শকুন্তলা
শকুন্তলা
১
বিশ্বামিত্রের তপস্যা,করিবারে ভঙ্গ।
মেনকারে তার কাছে,করিল প্রেরণ।
দেবরাজ ইন্দ্র ভয়ে,ছাড়িলেন সঙ্গ।
অপ্সরা মেনকা তার,করিল স্মরণ।
সংযম হারিয়ে ঋষি বিশ্বামিত্র জাগে।
মেনকার রূপে হলো,বিচলিত মন।
তার সাথে বিশ্বামিত্র,মেলে প্রেমরাগে।
গান্ধর্ব বিবাহে তারা,হইল বন্ধন।
বিশ্বামিত্রের ঔরসে,অপ্সরা মেনকা-
গর্ভবতী হয়ে দিল,জন্ম শকুন্তলা।
তপস্যার পুণ্যফল, হয়ে গেল বৃথা
সেই রাগে বিশ্বামিত্র,শেষ করে খেলা।
পরিত্যাগ করে তারে,চলে যান বনে।
শিশুকন্যা শকুন্তলা,পড়ে থাকে বনে।
২
কম্ব ঋষি সেই কন্যা করিল উদ্ধার।
পক্ষীবৃত ছিল বনে,বিশ্বামিত্র কন্যা।
লালন পালন করে,কম্ব ঋষি তার।
শকুন্তলা নাম দিয়ে,করিলেন ধন্যা।
দিনে দিনে বড় হয়,মিষ্টি শকুন্তলা।
প্রকৃতির মতো করে,সহজ সরল।
সুন্দরী রূপসী কন্যা,বনে করে খেলা।
সখীদের নেত্রমনি,এ দেশে বিরল।
ষোড়শী শকুন্তলার,রূপের বাহার।
দেখে যেন মনে হয়,স্বর্গের অপ্সরা।
মেনকার গর্ভজাত,রূপ পায় মার।
ফুলের মতন করে,রূপের পসরা।
কম্ব ঋষির দোরে যে,রূপ রোসনাই।
পশুপক্ষী সকলের, সঙ্গ তার চাই।
৩
কম্বের অরন্যে আসে,ঝড়ের বাতাস।
দুরন্ত অশ্বের দৌড়,দুষ্মন্ত রাজার।
সখ করে মৃগয়ায়, আসে বারমাস।
ঘন অরন্যে করেন,হরিণ শিকার।
এদিক ওদিক ঘুরে,দেখিল হরিণ।
তীর নিয়ে ছুটে চলে,পিছনে তাহার।
হরিণের দৌড় ছিল,কম্বের অধীন।
লুকিয়ে পড়িল মৃগ,প্রাণ বাঁচে তার।
রহস্যে আবৃত ছিল,বিধির বিধান।
শকুন্তলার সহিত,দেখা সেই ক্ষণে।
দেখে রাজা মুগ্ধ হয়,মন করে দান।
প্রেমের আবেশ লাগে,দুষ্মন্তের মনে।
দুইমনে একসনে,প্রেমের বিস্তার ।
গান্ধর্ব বিবাহ করে,করিল সংসার।
৪
বহুদিন রাজ্য ছেড়ে,অরন্যের বাসি।
দুষ্মন্ত রাজারে যেন,ডাকে রাজ্য খানি।
জরুরী কাজের তরে,কহিলেন হাসি।
শোনো প্রিয়া এইক্ষণে,যাবো রাজধানী।
আরো কিছদিন থাকো,ভয় পাই আমি।
রাজা তুমি নানা কাজে,ব্যস্ত থাকো সদা।
ফিরে গিয়ে যদি মোরে,ভুলে যাও তুমি।
কেমনে বাঁচিব রাজা,বোঝো নাকি ব্যথা।
রাজাবিনা রাজকার্য,কেমনে চলিবে?
প্রজা সব কলরব, কেমনে বোঝাই?
আর কতদিন বলো, এমন চলিবে?
