Posts

Showing posts from January, 2021

সনেট।। ভাবের সাগরে।।-১৯৯

 ।।ভাবের সাগরে।।   দেবপ্রসাদ জানা    ০১.০২.২০২১ ও সাগর,নীল নীল জল,স্বপ্নময়, দুইচোখে দেখলাম,স্বপ্নের সুষমা। খেলিছে সূর্যের সনে,সমুদ্র তনয়। বিগলিত কাঞ্চনের,আলোক মহিমা। শিশু সূর্য খেলে ওই,সাগরের বুকে, ঝিলমিল,খিলখিল,হাসি ভরে যায়। কুয়াশার দরজায় সে,বন্দী কি থাকে? শিশুসূর্য দোর খুলে,লুকিয়ে পালায়। সাগরের হাত ধরে,হাঁটি হাঁটি পায়, বিশাল ধরিত্রী কয়,জড়িয়ে আদরে, কুয়াশা প্লাবিত সূর্য,যৌবনে কাঁদায়। শিশু সূর্য ধীরে ধীরে,হারায় সাগরে। দরদী হৃদয় খোঁজে,সোনার সকাল। কালের তরঙ্গে বাড়ে,দেশের জঞ্জাল।

সনেট।। সাগর।।-১৯৮

 ।। সাগর।। দেবপ্রসাদ জানা ৩০.০১.২০২১ ঘৃণা নয়,ভালোবাসা,সমুদ্র সৈকতে  আদিগন্ত চকচকে,শুভ্র বালি রাশি- ধুয়ে দিয়ে যায় স্রোত,যুগ যুগ হতে সাগরের ঢেউ,মুখে তার শুভ্র হাসি। ঘৃণা নেই অপমানে,শুধু ভালোবাসি, কতপাপ,কত লজ্জা,প্রতিদিন বুকে- লুকিয়ে নিয়ে,গোপনে চলেছ উদাসী- হিম কন্ঠস্বরে,কোনো অচেনা মুলুকে। তোমার অনন্যতায়, তুষ্ট বনভূমি। অপরূপ আপ্যয়নে,প্রেমের বারতা। অগুন্তি প্রাণের,নিত্য জন্মদাতা তুমি, তোমার কল্লোলে কাটে,পাথর জড়তা। প্রত্যাশায় হেঁটে যাও,জানে অন্তর্যামী। ভালোবাসার সন্ধিতে,অন্তঃসত্ত্বা ভূমি।

সনেট।। ভাঙ্গা জানালায়।।-১৯৭

 ।।ভাঙ্গা জানালায়।।    দেবপ্রসাদ জানা      ২৭.০১.২০২১ আজ অভিমান গুলো,মনের আড়ালে  লুকিয়ে থাকতে চায়,নীরব ক্রন্দনে। পরাগরেণু লাগিয়ে,মাধুরী ছড়ালে - ভাঙ্গাঘরে,ভাঙ্গা ওই,জানালার কোনে।  ভাঙ্গা জানালায়,ভাঙ্গা পাল্লার দুপাশে- দুটিহাত,স্পর্শ পেতে চায় বহুদিন মৃদু হাওয়ায় প্রেম, আনমনে এসে,  সহানুভূতির হাত, খোঁজে প্রতিদিন। ভীষণ ভালোবাসার,আবেগ উন্মাদে- দুটি মন,সেইদিন কাঁদে অভিমানে। জলভরা চোখে,শুণ্য মনের প্রমাদে। ভাঙ্গা জানালার মতো,পড়ে রয় কোনে। প্রথম প্রেমের ফুল,ফোটে জানালায় ঝরে পড়ে ফুল কত,ভাঙ্গা ভরসায়।

