Posts

Showing posts from December, 2020

সনেট।। শেষপথ।।-১৭৩

    ।।শেষপথ।। দেবপ্রসাদ জানা   ৩১.১২.২০২০ ঘড়ির কাঁটা ক্রমশ অলস অনড়, দিন ফুরিয়ে আসছে,তবু মনে হয়। একটা মিনিট যেন,একটা বছর, প্রতিটা সকাল তাই,অক্ষয় অব্যয়। ভোর হয় সন্ধ্যা হয়,প্রতিদিন চলে অপেক্ষায় ধৈর্য্যহীন,হয়ে আছি আমি। মনের দেয়ালে ঝোলা ঘড়িটাও বলে ঠিক ঠিক ঠিক ঠিক,কোথা গিয়ে থামি? কিছুক্ষণ আগে সূর্য গেছে অস্তাচলে কিছুটা সময় ধার,দিয়ে গেছে মোরে রূপোলী চাঁদের আলো,বেশ ঝলমলে স্রোতস্বিনী নদী বহে, বুকে পড়া চরে। সময়ের নোনা জলে,ঢুব দিয়ে আমি, এইছিল শেষ পথ আর কেন থামি?

সনেট।। ছদ্মবেশে।।-১৭২

 ।।ছদ্মবেশে।। দেবপ্রসাদ জানা ৩০.১২.২০২০ মুখোশ সাঁটা মুখের পরে,অর্বাচীন  আসল মুখের ছবি করো অধ্যয়ন। মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে রাখে প্রতিদিন ভদ্রলোক বলে যারে,করি আপ্যয়ন। পরের ধনে পোদ্দারি,নিজে লবডঙ্কা কোথায় কবে ছোবল দেবে,সাবধান! ছদ্মবেশে সর্বক্ষন,খোঁজে শুধু মক্কা মনে থাকে দুষ্টবুদ্ধি,করে গুনগান। সাবধানে থেকো ভাই, তাদের হইতে  রক্তমাখা ছুরি থাকে,তাদের কোমরে, কখন যে,তা হানবে,পারবে কইতে? আচরনে মিষ্টি ভারি, মন দেবে ভরে। আগুনের সাথে বাস,মোটে ভালো নয়। আমি নয়,আমি নয়, জ্ঞানীগুনী কয়।

সনেট।। নব নবান্ন।।-১৭১

   ।।নব নবান্ন।। দেবপ্রসাদ জানা   ২৯.১২.২০২০ বিবেকের অবসাদে,পেকে ওঠে ধান- ভোরের শিশির পায়ে,নববধু আসে  নবান্নের হাত ধরে,মোরে ভালোবাসে ভোরে দেখি বধূ নাই,আছে তাঁর ঘ্রাণ।  নব নবান্নের ঘ্রাণ, থাকে কয় মাস? ক্ষান্ত উৎসবের শেষ,রয় ভাঙামন, ভাঁড়ারের দেশে মৃত,তারাদের মন, জানলায় বেদনার,স্মৃতির আভাস, রেলের লাইনে গলা,দেয় পুরবাসি অলস ভাবনা তার, বধুর বিহনে পোকাদের আক্রমণ,বধুর উপরে। মহাজনী পঙ্গপাল,দেয় অট্টহাসি - আক্রোশে নবান্ন বুঝি,পুড়িল আগুনে, ফাঁকা মাঠ জুড়ে শুধু,ভুতেরা নাচেরে।      

সনেট।। পাহাড়িয়া রাত।।-১৭০

 ।।পাহাড়িয়া রাত।।   দেবপ্রসাদ জানা শীত যেথা,শীতে কাঁপে,পাহাড়িয়া রাত। ফুলের কুঁড়িরা সেথা, কাঁপে থর্ থর্। কুয়াশা,আগুন জ্বেলে,সেঁকে তার হাত। বৃদ্ধ বৃক্ষ শীতে,খোঁজে,কুয়াশা চাদর। সকালের গুণগান ভুলে গেছে পাখি  ভোরের সোনালী রোদ ঘুমে অচেতন ডাক দিয়েও তোলেনি,রাত জাগা পাখি। ঘন কুয়াশায় তারে,করেছে বারণ। এক ধারে বড় খাদ,পড়লে মরণ অন্যধারে পাহাড়ের,অতি অহংকার। মাঝে পথ, ভয়ে ধরে,পাহাড় চরণ আর নয় পথ চলা বেলা হলো তার। মেঘের আঁচলে ঢাকা নীল নীলাম্বর, আমি আছি ভয় নাই,মেঘের ভিতর।