অনুমতি দাও প্রিয়া,রাজকার্যে যাই।
সাথে লয়ে চলো মোরে,মন নাহি মানে।
কপালে কি আছে মোর,ভগবান জানে।
৫
ফিরে গেল রাজধানী,দুষ্মন্ত নরেশ।
রাজ আংটি নিল হাতে,মেনকা নন্দিনী।
কিছুদিন ছিল তার,মধুর আবেশ।
আনমনা শকুন্তলা, গৃহেতে বন্দিনী।
অহর্নিশ শকুন্তলা,করে অভিমান।
চলে গিয়ে,ভুলে গেছে,তার প্রাণনাথ।
শরীরে বাড়ছে তার,রাজার সন্তান।
নিদ্রাহীন কাটে তার,বিরহের রাত।
আনমনে বসে থাকে,শকুন্তলা সদা।
কোপনস্বভাব ঋষি,আসে সেই বেলা।
দুর্বাসা নামক মুনি,যে ক্রুদ্ধ সর্বদা।
ওরে নারী আহাম্মক, করো অবহেলা।
যার লাগি অনাদরে, করিস এ পাপ।
সেই তোরে ভুলে যাবে,দিনু অভিশাপ।
৬
ঋষি সেবায় অবজ্ঞা, মহাপাপ হয়।
অজান্তেই মহাপাপ,হয়েছিল তার।
দূর্বলে দুর্বাসা কেন? দেখাইল ভয়।
কেন ঋষি অভিশাপে,বন্ধ করে দ্বার।
পতিচিন্তা অনুচিত,এমন তো নয়।
নেত্রাশ্রু ব্যতীত তার,আর কিবা আছে।
অবলারে মহাঋষি, দিলেন অভয়।
রাজার সামগ্রী কিছু,রেখে দিও কাছে।
রাজার অঙ্গুরী আছে,দেখাবার লাগি।
শকুন্তলা সেটা রাখে,সদা তার হাতে।
দেখাইবে অনায়াসে, এই ভিক্ষা মাগি।
পত্নী আমি পতি তুমি,কবে সাথে সাথে।
দিন যায় পথ চাহি,শকুন্তলা রয়।
আর কত অপেক্ষার,করে অভিনয়।
৭
অজানা সে পথ ধরে,চলে শকুন্তলা।
বনকুঞ্জ পারে হয়ে,নদী পথে বেয়ে।
সেই পথে অঙ্গুরীয়,খোয়াল অবলা।
বিপদে পড়িল সেথা,অাংটি ছাড়া গিয়ে।
চিনিতে পারিল নাযে, দুষ্মন্ত নরেশ।
আকুতি মিনতি করে, পত্নী শকুন্তলা।
পতি তার ভুলে গেছে,শাপের আবেশ।
গর্ভবতী শকুন্তলা,বলে ছিল মেলা।
নীতিবান রাজা কহে,যাও কন্যা ফিরে।
কেন শুধু অপবাদে,অপবিত্র হবে?
ফিরে যাও ফিরে যাও,আপনার নিড়ে।
রাজাধিরাজ কেমনে,তব পতি হবে?
নিয়তির পরিহাস,খন্ডিবে কেমনে?
গর্ভবতী শকুন্তলা বাস করে বনে।
৮
দুঃখকষ্টে শকুন্তলা, প্রসবে সন্তান।
বীরপুত্র প্রভাকর,অরন্য অঙ্গনে।
সিংহসাথে খেলা করে দুষ্মন্ত নন্দন।
রাজার শাস্ত্রজ্ঞ পুত্র,মায়ের বন্ধনে।
এক্ষণে ধীবর এক,মাছ ধরে এনে,
পেট থেকে রাজাঙ্গুরী,উদ্ধার করিল।
অঙ্গুরী দেখে রাজার,পড়িল যে মনে।
কেমনে এমন হলো,প্রমাদ গুনিল।
হায় হায় করে রাজা,শকুন্তলা লাগি।
চারিদিকে লোক চলে,চলে দণ্ডপাল।
গর্ভবতী শকুন্তলা, এমন অভাগী-
দুষ্মন্ত রাজার মনে,ছিল অন্তরাল।
রাতদিন ঘোড়া ছোটে,দিকে দিকে লোক।
দুষ্মন্ত নরেশ খোঁজে,মনে তার শোক।
৯
পাষাণ মহীধ্র রাজা,দোষারোপ করে।
মন্ত্রী সান্ত্রি ছিল কেন, মূক ও বধির।
তারা কেন একবার,কহিল না তারে?