সনেট।। প্রজাতন্ত্রী।।-১৯৬

  ।।প্রজাতন্ত্রী।।  দেবপ্রসাদ জানা   ২৬.০১.২০২১ দেশের প্রতি কতটা ভক্তি,আছে জ্ঞানী হাতে জাতীয় পতাকা, ধরিস আদরে কে আর বুঝেছে ওরে,এ দেশের বাণী?   যারা বুঝেছিল তারা, শ্মশানে কবরে। তন্ত্রহীন প্রজাতন্ত্রে এ দেশের গুনী। সকলেতো পরলোকে,নিরুদ্দেশে কেউ। আছে শুধু কতগুলো, শৃগাল শকুনি। সে কথা ভাবলে ওঠে, সাগরের ঢেউ। হৃদয় ছাপিয়ে উঠে,চোখ ভরা জল।   প্রাণভরা হাহাকার,না খাওয়া পেট। হাতে নিয়ে তিন রঙা,উদরে অনল। প্রজাতন্ত্রের বিস্কুট,অতিমুল্য ভেট। বিলাস ব্যসনে নিত্য,স্বার্থসিদ্ধি যার। কুচকাওয়াজ -তার ঘরে প্রতিবার।

সনেট।। জোছনা চুরি।।-১৯৫

 ।।জোছনা চুরি।। দেবপ্রসাদ জানা   ২৫.০১.২০২১ অরণ্য আর সাগর,মিষ্টি ভারি রাতে। প্রহর গুনে পাহাড় ডাকে জোছনাকে পাহাড় সমান মেঘ, এসে ভাবনাকে শিশির পাতের,শব্দ শোনায় প্রভাতে। রাতের পাখিরা কয়,রাতে ভারি চোর জোছনার ঘরে চুরি,বহুদিন থেকে কিছু চুরি মেঘ করে,আবরণে ঢেকে পাহাড়ের গায়ে মাখা, সারাটা বছর। মাও দেয় টিপ করে,ছেলের কপালে নদী সাগর গাছেরা,চুরি করে নিয়ে লুকোচুরি খেলে সব,মনের অতলে। ভালোবাসায় জোছনা,প্রেমিকার গালে। মাঠে কিবা ময়দানে,আঁধারের ভয়ে- চাঁদটাকে পেড়ে নেয়,আলোক না হলে।

সনেট।।ভালোবাসায় থেকো।।-১৯৪

 ।।ভালোবাসায় থেকো।।     দেবপ্রসাদ জানা       ২৪.০১.২০২০ আঙিনায় ঝুঁকে থাকা,শুকনো করবী। বেদনা আবৃত কোরে,শুদ্ধ স্পর্শ করে। দুপুরের রাঙা রোদে,ভয়ঙ্কর রবি। পিপাসায় জল চায়,খাবে প্রাণ ভরে। এ খবর পৌঁছে যায়,আকাশের কানে। ক্রোধে তার,কালো হয়, নীলাম্বর রূপ, ঘনকালো মেঘ কোরে,বৃষ্টিপাত হানে। পৃথিবীর প্রকৃতি যে, মাতার স্বরূপ। ঝুঁকে থাকা মৃতপ্রায়,শুকনো করবী। হাসিতে খুসিতে ভাসে,মিষ্টি হাওয়ায়। প্রকৃতির মতো আসে,জীবনের ছবি খুশির হাওয়া লাগে,মোর মোহনায়। ভালোবাসা হয় যদি,প্রকৃতির ব্রত। সুখদুখ খেলা করে,সন্তানের মতো।

সনেট।। স্বপ্নে পাওয়া স্বপ্ন।।-১৯৩

 ।।স্বপ্নে পাওয়া স্বপ্ন।।    দেবপ্রসাদ জানা      ২২.০১.২০২১ দিনের প্রহরগুলো, রাখি তার জন্যে। রাত্রি গুলো সব থাক,আমার গলিতে। ভীষণ আঁধার ঘেরা,নিশীথ অরন্যে। ঘুরতে ঘুরতে স্বপ্ন,আমার বাড়িতে। রূপ কথার কাহিনী,যৌবনের ঘরে। সারারাত খোঁজে সেই,চাঁদের বুড়িকে। রাজকন্যা,রাক্ষসের কবলেও পড়ে। সোনারূপোর কাঠিটা,খাটের দুদিকে। শিশু মনের স্বপ্নটা,কে না ভালোবাসে? অন্ধকার জোছনার,নীল নীল আলো, নীলাভ জোছনা তার,মুখ হতে আসে, ধরতে গিয়ে সহসা,ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ভোরের শিশির মেখে,সূর্য যেন হাসে। সত্যি হওয়ার স্বপ্ন,ভোর বেলা আসে।

