Posts

Showing posts from February, 2024

মনসামঙ্গল-১৪-২৩

মনসামঙ্গল-১৪ বস্ত্রহীন চাঁদবেনে, বসে আছে জলে।  মড়ার কাপড় ভেসে, আসিল কিনারে। পরমা সুন্দরী রূপে, মা মনসা এলে। আরো পাঁচ কুলবধূ, সঙ্গ দিলো তারে। জরৎকারু পত্নী দেবী, জয় বিষহরী।  পাঁচ বধু সদাগরে, দেখে মৃদু হাসে। জল আনিবারে যায়, কুম্ভ কক্ষে করি।  যেই স্থানে চাঁদবেনে, বস্ত্রহীন বসে।  কুলবধূ দেখিলে যে, ভারি লজ্জাকর।  বস্ত্রহীন চাঁদবেনে, জলেতে লুকায়। সব কুলবধূ বলে, ক্ষ্যাপা দিগম্বর।  বিবস্ত্রে রয়েছ কেন, ওহে ভেজা গায়। শ্মশানের বস্ত্র নিয়ে, চাঁদ গিয়ে পরে।  ভিক্ষা মেগে খায় চাঁদ, নগরে নগরে। মনসামঙ্গল-১৫ বাম হস্তে ঝোলা তার, ছেঁড়া কাঁথা গায়।  কালিদহে সদাগর, ভিক্ষা মেগে ফেরে। প্রসাদ কহিছে শোনো, মনসার হায়। ঝোলা হাতে চাঁদবেনে, তবেই না ঘোরে। ভিক্ষা মাগে ঘরে ঘরে, ভিক্ষা নাহি পায়। ক্ষ্যাপা দেখে শিশুগণ, ঘোরে পিছে পিছে। চাঁদ বলে পুরবাসি, এ কেমন দায়? কেন মোরে মারো বলে, চোখে অশ্রু মোছে। নাম মোর চাঁদবেনে, আমি সদাগর। সপ্ত ডিঙা ডুবে গেছে, কালিদহ জলে। নিঃস্ব আমি বস্ত্রহীন, ঘুরি ঘর ঘর। দুইবেলা অনাহারে, পেট মোর জ্বলে। সবলোক হাসে শুনে, কহিল তাহারে। অঙ্গ হৃষ্টপুষ্ট তবু, অভাব আহারে...

মনসা মঙ্গল-১-৫

মনসামঙ্গল-১ পৃথিবীতে সরীসৃপ, করিছে উৎপাত। ঋষি কশ্যপের মনে, আইল সহসা। সুন্দরী কন্যার জন্ম, হলো অকস্মাৎ। মন থেকে জন্ম বলে, কহিল ‘মনসা’। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তারে, ধ্যানযোগ দিলো। সর্পের সেই উৎপাত, বাঁধিবার তরে। মন্ত্রবলে মনসারে, দেবী করে নিলো। শিবকে প্রসন্ন করে, ঋদ্ধ হলো বরে। নারায়ণে তুষ্ট করে, কশ্যপের কন্যা। তুষ্ট হয়ে দেব তারে, দিলে বর দান। সিদ্ধি নামে দেবীশক্তি, পাইল অনন্যা। সর্পদেবী মনসার, হইল সম্মান। পৃথিবীর পুজা নিতে, যেতে হবে তারে। নইলে দেবতা বলি, কে কহিবে তারে? মনসামঙ্গল-২ সমুদ্র মন্থন কালে, উঠিল গরল। বিষের আগুন যেন, পৃথিবী পুড়ায়। নীলকণ্ঠ হলো শিব, গিলে হলাহল। বিষ হরণের ভার, এলো মনসায়। নাম হলো বিষহরী, বিষের আধার। মহাদেব শিব তারে, কন্যার সম্মানে। আপনার ভাবনায়, নিয়ে ছিল ভার। এই দেখি চিণ্ডীমাতা, কিছুতে না মানে। শিব বুঝি মনসার, রূপ দেখে মরে। পিতৃ পরিচয় বুঝি, ছলনা তাহার। গৃহে আনি মনসারে, শিব বিয়ে করে। অগ্নি শলাকায় চক্ষু, পুড়াইল তার। এক চক্ষু দেবী হয়ে, স্বর্গ বাস করে। তবুও যে শ্রীচণ্ডীর, মন নাহি ভরে। মনসামঙ্গল-৩ একদিন মনসাকে, মারিলেন লাথি। মনসার বিষদৃষ্টি, শ্রীচণ্ডী অজ্ঞান। বীতশ্রদ্ধ ...

