার রূপ প্রকট করে, দৈত্য জেগে ওঠে,  ভগবান ক্রুদ্ধ হয়ে সাথ ছেড়ে দেয়, এই দেখো, আমি তোমাকেই দোষ দিচ্ছি, কেন জানো?  আমার মধ্যেও পাপ নাড়া দেয়। সূর্যের তাপ আছে...

কিশোর প্রেম

কিশোর প্রেম দেবপ্রসাদ জানা আমার চোখের বসন্ত ডাকছে তোমায়  শিমূল-পলাশ কৃষ্ণচূড়ার বনে। ঝড় উঠেছে বৃষ্টি হবে,  স্তব্ধ প্রেমের-কম্পনে  ফিরিয়ে দাও কিশোরবেলা মধুর চুম্বনে। ভালোবাসা চাইনি আমি, অশ্রুবিহীন চোখে.   জানি আমি কিশোর প্রেমের কঠিন পরিণাম। ফুটছে কলি, প্রবল বাতাস!  চোখের কোনে হা-হুতাশ। তাকিয়ে থাকি পথপানে মনে তবু প্রেমে আশ। এ যে আমার ব্যর্থ প্রেমের দারুণ চৈত্রমাস।

আলো

আলো দেবপ্রসাদ জানা আলো এক ধরনের, বাহ্যিক কারণ,  যা চোখে প্রবেশ করে, বস্তু দৃশ্যমান। আলো এক অনুভূতি, অতি সাধারণ। আলো একটি তীর্যক, তড়িৎ ভাসমান। চৌম্বকী তরঙ্গ যাহা,  নিজেই অদৃশ্য।  এর কোনো বেগ নেই, যাহা আপেক্ষিক। তড়িৎচুম্বকী তরঙ্গে, চলিবে অবশ্য। মাধ্যমের ঘনত্বের, ব্যস্তানুপাতিক।  শুন্য মাধ্যমে আলোর, খুব বেশি বেগ। অসীম নয়, ছিয়াশি হাজার মাইল। স্পর্শ করা সম্ভব না, তার গতিবেগ। সাত রঙের মিশ্রণে, শুভ্রতার মিল। কণা ধর্ম, তরঙ্গের, ধর্ম বিদ্যমান। চুম্বকী বর্ণালি তড়িৎ, ছোট্ট এক মান। বেগ ধ্রুব, সাতরঙা, আলো দৃশ্যমান। প্রতিফলনের বেগ, সর্বদা সমান।

সম্পাদকীয়

সহ সম্পাদকীয় সভ্যতা যখন এগিয়ে চলে, তার সঙ্গে আধুনিকতা-র রং বদলাতে থাকে। কয়েক বছর আগেও যা থাকে আধুনিক, অচিরেই তা পুরনো হয়ে যায় । কিন্তু, সেই পুরনো বা অতীতের যদি গৌরবময় ভূমিকা থাকে, তখন তাকে আশ্রয় করে পরবর্তী যুগের সংস্কৃতি অনেকটাই উন্নত হতে থাকে। যখন “বর্তমান” তার মান সবদিক থেকে অনেকটাই নিম্নগামী করে ফেলে,  তখন সেই অতীতকে ব্যবহার করে এগোনোর পথ বন্ধ হয়ে যায়।  যা ইদানিং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে চারপাশে। কোনও জাতি যদি সবদিক থেকে সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছয়, তার পিছনে থাকে মেধা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম, .উদ্যোগ, ভালোবাসা ও শিক্ষার মতো শুভ চেতনার প্রকাশ। যার থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবির্ভূত হন মহান ব্যক্তিবর্গ।  গত ও তার আগের শতকে অনেকটা সময় জুড়ে আমরা দেখেছি এই বাংলায়। সেই কালজয়ী অধ্যায় রচিত হয়েছিল খাঁটি ভাবনা, চিন্তাশীলতা ও নিঃস্বার্থভাবে কর্মপ্রদানের মতো মানসিক প্রকাশ থেকে। এরপর থেকে যতদিন যাচ্ছে, সমাজ-রাজনীতি থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রে নিম্ন মেধার দাপট, সত্যিকারের সৃষ্টিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে ক্রমাগত । অথচ, আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে শিখণ্ডীর মতো...

