Posts

Showing posts from March, 2024

সময়

সময় দেবপ্রসাদ জানা মরশুম বদলের সঙ্গে বদলে যায়  পোশাকের বাছবিচার।  শীতে ভারী, গরমে হাল্কা পাতলা-  প্রজন্ম স্বাচ্ছন্দ্যের আবহাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী,  আরামদায়ক।  মরশুম বদলে যায় অর্থের প্রাচুর্যে  ওলি গলি, রাস্তা ঘাট,  যে তৃণ পদদলিত হয়ে হলুদ হয়ে যায়- সেইতৃণ, রাজপ্রসাদের লনে রাজার হালে শোভা পায়। সময়ের সাথে বাজি ধরে।   উচ্চ আকাঙ্খায়,  স্বপ্নের বৃষ্টিতে মাটিকে সিক্ত করে। সেখানে জল জমে,  আকাশ অবৈধ আশায়-  গৌন চোখে সময়কে ডাকে। সেখানে মশা আসে না অমল প্রত্যূষে।   ঘুম ভেঙ্গে যায় না, অসময়ে  যত সাধ, যত তৃপ্তি, ইতিহাস সৃষ্টি করে,  সুখ ক্রমে আরো সুখ হয়ে উঠে।   সময় বন্দী, অবৈতনিক দাস! মরশুম বদলে যায়, শীতোতাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে গ্রীষ্মকে বসন্ত, বসন্তকে শীতে- কিন্তু বরষা? সেও যে আসে সময়ের হাত ধরে। নীলাকাশের বিচ্ছুরিত আলো অনুষ্ণো অনির্বাণ, জ্বলে যায় পিপাসার বেগে, অক্লান্ত অশান্ত পৃথিবী। ভয় হয় একদিন সময় মুক্তি পেলে,  পালকের মত উড়ে যেতে হবে, অজানা সে দেশে।   

আকাশের রাজসভায়

আকাশের রাজসভায় দেবপ্রসাদ জানা হৃৎ পিণ্ডের ওপরে যারা, মাথা রেখে ঘুমোয় তাদের ভাতের গন্ধ দিয়ে আড়াল করে,  লুট করে, অজগরের মতো শুষে খায়- তারা পরিবর্তন আনে।  দূষিত আকাশে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে উড়ে যেতে যেতে, পালকে মেঘের ছাই জমে।  ধূসর হয়ে যায় সবুজ ঘাস, চোখের পাতা বন্ধ করে মশালের জ্বালিয়ে  পৃথিবীর বুকে ফাটিয়ে, বেরিয়ে আসে লাভা, আগ্নেয়গিরি ! গলি পথে তাড়া খেতে খেতে একদিন যারা পায়ের তলায় হাইওয়ে, তৈরি করে আলপথে হাঁটতে ভারি কষ্ট হয় তাদের, পরিবর্তন তো তাদের জন্য, অত্যাচার করতে হবে, ক্ষমতার রঙ দুর্ভাগ্যবশত, সবুজ কিংবা লাল হয়তো বা গুহাবাসি পোষাকে শোষক, নিপীড়ক বা রাষ্ট্রমেশিনের খেলা দাবার ছকে নিজেকে বেঁধে  এগোতে থাকে জীবন,  সপ্তর্ষিমণ্ডলে আকাশের রাজসভায় বসে।