নৃসিংহ অবতারের কাহিনী

নৃসিংহ অবতারের কাহিনী লক্ষ্মী-নারায়ণের দর্শন উদ্দেশ্যে একবার ব্রহ্মার মানসপুত্র চতুঃসেন বৈকুণ্ঠধামে এসে হাজির হলেন। কিন্তু দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে জয় ও বিজয় নামে দুই দ্বারী। তারা তাকে বাধা দিলে তিনি তাদের অভিশাপ দিলেন– অসুরবংশে জন্ম হবে এবং তিন জন্মে শাপ মুক্ত হয়ে আবার বৈকুণ্ঠ ঠাঁই পাবে। এক জন্মে তারা দিতির পুত্র হয়ে হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু নামে জন্ম লাভ করে। বরাহরূপী শ্রীবিষ্ণু ওই হিরণক্ষের বিনাশ ঘটালে হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়। সে ঠিক করল ওই মৎস্য, কূর্ম ও বরাহ রূপধারী হীন নারায়ণের মাথা শূল দ্বারা ছিন্ন করে ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবে। সে নিজেকে অজেয়, অমর করবার বাসনায় মন্দর পর্বতে গিয়ে কঠোর তপস্যায় ব্রতী হল। ব্রহ্মার উদ্দেশ্যে সেই তপস্যার ফলে হিরণ্যকশিপুর মস্তক হতে সৃষ্টি হল ধূমযুক্ত তমোময় অগ্নি। চারদিকে ছড়িয়ে সেই অগ্নি নদী ও সমুদ্র সকালে বিচলিত হল, ধরণী কেঁদে উঠল, দৈত্যের তপস্যার তেজ দেখে দেবতারা ভীত হলেন। তাঁরা তাড়াতাড়ি ব্রহ্মার সমীপে সে প্রণাম নিবেদন করে বললেন– হে তাত, আমরা হিরণ্যকশিপুরের তপস্যার ঘোর প্রভাবে দুর্বিষহ কষ্ট ভোগ করছি। আপনি আমাদের রক্ষা করুন। ব্রহ্ম...

বরাহ অবতারের কাহিনী

বরাহ অবতারের কাহিনী দৈত্যরাজ হিরণ্যাক্ষ ব্রহ্মার খুব ভক্ত, তিনি মন্ত্রবলে ব্রহ্মাকে খুশি করে বর চাইলেন, অমরত্বের বর, কিন্তু ব্রহ্মা কিছুতেই সেই বর দিতে পারলেন না, কারণ এই বর দিলে হিরণ্যাক্ষ ভীষণ শক্তিশালী হয়ে উঠবে,  সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার নির্দেশে স্বায়ম্ভুব মনুর তিন কন্যা শ্রদ্ধা সৃষ্টিতে ব্রতী হলেন। কিন্তু আরও সৃষ্টি চাই। ব্রহ্মা মনুকে আরও সৃষ্টির আদেশ করলে তিনি বললেন–হে পিতা প্রলয় সলিলে ত্রিভুবন জল মগ্ন হলে জীব কোথায় গিয়ে ঠাঁই নেবে? ব্রহ্মা ভাবলেন তাই তো ধরিত্রীকে উদ্ধার করার একটা উপায় বের করতে হয় শ্রীহরি তার নাসারন্ধ্র থেকে এক বরাহ মূর্তির আবির্ভাব করলেন। সেই বরাহ দেখতে দেখতে মহা আকার ধারণ করলেন, তিনি প্রচণ্ড গর্জন করে উঠলেন। ধরিত্রীর সন্ধানে জলে ডুব দিলেন, ঘ্রাণের সাহায্যে তাকে অবলীলায় নিজের দাঁতের অগ্রভাগ দ্বারা জল থেকে তুলে ধরলেন ধরণিকে। ভগবান বরাহ দেবের কাজে বাধা দিতে ছুটে এলেন দৈত্যরাজ হিরণ্যাক্ষ। তিনি তার গদার আঘাতে দৈত্যের বিনাশ ঘটালেন তখন বরাহদেবের গায়ের রং ছিল তখন নীল। ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবতাদের বুঝতে দেরি হল না যে ইনিই স্বয়ং শ্রীহরি। সকলে মিলে তখন তাঁর স্তব কর...