সনেট।। জ্বালাময় পথ।।-১৬৯

 ।।জ্বালাময় পথ।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২৬.১২.২০২০ হে আমার দীর্ঘতম পথ কোথা যাও? কোনস্থানে তব লক্ষ্য,কাউকে বলনি। শুধুই কাঁটার পথে,মোরে লয়ে যাও। ফুলের রাস্তায় কেন, মুখ ফেরাওনি? ওই আগুনের পথ,বড় জ্বালাময় - সেই পথে,পথ তুমি,কেমনে হাঁটাও। আর যে পারি না আমি,বড় ভয় হয়। ফিরে চলো পথ,নয় একটু দাঁড়াও। জ্বালাময়ী পথে আছে,সুখের সন্ধান সেই পথে যারা চলে,জিত তার হয়। কষ্টে চলা পথ দেয়, পরম সম্মান। ফুলে চলা পথিকের,ভাগ্যে পরাজয়। হে পথিক কষ্ট হোক,কাঁটা যুক্ত পথে। একদিন পাবে জেনো,ইতিহাস সাথে।

সনেট।। একটা ঘুম।।-১৬৮

 ।।একটা ঘুম।।  দেবপ্রসাদ জানা   ২৫.১২.২০২০ এমন একটা ঘুম আসুক দুচোখে, সেই ঘুমে স্বপ্ন হবে,রাজ প্রত্যাশার। অগনিত ঐশ্বর্যের ভিতর নিজেকে  ডুবিয়ে,সুখের মধু করিব আহার। একটা ঘুম আসুক,প্রেমিকার বুকে, নির্বাক ভাষায় দেবো,প্রেমের বারতা। ভালোবাসার মৌতাত,দেবো শূন্য বুকে। প্রেম আলিঙ্গনে পাবো,দৈহিক উষ্ণতা। সেই ঘুমে যদি ভোর না হয় বুঝবে- মৃত্যুঘুম এসে গেছে,এবারের মতো। আত্মার নিগূঢ় ডাক,এলে অনুভবে, আকাশ পেরিয়ে রব,গ্রহদের মতো। ঘুম এলো,নাই এলো,স্বপ্ন আছে রাখা। জীবনের সব ছবি,জলরঙে আঁকা। 

সনেট।। কবিতার প্রেম।।-১৬৭

 ।।কবিতার প্রেম।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২৪.১২.২০২০ কবিতার প্রেম যদি,স্রোতে ভাসে আজ, জেনো কবির চরিত্রে,দাগ লেগে গেছে। কবির কবিতা পড়ে,দিতে পারো তাজ- হৃদয়ের বাঁধ যেন,ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। কবিতার দুখে যদি,কাঁদে মন প্রাণ। বুঝবে,মনের কোনে,কষ্ট ধরে রাখে। কবিতার প্রেমে কবি,দেয় বলিদান। প্রলোভনে ঘরছেড়ে,বনবাসে থাকে। বুনেছে শব্দের জাল,চাঁদের আলোয়, কবিতার খাতাখানি,হৃদয়ে রেখেছে। শেষকালে কবিতার হইল প্রনয়। কবিসনে ঘর বেঁধে,কলঙ্ক মেখেছে। রাতের প্রহরী রাখে, চাঁদ করতলে। কবি বড় অসহায়,কবিতার ছলে।

সনেট।। ভাটা।।-১৬৬

      ।।ভাটা।। দেবপ্রসাদ জানা   ২৩.১২.২০২০ এখন চশমা ছাড়া দেখতে পাই না- সাহিত্য চর্চায় মন দিয়েছি গুছিয়ে। সখের জন্যে,চর্চায় নানান ব্যঞ্জনা চাকুরী ব্যবসা সব,গিয়েছে হারিয়ে। তার ওপর চোখের,এই বেইমানি - অল্পতে ঝাপসা দেখি,লেখার সময়। কষ্টের নিষ্পত্তি কিসে,বুঝতে পারিনি। মনে তাই আলোড়ন, বৃদ্ধ চক্ষুদ্বয়। তলানিতে ঠেকে গেছে,রাখা প্রাণ বায়ু  ধমনীর রক্তস্রোতে,পড়ে গেছে ভাটা, খড়িওঠা ত্বক কহে,কমে গেছে আয়ু সবুজ জীবনে আজ, অযাচিত ভাটা। টায়ারের পোড়া গন্ধ,নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসে, আঁকড়ে ধরেছি পথ্য,জীবনের আশে।