সনেট।। লেখনী সম্রাট।। ১৯২

 ।।লেখনী সম্রাট।।  দেবপ্রসাদ জানা   ২১.০১.২০২১ কি লেখা,লিখলে কবি,লেখনী সম্রাট,  স্বর্ণাক্ষর লিপিখানি, বিধাতার দান। কি দরকার ছান্দিক,মিলের বিভ্রাট। সব হৃদয় প্রসূত,আপন সন্তান। রূপ রস গন্ধ ঢেলে,মনের বিকাশ। কখন হৃদয়-দিয়ে,প্রত্যেক চরণ। ফুল ফল আকাশের,রূপের বিন্যাস কখনো বা শব্দকোষে,খনিতে খনন। কখনো নারীর রূপ,কখনো সমাজ, কখনো ভালোবেসেছে,পাঠক হৃদয়। কখনো বিদ্রোহী মনে,জেগেছে স্বরাজ, কখনো কলম খানা,ডেকেছে প্রলয়। কত অস্ত্র,কাটাকাটি,গেছে যাদুঘরে। হে কলম আজো আছো,সকলের তরে।

সনেট।। মানুষের ঘরে।।-১৯১

।।মানুষের ঘরে।।  দেবপ্রসাদ জানা    ২০.০১.২০২১ চঞ্চল মনের দোর,খুলে রেখো নদী হালকা বাতাস পাবে,সুখী ঘর খানা কটূকথা সব ভুলে,থাকা যায় যদি - বটবৃক্ষসম ছায়া,শান্তি দেবে কিনা? মানুষের পাশে থেকে,মানুষের মতো- নির্মাণ করবে তুমি, নিজের ভূবন। হাতে হাত রেখে তুমি,প্রকৃতির মতো রাগ ক্ষোভ ক্রোধ ভুলে,গড়িবে স্বজন। বটবৃক্ষ হও যদি, রবে চিরকাল- তোমার ছায়ায় এসে,পথিক বসবে,। যাওয়ার পথে কেউ,ভেঙ্গে নেবে ডাল, হয়তো তোমার বক্ষে,কাঁটা গেঁথে দেবে। তবুও অপেক্ষা করো,কবে ভোর হবে? মানুষের গর্ভে কবে, মানুষ জন্মাবে।

সনেট।। পরাগ রেনু।।-১৯০

 ।।পরাগ রেনু।। দেবপ্রসাদ জানা  ১৯.০১.২০২১ মিষ্টি প্রভাতেরা এসে,বলুক তোমায় - ফুলগুলো সব ফোটে,তোমারই জন্য রয়েছে সুবাস মাখা,ফুলেদের গায় যদি তুমি এসে ধরো,ফুল হবে ধন্য। তোমার আড়ালে দেখি,ফুল কথা বলে, ভোমরের পায়ে তার,লেগেছে পরাগ। পায়ের পরাগ যেন,লাগে সেই ফুলে। ভালোবেসে যেই ফুল,করবে সোহাগ। তুমি এসে সেই ফুল,তোলো যদি ভুলে, কেমনে পরাগ পাবে,ভাবনা অনেক। তোমার আড়ালে তাই,ফুল কথা বলে, ভোমরা বসবে এসে,ঘটবে নিষেক। তোমাকে ডাকার আগে,ডাকে ভোমরাকে প্রেমের পরাগ যেন, দেয় প্রেমিকাকে।