কূর্ম অবতারের কাহিনী

কূর্ম অবতারের কাহিনী স্বর্গলোকের নন্দন কাননের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন মহামুনি দুর্বাসা। শুনতে পেলেন ঘণ্টা ও শঙ্খের আওয়াজ। সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে ছুটে গেলেন। সেসময় ঊর্বশী শ্রী বিষ্ণুর পুজোয় ব্যস্ত ছিল। দুর্বাসা মুনিকে অতিথি রূপে গ্রহণ করে পরম সমাদরে তাঁর পূজা করল ঊর্বশী। গত রাতে ইন্দ্রের কাছ থেকে সে একটি মালা উপহার পেয়েছিল। অতিথি মুনিকে সেই বাসি মালা দিয়ে সে মুনির পুজো শেষ করল। দুর্বাসা চললেন এবার ইন্দ্র সমীপে। পথেই তার সাথে দেখা হয়ে গেল। ইন্দ্র তখন ঐরাবতে চড়ে বেড়াচ্ছিলেন। মুনি নিজের গলা থেকে মালাটি খুলে ইন্দ্রের গলায় পরিয়ে দিলেন। ইন্দ্রের চিনতে দেরী হল না যে, এ সেই পারিজাত মালা যা, গতকাল তিনি ঊর্বশীকে দিয়েছিলেন। তার মানে ঋষিও ঊর্বশীর প্রতি টান বোধ করেন। মনে মনে তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হলেন। গলা থেকে পারিজাত মালা খুলে ছুঁড়ে দিলেন। সেটি গিয়ে পড়ল ঐরাবতের মাথায়। ঐরাবত সেটি মাটিতে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে থেঁতলে দিল। ঋষি প্রদত্ত আশীর্বাদী সূচক উপহার অবজ্ঞা ভরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ায় দুর্বাসা মুনি ইন্দ্রের প্রতি রুষ্ট হয়ে তাকে শাপ দিলেন–তুমি শ্রীভ্রষ্ট হবে। ইন্দ্র শ্রীভ্রষ্ট হলে সুযোগ পেয...

মৎস্য অবতারের কাহিনী

মৎস্য অবতারের কাহিনী অতীত কল্পের বুঝি, অবসান হলো। তন্দ্রাচ্ছন্ন পদ্মযোনি, গেলেন নিদ্রায়। নিদ্রাকালে  মুখ দিয়ে বেদ বের হলো।  হয়গ্রীব নামে এক, আছিল সেথায়। সেই সব বেদরাজি, শ্রবণ করিল এবং সেখান থেকে চলে গেল। এ তথ্য ভগবান শ্রীহরির কাছে অজ্ঞাত রইল না। দানবের কাছ থেকে ওইসব বেদরাজি উদ্ধার করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি একটি ক্ষুদ্র মৎস্যের রূপ ধারণ করলেন। রাজর্ষি সত্যব্রত বৃতমালা নামে এক নদীতে সে সময় স্নান সেরে তর্পণ করার জন্য অঞ্জলি পেতে নদীর পবিত্র স্বচ্ছ জল ভরতে গেলেন। ঠিক এ সময় শফরী নামধারী মৎস্যরূপী ভগবান তাঁর অঞ্জলিপুটে উঠে এলেন। রাজর্ষি তা দেখে জল ফেলে দিতে উদ্যত হলেন। শ্রীহরি কাতর স্বরে বললেন–হে কৃপাবৎসল রাজা, দোহাই এই নদীর জলে আমাকে ত্যাগ করবেন না। এখানে কেউ আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে না। খেয়ে সাবাড় করে দেবে। ছোট্ট একটি মাছকে কথা বলতে দেখে রাজর্ষি সত্যব্রত অত্যন্ত বিস্মিত হলেন। তিনি শফরীকে তার কমণ্ডলুর জলে স্থান দিলেন। পরের দিনই সেই মাছের আয়তন বেড়ে গেল। কমণ্ডলুতে তার স্থান অকুলান। মাছ বললহে রাজা, ওই কমণ্ডলুতে বাস করতে আমার অসুবিধা হচ্ছে। দয়া করে অন্য কোনও বৃহৎ স্থানে আমাকে রা...