সনেট।। ক্ষমা করো বাঙালি।।-১৬৫

 ।।ক্ষমা করো বাঙালি।।       দেবপ্রসাদ জানা        ২২.১২.২০২০ বিশ্বসেরা সুন্দরীরা আজ রাজপথে- কারো গায়ে স্লিপলেস্,হটপ্যান্টে হানা, এ বাঙালির হল কি? বিবর্তন রথে। মুখে চলে ভিন্ন ভাষা,বাঙলা বোঝে না। জন্ম আমার বাঙলা দেশে তা বুঝি না পাঁচসাত ভাষা বলে,নিজেকে সাজাই- নানান রকম ভাষা, বাঙলা জানি না। ধুতি পাঞ্জাবি ফতুয়া,কোথা খুঁজে পাই? তোমরা বুঝি অবাক হলে?এ কি আর, ডালভাত মাছে মেছো,বাঙালিটা নেই। কেক পেস্টি পিজা হাটে শুধুই আহার। পেট পুরে মাংসভাত,শেষ পাতে দই। একটা কথায় বলি, ভাষা থেকে খাদ্য। ঘরকুনো বাঙালিকে,বোঝানো অসাধ্য।

সনেট।।বাতাসে ভাসে।।-১৬৪

 ।।বাতাসে ভাসে।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২১.১২.২০২০ থাকার মধ্যে কোথাও,বিস্তর ফারাক তোমার আমার মধ্যে, তাই মনে হয়- ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার পূর্বে,দেখা যাক নীরব ইন্দ্রিয় গুলো, কতক্ষন সয়?   এই নরক যন্ত্রণা, প্রতিদিন রাতে। একটু একটু করে চারিদিক থেকে, আসুক ধমনী বেয়ে,বোধ বেদনাতে। একটা স্ফুলিঙ চলে,শ্মশানের দিকে। একালের কামনার,জাঁতাকলে পিষে ঝরিয়েছিলাম রক্ত,মৌন প্রতিবাদে- ভণ্ডামির ভালোবাসা,সুদিনের শেষে- প্রত্যাখ্যানে,পোড়াতেই হয়, নির্বিবাদে। কঙ্কালসার মানুষ, নিত্য সহবাসে। ছলনার পাপ যেন,বাতায়নে ভাসে।

সনেট ।।সাঁঝবাতি।।-১৬৩

 ।।সাঁঝবাতি।। দেবপ্রসাদ জানা আজ যদি সাঁঝবাতি,জ্বলে উঠে বলে, ও চাঁদ তুমি আমার,প্রেম সঙ্গী হবে। দুজনায় সন্ধ্যা ছেড়ে,দূরে যাবো চলে। আজকে তুমি তোমার,সন্ধ্যা ছেড়ে রবে। আমায় তুমি নিষাদ ভাবো, অকারনে, বুকে তোমার অচেনা আলোড়ন হবে। মেঘের আড়ালে রাখা,চিঠিটা গোপনে, সকলে জানবে সব,জানি লোকে কবে। তোমার জোছনা আজ,জানি কষ্ট পাবে। ঘোরের ভেতরে ভাসে,তাহার ছলনা। মুঠোয় ধরা পতঙ্গ,আলো খেয়ে নেবে। স্তব্ধ যারা মন্ত্র পড়ে,বাড়াবে বেদনা। মরবে বলে বাতাসে,যত্নে উড়েছিল। আগলে জীবন তাই,ভালোবেসেছিল।

সনেট ।।আগুন।।-১৬২

     ।।আগুন।। দেবপ্রসাদ জানা   ২০.১২.২০২০ শীতের চাদরে ঢাকা,আমার পৃথিবী আগুন চাইছে আজ,বড় ঠান্ডা লাগে ফুটপাতে,খালপাড়ে,দেখেছ কি ছবি? রেলের লাইনে,তার দুইপাশে ভোগে। বুকে আমার,অচেনা রোগের পাহাড়  বুকের ভেতর রাখা,গোপন সন্ত্রাস। কেউ না জানুক,তোরা জানিস কাহার, ভয়ে ভীত?চলে যাবো,একটু দাঁড়াস। জানি কষ্ট দেয়া ওই,তোমার আগুন আজ আমার হৃদয়ে,প্রাণ ভরে দেবে। দেহের ভেতর ভাসে,আমার মরণ। গুণী যারা মন্ত্র পড়ে,করেছে বারন। বেরলে,বেঘোরে প্রাণ,শেষ ঘুমে যাবে, আজ তাই মোর ঘরে,চেয়েছি আগুন।

