Posts

Showing posts from August, 2024

জলন্ত কলম

জলন্ত কলম দেবপ্রসাদ জানা কালরাতে কেউ আর ঘুমোতে পারেনি  সারা পৃথিবীর লোক, কলম খুঁজেছে  মানুষের এ-তখত্ তাউসের নিচে  পুঁতে দিতে চেয়েছিল, অগ্নি, অগ্নিবীজ। অগণিত লোক যার দৌরাত্মে লাঞ্ছিত  ভীরু চোখে খোঁজে তারা ঘূর্ণির-তাণ্ডব, রোদ বৃষ্টি মেঘ বিদ্যুৎ, স্বপ্নের দুর্ভিক্ষ  শঙ্কাহরণ পরশে তোমার ঝলসে  ওঠা প্রতিবাদ আমি করতে পারিনি। মরণজয়ী স্বাধীন ইচ্ছে দিয়ে তাকে সাজিয়ে নিলাম নষ্ট রাতের আকাশ নতুন তারার আলো, যে দীপান্বিতায়  নিশুতরাতের দোর ভেঙে বাইরে এলাম  পাথর চাপায় পড়ে আত্মাগুলো আজ, শহীদ বেদীর ভাঙা, স্মৃতিস্তম্ভ তলে। স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণে আগুন ছড়ায়  ভাইয়ের চোখে, চোখে আলোকিত চোখ  ভালোবাসার মন্ত্রে কাঁপে দিবানিশি চোখের তারায় জন্মে, কত অহংকার। ঘৃণায় পাষাণ স্মৃতি। দ্রুত হাওয়ার  শব্দে ফুটিবে কমল, ভালোবাসা ভাষা। তোমার ভাষায় কণ্ঠ জোড়া গুণগানে শক্তিশালী কলমের শব্দ প্রতিবাদে আমার অনন্তকাল জুড়ে উদ্ভাসিত।

রাজপরে শকুন্তলা

এক নিবিড় অরণ্য ছিল। তাতে ছিল বড়ো বড়ো বট, সারিসারি তাল তমাল, পাহাড় পর্বত, আর ছিল –ছোটো নদী মালিনী। মালিনীর জল বড়ো স্থির-আয়নার মতো। তাতে গাছের ছায়া, নীল আকাশের ছায়া, রাঙা মেঘের ছায়া –সকলি দেখা যেত। আর দেখা যেত গাছের তলায় কতগুলি কুটিরের ছায়া। নদীতীরে যে নিবিড় বন ছিল তাতে অনেক জীবজন্তু ছিল। কত হাঁস, কত বক, সারাদিন খালের ধারে বিলের জলে ঘুরে বেড়াত। কত ছোটো ছোটো পাখি, কত টিয়াপাখির ঝাঁক গাছের ডালে ডালে গান গাইত, কোটরে কোটরে বাসা বাঁধত। দলে দলে হরিণ, ছোটো ছোটো হরিণশিশু, কুশের বনে, ধানের খেতে,কঢি ঘাসের মাঠে খেলা করত। বসন্তে কোকিল গাইত,বর্ষায় ময়ূর নাচত। এই বনে তিন হাজার বছরের এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় মহর্ষি কণ্বদেবের আশ্রম ছিল। সেই আশ্রমে জটাধারী তপন্বী কণ্ব আর মা-গৌতমী ছিলেন, তাঁদের পাতার কুটির ছিল,পরনে বাকল ছিল,গোয়াল-ভরা গাই ছিল, চঞ্চল বাছুর ছিল, আর ছিল বাকল-পরা কতগুলি ঋষিকুমার।      তারা কণ্বদেবের কাছে বেদ পড়ত, মালিনীর জলে তর্পণ করত, গাছের ফলে অতিথিসেবা করত, বনের ফুলে দেবতার অঞ্জলি দিত। আর কী করত? বনে বনে হোমের কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত, কালো গাই ধলো গাই মাঠে চরাতে যেত। সবুজ মাঠ ছি...