সনেট।। আমার কবিতা।।-১৮৯

 ।।আমার কবিতা।।   দেবপ্রসাদ জানা     ১৮.০১.২০২১ শালিকের কানে কানে,বলছে বাতাস। চলো আজ দেখে আসি,গঙ্গাবক্ষমেলা। জোছনা মাখা সাগরে,স্রোতের উচ্ছাস  সাগরের বুকে ডুব,দেবো ভোরবেলা। সাগরের বুকে দেখি,জোছনার নৃত্য। চাঁদের বাড়িতে আজ,প্রেমের বাসর ঘুমঘোর চাঁদ বলে,ঘটনাটা সত্য। থরথর কাঁপে তার, রূপালী অধর। নিথর বালুর তটে,শুকনো বাতাস  ছদ্মবেশে স্নেহময়,সাগরের জলে। সাবলীল জোছনার,অলীক প্রয়াস  শুকনো বালুর গায়ে,ঘনঘন ঢলে। যেমন চেয়েছি আমি,আমার কবিতা  চাঁদ বলে অনাদরে,সব ছেঁড়া খাতা।

সনেট।।মহামতি অর্জুন।।-১৮৮

 ।।মহামতি অর্জুন।।   দেবপ্রসাদ জানা    ১৭.০১.২০২০ মনিপুরি রাজকন্যা,নাম চিত্রাঙ্গদা। অরন্যে অর্জুন দেখি,আনন্দে অজ্ঞান। দ্বাদশ বছর যিনি, ব্রহ্মচর্যে বাঁধা। গাণ্ডিব ধারী অর্জুনে,করিল সম্মান । রূপের পসরা হেরি,অর্জুন সম্মুখে। রূপে মুগ্ধ মহাবীর,প্রেমের সাগরে। সেইক্ষনে মহারাজে,কহে নিজ মুখে। চিত্রার পানি গ্রহন,করিল সাদরে। ধর্মরাজ্য স্থাপনের,একি অনাচার। ব্রহ্মচর্য নাশ করে,চিত্রাঙ্গদা চান। অর্জুনের চরিত্রে কি,এত অন্ধকার? মহাভারতের কথা,অমৃত সমান। পূরাণ পুরুষ গণে, শর্ত ভঙ্গ করে। হাজার পাপের পরে,ধর্ম তুলে ধরে।

সনেট।। আত্মকথায় নারী।।-১৮৭

 ।।আত্মকথায় নারী।।    দেবপ্রসাদ জানা      ১৬.০১.২০২১ চোখের আগুনে দেখা,কঠিন বিশ্বাস  নির্ভরতায় হেঁটেছি,আজীবন ভোর। সাধনার স্বপ্ন যেন,ফেলে দীর্ঘশ্বাস  হাতের ওপর হাত ,আঠেরো বছর। সব আছে জীবনের,ভালোবাসা নেই? বন্দী করেছ আমায়,ফুলের বন্ধনে অন্দরমহলে যেন,দাসী হয়ে রই। কাঠের পুতুল থাকে,সুতোর বাঁধনে। ভরসায় বেঁধে রাখা,যমুনার জল। চোখের মোহনা হতে,বহিল আবেগে। মন প্রবাসিনী দাসী,কেন কাঁদে বল, চোখের কাজল ধুই,স্বামীর সোহাগে। যে সুখে রেখেছ মোরে,আশার ছলনে। শুকাইছে অশ্রুজল, তোমার আগুনে।

সনেট।। মোনালিসা।।-১৮৬

 ।।মোনালিসা।। দেবপ্রসাদ জানা   ১৫.০১.২০২০ আত্মার খিদে মেটেনি,লিও মোনালিসা  ও হাসি কেমন হাসি? নীরবতা হানি। কখনো চোখের কোনে,অতৃপ্ত প্রত্যাশা  ঠোঁটের কোনায়,ধরে রাখা আত্মগ্লানি। আজ বয়স গোনার ,সময় এসেছে  সময়ের অঙ্ক কষা শেষ,তবু আশা সাঁজবেলায় তোমার হাসি যে বিঁধেছে, মোর ক্লান্তি মাখা মনে,আলিঙ্গন মেশা।   উদভ্রান্ত আপ্যয়নে,কুয়াশা মাড়িয়ে - রাত জাগা শোক আজ,সুন্দরের সনে। বিশ্বজোড়া কারুকার্য , আনন্দ হারিয়ে - ঝুলে আছে দেওয়ালে,মুক্ত আলিঙ্গনে। লিওর মোনালিসায়, কিসের বারতা? মনের মোনালিসায় , নতুনে ভনিতা।