সনেট ।।বাতাসে ভাসে।।-১৬১

 ।।বাতাসে ভাসে।।  দেবপ্রসাদ জানা থাকার মধ্যে কোথাও,বিস্তর ফারাক তোমার আমার মধ্যে, তাই মনে হয়- ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার পূর্বে,দেখা যাক নীরব ইন্দ্রিয় গুলো, কতক্ষন সয়?   এই নরক যন্ত্রণা, প্রতিদিন রাতে। একটু একটু করে চারিদিক থেকে, আসুক ধমনী বেয়ে,বোধ বেদনাতে। একটা স্ফুলিঙ চলে,শ্মশানের দিকে। একালের কামনার,জাঁতাকলে পিষে ঝরিয়েছিলাম রক্ত,মৌন প্রতিবাদে- ভণ্ডামির ভালোবাসা,সুদিনের শেষে- প্রত্যাখ্যানে,পোড়াতেই হয়, নির্বিবাদে। কঙ্কালসার মানুষ, নিত্য সহবাসে। ছলনার পাপ যেন,বাতায়নে ভাসে।

সনেট ।।নিয়ম মেনে।।-১৬০

 ।।নিয়ম মেনে।। দেবপ্রসাদ জানা   ১৯.১২.২০২০ দিন রাত্রি ঘুরেফিরে,লুকোচুরি খেলে, চাঁদমামা,সুয্যিমামা,ভারি তার মিল। নিয়ম করে,আইন মানে,ভোর হলে। ঝগড়া নেই,ব্যাগড়া নেই,বেশ মিল। আকাশে তাদের দেখা,নাই কোনদিন পার হয়ে যায় দিন,রাত্রি আসে নেমে জোছনার আবরণে,আলো হয় ক্ষীণ  অভীষ্ট লক্ষ্যের গুণে,সে দিগন্তে থামে। আসন্ন ভোরের সূর্য,সোনালী অবশ্য। উজ্জ্বীবিত কামনার, অগ্নিমোহ ক্ষুধা।  অশান্ত ক্ষুধাতে চায়,গিলে নিতে বিশ্ব। তবু নিয়মের কাছে,মাথা নিচু সদা। বাজিল আঙিনা মাঝে,নারীর সঙ্গীত।  দিনের বৃক্ষটি দেয়,স্বপ্নের ইঙ্গিত।। 

সনেট ।।একা দূর্বাশা।।-১৫৯

 ।।একা দূর্বাশা।। দেবপ্রসাদ জানা    ১৭.১২.২০২০ তোমার মন খারাপ? কলম সৈনিক। টালমাটাল তোমার,বোধশূন্য দেহ? এত যে স্বপ্ন রেখেছ,গুছিয়ে দৈনিক  কার জন্য? উষ্ণ রিপু উচ্ছ্বাসে প্রত্যহ। সমস্ত ক্ষয়ের মধ্যে,বাঁচার বার্তায়- সময়ের খসে পড়া,ছিন্ন ফুল খানা- ডাল ধরে, টানাটানি করে কেন হায়? সেকি অকারণে?ভূমি করিয়াছে মানা। নদী উপেক্ষায় মুখ,ফেরায় সহসা যেথা আত্মমগ্ন ছায়া,ভরসা হারায় নগ্ন গাছ জোছনায়,একেলা দুর্বাসা অলৌকিক চাঁদ সেথা,মেঘের ছায়ায়। ভেবোনা সৈনিক,পথে নিদারুণ কাঁটা ফুল আছে পথে,বন্ধ হবে নাতো হাঁটা।

সনেট ।।যারে দেখিনি।।-১৫৮

 ।।যারে দেখিনি।। দেবপ্রসাদ জানা ১৮.১২.২০২০ নাগো,বলিনি তেনাকে,আমাদের কথা জীবনের কত কথা, বিষন্নতা ছুঁলে। সেদিনও দেখাইনি ,হৃদয়ের ব্যথা। অসমাপ্ত কত কথা,খুব একা হলে। সেদিন দেখা পেয়েছি,তার সাথে,স্বপ্নে। তোমরা যাঁকে দেবতা বলো,সেই তাকে। ভগবান বলে যারে খোঁজো মহাশুন্যে, ঝরার বীক্ষনে আজো,বলিনি তেনাকে। বলেছি,বেশ ভালোই তোমার দয়াতে। মোদের ভালো থাকার,রসদে এখনো, আসেনি অভাব,তাই নিজেকে জানাতে চাইনি একবারও,যা গেছে,পুরানো। মাথা তুলে বেঁচে আছি আজীবন জেনো, ইস্পাতের মতো আছি,থাকব এখনো।