কুরুক্ষেত্র

কুরুক্ষেত্র সঞ্জয় কহিছে ধৃতরাষ্ট্রে বেজে উঠল কৃষ্ণের শঙ্খ পাঞ্চজন্য- ভীষ্ম শঙ্খে ফুঁ দিয়ে অপেক্ষায়  রথে রথে উড়ছে রঙিন ধ্বজা  দামামা বাজলো। হাতে হাতে তোমর শক্তিশেল  গদা বল্লম ভালা, অর্জুনের স্কন্ধে গাণ্ডিব - আঠারো অক্ষোহিনী সেনার উল্লাস  শত শত ঘোড়ার ক্ষুরের গর্জন  রথের চাকার ক্রন্দন, হস্তীর হু হুঙ্কার - সারি সারি সৈন্যের গুঞ্জন দুর্যোধনের উল্লাস - শকুনির মনে প্রতিশোধের আগুন। নিরানব্বই ভ্রাতার বলিদান কুরুক্ষেত্রের আকাশে কালোমেঘ উড়ন্ত ধুলোর দুরন্ত প্রবাহ ভীমের বুকে দ্রৌপদীর অপমান যতুগৃহের আগুন ডাকছে,  বারো বছরের বনবাস  এক বর্ষ যাবৎ অজ্ঞাতবাস কালকুটের জ্বালা, কর্ণের কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত  সব কুরুক্ষেত্রে এসে জড়ো হয়েছে আগুনের ফুলকি ছুটছে ঘোড়ার ক্ষুরে ক্ষুরে। অর্জুন মাথা নত করে কৃষ্ণের সম্মুখে  হে কৃষ্ণ, কি করছি আমি? কাদের বধিব যুদ্ধে? অস্ত্র গুরু দ্রোণাচার্য, পিতামহ ভীষ্ম, শতভাই সহ দুর্যোধন, এরা সব আপনার। আপন রক্তধারা কি রূপে বধিব চক্রধর? হঠাৎ উঠিল ঝড়  কালো মেঘের আড়ালে বিদ্যুতের চমক মেঘের কুণ্ডলী এসে প্রবেশিল কৃষ্ণের শরীরে দ্রুত বেড়ে চলেছে তার দ...

মনসা মঙ্গল-৬-১৩

মনসামঙ্গল-৬ চাঁদ সদাগর থাকে, চম্পক নগরে। মনসার সঙ্গে তার, ভীষণ বিবাদ। দেবীর কোপেতে তার, ছয় পুত্র মরে। তথাপি দেবতা হতে, তারে দিছে বাদ। বহু কষ্ট পায় তবু, নাহি মানে হার। চ্যাঙমুড়ি কানি তুই, দেবতা কি করে? হেতাল দণ্ডিকা হস্তে, সদা থাকে তার। মনসারে অন্বেষণ, করে ঘরে ঘরে। একবার যদি দেখা, পায় তার সনে। মারিবে মস্তকে দণ্ড, না বাঁচিবে আর।  আপদ ঘুচিবে তার, ভাবে মনে মনে। পরম আনন্দ হবে, রাজ্যেতে তাহার। এইভাবে কিছু দিন, ঘোরে ঘর ঘর।  না পাইল মনসারে, চাঁদ সদাগর। মনসা মঙ্গল-৭ বাণিজ্যে চলিল শেষে, দক্ষিণের পানে।  শিবভক্ত শিব বলি, ডিঙ্গা যাত্রা করে। মনের কৌতুকে চাপে, ডিঙ্গার তোরণে। উচ্চস্বরে সদাগর, ডাকে নাবিকেরে। চালাও নাবিক ডিঙ্গা, দক্ষিণের দিকে। চাঁদের আদেশে চলে, সপ্তডিঙা লয়ে। কালীদহে উত্তরিয়া, কহিল নাবিকে। ক্ষণিক দাঁড়াও ওহে, নাও খানি লয়ে। এদিকে মনসা দেবী আছেন বিষাদে। বহু চেষ্টা করে দেবী, পুজা পাইবারে। ধরাতলে পুজা নাই, কহে সিংহনাদে। কেমনে পাইবে পুজা, কহে দরবারে। চাঁদবেনে মোর সনে, সদা বৈর করে। পুজা না পাইব আমি, এ সারা সংসারে। মনসা মঙ্গল-৮ কালীদহে আছে চাঁদ, জানিল ধেয়ানে। সপ্ততরী ডিঙা বায়, বাণি...