সনেট।। শুধু উত্তরে।।-১৮৫

 ।।শুধু উত্তরে।। দেবপ্রসাদ জানা ১৩.০১.২০২১ উত্তরে উত্তর দিতে আরো কিছুদিন। অপেক্ষায় প্রান পাখি,উড়ে যায় তবে। হাওয়া ভর্তি বেলুন,উড়বে কিছুদিন। ঘড়ির কাঁটাটা তবে, ধুকপুক কবে। আরো উত্তরে যাই পাহাড়ের মাঝে। দুই পাহাড়ের উষ্ণ ঐ উপত্যকায়। নিদ্রা আসে অনায়াসে,প্রকৃতির মাঝে। ঘিরে রাখা সুরক্ষিত, শীত উষ্ণতায়। আরো উত্তরে অরণ্য, ঘন মহারণ্য। নিঃশব্দ নির্ঝুম বনে,বিশুদ্ধ প্রকৃতি। সবুজে সবুজ মেলা,ঘেরা, মুক্তারণ্য। শুদ্ধ বিশুদ্ধ বাতাস,গজ সম গতি।। উত্তরে উত্তর পেতে,আছি অপেক্ষায়। সব ক্লেশ, শেষমেশ,লইবে বিদায়।

যুগনায়ক বিবেকানন্দ

 ।।যুগনায়ক বিবেকানন্দ।।      দেবপ্রসাদ জানা          ১২.০১.২০২০ হে মহামানব,স্বামী বিবেকানন্দজী আগুনের ক্ষিপ্রতায়,মোরে বিদ্ধ করো কটূবাক্যে,অভিশাপে দাহ করো মোরে। আমি পারিনি, তোমার পথ প্রদর্শিত পথে,নিজেকে গড়তে হিমগিরি সম। মহা প্রলয়ের, শান্ত উপত্যকা তুমি। হে বিবেকানন্দ স্বামী,বলতে পারিনি মুচি মেথর আমার ভাই,তাদেরকে- বলিনি এসো তোমার হাত দাও হাতে- বিপদের অন্ধকার পথ পার করে- দেবো তোমাদের।                       মুক্ত মনে একবার- বলতে পারিনি আমি "জীবে প্রেম করো" এক সর্বনাশা কালো ছায়া,শকুনের - মতো মাথার ওপর ঘোরা ফেরা করে। হে মহামানব, কোন শক্তি-রক্তবীজ  তোমার মনকে এত দৃঢ়তা প্রদান  করেছিল সর্বনাশা যুগে বলো বীর।      হীন ক্লীবলতা মোর দেহের ভিতর গোপনে আঁধার স্পর্শ করে থাকে।কেন? কেন বলতে পারিনি "ওঠো জাগো বন্ধু" কেন নিজেই করতে পারিনি নিজের কাজ। কেন বরাবর অন্যের ওপর ভরসায় দিন গুণি। হে যুবনায়ক - বৃত্তকারে জীবনের যত পাপ তাপ নোংরামিতে ভরা,এই পৃথিবীর বুকে নিয়মিত ঘৃণা স্বার্থ আঁকড়ে ...