সনেট ।।ফেসবুক দাস।।-১৫৭

 ।।ফেসবুক দাস।।  দেবপ্রসাদ জানা    ১৬.১২.২০২০ আহা রে কি খেলাই না চলে,ফেসবুকে  কত কথা,কত প্রেম,পাতায় পাতায়।  রাত হোক,দিন হোক,বন্ধু করো সুখে। হাজার পাঁচেক বন্ধু,দেবে সে হেলায়। সব কি আর,প্রাণের বন্ধু? একেবারে? ভার্চুয়াল প্রেমিক ও,আছে এর মাঝে। প্রেমিকারা রাতে অন্ হলে, কথা বাড়ে কুশল জানতে লাগে যে,সকাল সাঁঝে। নিজেকে হিরোর মতো,নায়ক সাজিয়ে, প্রোফাইলে ছবি দিয়ে,নোটিফিকেশন - অনুসন্ধানে বসতে হয় ফোন লয়ে - মন্তব্য লাইকে,অঙ্কে ভেরিফিকেশন। মিথ্যা প্রেমের কলঙ্কে,ভারি সর্বনাশ। আমরা যে সব মূর্খ,ফেসবুক দাস।

সনেট ।।শেষের স্বপ্ন।।-১৫৬

 ।।শেষের স্বপ্ন।। দেব প্রসাদ জানা   ১৫.১২.২০২০ বন্ধু স্বপ্ন দেখো রোজ,ওটা না দেখলে  সামনের পথে তুমি,এগোবে কি করে? মাঝেমধ্যে দেখো,রোজ নাইবা দেখলে। সাহস রেখো তোমার,মনের গভীরে। পঞ্চাশ বছর কেটে গেল অনাদরে, এই শরীর চায় নি,কিছু কোনদিন- ক্রমাগত পরিশ্রমে,আর অনাহারে পরিশ্রান্ত অসুস্থতা,দিন প্রতিদিন। স্বপ্ন আসে না এখন,তেনারা আসলে মৃত্যুভয়,এই বুঝি,শেষ তরী ডোবে। যমদূত দরজায় কড়া নেড়ে বলে- চলো প্রিয়,আর কাজ নাই এই ভবে। কি কাজ করেছি?শুধু স্বপ্ন দেখে গেছি। পাওয়ার থেকে আজ,বেশী হারিয়েছি।

সনেট।।ক্ষেত্র পরিহার।।-১৫৫

 ।।ক্ষেত্র পরিহার।। দেবপ্রসাদ জানা    ১৪.১২.২০২০ কতগুলো জানোয়ার,মানুষের মতো  পোষাক পোরে সমাজে যে ঘুরে বেড়ায়, আপনারা দেখেন না?অলিগলি কতো- মুখোস পরা মানুষ,সবার পাড়ায়। সেবায় নিযুক্ত হয়ে, দশের উন্নতি- করে,যারা যুদ্ধ করে,তাদের ভাঙ্গায়। তাদের পরিকল্পিত,চক্রান্তে দূর্গতি - সেটাও মেনে নিতেই হয়, ভরসায়। নিয়োজিত সব ব্যক্তি,প্রয়োজনে আসে, তা নয়,আসলে যাঁরা, পন করে,ভাবে- সমাজে যেকোন ক্ষেত্রে,সে সাহিত্যাকাশে হোক আর অন্য ক্ষেত্র হোক, সে ফাঁসবে। আর যখন ফাঁসাতে পারবে না আর- ভুলভাল অঙ্ককষে,ক্ষেত্র পরিহার।

সনেট।।পোকা।।-১৫৪

      ।।পোকা।।   দেবপ্রসাদ জানা     ১৩.১২.২০২০ ক্রমশ বড় হয়েছে,বাসনার পোকা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে,আদরে বাড়ছে। পার হওয়া কৈশোরে চাপা দিয়ে রাখা পোকাদের দল আজ,যৌবনে ডাকছে। লোমহর্ষক পোকাটা,হাঁটছে অজান্তে  শিরা উপশিরা হয়ে,মস্তিষ্কের  দিকে। আমার আমিত্ব খেয়ে,আকাঙ্ক্ষার প্রান্তে বাড়ছে ওর দৌরাত্ম্য,কে বোঝাবে তাকে? জীবন যৌবন আর যৌবনের পোকা অলিতে গলিতে সাথে,চলেছে প্রত্যহ। নৈঃশব্দে গোপনে ছোঁবে,যেথা পাবে একা। ভেতরে বাইরে সব,পোকা অহরহ । শিরদাঁড়া বেয়ে চাপা স্রোতে পোকা সব, মস্তিষ্কের গ্রন্থি কাটে,করে কলরব।