সুখেই থাকে

যে আমাকে প্রেম শেখালো জোৎস্না রাতে ফুলের বনে সে যেন আজ সুখেই থাকে সে যেন আজ রানীর মত ব্যক্তিগত রাজ্যপাটে পা ছড়িয়ে সবার কাছে বসতে পারে বলতে পারে মনের কথা চোখের তারায় হাত ইশারায় ঐ যে দেখ দুঃখি প্রেমিক যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর ভিক্ষে দিলে ভিক্ষে নেবে ছিন্ন বাসে শীর্ন দেহে যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর কিন্তু শোন প্রজাবৃন্দ দুঃসময়ে সেই তো ছিলো বুকের কাছে হৃদয় মাঝে আজকে তারে দেখলে শুধু ইচ্ছে করে চোখের পাতায় অধর রাখি যে আমাকে প্রেম শেখালো প্রেম শিখিয়ে চিনিয়েছিলো দুষ্টু গ্রহ অরুন্ধতী বৃষ্টি ভেজা চতুর্দশী জোৎস্না রাতের উজ্জ্বলতা ভোরের বকুল শুভ্র মালা নগর নাগর ভদ্র ইতর রাজার বাড়ি সেই তো আবার বুঝিয়েছিলো যাওগো চলে আমায় ছেড়ে যে আমাকে প্রেম শেখালো জোৎস্না রাতে ফুলের বনে সে যেন আজ সুখেই থাকে নিজের দেহে আগুন জ্বেলে ভেবেছিলাম নিখাদ সোনা হবোই আমি শীত বিকেলের টুকরো স্মৃতি রাখবো ধরে সবার মত হৃদয় বীণার মোহন তারে ভুলেই গেলাম যখন তুমি আমায় ডেকে বললে শুধু পথের এখন অনেক বাকি যাও গো শোভন যাও গো চলে বহুদুরে কণ্ঠে আমার অনেক তৃষা যাও গো চলে আপন পথে এই না বলেই হাসলে শুধু করুন ঠোঁটে বাজলো দুরে শঙ্খ নিনাদ কাঁদলো আমার বুকের প...

আগ্নেয়গিরি

জ্বলে ওঠো হে আগ্নেয়গিরি, বিশ্রাম কেন?  লুকানো হৃদয়ের অদৃশ্য ভালোবাসার, অগ্নি জ্বালো, পরতে পরতে,  সাহিত্যের পাতায় পাতায়-কবিতায় নিত্য বুকে করে কত কাহিনী, কত প্রেম অন্তরে আছে যে লেখা।। কত আলাপ, কত কথা,সহস্র খুনসুটি কত প্রেমের-জীবন গিয়েছে  কত পথিকের ক্লান্তি ইতিহাস  কত সম্পর্ক ঘটিয়েছে মধুর। নব ঘন  ছায়ে আলাপে বিলাপে আনন্দের সুখ স্মৃতি, মুখরিত প্রলাপে।  কত পথিকের  অন্দরে হয় যে দেখা স্মরণ্যে বরণ্যে স্মৃতিতে জীবন  আঁকা।। বিশ্রামাগারে মিলন আবেশে পথিকের সুরো ধ্বনি  আশা- আকাঙ্খা, সুখ দুঃখের  বহু গল্প শুনি।। কত সাধারনী- ভিক্ষুক- চোর ডাকাতের বিশ্রামের অবসর দিনে- রাতে, অষ্ট প্রহরে -ঘটে চলে পর পর।। কত-- পশু পক্ষী আসে হেথা ঝাঁক বেঁধে রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে বিশ্রামিতে যায় সেধে।। এমনি করে শত সহস্র বছর বছর ধরে হাজারো কাহিনী-স্মৃতি আঁকা বিশ্রামাগারে ।

