Posts

Showing posts from November, 2021

রজনীগন্ধা

 রজনীগন্ধা একবার রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে গেছিলাম তোমার কাছে,ভালোবেসে তোমায় দেবো। তুমি বলেছিলে,আজ কি আমার মৃত্যুদিন? তোমার নিভৃত সংলাপে কালো মেঘ ঘনীভূত হয়। আমি হারিয়ে ফেলি আমার আমাকে। ধূসর পোশাকে এতটাই উদাসীন থাকি আমি, কোন বর্ণময় ফুলের গন্ধ- আমার মলিনত্বক ভেদ করতে চায় না। রজনীগন্ধা প্রেমের প্রতীক নয়। লাল গোলাপ- ওই লাল গোলাপের লাল রঙ,  আমি দেখিনি,বুঝিনি কখনো। একদিন-প্রচ্ছন্ন আড়ালে গোলাপের  একটা কাঁটা বিঁধেছিল বুকে, এক ফোঁটা রক্ত গোলাপের ঠোঁটে লাগিয়ে, তোমাকে দিয়েছিলেম ভালোবেসে।  আমার বুকের রক্তে লাল ওই গোলাপ, তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে গেছে একদিন। তোমার হৃদয়ে জ্যোৎস্না ভরে দিয়েছি কতদিন। কত রজনী কাটিয়েছি তোমাকে বুকে বেঁধে, কত রজনী হাত ধরে,নদীর কুলে হেঁটেছি। আর ভালোবেসেছি। কত রজনীগন্ধার মালা তোমার গলায় দিয়ে, হেমন্তের চাঁদ দেখেছি,সাগরের তীরে, দেখেছি একবিন্দু আলোর সাঁতার কাটা। আজ সেই রজনীগন্ধাই এনেছো আমার, শেষ যাত্রার দিনে।

গণেশ

 গণেশ একদন্ত মহাকায় লম্বোদর গজা বিঘ্নবিনাশক দেবতা,হেরম্ব স্মরণে। নমো নমো গজানন গণপতি রাজা। খর্ব স্থূলাদেহে গজা,সৌন্দর্য বদনে। গন্ধলুব্ধ দেবতারে,করিনু স্মরণ। জন্মের কাহিনী তারে,নানা রূপ দেয়। বুদ্ধিসিদ্ধি তার দুই দেহ আবরণ। শিবপুত্র বিনায়ক,সদা সবিনয়। গজমুণ্ড বুদ্ধি শক্তি চরিত্রে বিশ্বস্ত। একদন্ত বিদারিতা, মন্থর মনস্বী সুতাসুত গণপতি সিদ্ধিপ্রদ স্বহস্ত । চর্তুভুজ গণেশায়, কন্দর্প তেজস্বী। মুষিক বাহন যিনি,সুরলোক বাসি। মাতঙ্গ মুখ মণ্ডল,পয়োনিধি হাসি। ওঁ গাং গণেশায় নমঃ 

গণেশের জন্ম

 গণেশের জন্ম ১ স্নান ঘরে,স্নান করে,দূর্গতি নাশিনী। নন্দী দ্বারে পাহারায়,শিব অনুগত। আদেশ করিল মাতা,শোনো মোর বানী। দেবদৈত্য প্রিয়জন,রাখিবে বিরত। অসময়ে শিব সেথা,করে আগমন। নন্দী তারে বাধা দেয়,করিতে প্রবেশ। হাসিয়া কহিল শিব,করিব দর্শন। তব মাতা,পত্নী মোর,দয়িত মহেশ। মোরে কেন বাধা দাও,সামান্য বাহন। জানো নাকি দেবীগৌরী,মোর অর্ধাঙ্গিনী  তারকাছে যেতে কেন করিছ বারণ? এইক্ষণে যেতে দাও,হবে প্রাণ হানি। ভয়ে নন্দী পথ দেয়,ভেতরে যাবার। বেঘোরে এবার বুঝি,প্রাণ যায় তার।। ২ শিবের ঘরনী গৌরী,রেগেই আগুন। আদেশ অমান্য করে,সাহসের সনে। নন্দীর দণ্ডার্হ দণ্ড, কি হবে বলুন। দণ্ডনীয় অপরাধ,করিল কেমনে? ক্রোধে লাল শৈবলিনী,দেখে দণ্ডবৎ। ভয়ে কাঁপে দ্বারিনন্দী,ভুল করে চালে। ক্ষমা করো দূর্গামাতা,দেই নাক খৎ। এরকম কাজ আর,করিব না ভূলে। দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বর,রবে অপেক্ষায়? নিজগৃহে প্রবেশের,তার অধিকার। কেমনে বাঁধিব তারে,কোন অভিপ্রায়? দেব নয় দৈত্য নয়,সে শ্রেষ্ট সবার। যুক্তি তার মন্দ নয়,কহে মহেশ্বর। কেন ক্রোধ পুষে রাখো,মনের ভিতর। ৩ উপাস্য দেবতা তার,অনুনয় করে। কেমনে রাখিবে রাগ,দনুজদলনী। অভিমান ছিল বটে, শিবের উপরে। সকলের গণ আছে,সে ক...