সনেট ।।দৈনিক প্রতিযোগিতা।।১৫৩

 ।।দৈনিক প্রতিযোগিতা।।      দেবপ্রসাদ জানা        ১২.১২.২০২০ কবি,এখানে দৈনিক প্রতিযোগিতা যে হয় না,কেন যে শুধু  দৈনিক লেখেন? বুঝিনা এখনো মোটে। মরে যাই লাজে। কতবার বলা হলো,তবুও লেখেন। আসলে সবাই গ্রুপ ঘুরে দেখিই না। প্রতিদিন কত ভালো লেখা ডিক্লাইন। ডিলিট করি। বিচ্ছিরি একটা তাই না। দয়া করে গ্রুপে ঘুরে, মানুন আইন। অনুশীলন লিখুন, কবিতা পড়ুন- ভালো যদি লাগে কবি,লেখা গুলো সব লাইক করুন পড়ে,কম্যান্ড করুন। জেনে শুনে,কপিপেষ্ট,করছেন সব? জানি কবি ব্যস্ত সব,নানাবিধ কাজে। বারেবারে লেখা গুলো বাদ দেয়া বাজে।

সনেট ।।গুপ্ত ছলনায়।।-১৫২

 ।।গুপ্ত ছলনায়।। দেবপ্রসাদ জানা   ১১.১২.২০২০ আজ কুয়াশার কাছে প্রশ্ন করলাম, এই যে এখন রোজ এসে জানালায়- উঁকিঝুঁকি মারো ঘরে,আমি ভাবলাম ভালোবাসার আদরে,থাকো পাহারায়। সিক্ত করো মোর উষ্ণ শুষ্ক দেহটার  উত্তপ্ত ইন্দ্রিয় গুলো। কিন্তু ভরসায়- কোথায় যেন একটা,গুপ্ত  ছলনার - আভাস দেখি,তোমার চোখের তারায়। আমার উষ্ণ দেহটা সিক্ত করে দিচ্ছে অযথা তোমার আঁখি,ছলনাশ্রু জলে। মিথ্যাচারে লিপ্ত তুমি, ও মনের ইচ্ছে শীতপাখিটার জন্য,তুমি হেথা এলে। উষ্ণতায় ভরা ছিল,মোদের পৃথিবী। কুয়াশার ক্রূর চক্রে,শীতে গেল ডুবি ।

সনেট ।।মৌনতার ভাষা।।-১৫১

 ।।মৌনতার ভাষা।।   দেবপ্রসাদ জানা     ১০.১২.২০২০ অভিমানে প্রিয়তমা,কোথা চলে যাও? এমন কি কথা হলো, রাগ হলো মনে। গোধূলির নানা রঙে,রঙ মেখে নাও। সব কালি ধুয়ে যাবে,রবে মোর সনে। নিরুপিত ছন্দ নিয়ে,কিছু কথা বলো। প্রকৃতির বুকে দেখো,রাত্রি নেমে আসে, কুয়াশায় ডুবে গেছে,কনে দেখা আলো। মেঘে মেঘে বেলা যায়,দেখো ভালোবেসে। ও দেহে লাগবে নাগো,কলঙ্কের দাগ। হৃদয়ের টান ভারি,বেদনায় ঘেরা।  ভালোবাসার সন্ধিতে, রাগ অনুরাগ। উপেক্ষার জ্বালা সয়,ভালোবাসে যারা। ভরাবে শূন্যতা মোর,এই ছিল আশা, প্রেম বোঝে শব্দশূন্য,মৌনতার ভাষা।