অভিমানে শকুন্তলা

এক নিবিড় অরণ্য ছিল। তাতে ছিল বড়ো বড়ো বট, সারিসারি তাল তমাল, পাহাড় পর্বত, আর ছিল –ছোটো নদী মালিনী। মালিনীর জল বড়ো স্থির-আয়নার মতো। তাতে গাছের ছায়া, নীল আকাশের ছায়া, রাঙা মেঘের ছায়া –সকলি দেখা যেত। আর দেখা যেত গাছের তলায় কতগুলি কুটিরের ছায়া। নদীতীরে যে নিবিড় বন ছিল তাতে অনেক জীবজন্তু ছিল। কত হাঁস, কত বক, সারাদিন খালের ধারে বিলের জলে ঘুরে বেড়াত। কত ছোটো ছোটো পাখি, কত টিয়াপাখির ঝাঁক গাছের ডালে ডালে গান গাইত, কোটরে কোটরে বাসা বাঁধত। দলে দলে হরিণ, ছোটো ছোটো হরিণশিশু, কুশের বনে, ধানের খেতে,কঢি ঘাসের মাঠে খেলা করত। বসন্তে কোকিল গাইত,বর্ষায় ময়ূর নাচত। এই বনে তিন হাজার বছরের এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় মহর্ষি কণ্বদেবের আশ্রম ছিল। সেই আশ্রমে জটাধারী তপন্বী কণ্ব আর মা-গৌতমী ছিলেন, তাঁদের পাতার কুটির ছিল,পরনে বাকল ছিল,গোয়াল-ভরা গাই ছিল, চঞ্চল বাছুর ছিল, আর ছিল বাকল-পরা কতগুলি ঋষিকুমার।      তারা কণ্বদেবের কাছে বেদ পড়ত, মালিনীর জলে তর্পণ করত, গাছের ফলে অতিথিসেবা করত, বনের ফুলে দেবতার অঞ্জলি দিত। আর কী করত? বনে বনে হোমের কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত, কালো গাই ধলো গাই মাঠে চরাতে যেত। সবুজ মাঠ ছি...

দুষ্মন্ত

এক নিবিড় অরণ্য ছিল। তাতে ছিল বড়ো বড়ো বট, সারিসারি তাল তমাল, পাহাড় পর্বত, আর ছিল –ছোটো নদী মালিনী। মালিনীর জল বড়ো স্থির-আয়নার মতো। তাতে গাছের ছায়া, নীল আকাশের ছায়া, রাঙা মেঘের ছায়া –সকলি দেখা যেত। আর দেখা যেত গাছের তলায় কতগুলি কুটিরের ছায়া। নদীতীরে যে নিবিড় বন ছিল তাতে অনেক জীবজন্তু ছিল। কত হাঁস, কত বক, সারাদিন খালের ধারে বিলের জলে ঘুরে বেড়াত। কত ছোটো ছোটো পাখি, কত টিয়াপাখির ঝাঁক গাছের ডালে ডালে গান গাইত, কোটরে কোটরে বাসা বাঁধত। দলে দলে হরিণ, ছোটো ছোটো হরিণশিশু, কুশের বনে, ধানের খেতে,কঢি ঘাসের মাঠে খেলা করত। বসন্তে কোকিল গাইত,বর্ষায় ময়ূর নাচত। এই বনে তিন হাজার বছরের এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় মহর্ষি কণ্বদেবের আশ্রম ছিল। সেই আশ্রমে জটাধারী তপন্বী কণ্ব আর মা-গৌতমী ছিলেন, তাঁদের পাতার কুটির ছিল,পরনে বাকল ছিল,গোয়াল-ভরা গাই ছিল, চঞ্চল বাছুর ছিল, আর ছিল বাকল-পরা কতগুলি ঋষিকুমার।      তারা কণ্বদেবের কাছে বেদ পড়ত, মালিনীর জলে তর্পণ করত, গাছের ফলে অতিথিসেবা করত, বনের ফুলে দেবতার অঞ্জলি দিত। আর কী করত? বনে বনে হোমের কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত, কালো গাই ধলো গাই মাঠে চরাতে যেত। সবুজ মাঠ ছি...