শূর্পনখা

 শূর্পনখা ১ বিশ্রবা ও নিকষার কন্যা শূর্পনখা। জন্মকালে মীনাক্ষী ও দীক্ষা,চন্দ্রকনা। চাঁদের আকৃতি নখ বলে চন্দ্রনখা। মাতামহী কেতুমতি,সম সুদর্শনা। বিদ্যুজ্জিহ্বা স্বামী,দানবের গোত্রে। কলকেয় দানবেরে,গোপনে বিবাহ। রাক্ষস রাবণ ক্রুদ্ধ,শত্রুতার সুত্রে দানব কুলে বিবাহ,ভ্রাতা গাত্রদাহ। শূর্পনখা সনে তার বড় অভিমান। অসবর্ণ বিবাহের কঠিন বিরোধ। সম্পর্ক করিল ত্যাগ রাক্ষস রাবণ। শাস্তি তারে দিতে গিয়ে,এল প্রতিরোধ। মন্দোদরী বাধা দেন,তিষ্ট দশানন। দানবকুলে আত্মীয়,করুন বরণ। ২ রসাতল জয় করে,রাক্ষস রাবণ। ভগিনীর সঙ্গে দেখা,করিতে গেলেন। ভগ্নীপতি বিদ্যুজ্জিহ্বা,রাগের কারণ। আক্রমণ করে তারে,মারতে গেলেন। শূর্পনখার কপাল মন্দ,সেইক্ষণে, রাবণের হাতে তার স্বামীর মরন। অকালে বিধবা হয়ে,ভারতের বনে। বৈমাত্রেয় ভাই তার,খর ও দূষণ। বৈধব্যকালে দীক্ষার,পুত্র আগমন। শাম্ভূ নামে পুত্র সেই,বিধবার কোলে। লক্ষ্মণের হাতে যার,অকাল মরণ। পুত্রহারা শূর্পনখা,কি আছে কপালে? শোকাতুরা শূর্পনখা, ভ্রমণের কালে। পঞ্চবটীবনে তিনি শ্রীরাম দেখিলে। ৩ হে শ্রীরাম,রাবণের ছোট বোন আমি, রূপে গুণে সুদর্শনা,চন্দ্রকনা সম। আমি তব রূপে মুগ্ধ, দীপ্ত যুবা তুমি। আমার প...

অন্ধকাসুর

অন্ধকাসুর ১ বরাহ পুরাণ' মতে, কৃতিবাস শিব হাতির চামড়া তার, দেহের বসন। তন্ত্রসার' শাস্ত্র মতে,অন্য এক জীব। বাঘের চামড়া তার,অঙ্গের ভূষণ। কৈলাসে দেবীপার্বতী,শিবের ঘরনী। চক্ষু মুদে ধরেছিল, স্বয়ম্ভু শিবের, অসুর নাশিনী দূর্গা, বুঝতে পারেনি এত তেজ অগ্নি ছিল,ভিখারী শিবের। শিবঘাম পড়ে জন্মে,বিশাল অসুর। অন্ধ সে,অন্ধকাসুর,ভীষণ সাহস। হিরণ্যাক্ষ বর চেয়ে, স্মরনে প্রভুর। শিবের বরে পাইল,অন্ধক রাক্ষস। শিবের পুত্র হলেও,হিরণ্যাক্ষ পিতা। চরিত্রে রাক্ষস তিনি,মনেতে ক্রুরতা। ২  বরাহ পূরাণ নিয়ে, বলিব জরুর। কৃতিবাস নাম তার, কেমনে হইল। সে-বার অন্ধক নামে, এই যে অসুর। মহা মাতব্বর হয়ে, মাথায় উঠিল। অন্ধ হলেও,অসুর তিনি, প্রতিপক্ষ। দেবগনে অত্যধিক করে অত্যাচার। ভুতপ্রেত দেবদৈত্য, সবেতেই দক্ষ। ইন্দ্রের সভায় বলে, স্বর্গরাজ্য তার। ব্রহ্মার বরেই তার, হাঁক ডাক যত। কঠোর তপস্যা করে, করেছিল তুষ্ট। ব্রহ্মার বর পাইয়া, রাবনের মত। দেবদৈত সকলেরে, দিয়েছিল কষ্ট। ব্রহ্মার আশিসে তিনি, মহা বলবান। শিবের হাতেই তার, মৃত্যুর বিধান। ৩ তিন শর্ত অন্ধকের, মরণের গন্ডি। একমাত্র শিব-ছাড়া, মৃত্যু নাই হয়। বর মাগে বুদ্ধি করে, এই ছিল ফন্দি। অস্...