সনেট।। অপেক্ষাব দাস।।-১৫০

 ।।অপেক্ষার দাস।।   দেবপ্রসাদ জানা     ৯.১২.২০২০ আঁকাবাঁকা কাদা পথ,সুবজ প্রান্তর। দিগন্তরেখায় নামে নীলাভ আকাশ  সবুজের ঘাড়ে চেপে,খিদের কাঁকর গ্রামের আটচালায়, বিসন্ন বাতাস। সোনালী রোদ্দুর হেথা,উপবাস করে, নদীর কানায় বাঁধা,প্রেমিকার নাও, উদাস বাউল ডাকে,দোতারার সুরে।  মিলনের ছাড়পত্র,পৌঁছে দেবে তাও। মেঠোপথ অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। ক্ষেতের উপরে নৃত্য,করছে বাতাস; দেখলাম, শুনলাম, জানলাম হায়- সময়ের খরস্রোত,অপেক্ষার দাস। উপবাসে থাকে নাকি,পূর্ণিমার চাঁদ, বেদনারা সুখবনে,পেতে আছে ফাঁদ।

সনেট।।হাত বদল।।-১৪৯

 ।। হাত বদল।। দেবপ্রসাদ জানা   ০৮.১২.২০২০ অনেক দূরে বিদেশে,তুমি চলে গেলে। বলে গেলে,তাড়াতাড়ি ফিরব সরমা। কাদামাটির ঘরেতে,মোরে রেখে দিলে কুঁড়ে ঘরে আমি নাকি,মাটির প্রতিমা। বিচুলি আর বাঁশের,ছাউনিতে ঘেরা- একলা ঘরে,তোমার অপেক্ষায় থাকি, তুমি এলে না আজও। মিষ্টি গন্ধে ভরা তোমার পাঠানো চিঠি,বুকে করে রাখি। বহুদিন পরে বুঝি হয়েছে স্মরণ  অনাহারে,অপেক্ষায়,জরাজীর্ণ আমি। শুনেছি গড়েছ তুমি,একান্ত আপন- ইমারত! কাঁচাঘরে কই,এলে তুমি? এসেছিলে সেই তুমি,বাতাস বলেছে। হাতে রাখা হাতখানি,বদলে গিয়েছে।

সনেট।। শূন্যতার স্বপ্ন।।-১৪৮

 ।। শূন্যতার স্বপ্ন।।  দেবপ্রসাদ জানা     ৭.১২.২০২০ বোধের ভিতরে বোধ,করে রাখে যত্ন - যৌবনে দেখেছি স্বপ্ন,মিষ্টি এক বউ। মনের ইচ্ছের ঘরে,উঁকি দিচ্ছে স্বপ্ন হাতে হাত রেখে ঘর,ছাড়েনি তো কেউ। দিগন্তরেখায় শশী,দেখি একফালি  হৃদয়াকাশে আনন্দ,মারছিল উঁকি, আত্মহারা হয়ে,দুই সত্তা,চোরাবালি। অন্তর্গামী শূন্যতার,সাদা স্বপ্ন দেখি।   নিস্তব্ধ গহীন রাতে,চলমান ঘড়ি- টিক টিক,টিক টিক,কহে কত কথা, জোছনা প্লাবনে স্নাত,শূন্য এই বাড়ি সবুজ প্রান্তর মাঝে,শূন্যতার ব্যথা। নিশ্চুপ মায়াবী স্বপ্ন,রাতের সোহাগী  চন্দ্রমল্লিকার বনে,জোছনা বিবাগী।

সনেট।। চুড়ি।।-১৪৭

     ।। চুড়ি।। দেবপ্রসাদ জানা   ৬.১২.২০২০ আবারও দেখা হলো,বিনীতার সনে  প্রকৃতির বুকে সব,দুখের কারখানা  আকাশ বাতাস কাঁদে,তার আগমনে। ভুবনে চলছে শুধু যৌন লেনাদেনা। সর্বত্র ভেসে বেড়ায়,ক্রন্দনের শব্দ মাঝ মাঠে বিনীতার,পোড়া শবদেহ ধর্ষণে ধর্ষনে আজ, প্রকৃতিও স্তব্ধ। একেলা পথে বিনীতা,এলে কেন কহ? বুঝি আমি অভিমানে,ঘর ছেড়ে পথে, গিয়েছিলে রাগ করে,আর যে এলে না। দুইদিন পরে তারে,দেখিলাম মাঠে- চিনিবার পথ নাই,হাতে চুড়ি বিনা। চুড়ি নিয়ে বচসায়,গেলে পরবাসে। সেই চুড়ি আজ যেন,মুখ চেপে হাসে।