খসে যাওয়া নক্ষত্র

খসে যাওয়া নক্ষত্র দেবপ্রসাদ জানা অনন্তের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি,  লাল আবিরের জ্যোৎস্না মেখে।  নীরব নিশ্চল সবুজ ঘাস, লাল লাল আবিরের আড়ালে, ভারসাম্যহীন। প্রেমের আদরে পাথর হয়ে থাকা জীবন... পার্থিব তামাসাটুকু বুঝে নিতে থাকে, মৃত্যুর স্রোতে, কালের বল্মীকে কুরে খেতে চায়- অভুক্ত মন,  মৃত নক্ষত্র খসে কত, অজান্তে আচম্বিতে।  নিঃশব্দে হারানো ঘুম, অচেনা কঠিন স্বরে,  ডেকে বলে কথা দাও প্রেম,  আর আসবে না। বসন্ত পাখির কণ্ঠে, গান ভাসে... যেখানে আত্মমগ্ন ছায়া, সেখানে ফোঁটা ফোঁটা লাল অশ্রু সবুজ ঘাসে পড়ে অপরাধীর মতো।

পলাশ পলাশ

পলাশ পলাশ দেবপ্রসাদ জানা যদি আকাশে দেখো চাঁদের জ্যোৎস্নাময় হাসি হলুদ মাখা হাতের গন্ধ আসে নাকে, যদি পলাশ বনে ফোটে লাল পলাশ চোখের পড়ে আগুন আগুন দিন,  স্বপ্ন বন্ধনের সুতোহীন টান,  আসে যদি পলাশ বনে পলাশপ্রিয়া প্রেমের আগুনে পুড়ে যায় মন। পাতা ঝরার শব্দ যদি মনে না রাখে গাছ।  পথ চলার ছন্দ থাকে বাতাসে পথে শুকনো পাতা ভাঙার শব্দ আসে ভেসে, যদি ছন্দহীন শরীরে ছুঁয়ে যায় ভালোবাসা  বুকের ভিতরে জন্ম নেয় ভালোবাসার নদী, স্রোতহীন হয় অশান্ত ঢেউ, তবে পলাশের বনে আসে পলাশপ্রিয়া। সুন্দরের হাত ছুঁয়ে সুন্দরের ঘরে,  প্রেমে-অপ্রেমে ভালোবাসার সন্ধিতে রই, 

বেদ পুরানে নারী শিক্ষা

বৈদিকযুগে নারী শিক্ষা দেবপ্রসাদ জানা নারী শিক্ষার জন্য অন্য কোনো প্রমাণের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।  পুরানে আছে সমস্ত ঋষিদের মধ্যে যারা বেদ সংকলন করেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রায় চল্লিশজন ঋষিক বা মহিলা ঋষি ছিলেন।  সেই ঋষিকরা যারা ঋগ্বেদে অবদান রেখেছেন। এটি "প্রমাণ" যা মহিলাদের শিক্ষা সম্পর্কে যে কোনও যুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্রাম দিতে পারে।  এমন নারীদের যথেষ্ট জ্ঞানী বিবেচনা করা হতো।   গার্গী, মৈত্রেয়ী ইয়ামি, লোপামুদ্রা, উর্বশী, অদিতি, ইন্দ্রাণী, লোপামুদ্রা, অপালা, কাদ্রু, বিশ্ববা রা, ঘোষা, জুহু, বাগঞ্জিনি, পৌলমি, যমী, ইন্দ্রাণী, সাবিত্রী, দেবযানী, নোধা, গৌপায়না, অস্তৃনী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এখন নারীদের শিক্ষার অধিকার ই না থাকে তাহলে তাঁরা বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা হলেন কি করে! পৃথিবীর সকল দেশে বিশেষত যেসকল জায়গায় শিক্ষার হার কম অথবা মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাদপদ সেখানে এই ধরনের ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে এই ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হল সাধারন মানুষকে সত্যটা জানতে না দেয়া। বৈদিক যুগ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব ...