সনেট।। ক্যালেণ্ডার।।-১৮৪

 ।।ক্যালেন্ডার।। দেবপ্রসাদ জানা   ১১.০১.২০২০ উপোসী পেট রাস্তায়,ভিক্ষা মেগে খায় নতুন বছর আসে,আনন্দ উল্লাসে। পেটের জ্বালায় ঘোরে,খাদ্য নাহি পায় নতুন বছর আসে, জানুয়ারী মাসে। ল্যাপটপে অঙ্ক কষে, যাদের শিশুরা তারাইতো মাস গুনে,বর্ষ ডেকে আনে ক্যালেণ্ডারে পাইখানা,করে যে শিশুরা কেমনে জানবে তারা," নববর্ষ " মানে। বছর বদল হলে,জ্বেলে ক্যালেণ্ডার, একবেলা আগুনের, সুলভ সঞ্চয়। ইট ঘিরে ভাত রাঁধে, করুণা অপার। ফুটের ওধারে দেখো কত অপচয়। বছর নতুন হোক,বা অতি পুরানো। লাভ লোকসান সব,ওদের সাজানো।

সনেট।। নতুন পৃথিবী।।-১৮৩

 ।।নতুন পৃথিবী।। দেবপ্রসাদ জানা   ১০.০১.২০২১ সুন্দর এসেছে রিক্ত,সুন্দরের কাছে। অপরূপ আপ্যয়নে,আলিঙ্গন করে। এ বিশাল পৃথিবীর মন, ছুঁয়ে আছে ভোরের রঙিন সূর্য,লুকিয়ে আঁধারে। একরাশ গোলাপের সৌরভ বাতাসে- মিলে মিশে একাকার,হয়ে যায় রোজ। একেলা তমাল তরূ,উঠে যায় আকাশে বৃদ্ধ তমালের কেউ,রাখেনিকো খোঁজ। পাখিদের কলতান,ভোরের বাতাসে। কালের আধার কেটে,নতুন আলোতে, নীরবতা ছেড়ে নদী, চলে অভিলাষে- সাগরের সাথে যাবে সে,প্রেম বিলাতে। সাগর সঙ্গম খোঁজে,আজ ক্লান্ত নদী। নয়া পৃথিবীর আলো,এক হয় যদি।।

সনেট।। শেষ প্রহরী।।-১৮২

   ।।শেষ প্রহরী।।  দেবপ্রসাদ জানা    ০৯.০১.২০২১ এক স্তব্ধতার ট্রেনে, চলছে জীবন। মৃত্যুর ষ্টেশনে বাঁশি দিয়ে,থেমে যাবে- কোনো এক দিন সন্ধ্যা বেলায়,মরণ। সবটাই কি আমার?আমাকেই নেবে? আজ পযর্ন্ত যা দিলে,কিছুই নিইনি। আমার সবকিছুতে,তোমার ঠিকানা। কিন্তু আমিতো দেখিনি,তুমিও দেখনি। আমার অস্তিত্ব খুঁজে,পাওয়াও মানা। কোথা গেলে খুঁজে পাই,আমার অস্তিত্ব? কোন গ্রহ আছে সেই, স্বর্গদ্বার ঘিরে। নরক কোথায়?কোন নক্ষত্রে প্রোথিত। আত্মার নিগূঢ় ডাক, পাথর শরীরে। আমার বাসনা যেন,চলে রক্তস্রোতে। আমার ঠিকানা শেষ প্রহরীর হাতে ।

সনেট।। বুকের যন্ত্রটা।।-১৮১

 ।।বুকের যন্ত্রটা।। দেবপ্রসাদ জানা     ৮.১.২০২০ আজ বুকের ভিতর, যন্ত্রটা অস্থির, বড় অভিমান হয়,তোমার কথায়। নীরব নিশ্চল তুমি,কখনো বধির, ভিতরে ভিতরে রাগ,অভিমান চায়। গোলাপ সুন্দর,তুমি বলেছিলে মোরে তার স্বর্গীয় আকৃতি,দেখেছি সেদিন- অন্তরের উপলব্ধি,পড়েছে নজরে। হৃদযন্ত্রটা হঠাৎ,থেমেছে সেদিন। রক্তে আস্ফালন হলে,বুকে আন্দোলন  হৃদয় আগুনে যেন, হৃদয় পোড়ায়। মরা বুকে,বৃষ্টি নেমে,হোলো জাগরণ। তোমার চেতনা মোরে,আদর ভরায়। বিভেদে-বিদ্বেষে নয়,ঘুম আকাঙ্খায়। বিফলে যায়নি প্রেম,হৃদ ছলনায়।