বিচার চাই ধর্মাবতার-৩

বিচার চাই ধর্মাবতার-৩ রতনের স্বপ্নটা যে কি, কি করতে চেয়েছিল সে, এখনো ধরতে পারলাম না, তার ফাইলে আমি যে টুকু পেলাম তাতে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়ে ছিল সে। সে স্কুল-এ খুব চুপচাপ থাকতো। কারো সাথে বন্ধুত্ব তেমন ভাবে করতে পারে নি।  কোন মেয়ের সাথেও তার বন্ধুত্ব হয়নি। তাই এগার ক্লাসটা কলেজেই ভর্তি হলো। মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়া শোনা করে ব্যারিষ্টার হবে, রতন পড়াশোনায় ভালোই ছিল, মাথাটা খেয়েছিল গোবিন্দ, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে নিজের স্বপ্ন গুলোকে সে জলাঞ্জলি দিতে চায়নি। কলেজের সব বন্ধুরা কত গল্প করে গার্লফ্রেন্ডের নিয়ে, ফোনের সোসালে কত বান্ধবী, একটা ফোন কেনার টাকাও তার মা তাকে দিতে পারে নি,  রাত তখন আটটা, গলির ধারে দাঁড়িয়ে আছে রতন, এই রাস্তা দিয়েই মেয়েটি রোজ যায়, গোবিন্দ সেইরকমই বলেছে, একে তুলে নিয়ে গেলেই কেল্লা ফতে, আর কারোর কাছে হাত পাততে হবে না, ফোন কেনার টাকাটা এখান থেকেই হয়ে যাবে,   এবার একটা ফোনের খুব দরকার তার, এই নিয়ে মায়ের সঙ্গে তার বচসা, অঙ্গনআড়ির কাজ করে শুধু পড়া খরচটা দিতেই হিমশিম খাচ্ছে মা, এটাও রতনকে কোনো কষ্ট দেয় না, বাপকে সে ছেড়ে কথা বলে না, - কিছু দিতে পার...

বিচার চাই ধর্মাবতার-২

বিচার চাই ধর্মাবতার-২ দেবপ্রসাদ জানা রতন বেশ বিরক্তি নিয়ে, না জিগেস করেই বসে পড়ল। বুঝতে পারছিল আমি আগেরদিনের কথায় বিশ্বাস  করছি না। ক্ষুন্ন হয়ে বলল,  - সেদিন তো সব বললাম স্যর, আজ আবার কেন? আমি তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম- - প্রেম করছো? রতন রেগে যাচ্ছিল বেশ। কম বয়েসে রাগটা চট করে হয়। রতনকে মাঝে মাঝে রাগানোও আমার দরকার। রাগানো, ভোলানো। আমি আবার একটু নরম হয়ে গেলাম। -- -ছোটোখাটো ব্যাপারেও পুলিশের বড়ো সন্দেহ বুঝলে হে, নিজের বাপকেও সন্দেহ করে। এরা একেবারে অমানুষ। আমি কিন্তু পুলিশ নয়। নাথিং টু ডু উইথ দেম। তোমার কাগজপত্রে নানান রকম কেচ্ছা ঢুকিয়ে দিয়েছে। চা খাবে?' -না। -আরে রাগ করছ কেন? খাও, একসঙ্গেই খাওয়া যাক। তোমার তো আবার শীত শীতও করছে।  বলে আমি টেবিলের তলায় সুইচে হাত দিলাম। বাইরে কলিং বেল বাজবে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমার আরদালি সুকুমার এলো। নামটা যতই সুকুমার হোক, মোটেই সে সুকুমার নয়, বৃদ্ধ এক নেপালী, তবে বাংলা জানে। -চা দাও। দু কাপ। পাখাটা বন্ধ করে দাও। সুকুমার পাখার সুইচ বন্ধ করল। করে চলে গেল। দরজা বন্ধ হল। আমি একটু হাসলাম। নরম হাসি। -দেখো রতন, যার যা কাজ তা না করে উপায় ন...