লাল রঙা আবির

লাল বেদীটার ওপর বসেছিলে কথা হয়নি,  তুমি কি সে !  অপেক্ষাময় বেড়ে ওঠা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি  যার পদশব্দ শুনবো বোলে সাজিয়ে রেখেছি গৃহ  যার জন্যে এতো আয়োজন বিদ্রিতামাখা চোখ  তুমি কি সে ! একাকি শয্যায় রাত্রির আকাশ ফুটো হয়ে  নেমে আসে জোস্নার জল, সেই জলে চমকে থমকে থাকি, মৃত্যু ডাক দেয় এসাে— দক্ষিনে তাকালেই স্বপ্নের ভেতরে তুমি অপেক্ষা অধীর চোখের চাঁদে প্রতিশ্রুতি এঁকে ডেকে বলছাে যেও না  আমি আসবো সমস্ত শাখায় কৃষ্ণচূড়া ফুটে উঠুক আমি আসবো — ফিরে আসি মৃত্যুহীন তোমার দিকে প্রসারিত পুষ্পের হাত। যার জন্যে মৃত্যুর মােহ থেকে ফিরে আসা নির্দ্বিধায় তুমি কি সে !  পাশে বসেছিলে এতো কাছাকাছি তবু কথা হয়নি — তুমি কি সে !  যাকে খুঁজে দিন রাত্রি আকাশ সমুদ্র ভুলেছি পাখি নারী নগ্নতা কুমারী শরীর, ভুলেছি মোহন মৃত্যু  তুমি কি সে, প্রতীক্ষায় পোড়া গ্রহনের পুষ্পিত নীড় উদ্ধার সোনালি উদ্ধার !

কর্ণ কৃষ্ণ সংবাদ

কর্ণ কৃষ্ণ সংবাদ দেবপ্রসাদ দুর্যোধন, পাণ্ডবের দূত শ্রীকৃষ্ণকে অপমান করে তাড়িয়ে দিলো, শ্রীকৃষ্ণ মন্ত্রী বিদূরের অতিথি হয়ে এলেন, কৃষ্ণ কাকা কাকীর অমৃত ব্যঞ্জন খাওয়া শেষ করে দুপুরের বিশ্রাম নিচ্ছেন, রক্ষী এসে খবর দিলো অঙ্গরাজ কর্ণ দেখা করতে এসেছেন, বিদূর বললেন আমি এখন ব্যস্ত আছি, বাড়িতে অতিথি এসেছেন, দেখা হবে না কাল রাজসভায় দেখা করব। দূত তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন উনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন চাইছেন। বিদূর শ্রীকৃষ্ণের দিকে তাকাতেই কৃষ্ণ বললেন ওনাকে স্ব-সম্মানে নিয়ে এসো, দূত চলে গেল, বিদূর অবাক হয়ে কৃষ্ণকে বললেন, একি লীলা ভগবান? শত্রু পক্ষের সব থেকে শক্তিশালী যোদ্ধা, যার বীরত্বে সারা পৃথিবী কম্পমান, তার কি জন্য, সামান্য পাণ্ডবের দূতের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন হলো? (কৃষ্ণের ঠোঁটের কোনে হাসি, ) বিদূরের কথা শেষ হলো না কর্ণ এসে প্রণাম জানালেন,  "ভগবান মধুসুদন আমার সাদর প্রণাম গ্রহণ করবেন", আমি গতকালের ঘটনার জন্য দুর্যোধনের হয়ে ক্ষমা চাইতে এসেছি, দুর্যোধন অবোধ, উত্তপ্ত মস্তিষ্ক, কম বোঝে, ও জানে না দূতের সঙ্গে কি রকম ব্যবহার করতে হয়, আপনি আমার বন্ধুকে ক্ষমা করে দেবেন। সব শুনে শ্রীকৃষ্ণ বললেন...