শকুন্তলা

এক নিবিড় অরণ্য ছিল। তাতে ছিল বড়ো বড়ো বট, সারিসারি তাল তমাল, পাহাড় পর্বত, আর ছিল –ছোটো নদী মালিনী। মালিনীর জল বড়ো স্থির-আয়নার মতো। তাতে গাছের ছায়া, নীল আকাশের ছায়া, রাঙা মেঘের ছায়া –সকলি দেখা যেত। আর দেখা যেত গাছের তলায় কতগুলি কুটিরের ছায়া। নদীতীরে যে নিবিড় বন ছিল তাতে অনেক জীবজন্তু ছিল। কত হাঁস, কত বক, সারাদিন খালের ধারে বিলের জলে ঘুরে বেড়াত। কত ছোটো ছোটো পাখি, কত টিয়াপাখির ঝাঁক গাছের ডালে ডালে গান গাইত, কোটরে কোটরে বাসা বাঁধত। দলে দলে হরিণ, ছোটো ছোটো হরিণশিশু, কুশের বনে, ধানের খেতে,কঢি ঘাসের মাঠে খেলা করত। বসন্তে কোকিল গাইত,বর্ষায় ময়ূর নাচত। এই বনে তিন হাজার বছরের এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় মহর্ষি কণ্বদেবের আশ্রম ছিল। সেই আশ্রমে জটাধারী তপন্বী কণ্ব আর মা-গৌতমী ছিলেন, তাঁদের পাতার কুটির ছিল,পরনে বাকল ছিল,গোয়াল-ভরা গাই ছিল, চঞ্চল বাছুর ছিল, আর ছিল বাকল-পরা কতগুলি ঋষিকুমার।      তারা কণ্বদেবের কাছে বেদ পড়ত, মালিনীর জলে তর্পণ করত, গাছের ফলে অতিথিসেবা করত, বনের ফুলে দেবতার অঞ্জলি দিত। আর কী করত? বনে বনে হোমের কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত, কালো গাই ধলো গাই মাঠে চরাতে যেত। সবুজ মাঠ ছি...

মৃত্যুর পরেও যদি

আমার প্রেমে সেই জোর নেই জানি তবু অপেক্ষায় থাকি দিন প্রতিদিন কখনো তো তার মনে হবে টানাটানি প্রেম পাবো আমি, ক্ষান্ত হবো সেইদিন। একটা পাখী রোজ মনের জানালায়    আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে।    আবার কখনো বা পাখাটা ঝাপটায়।    প্রেম ঝরে পড়ে ঝরুক ফাগুন মাসে।  পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন,    দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু;    মনের স্বপ্নের জলজ কণাগুলি যেন  তার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলে আরো কিছু      কাউকে নীড়ে এসেছে ফেলে বুঝি?    হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা।    তাই তো চোখে তার  গাঢ় নীল খুঁজি  মেললে পাখা, পড়ে নীলের জোছনা।       যখন লিখি আমি টেবিলে ঝুঁকে   পড়তে বসি বই, তখন সেই পাখি।  চকিতে দোল খায় আমার বুকে  খাতা জুড়ে প্রেম ছড়িয়ে দেয় দেখি।     আমার মৃত্যুর পরেও, হয় যদি সেই    নীল পাখি আসে মনের জানালায়,    আবার শিস দেয়, দেখে নেয় আমি নেই  তবুও যেন ঠোকরায়, তার বাঁকা ই...

বৃদ্ধার মৃত্যু

সুনন্দা মাকে বহুদিন দেখেনি, কথাও হয়নি, সারাদিন কাজের ফাঁকে মাকে একবার অন্তত ফোন করে, কিন্তু কদিন আগে ফোনটা জলে পড়ে গেল, বাড়িতে এই একটাই ফোন কোন রকমে চলে, তার ওপর মায়ের ফোনটাও চালাতে হয়, দুতিনটে ফোন চালানোর জন্য সমর্থ নেই তাদের, স্বামী একটা ছোটো দোকান চালায় পান বিড়ি সিগারেটের, সুনন্দারা দুই ভাই বোন, স্কুলে পড়তে পড়তে প্রেম করে পালিয়ে এসেছিল সে, বাবা মারা যাওয়ার পর বাপের বাড়িতে খুব একটা আদর পায়নি সুনন্দা, বাপের বাড়ি যে খুব একটা অচল তা নয়, তাদের নিজের বাড়ি বনগাঁও শহরে, ইটের ভাটার মালিক ছিল তার বাবা, বর্তমানে দাদা চালায়, দাদার বিয়ের পর বৌদি তার পালিয়ে যাওয়াটাকে কেন্দ্র করে ঝামেলাও করেছে, সম্পত্তি নিয়ে, যেহেতু সুনন্দার বাবা তাদের বিয়েটা স্বীকৃতি দিয়ে যায় নি, দিয়েছিল কিনা মরণকালে তাও জানতে পারেনি সুনন্দা, তবু মায়ের কাছে তার অন্যায় সে স্বীকার করেছে, মা তাকে মেনে নিলেও দাদা বৌদি মানেনি। কেন মানেনি সুনন্দা জানে, তার স্বামীও জানে, কষ্টে থাকলেও কোনোদিন দাদা বৌদির কাছে হাত পাতে নি, দাদার দুইমেয়ে, বেশ বড় হয়েছে, পিসি বলে তারা জানে কিনা সন্ধেহ আছে, এই রকম অবস্থায় বাপের বাড়িতে গিয়ে মায়ের খোঁজ নেওয়া খুব...