বিচার চাই ধর্মাবতার

বিচার চাই ধর্মাবতার দেবপ্রসাদ জানা একটা সিগারেট ধরালাম। একটা টান দিয়ে ধোঁয়া টা গলার্ধকরণ করে, তাকালাম তার দিকে, রতনের মুখটা বেশ সুন্দর, কালো নয় চাপা রঙ, ভ্রুর কাছটা কাটা দাগ, সেই অংশ ফাঁকা। চোয়াল ভাঙা। গালে কয়েকটা ব্রণর দাগ। থুতনি শক্ত এবং চাপা। নাকের ডগা রীতিমতন চিকণ। মুখে হাসি না থাকলেও হাসি হাসি মুখ। রতনের ফাইলটা খুললাম।  -তুমি কোথায় থাকো? -দমদমে। -তোমার বয়েস?  -কুড়ি। -পড়াশোনা কতদূর করেছ? -বেশি দূর নয়। বারো শুরু করেছিলাম।  বলেই বুকের কাছের বোতামটা আটকে নিলো রতন, -তোমার কি ভয় করছে? আমার প্রশ্নে রতন কেমন থতমত খেয়ে গেল।  -ভয়?.....না, ভয় নয়। রতন খাপছাড়া ভাবে জবাব দিলো। -আমার মনে হল, তোমার ভয় ভয় করছে। ঘরে এসি চলছে তাও তুমি ঘামছো। এখন কার্তিক মাসের শেষ। সকালে রাত্রে বেশ ঠান্ডা পড়ছে। এক একদিন ঘন কুয়াশা হচ্ছে। রাত্রে হিম পড়ে। এখন অবশ্য না দিন না রাত। দুপুরের শেষ। তাও তুমি ঘামছো। এসি বন্ধ করে, জানলার পর্দা সরিয়ে কাঁচের পাল্লাগুলো খুলে দিলাম আলো আসবে, মরা রোদ দেখা যাবে। রতন বলল- - না না স্যর, এই ঘামকে টেনশান সোয়েটিং বলে। শীত গ্রীষ্ম বলে কথা নেই। -তুমি গলার দিকে বোতাম এঁটে দ...

সহমরণ

সহমরণ দেবপ্রসাদ জানা একটা কাক এসে কার্ণিসে বসছে, কি একটা কথা কাকা করে বোঝাতে চাইছে, ঘররের কোনে কারা যেন ফিসফিসিয়ে কথা বলছে বুঝতে পারছি না, সময় থমকে গেছে, অবাক হয়ে বাতাস হাঁ করে দাঁড়িয়ে, আমার দেহটার ওপরে সাদা কাপড়টা বুক পযর্ন্ত ঢাকা, পায়ে আলতা দেওয়ার পর্ব চলছে, চোখে তুলসীপাতা, কপালে চন্দন, আতরের গন্ধ, ধুপ জ্বলছে ঠিক মাথার পাশে, একে তো আতরের গন্ধ, তার ওপরে ধুপ, একটা রজনীগন্ধার মালা গলায়, সেটার ও বেশ গন্ধ, পাশের বাড়ির কতকগুলো বউ আমার গিন্নীকে স্বান্তনা দিতে দিতে, চোখ মোছার ভান করছেন, এর মধ্যে অনেকেই আমি কখনো দেখিনি, আশেপাশে এরা থাকতো আমি জানিই না, পরিচয়ও নেই, বাইরে  আমাকে নিয়ে যাওয়ার পালঙ্ক এসেছে, এক একজন নতুন লোক আসছে আর সকলের কান্নার পর্ব শুরু হচ্ছে, বেশ লাগছে আমার। আমার সঙ্গী, আমার বউ, আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে, মেজো শালীকে বলল,  - একটু চা কর, ওদেরকে দে, ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিতে একটু সময় নেবেন, আধার কার্ডে বাবার নামের বানান, আর ভোটার কার্ডের বানান ভুল আছে, সারাজীবন লোকটা আমাকে জ্বালালো, মরার পরেও শান্তি নেই, আরো কতকি না ভুল আছে কে জানে, আমার কপালে যে কি আছে? মেজ শালী চা নিয়ে চ...

