দাক্ষায়নী সতী

 সতীর বিবাহ


দক্ষরাজার কনিষ্ট,কন্যা দাক্ষায়নী।

বিবাহ করিতে চায়,ভিক্ষু মহাদেবে।

দক্ষরাজের অমতে সতী,সীমন্তিনী

তপস্যায় তুষ্ট করে,আকাঙ্ক্ষিত শিবে।


উদারচিত্ত ঋত্বিক,উদাসীন মনে।

চাল নাই চুলা নাই,ভিখারী মহেশ।

রাজার দুলালী সতী,রাখিবে কেমনে?

পড়িল বিপদে ভোলা,রুক্ষ পরিবেশ।


বিপদের কথা শুনে,হাসে সতীমাতা

স্বামীগৃহ নিজ গৃহ, শ্মশাণে কাননে।

স্বামীধর্ম সতীধর্ম,করেছে বিধাতা।

এত কেন ভয় পাও,প্রিয় মনে মনে।


শ্মশাণচারী মহেশ,হইল সংসারী।

আকন্দের মালা গলে,চলে জটাধারী।


গৃহিনী সতী


ঘর নাই,বাড়ি নাই,নাই দাসদাসী

শ্বশুর বাড়িতে নেই,শ্বশুর শাশুড়ি।

ভুতপ্রেত,সাপব্যাঙ,সব কিছু বেশী

হাসাহাসি করে সব,ঐ বাপের বাড়ি।


শীত গ্রীষ্ম বর্ষাকাল,কষ্ট করে রই।

খোলা আকাশের নিচে,কেমন সংসার?

মন্দার পর্বতে চলো,প্রাসাদ বানাই।

জানালায় বসে দেখো,প্রকৃত বাহার।


শ্মশানের ছাই ছেড়ে,গরমপোষাক।

শীতের কামড় থেকে,পাবে অব্যহতি

গ্রীষ্মের প্রখর তাপ,দূরে চলে যাক।

সুন্দর প্রাসাদ হলে,কি এমন ক্ষতি?


সতীর সুবাক্যে শিব,হলো আনমনা।

কেমনে সফল হবে, সতীর কামনা।


শিবের ভাবনা


শ্মশানচারী সন্যাসী,আমি জটাধারী।

ব্যাঘ্রচর্ম পরে ঘুরি,বনের ভিতর।

ধ্যানধর্ম ভূতপ্রেত, নগন্য ভিখারী।

সর্প আভরণ মোর,সঙ্গী শশধর।


দক্ষকন্যা সতী তুমি,মিথ্যাচার করো

গৃহহীন,মিত্রহীন,ভূতের সংসার।

সেই দেখে সতী তুমি,মোরে বিয়ে করো

আজ কেন অকারণে,বাক্যের প্রহার?


গ্রীষ্মবর্ষা দুই ঋতু,এরা সঙ্গী মোর।

বৃক্ষতলে করি বাস,ভূতপ্রেত নিয়ে।

মেঘের ওপরে থাকি,হলে বর্ষা জোর।

এইমতো দেখে তুমি,এলে মন নিয়ে।


মন্দার পর্বতে এসো,ঘুরে একবার।

সুন্দর প্রকৃতি সেথা,দারুণ বাহার।


জীমূতকেতু


শিবের জীবনযাত্রা,পাহাড় পাথরে।

বৃক্ষের তলায় দিন,গ্রীষ্মকাল চলে।

বরষার দিনে থাকে,মেঘের ওপরে।

সতীর মনোকামনা,অনায়াসে টলে।


মেঘের ওপরে থাকে,শিবের সংসার।

জীমূতকেতু নামেতে,মহাদেব খ্যাত।

মেঘের ওপরে তার, পূর্ণ অধিকার।

শিবের সংসার যেন,আমাদের মতো।


শীত গ্রীষ্ম বর্ষা গেলে,প্রকৃত বাহারে।

মেঘেদের নিচে থাকে,জোর বৃষ্টি হলে।

হিমপড়া শীতে থাকে,শ্মাশানের ধারে।

গ্রীষ্মের উত্তাপে রয়,বটবৃক্ষ তলে।


গোটা পৃথিবীটা যার,হাতের মুঠোয় 

সেই নাকি ঘর খোঁজে,বোয়ের কথায়।


দক্ষযজ্ঞ


দক্ষের যজ্ঞ হইবে, মহা ধুমধাম।

একে একে দেবতারা,সব নিমন্ত্রিত।

শিবদূর্গা বাদ দিয়ে,পূর্ণ যজ্ঞধাম।

শিবের অমতে সতী,হয় উপেক্ষিত।


বাপের বাড়িতে যাবে, দ্বন্দ্ব দুইজনে।

উপেক্ষা করেছে দক্ষ,সতী মহাদেবে।

কেন যাবে দাক্ষায়নী,বিনা আমন্ত্রণে।

অপমানকর হবে, সহিবে না এবে।


তবু চলে সতী তার,নিজ পিত্রালয়ে।

কটুক্তির ঘেরাটোপে পড়িল আসিয়া।

স্বামীনিন্দা শুনে সতী,বাঁচে কি উপায়ে।

সর্বত্যাগী মহাদেব,শোনে ধ্যান দিয়া।


যজ্ঞস্থলে স্বামী নিন্দা,বিচলিত সতী।

যজ্ঞস্থলে অগ্নিকুণ্ডে,জীবন আহুতি।


সতীপীঠ


যজ্ঞানলে প্রাণ দিল,শিবের শিবানী।

ক্রোধে লাল মহাদেব,করিল তাণ্ডব।

স্বর্গমর্ত্য পাতালের,ধ্বংস হবে জানি।

ভুতপ্রেত অনুচর, করে কলরব।


যজ্ঞগুরু নিরুপায়,বসি হতাসায়।

অগ্নিবেদী তচনচ,করিছে গণেরা।

যজ্ঞগুরু ভৃগুঋষি,বসি পাহারায়।

অনুচরে দাঁড়ি ছেঁড়ে,দেখিল বেচারা।


স্বর্গমর্ত্য পাতালের,প্রলয় নিশ্চিত।

দেবদেবীর আতঙ্কে,স্তব্ধ স্বর্গপুরে।

রক্ষা করো নারায়ণ,কি করা উচিত।

সুদর্শন চক্র ডেকে,কুচোকুচো করে।


পৃথিবীর চারপাশে,খণ্ড খণ্ড পড়ে।

একান্ন পীঠের গল্প,করিব আদরে।


Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