আর একটা পালকের মৃত্যু

আর একটা পালকের মৃত্যু  দেবপ্রসাদ জানা গৃহস্থের ঘর থেকে মৃতদেহ চলে গেলে সকলেই যেমন বানপ্রস্থে যাওয়ার আমন্ত্রণ পায়। শুধু কয়েকজন ঋণগ্রস্ত বোকা সৎ মানুষ চৌকাঠে দাঁড়িয়ে মৃতদেহের চলে যাওয়া দেখে, - পৃথিবীর সব থেকে বড় কবির কলম জেগে ওঠে। ওদের চোখের চারপাশের পেশীগুলো টান টান হয়ে যায় অজান্তেই -  ওরা নেশাখোর মাতালের মতন হুমড়ি খেয়ে বলে-  উঃ কি ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গ মৃত্যু। সোনালি সুতোর ফাঁস দিয়ে দিয়ে-  বাঘবন্দী খেলার ছক, মস্তিষ্কের অন্ধকার উপত্যকায়, যেখানে তার চিহ্নিত উপহাসে, ভেসে আসে- মৃত্যু বড় নিষ্ঠুর শব্দ। একটা সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। মৃত্যুকে ভয়ানক এক চিত্রের মত করে, বেসাতি। প্রদীপের তেল ফুরিয়ে আসার আগে- জোর করে নিভিয়ে দেওয়া আরো ভয়ানক। যদি শুধু ঝরা পালকের প্রতিশব্দ হয় এক নমনীয় হিমজা আলোর  চপল ইশারায়, আমোদিনী শিউলির বন আর ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে পলিগ্যামী-পাঠশালায়। ছেনাল হাওয়ার বেলেল্লা এক্কা-দোক্কা খেলার, অগোচরে অবিচ্ছিন্ন অরিগ্যামী, ছবি আঁকে ক্যানভাসে- সেই আশ্চর্য হিম অন্ধকারে জেগে থাকে,  পালকের নীল সাজঘর।  সাজঘরে শিউলি চোঁয়ানো আলোয়,  হা-নগ্ন একা সে পাগলিনী, অন্ধকারে জেগে ...

মহাচক্র মহারণ

মহাচক্র মহারণ বট অশ্বত্থের পায়ে বৃথাই রোদন,  মনের অন্দরে ভ্রান্তি নাহি রিপুবশে  শ্রমলেশ পরিশ্রম, করেছি যতন। উৎসবে অলস ভাষা, ভাসিছে বাতাসে। ক্ষুধা তৃষ্ণা তন্দ্রা নিদ্রা শরীরে না রয়,  হেথা নারী প্রণয়িনী বিলাসিনী দাসী।  কাহার কৃপায় দিব্য, জ্ঞানের উদয়,  দিব্য আঁখিতে দেখিছে, এই দেশবাসী। ঘুরে ঘুরে দেখো সেই পরামাণুরাশি  মিলিছে ভাঙ্গিছে পুনঃ গড়িছে আবার। লক্ষ লক্ষ গ্রহ গড়ি, ফেলিছে বিনাশি, অচিন্ত্য অনন্তকাল ঘোরে দূর্নিবার। লক্ষ কোটি দিবাকর অনন্ত গগনে,  ঘিরে তারে কোটি কোটি গ্রহ উপগ্রহ। সেথা বায়ু বুক পেতে রয় আনমনে। এখানে উৎসব দিন, নাই তো বিদ্রোহ।