অন্নদান

অন্নদান দেবপ্রসাদ জানা তিনদিন শুধু জল খেয়ে থেকেছে নিতিশ, বাইরে যখন ভাইরাস আর পুলিশ ঘুরছে, তখন নিতিশের পেটেও ছুঁচো ঘুরছে, বস্তির ঠিক পাশে একটা বড়লোকেদের ক্লাব, সকালবেলা মহিলা পুরুষ বাচ্চাকাচ্চারা খেলাধুলা করে, কিন্তু গত তিনমাস ধরে কাউকে দেখতে পায়নি নিতেশ, ওরা বেশ ভালো ভালো টিফিন আনতো, যার খেতে ইচ্ছে হতো না, ক্লাবের জানলা দিয়ে বস্তির নর্দমার ধারে ফেলে দিতো, যে হেতু ক্লাবের আশেপাশে নিতিশ ঘোরাফেরা করতো, খাবার গুলো নিতিশ কুড়িয়ে খেতে পারতো, নিতিশ বাড়িতে কম ক্লাবের পাশেই বেশি থাকতো যত খাবারের থলি পাওয়া যেত, নিতিশ তা কুড়িয়ে বস্তির আরো দুজন রুনু আর বিপুল তিনজন মিলে খেতো, কদিন এদিক ওদিক করে খেলেও গত তিনদিন আর কপালে খাবার জোটেনি, পাড়ার নেতা অভয়ঙ্কর দেব বেশ নাম করেছে, তার ইচ্ছা এবার কিছু গরীব দুখীদির অন্নদান করবেন, তাই ওদির তিনজনের ডাক পড়েছে। ক্লাবের দরজায় বসিয়ে তিনজনের হাতে খাবার তুলে দিতে গিয়ে নেতার সাগরেদের হাতের মোবাইলটা পড়ে গেল, খুব দুঃখের বিষয়, ভাইরাসের জন্য লোকজন আনেননি নেতা, তাই ছবিটা তোলা যাবে না বলে, খাবার গুলো আবার ফেরৎ দিতে হলো। মোবাইল আসলে অন্নদান হবে।

ভালোবাসা

ভালোবাসা  দেবপ্রসাদ জানা বস্তির সকলের ঘরের জল অরুনের ঘরের দরজার সামনে পড়ে, বর্ষাকালে অরুনের বউ বড় কষ্ট করে, বস্তির মহিলা সমিতির নেতা বানী মাসিকে বলেও কোনো সুরাহা হয়নি। অরুন এই সব ব্যাপারে খুব একটা মাথা গলায় না। সারাদিন হোটেলে সাফ সাফাই এর কাজ করে রাত এগারটার সময় বাড়ি ফেরে।  বউ রাতে একটু ঝগড়াও করতে চায়, কিন্তু অরুন ভয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়ে, একটা জর্দা দেওয়া পান খেয়ে তবেই ঘরে আসে অরুন, মুখে মদের গন্ধ পেলে বউ আর রক্ষে রাখবে না। রাতে যখন আজ বৃষ্টি নামল জোরে, চেল্লামেল্লিতে অরুনের ঘুম ভেঙে গেল। সারা ঘরে এক হাঁটু জল, বউ একটা গামলা নিয়ে জল তুলে ফেলছে। ঘুমের ঘোরও তখন কাটেনি অরুনের, চৌকি থেকে এক হাঁটু জলে নেমে বুঝতে পারল না কি করবে? অরুন লাফ দিয়ে বৃষ্টিতেই বেরিয়ে পড়ল ঘরের বাইরে এত জল কোথা থেকে আসছে, বস্তির সবার চালের জলতো পড়ছেই, তবুও এত জল হওয়ার কথা নয়। অরুনদের বস্তির পেছনে একটা বড় ফ্লাট হয়েছে পাশেই, অরুন ভিজে ভিজে বোঝার চেষ্টা করছে কি ব্যপার? এর আগেও বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু এত জল হয়নি। অরুন ওদের ঘরের পেছনে গিয়ে দেখল, বেড়ার ঘর, বর্ষায় বেড়া আর প্লাস্টিকের প্রাসাদে এই বন্যা বস্তিতে অরুনের বউ ...