শিবের অনুচর

 শিবের অনুচর ১ মহাদের অনুচর,ভৃঙ্গী মহাকাল। দ্বাররক্ষা করে তারা,কৈলাসের দ্বারে। হঠাৎ দেখিল তারা,এমন কপাল। শিব পাৰ্বতী যেথায়,রতিক্রীড়া করে। ক্রদ্ধ হয়ে হরগৌরী,দিলে অভিশাপ। মনুষ্যযোনিতে তারে,জন্ম নিতে হবে। ভৃঙ্গী,মহাকাল মিলে,করিল আলাপ। শিবানীর গর্ভে তারা,ওই জন্ম লবে। শিব ও শিবানী তার,শুনিল প্রার্থনা। মানুষ রূপে তারাও,অবতার নেবে- দক্ষপৌত্র,পৌষ্য,তার পুত্রের বন্দনা পূর্ণ করে,পুত্র রূপে,শিব জন্ম লবে। ইক্ষাকুবংশীয় হবে,শিবের শিবানী। চন্দ্ৰশেখর তারই, চির অর্ধাঙ্গিনী।  ২ চন্দ্ৰশেখর নামের,দক্ষ বংশগতি। বানর দুটি পুত্রের,জন্ম দিল তারা। রাজা কুকুৎস্থ কন্যা,নাম তারাবতী। বেতাল ভৈরব নামে,ফেলে ছিল সাড়া। শিবের ধনরক্ষক, কুলীন কুবের। কৈলাসে অলকাপুরী,তার বাসস্থান। যক্ষদের মহারাজ,যক্ষ সম্পদের। শিবের অনুচর সে,পাইল সম্মান। কালিকাপুরাণ মতে,বামনপুরাণে। অপর এক কাহিনী,মুখে মুখে ঘোরে। অন্ধকাসুর নিধন,শিব উপাখ্যানে। অন্ধক সেখান শিবে,পদাঘাত করে ।  চৌচির মাথা শিবের,পড়ে রক্তধারা। বেতাল ভৈরব জন্মে,উপাখ্যান সেরা। ৩ ভৈরব,লম্বিতরাজ, ভৃঙ্গী মহাকাল। গণদেবতারা ছিল,শিব অনুচর। অধিপতি গণপতি,নন্দী ও বেতাল। গণেশের বা...

রুদ্র-শিব

 রুদ্র-শিব  ১ মহাযোগী মহাদেব, ভীষণ পাগল। তার কোন সখ নেই,সংসারী সন্ন্যাসী। সর্বজ্ঞানী,মহাঋষি, স্থির অবিচল। কামহীন,স্থিরমতি, প্রচণ্ড বিশ্বাসী। কামুক ভাব জাগাতে,কামদেব এসে, ভস্মীভূত হয়েছিল,কামদেব সেথা। মৎস্যপুরাণ মতে,শিবের সকাশে- কার্তিকের জন্মকালে,আছে সেই গাথা। ব্ৰহ্মার হৃদয় হতে,কামদেব এসে ব্ৰহ্মা নিজে,তার শরে,জর্জরিত হয়। নিজ কন্যা শতরূপা,প্রেম স্রোতে ভাসে। কামদেবের ওপর, অভিশাপ দেয়। ব্ৰহ্মা বিষ্ণু উভয়ই,ব্যভিচারে লিপ্ত। কোন নারী পারে শিবে?করে কামে যুক্ত। ২ শিবের রেতঃ ধরবে,কার আছে শক্তি?  কার্তিকের জন্মকালে,মহেশের রেতঃ। আকাশ গঙ্গার মতো, কারো নেই শক্তি। তিনিও ব্যর্থ হয়েই, ফেলে দেয় রেতঃ। লিঙ্গরূপে পুজো হয়,মন্দিরে গৃহেতে। ব্ৰহ্মচৰ্য পালনের  চৈত্রমাসে শিব। লিঙ্গরূপে পূজা পায় গাজনের ব্রতে। প্রাণের অধিক মানে,পৃথিবীর জীব। নেশাগ্রস্ত ভোলানাথ,মনোরম দেব সর্বদা তুষ্ট থাকেন বেলপাতা ফুলে। যৌনাচার ব্যাভিচারে বাকি সব দেব। একবাক্যে শিবনাথ,সব থাকে ভুলে। দেবতারা কত শত,দেবীদের সনে। কামকার্যে মগ্ন থাকে,দেখি অধ্যয়নে। ৩ ধান ভানতে শিবের গীত বঙ্গদেশে শিবজায়া শিবানীর প্রচুর আদর। শিবরাত্রে জল...