দলাদলি

কান্নায় ঘামে রক্তে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে গেল পথ- তুমি মিথ্যার বেসাতি নিয়ে বসে আছো এখনো? দলাদলি গালাগালি বোমার বিস্ফোরণে তোমার ভাষা হয়ে গেছে বিকৃত। ভালোবাসার ফুল গুলো পড়ে থাকে, তোমাদের মিলিত হাতের আশায়। মাঠের গভীর থেকে কান্না উঠে আসে। রাস্তায় রাস্তায় দ্বিধাছিন্ন সংহতি। মানুষের বিরুদ্ধে মানুষ? না এরা মানুষই নয়, এরা দানব, নর রাক্ষস। ঘরহারা পথহারা হত দরিদ্র যারা  বৃহৎ এক পরিবার চিড় খেয়ে চৌচির... কার অপরাধে? কোনো অদৃশ্য শত্রুর বিষ ফেনিয়ে তুলছে, তাকে খুঁজে বের ক'রে চুরমার ক'রে দাও চিরদিনের মতো। আর, দোহাই তোমাদের  পাগলাগারদ ঘেঁষা অপরিণত মূর্খ মস্তিষ্কের বুলি কপচিও না। আত্মহননের চিন্তা থেকে ফিরে এসো।  বিপ্লবের পথ ভগ্নস্তূপে ভ'রে গেছে এ-পথ তোমাদের নয়। অস্ত্র নাও ঐক্যের,  অস্ত্র নাও আধুনিকতম বিপ্লবের। বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দাও,  তোমাদের আসল শত্রুর দিকে- যারা কান এঁটো করা হাসি হাসছে আমাদের দিকে তাকিয়ে। ইতিমধ্যে বহু রক্তে তোমাদের হাতে লাল হয়েছে। এই প্রবল জয়ে কি লাভ হয়েছে? একটা বোমা ফাটাও ভালোবাসার, যাদের প্রেরণায় তোমাদের ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে, তাদের প্রশ্ন করো একবার

পুজা

ইন্দ্রালয়ে সরস্বতী-পূজা সুদূর পশ্চিম-ছাড়ি দেখিয়া গান্ধার, ছাড়িয়া পারস্য আর আরব-কান্তার- সাগর, ভূধর, নদী-নদ-ধার,  দেখ কি আনন্দে বসেছে ঘেরে;  বীণাযন্ত্র করে বাণী-পুত্রগণ,  ছাড়িছে সঙ্গীত জুড়ায়ে শ্রবণ,  পুরিছে অবনী, পুরিছে গগন-  মধুর মধুর মধুর স্বরে। ( অরে তন্ত্রী, তুই বীণার অধম- তুইও বাজিতে কর্ রে উদ্যম; (বাঁশরী যেমন রাখাল-অধরে,) বাজরে নীরব ভারত-ভিতরে- বাজরে আনন্দ-স্ফুরিত স্বরে। (পূর্ণ কোরস্) গ প্রভাতে অরুণ উদয় যবে, তখনি সুকণ্ঠ বিহগ সবে, এক) প্রধান বিষয় সম্বন্ধে প্রভার সামে

বিনীত নিবেদন

বিনীত নিবেদন দেবপ্রসাদ নিশিদিন চিন্তা দাও, হয়ে যাই কবি। এই চোখে স্বপ্ন দাও, তুমি রাতভোর। সারারাত নিদ্রা নেই, চিন্তা হাবিজাবি। এই করে কেটে যায়, যাবৎ বছর। প্রেম চোখে দেখো নাই মোর যত কাজ -  নিজের সত্তাকে শুধু, করো নিয়োজিত।  খবর রাখো কী তুমি কেন করি লাজ। সন্দেহের অগ্নিবাণে করেছো পীড়িত।  অসৎ আমার প্রেম বড়ো করে দেখি -  প্রেমিকের ভূমিকায়, আমি যে বিশ্বাসী  তাই দ্বিধাহীন হয়ে চলি ওগো সখী,  মৃত ভালোবাসায় যে, আমিও উদাসী। কবে তুমি কাছে আসো জেগে বসে ভাবি,  জানি না খুলবে কিনা কোথা পাব চাবি?