হে চরিত্রহীন

হে চরিত্রহীন স্বর্ণহংস জাতক ১৫,১১,২৩ হে চরিত্রহীন, ভালো আছো তো? কেমন লাগছে গলায় ফাঁস দিয়ে? একদিন তুমি বাংলা সাহিত্যকে দিয়ে ছিলে জ্ঞান, ভরেছিলে কথায়। তোমার সাহিত্য এনেছিল জোয়ার, এই বাংলায়, সারা ভারতবর্ষে, তোমার দীপ্ত কন্ঠের প্রতিবাদ তোমার চরিত্রে কালিমা লেপন করেছিল। হে বাংলা ভাষার মহাসূর্য প্রতিটি বাংলা সাহিত্য একদিন  শিক্ষার অরুনোদয় হয়েছিল- কালজয়ী উপন্যাসে। "চরিত্রহীন" "পরিনীতা" "দেবদাস" "মহেশ" গ্রাম বাংলাকে চিনিয়েছিল ভালোবাসা, প্রেম। তোমার সাহিত্যের টানে আজো আমরা ছুটে যাই বই খাদানে। ভুলবে না কোনদিন বাঙালি তোমার অবদান- তবু তোমার গলা পড়েছে ফাঁস। এ যে বাংলা সাহিত্যের গলায় দড়ি।

যখন একা থাকি

যখন একা থাকি দেবপ্রসাদ জানা যখন একা থাকি ভয় পাই ভয় পাই তোমাকে। যদি আবার তেমন হয়। যদি তোমার জীবনে আবার কেউ আসে ভালোবাসে, আমার থেকে বেশি। অন্ধকার রাতের মতো শরীর ভাঙছে দ্রুত, তফাৎ শুধু একটাই... রাত ভাঙলে ভোর আসে শরীর ভাঙলে মৃত্যু আসে। যখন একা থাকি ভয় পাই- ছুটে আসে, চেপে ধরে যৌবনে না পাওয়া ভালোবাসা গুলো, রাত ভাঙে, ভেঙে যাওয়া প্রেমের মতো।   হৃদয় ভাঙা কান্না যত, চেপে ধরে বুকে। শরীর ভাঙার আগে যেদিন মন ভাঙে, সম্পূর্ণ মৃত হৃদয়ের আত্মা গুলো চেপে ধরে। একটা দড়ি ঝুলে ছিল পড়ে কড়ি কাঠ থেকে। ঝুলে থাকা ঘুরন্ত পাখা হাসে, বলে এসো ঘুরতে থাকো, মেঘরঙা অন্ধকারে,  দাঁড়িয়ে থাকো দরজার ওপারে। আমি ভয় পাই,  যখন একা থাকি, ঘরে। না হার মানবো না ভেবেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। আজও তার দেখা পাইনি, কখনো। ভালোবেসেছিলাম বয়ঃসন্ধির প্রাক্কালে  কোনো এক প্রখর রৌদ্র দুপুরে, মাঠের এক কোনে থাকা কৃষ্ণচূড়ার নিচে। পৃথিবী থেমে গিয়েছিল, মৃত্যু আসেনি জোরে জোরে ঘোরেনি পৃথিবী, আমিও থমকে দাঁড়িয়ে ছিলাম,  মৃত প্রেমের আত্মারা ডাকে, যখন একা থাকি ঘরে। শরীরটা ভেঙে যাচ্ছে যেমন,  শরীরের নিচের দিকটা অবশ হতে থাকে, স...

কেন জেগে আছো?

কেন জেগে আছো? স্বর্ণহংস জাতক ১৩.১১.২৩ কেন জেগে আছো প্রেয়সী? আজতো পূর্ণিমা নয়, অমাবস্যা। কালো রাতের অন্ধকার তোমাকে গ্রাস  করতে পারে, অন্ধকারের কালো রঙ তোমাকে কালিমালিপ্ত করতে পারে। এ রাতে হাজার আলোর ভেতরে যে অন্ধকার জেগে আছে, তার কলঙ্ক নির্মম। বাতাসে ভরে দিচ্ছে আরো কালো ধোঁয়া। আগুনে আগুন মেখে কালো রাতে তোমার দেহটাকে কলঙ্কিত করবে।