সনেট।। প্রেমের পরাগে।।-১৪৬

 ।।প্রেমের পরাগে।।   দেবপ্রসাদ জানা    ০৫.১২.২০২০ ভিতরে ভিতরে টের পাই প্রতিদিন। একটু একটু করে কাঠ পোকাদের দল,বিঁধিয়ে দিয়েছে,তীক্ষ্ণ আলপিন, বেশ বুঝতে পারছি,বেদনা দেহের। করতলে বাঁকা চাঁদ,আকাশের নিচে কালো মেঘ,অন্ধকারে মৃত্যুর নিঃশ্বাস। সুন্দরের হাত ছুঁয়ে,আঁধারের পিছে- ঘুরি প্রতিদিন,তার শাস্তি সর্বনাশ। ভুলে যেতে হবে সব,ভাঙতে ভাঙতে। হৃদয় ভেঙেছে,রক্ত পড়ছে প্রত্যহ। মনের কপাট খুলে,যেদিন আসতে- ভালোবাসা কেঁদেছে যে,নিত্য অহরহ। ক্ষমাহীন অপরাধ,কঠিন আবেগে- অগুনতি অনুযোগ প্রেমের পরাগে।

সনেট।। এতদিন পরে।।-১৪৫

 ।।এতদিন পরে।। দেবপ্রসাদ জানা   ০৪.১২.২০২০ হঠাৎ সেদিন,তার সঙ্গে দেখা হলো। এক মুঠো রোদ যেন,সম্মুখে আমার, চাঁদ থেকে নিয়ে আসা,জোছনার আলো গন্ধ খামে মোড়া প্রেম,চোখেতে তাহার। ভালো আছ তো মনিকা,ঠিক কতদিন পরে তোমার আমার,দেখা হলো জানো? ত্রিশটা বছর,আজ বড় ভালো দিন- জীবনে প্রথম প্রেম,তা হবে না কেন? ইচ্ছে করেই সেদিন,বলেছিলে মোরে ভালোবাসা ভালো নয়,লোকে মন্দ কয়। উষ্ণ আবেশের স্নিগ্ধ পরশ তোমারে দিয়েছে ভালোবাসার উন্মুক্ত বলয়। অন্ধকারেও দেখতে পেয়ে চিনেছিলে এতদিন পরে বুঝি,ভালোবেসেছিলে।

সনেট।। হারানো পুঁথি।।-১৪৪

 ।।হারানো পুঁথি।। দেবপ্রসাদ জানা   ০৩.১২.২০২০ আমার বাল্যকালের হারানো পুঁথির- কিছু পাতা খুঁজে পাই,কালকের রাতে। ছেঁড়া পাতা গুলো আজ,মূক ও বধির। বহু বর্ষ অন্ধকারে বন্দী, বঞ্ছনাতে। তারা আমার শৈশব,আমার কৈশোর, কাঁপা হাতে লেখা কিছু,মণি মুক্তা লিপি। অপোক্ত ভাষার শব্দে আমিও বিভোর। এক একটা অক্ষর যেন শিলালিপি। অলীক সব প্রশ্নেরা উত্তরের খোঁজে  অবোধ্য অবাধ্য লিপি,কাটাকুটি খেলে। জরাজীর্ণ পুরাপত্র,কিযে ছাই বোঝে, অকারণে ঝরে পড়ে,শক্ত হাতে নিলে। চেয়ে থাকে বর্ণমালা,অভিমান করে। কেন তারে বন্দী করে রেখেছিল ঘরে।

সনেট।।তাকে খুঁজতে।।-১৪৩

 ।।তাকে খুঁজতে।। দেবপ্রসাদ জানা ০২.১১.২০২০ কখনো জনসম্মুখে,কখনো একাকী  খুঁজি তাকে অন্ধকারে,পৃথিবীর প্রান্তে কখনো পূর্ণিমা রাতে,জোছনায় দেখি একরাশ ভালোবাসা কুড়িয়ে আনতে। অক্লান্ত পথ হাঁটবো যদি পাই তাকে উত্তাল তিস্তায় ঝাঁপ দিয়েও দেখবো, কেমন করে,আঁধারে,সে লুকিয়ে থাকে। পলাশীর ময়দানে,রক্ত দিয়ে দেবো। জঙ্গলে,ঘন জঙ্গলে ব্যস্ত যে পাখিরা তাদের বলবো এসো সকলের সনে আকন্ঠ পান করবো জোছনা মদিরা।  মাতাল হবো আবার  মাটির উঠানে। নীলাভ ভালোবাসার হ্যারিকেন জ্বেলে।  খুঁজবো ঘন জঙ্গলে ভালোবাসা ঢেলে।