বাংলার দুঃখ

বাংলার দুঃখ দেবপ্রসাদ নেমেছে পথে পথ থেকে পথে এই মহাপ্রলয়ের সন্ধিক্ষণে- কতদিন আর শমনের রাতে  শমনের দূত ডাকে ক্ষণে ক্ষণে। কতদিন বাংলায় হবে হাহা রব। কাঁদিয়ে জীবন করিবে এ ক্ষয়। নর নারী আর পশু পক্ষী সব। একি আন্দোলন দেখি কলঙ্কময়। নিরিহ দূর্বল সবে আর কতদিন। জীবন আছে তবু জীবিত নয়। বাংলার শোভা করিবে মলিন। দরিদ্র কাঙ্গাল পাবে কেন ভয়? জঠর-অনলে কেন রক্তনদী বয়। ধিরে ধিরে বাংলা করিতেছে ক্ষয়। কোলাহলে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি হয়। হারিয়েছে বাংলা বাঁচার প্রত্যয়। বন্ধ হোক মিথ্যা মহিমা কীর্ত্তন। ক্ষয় করে তার প্রাচীন নিদর্শন। সুখদুঃখ মৃত্যুর নিভৃত উচ্চারণ। আর্তনাদের স্বরে সমাপ্ত জীবন।

সিগারেট

সিগারেট  দেবপ্রসাদ সিগারেটটা শেষ? এই খাবার পর একটা। চা খেলে একটাতো লাগবেই, সকালে পটি করতে আরো একটা। স্নানের আগে একটা লাগে, অফিস ফেরতা বাস স্ট্যান্ড পযর্ন্ত একটা। বেশি কিন্তু না,  এই অফিস পথে একটা ধরাই,  নইলে বড় একা লাগে, বোকার মতো। কাশিটা আজকাল একটু বেড়েছে বটে, ঠাণ্ডা গরমের সময়, এটা আমার হয়, তার ওপর অফিসের এসি, সারাক্ষণ। ডাক্তার পুরো মানা করেনি এখনো, বুকের ব্যথাটা বাড়ছে আজকাল, প্রশ্ন করো সিগারেটটা ছাড়া যায় না? এটা এমন কি ব্যাপার, কতবার ছেড়েছি, কিন্তু ওই একা হলেই মনে হয়,  নাই নাই ফাঁকা ফাঁকা। দেয়ালে যেন মাংস ঝুলছে,  বিছানায় বসা, রক্ত ও কফ উঠছে। রক্ত কীসের কীসের বেদনা? বলতে পারি না, একটা একটা দিন  সঞ্চিত আয়ুর থেকে চলে যাচ্ছে। আয় নেই ব্যয় বাড়ছে,  দেরাজ ভর্তি চিঠি পড়ে আছে  চিরুনি চাবি ও আয়না- নিজের মুখটা দেখতে পেলাম, চিনতে পারিনি। ফুটপাতে বসা চরস খোরটার মতো, অথচ নিজেকে দেখতে কত ভালোবাসতাম। আঁটসাঁট চোয়ালের ওপর ফ্রেঞ্চকাট, সেখান থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়েছে একটু আগে। বিছানায় রাখা খাতার ওপরে কালির চিহ্ন লাল। কবিতাটি অসমাপ্ত। কাকে নিয়ে লেখা বলতে পারি নি, ' ম বল...

কদম ফুল

কদমফুল দেবপ্রসাদ ডালিম ফুলের লালিমা দেখেছো?  সাদার ম্লানিমাও-কিন্তু তাদের সম্মিলন?  এমন নিবিড়ভাবে লালের লাস্য, সাদার ঔদাস্য?  দেখছি আর নতজানু হচ্ছি অন্তরে অন্তরে।  হে নেপথ্যচারী, এই নিটোলতা ভেঙে দিও না,  এর পারম্পর্য থাকুক অনাহত,  লাল ফুল খসিয়ে ফেলে,  অথবা সাদা কাপড় দুলিয়ে দিয়ে  এই বর্ণিলতাকে করে ফেলো না একমাত্রিক,  মাথার ওপরের নীলকে নয়নগোচর করে,  এর দিব্যবিভা নষ্ট করে ফেলো না। শ্রাদ্ধবাসর সাজানো হয়েছে সাদা কাপড়ে,  পাশেই ফুল্ল ডালিমের ডাল,  সাদা কি রাতুল? লাল হল ফ্যাকাশে?  মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়টিই,  এই বীতরঞ্জনের ইশারা,  একটি জীবনের থেমে যাওয়া,  স্মৃতিশিথিলতায় তাকে ফিরে পাওয়ার প্রয়াস,  এই প্রকৃতির আপনভোলা ভাব-উল্লাস- সহানুভূতি বা উদাসীনতা-শুশ্রূষার আয়োজন- আকস্মিকতা নিপাতন,  তার দ্বিধাসমতা কুহকিত।  এ কি জননান্তর-সৌহৃদানির জন্যে স্মৃতি-শ্রান্তি? সে এক মগ্নশিলা, চারপাশে বিষাদ-বারিধি। এই বিষাদই শাশ্বত,  মেরুরজনী নিরসনের তাগিদে আসে,  উচ্ছলতার উতল ঊষা।