অবলা বণিতা মোর,ছেড়ে গেছে নীড়।
একদিন বনারন্যে, সুবোধ বালক।
সবুজ অরন্যে করে,সিংহ নিয়ে খেলা।
নাম কহে ভরত সে, না পড়ে পলক।
দুষ্মন্ত তনয় আমি, মাতা শকুন্তলা।
দুষ্মন্ত হাসিয়া কয়,বয়ে যায় বেলা।
কোথা তব মাতা,মোরে নিয়ে চলো সেথা।
দেখিবারে মন ভারি,হয়েছে উতলা।
পিতা আমি,পুত্র তুমি,দিও নাকো ব্যথা।
উৎকৃষ্ট প্রেমের ভাষা,ছিল আঁখি পরে।
দুষ্মন্ত দর্শনে তার,আনন্দাশ্রু ঝরে।
১০
মিলনে আবেগ ছিল,ছিল দুঃখ মনে।
অভিশপ্ত দিনগুলি, বড়ই কঠিন।
ভালোবাসার বেষ্টিনে, ঘেরা সর্বজনে।
ব্যাকুল হৃদয় ছিল, সর্বদা মলিন।
ঝটিকা বাতাস লেগে,ভেঙে ছিল আশা।
কৌমদী আলোয় ফের,ফিরে এল প্রাণে।
ভালোবাসা পূর্ণ হলো, ফিরে পেলো ভাষা।
দুষ্মন্তের ঘর আলো, করে চারজনে।
ভরতের নামে হলো, মহান ভারত।
মহাকাব্য রচনার, প্রথম অধ্যায়।
কৃত্তিবাস ওঝা কহে,ভারতের রথ-
কৌরব পাণ্ডব লয়ে,ধর্ম যুদ্ধে যায়।
মহাভারতের কথা,অমৃত সমান।
পুরাণপ্রসিদ্ধ কথা,এখনো অম্লান।
১১
পুরাণ কাহিনী তাই,নানা রঙে থাকে।
বিতাড়িত শকুন্তলা,স্বর্গে ফিরে যায়।
অপ্সরা মেনকা তারে,স্বর্গে লয়ে রাখে।
শকুন্তলা সেইখানে,থাকে অপেক্ষায়।
দৈবিক মাদুলী এক, ছিল ভরতের।
আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল,সেই মাদুলীর।
পিতা ছাড়া পারবে না এই জগতের।
বেঁধে দেবে তার হাতে,পিতা সেই বীর।
একবার দেবতাদের,সাহায্য করিতে,
দুষ্মন্ত রাজার ডাক,পড়েছিল সেথা।
স্বর্গের অরন্যে দেখে,শিশুকে খেলিতে।
সিংহের চোয়াল খুলে,হাত দেয় সেথা।
অসাবধানে শিশুটি,মাদুলী ফেলিল।
দুষ্মন্ত অবলীলায়,তাহা বেঁধে দিল।
১২
এইভাবে প্রেমলীলা হলো সমাপণ।
শকুন্তলা দুষ্মন্তের কাহিনী অদ্ভুত।
দেশে ফিরে দুষ্মন্তের,ভরত নন্দন-
রূপেগুণে বীরত্বের,কাহিনী প্রস্তুত।
কে জানতো এই বংশে,কুরুক্ষেত্র হবে।
কৌরব পাণ্ডবে মিলে,হবে কাড়াকাড়ি।
ভগবান অর্জনের,সারথী হইবে।
ভগবৎ গীতা কবে, শ্রীকৃষ্ণ মুরারি।
আঠার অধ্যায় মিলে.ভারতের কথা।
শত শত চরিত্রের, আমুল বিন্যাস।
আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র,আর যশোগাথা।
কত শত নৃপতির যে,আত্মপ্রকাশ।
যত পাপ ধুয়ে যাবে,এই ধর্ম যুদ্ধে।
জনেজনে বাঁধা হবে প্রেমের আবদ্ধে।
Comments
Post a Comment