মস্তান

মস্তান দেবপ্রসাদ জানা রতনের ঠেকে দু বোতল বাংলা খেয়ে মনের দুঃখে পকেট থেকে খালি পিস্তলটা বের করে ভাঙা বেঞ্চের ওপরে রাখল বাবলু। দেখে সকলে ভয় পেলেও বাবলুকে সকলে চেনে। যে ছেলেটা সিদ্ধ ছোলা টমেটো পিঁয়াজ কাঁচা লঙ্কা কুচু করে কেটে  চাট বানিয়ে দিয়েছিল, সে বলল - -গুরু আজকাল আর কাজ পাচ্চো না?  বাবলু কোনো কথা না বলে মাথা নাড়লো, - ও তাই এই পিস্তলটা আর কাজে আসচে না, গুরু এই পিস্তলটা দিয়ে কত মেরেচ? বাবলু হাতের পাঁচটা আঙুল তুলে দেখায়। তারপর বলে - এখন বাজার বড় মন্দারে ভোলা, আজকাল নেতারাও একে অপরের সাথে লড়াই করে না। সব ভেতরে ভেতরে - একটা মুচকি হাসি দিয়ে পিস্তলটা পকেটে পুরে নেয় বাবলু। 

আয়রে গ্রীষ্ম

আয়রে গ্রীষ্ম দেবপ্রসাদ জানা আয় রে গ্রীষ্ম রোদকিরণে   ঝড় জলে জোর কদমে। পুড়িয়ে দেরে পাপের বোঝা পাপ যখন জোর চরমে। আয় রে ঝড় কালবৈশাখী  সাগর ঘুরে চরকি মেরে। পাখির বাসা ভাঙরে এসে তোরে আর বাঁধবে কেরে? আয় রে গ্রীষ্ম আগুন জ্বেলে ঘরে ঘরে পালা করে। ঝুলিয়ে দেরে নজর কাঠি দেখে যারা কু নজরে। আকাশ ছোঁয়া বৃক্ষ গুলো কেটে কেটে রাস্তা বাঁধে। বোঝে না কেউ কষ্ট তাদের তারা যে সব হাসে কাঁদে। জানে না যে দুঃখ কিসে,  সুখনদীর উপকূলে।   সবুজ কেটে হোডিং লাগে নব নব পথের আলে।

সোনার খাঁচায়

সোনার খাঁচায় দেবপ্রসাদ জানা রঙিন এই পৃথিবীর আমি রঙহীন এক পাখি তবুও আমি কথা বলি-  কালো রঙা, ময়না পাখির মতো। শোনে না কেউ আমার কথা, তবু বলে যাই- সোনার খাঁচায় দানা রেখে -  কথা বলতে বলে, তাদের কথা কৃষ্ণ বলো পাখি, কৃষ্ণ বলো। আমারও আকাশ ছিল, প্রেম ছিল বনে ভোরের বেলায় ডেকে ডেকে উড়তাম - প্রেম জোছনায় দুজনে গাছের ডালে কত কথা হত পাতার আড়ালে- ভালোবাসার কথা,  জোছনা যেন আজ, আঁধার আকাশে। রানীর মত হাজার অলঙ্কারে পা ছড়িয়ে সিংহাসনে বসে, চোখের ইশারায় দু-একবার কথা বলে - ভালো লাগার কথা,  বাতাসের পিঠে ভর দিয়ে হৃদয়খানি নিয়ে। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত খুশিতে হাসিতে সোনালী রোদের বুক ফুঁড়ে হারিয়েছি মন। বুকের খাঁচার হৃদয়খানা যখন  প্রেম শেখালো-চোখের পাতায় অধর রেখে,  ব্যস্ত প্রেমিক এসে বলল- কাল তোরে নিয়ে যাবো ওই আকাশ পথে লাল পলাশের বনে। ঠিক তখন পায়ের পড়লো সোনার শেকল। বৃষ্টি ভেজা ভোরের আলোর উজ্জ্বলতায় ফুলের মুকুল ফোটার আগে ঘুম ঘুম নেশায় সোনায় গড়া খাঁচায় ধোরে, বুঝিয়েছিলো- প্রেম এখানে বন্দী খাঁচায়, রাজবাড়িতে। বলল আমায় কথা বলো, প্রেমের কথা। বলল গান গাও, বসন্তের গান, বলিনি কিছু,  জোৎস্না...