হরিবোল

হরিবোল স্বর্ণহংস জাতক দরবারে আজ বহুলোক। মাছমাংসে ভীষণ শোক। আদা রসুন তিনশটাকা। পিঁয়াজ তার পাশে রাখা। অলিগলি কালীপুজা। বাজার ঘুরে ভ্রান্তপ্রজা। কোটিটাকা আলোর সাজ। নিম্নবিত্তে পড়ছে বাজ। হুলুস-থুলুস গণ্ডগোল। মরার আগে হরিবোল। মন্ত্রী মশাই বেজায় খুশি। উদ্বোধনে ডাকছে মাসি। সবুজ সবুজ আতসবাজি। লালের পটকা বড্ড পাজি। কাঁদছে বসে, বেহাগ সানাই। বাজছে ঢাক, ঢাকিই নাই। বামুন পাড়ায় সোরগোল। দখিনা ব্যাগে ব্লাকহোল। মার পিছনে মালের ঠেক। সামনে লাইন হচ্ছে চেক্। হুলুস-থুলুস গণ্ডগোল। মরার আগে হরিবোল। মদের ঠেকে লাইন দাদা। মাল খেতে কোথায় বাধা। শিক্ষা দীক্ষা চুলোয় যাক। উৎসবে তাই আনন্দ ঢাক। দশের আলু কুড়ি হলো। বিনে টাকায় রেশন পেলো। দুয়ার খুললে সরকার। ব্যাঙ্কে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। তেলা মাথায় তেলে ঘানি। ভোটের আগে ছটফটানি। হুলুস-থুলুস গণ্ডগোল। মরার আগে হরিবোল।

আমার মতো

আমার মতো স্বর্ণহংস জাতক ১০.১১.২৩ আর মাত্র একটা রাত,  নিঝুম গভীর রাত। পিপাসার্ত শতাব্দীর, অপ্রয়োজনীয় বাসনা। আমি ভুলে যাব তোমার লাল শাড়িতে- ভেজা চুলের টপ্কে পড়া জল। লাল সিঁদুরে কপাল, নাকের ওপর ঝরে পড়া তোমার মুখ। তোমার প্রিয় রঙ। হায় চিত্রলেখা তোমার দেওয়া সব ছবিগুলো যদি বাগবাজারে বিক্রি হতো মানবিকতার আবরণে। কলমের শেষ কালি টুকু তোমাকেই  খুঁজতো ভালোবাসার আঙিনায়। কবিতার খাতায়। শুধু মৃত্যু, শুধু লাশ, শুধু বিস্ফোরণ, কলমে কলমে, কাগজে- প্রেম হারিয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা কোথাও কেউ নেই, গঙ্গার পাড়ে, স্টেশনের বেঞ্চে। ভিক্টোরিয়ার ঝোপে ঝোপে, গড়ের মাঠে বাদামের খোলার সাথে হারিয়ে যাচ্ছি, তবু কত লক্ষ প্রেমিক হাঁটছে অবিরাম- তৎপরতায় গভীর নিঝুম অন্ধকারে। সব যেন মৃত প্রেমিকের লাশ। অবিকল আমার মতো।

আনমনে

আনমনে  স্বর্ণহংস জাতক গোধুলী আলোর শেষে, ভীষণ বিসন্ন রাতের আঁধারে ঢেকে দিচ্ছে গোটা দেহ, গভীর অন্ধকারের, অহেতুক ছন্দ দেখতে পাওয়া কবি, অর্থ খুঁজে মরে। পথ ভুলে একদিন,পথের মাঝেই  হারায় নিজেকে,আজো খোঁজে তারে। জীবনবোধ বাসনা, হৈমন্তীর ছন্দ। কাব্যের সবসময় ছন্দ থাকে না যে। কিছু কাব্য ছন্দহীন, কিছু গদ্য কাব্য। সব ছন্দহীন কাব্যে, স্মৃতি বাস্তবতা। কখনো কখনো অর্থে, অনর্থক শব্দ, খোঁজার চেষ্টায় ছন্দ ছোট্ট জীবনটাকে অসহনীয় অজানা রহস্যের ভরে- পৃথিবীর কান ভারি করে, সহজেই।