মৃত্যুর জন্ম

মৃত্যু  দেবপ্রসাদ মৃত্যুর উৎপত্তি দেখ শরীরের সাথে। আজ কিম্বা কাল কিম্বা শত বর্ষ পরে। মরণের দ্বার খুলে যাবে সাথে সাথে। অসার সংসার মাত্র, জন্ম জন্ম ধরে। ধিক্ ধিক্ কিবা ছার, অধর্মের পথে। ধন রত্ন জমি জমা, সব যাব ছেড়ে। তবে কেন যুদ্ধ করি স্বজনের সাথে।

কবিতার বার্ধক্য

কবিতার বার্ধক্য দেবপ্রসাদ কবিতার রূপ যেন থাকে অমলিন। কবি তৈরি করে নেবে নৈঃশব্দের দিন। কবির রচনা দৃঢ় দীপ্তিতে উজ্জ্বল। পাঠকের পাঠে যেন বাড়ে মনোবল। কবিতা তোমার জন্মে নাই পড়া পাঠ। হারাবে যৌবন তব চাঞ্চল্যের ঠাঁট। জবুথবু তব দেহ বসন্ত বিলাপ। আর নাই জৌলুশের, সৌন্দর্য প্রতাপ। চেয়ে দেখো অনুভবে যা কিছু বাহার। তাপহীন হলো কেন রক্তের জোয়ার। ভাঙা গাল পাকাচুল, বয়সের গুণ। আর নাই মহাতেজ নিভেছে আগুন। আঁখিতলে কালিমাখা, সৌন্দর্য বিলীন। ললাটে পড়েছে ভাঁজ, মুখশ্রী মলিন।

মৃত্যু

মৃত্যুর ডাক দেবপ্রসাদ  যতিচিহ্ন মাখা মৃত্যুশোক... তছনছ...  চৌচির দিকবিদিক।  হলুদ ঘাসের ওপর পড়ে থাকা মৃত্যুর স্বপ্ন শেষ নিঃশ্বাসের মত রাজকীয়, গৃহস্থের ঘর থেকে মৃতদেহ চলে গেলে সকলেই যেন বানপ্রস্থে যাওয়ার আমন্ত্রণ পায়। মণিকর্ণিকা ঘাটে-  জীবনের আশ্চর্য অন্তিম দৃশ্য। উদ্বিগ্নতা...  ঐতিহ্যমণ্ডিত ওই শ্মশানভূমে জলন্ত চিতা। রহস্য ভেসে আসছে...  স্তব্ধতার গান.. অসীম নিরবচ্ছিন্ন ঘুমপাড়ানি.. মৃত্যু কী ভীষণ বিস্ময়কর...  তুমি কি ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গ মৃত্যু, চূড়ান্ত অগ্নিশিখার ভেতরই ফুরিয়ে আসতে থাকে, নেহাৎ ব্যথারাই কেবল জেগে থাকে...  মুক্ত যাত্রাপথে অনন্ত আলোর রোশনাই... আলোকবর্তিকাকে পাথেয় করে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে।   সুখদুখ, সৃষ্টি ও চয়ন...চোখের চারপাশে - টান টান নেশা,  চিতাভস্মের সাথে জীবন মরণের গূঢ় বিনির্মাণ। শ্রীমদ্ভাগবত গীতার পূণ্যশ্লোকে-  "ন জায়তে প্রিয়তে বা কদাচিন্নায়ং ভূত্বা ভবিতা বান ভূয়ঃ।  অজো নিত্যঃ শাশ্বতোয়ং পুরনো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে..." সমস্ত তত্ত্ব কথামালার ভিড়, আশ্চর্য আতিশয্যে বহমান জীবন-  লীন হয়ে যায় পঞ্চভূতে...  বর্...