যদি হৃদহারা হই

যদি হৃদহারা হই। দেবপ্রসাদ জানা যদি এমন হয় - মরণ আসে তোমার আগে তুমি রাতভর নিদ্রায় দুঃস্বপ্নের অশান্ত  অন্ধকারে হৃদয়ালোক জ্বেলো। দুর্বোধ্য জোছনার চাদর বিছিয়ে দিয়ো পথে। প্রেমের নিয়ন আলো যদি নিভে যায় - আঁধার আকাশে যদি নিরুপায় হয়ে, কালো মেঘের আড়ালে চলে যায় জোছনা আঁধার চাঁদের গায়ে আলো মেখে দিয়ো- হাজার নক্ষত্রের। শীতাতপ বর্ষা ক্লেশে  হৃদয়ে লুকিয়ে রেখো সোহাগে। আলোর ভ্রূণ যদি মরে যায় অকালে হৃদহারা হই কোনোদিন- চাঁদের আলোর অপেক্ষায় রেখো নিথর নিদ্রায় যাওয়া এই দেহটি।

একুশের ভাষা

অমর একুশে দেবপ্রসাদ জানা হে কবি! নীরব কেন,  অমর একুশে? শহীদ যারা প্রাণ দিয়েছে অবহেলে। ভাষায় যা হয় না প্রকাশ ভাষা দিবসের দিনে। কবিতা পর কবিতা লেখো, বসন্তে বন্দনায়?   পলাশ ফুলের মধু খেতে, অলি ঘোরে অলিগলি। স্নিগ্ধ আঁখি দখিন দুয়ারে। ফুল ফুটেছে কৃষ্ণ চুড়ায়, আমের মুকুলও -  দখিনা সমীর গন্ধে গন্ধে অধীর।  ভালোবাসার এত ভাষা। তবু শহীদ অমর একুশে  এখনো দেখোনি তুমি?  কেন হওনি উন্মনা তুমি?  কেন তব এই নব পুষ্পসাজ?   সুদূরে তাকাও দেখো একবার পথে- তর তাজা প্রাণ রক্ত মাখা যে ভাষার তরে। গেয়েছো কি? বেজেছে কি বাংলা ভাষার গান?   কত কি তো লিখে রাখো পাতা ভরা সংলাপ সেও যে বাংলা ভাষায়, বাংলা শব্দের ভরা রক্ত মাখা গীতি সঙ্গীত। কণ্ঠে শুনিনি তো তাহার গান? মৃদু মধুস্বরে-   বৃথা কেন? ফাগুন বেলায় ফুল ফোটাতে চাও?  পুষ্পারতি করো ঋতুর রাজে ?    

বজ্র

ইন্দ্রের বজ্র  দেবপ্রসাদ  দেবতারা জগতের কল্যাণকামী ও ঈশ্বরপরায়ণ। দানব বা অসুররা নিজেদের কল্যাণ ছাড়া আর কারো কল্যাণ বোঝে না; তারা দেহ-সর্বস্ব, ভোগ-সর্বস্ব। দেবাসুরে যুদ্ধ চিরন্তন। অসুররা কখনো কখনো প্রবল হয়ে সাময়িকভাবে দেবতাদের পরাজিত করলেও পরিণামে ঈশ্বরের ইচ্ছায় দেবতারাই বিজয়ী হন। দেবতাদের জয়ে জগতের কল্যাণ, আর অসুররা প্রবল হলে মহা অকল্যাণ। তাই জগতের কল্যাণকামীরা সর্বদাই দেবতাদের বিজয় কামনা করে থাকেন। পুরাকালে কালকেয় নামে একদল অতি দুর্ধর্ষ দানব ছিল। তারা বৃত্রাসুরকে অধিপতি করে চতুর্দিক থেকে স্বর্গরাজ্য আক্রমণ করল। ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতারা যুদ্ধ করতে এলেন, কিন্তু, এই অমিতবিক্রম বৃত্রাসুর বা কালকেয়দের সঙ্গে কিছুতেই পেরে উঠলেন না। দেবগণ সর্বত্র পরাজিত হতে লাগলেন। তখন ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা ব্রহ্মার আরাধনা করলেন। ব্রহ্মা তুষ্ট হয়ে বললেন, "বৃত্রাসুর মহা শক্তিমান। তাকে তোমরা সহজে বধ করতে পারবে না। দধীচি বলে একজন মহর্ষি আছেন; তোমরা সকলে মিলে তাঁর আশ্রমে যাও, তাঁকে প্রসন্ন করো। প্রসন্ন হয়ে তিনি যদি নিজের অস্থি দান করেন, তাহলে সেই অস্থি দিয়ে অস্ত্র নির্মাণ করাবে। একমাত্র সেই অস্ত্র...