সনেট।। হারানোর অঙ্ক।।-১৮০

 ।। হারানোর অঙ্ক।।   দেবপ্রসাদ জানা     ০৭.০১.২০২০ যখন আপন দিশা হারানোর অঙ্ক- মেলাতে পারিনা আমি,নিজের বিশ্বাসে। তোমার চোখের কালি,আমার কলঙ্ক। মনের গভীরে থাকা,তোমার আশ্বাসে। হারিয়ে যাই,অবোধ বালকের মতো- পড়ে যাই পোকাদের দলে,লালসায় বদলে যাচ্ছে বেদনা,পাগলের মতো  তবু ডাক দিয়ে, বলে যাই, ভরসায়। যন্ত্রণা নিয়েও আমি,হেসেছি প্রকাশ্যে তুমি গোলাপের দিকে,চেয়ে ছিলে প্রেমে আমি হতাসায় সেটা,দেখেছি আলস্যে  তবুও আসোনি তুমি, সেইবার নেমে। তুমি বললে হাসতে,আমি হাসলাম। সেই হাসি,কাল হলো,আমি দেখলাম।

সনেট।। জড় বস্তু।।-১৭৯

   ।।জড় বস্তু।। দেবপ্রসাদ জানা  ০৬.০১.২০২০ নিজের প্রেমিকা যদি,জড়বস্তু হয় - তীব্র বেদনায় মন,ভরে যায় তার। প্রচলিত প্রথা সেই,কলেজ পাড়ায়। মাল নামে মহিলাটি,রূপের আধার। পাষণ্ড এই পৃথিবী,সর্বদা বোঝায়- তুমি যারে মনে ধরো,সামগ্রী বিশেষ। কালের কল্লোল তার,ব্যবহার চায়, আসবাব মনে করে,রেখে দেয় বেশ। সাজানো গোছানো ছক,চলে বহুদিন, কবিতার লাইনে এ,বিনোদিনী নারী। অন্দর মহলে লক্ষ্মী, ঐশ্বর্য বিহীন। অদ্ভুত প্রজাতি তারা,অতি আজ্ঞাকারী। দারুণ সতর্ক ভাবে,চালায় শাসক। পুরুষ নামক জীব,এদের শোষক।

সনেট।। সোনা করে দাও।।-১৭৮

 ।।সোনা করে দাও।।    দেবপ্রসাদ জানা       ০৫.০১.২০২০ ভালোবাসার বেলুন গুলো ওড়াইনি। সুতোটা বেঁধে রেখেছি,মনের আঙুলে তোমার কারণে বৃষ্টি,ঝরতে চায়নি প্রেম বেলুনটা,লাল রঙ যে ভরালে। অভিমান শৃঙ্গসম হলে,নীলাকাশে লাল রঙ ভরে যায়,গোধূলি বেলায় অবুঝ মনটা তোকে,শুধু চায় পাশে গোধূলির মতো মান,সহজে মেলায়। চোখের ঝরা বৃষ্টিরা,ছুটি পেতে চায়। নিঃশব্দে অন্তর বলে,আছি আমরণ। জীবন তোমার সঙ্গ প্রাধান্যতা চায়। প্রত্যাখ্যানে মনস্তাপ,কোরো না ধারন। অভিযোগ অভিমান,আর অহঙ্কারে। সোনা করে দাও মোরে,পরশ পাথরে।

সনেট।। কারা ওরা।।-১৭৭

 ।।কারা ওরা।। দেবপ্রসাদ জানা ০৪.০১.২০২০ এখনো কঙ্কাল গুলো পড়ে আছে পথে জীর্ণ -শীর্ণ হাড় সার দেহের কঙ্কাল , এরা না খেতে পাওয়া দেহ ফুটপাথে পড়ে থাকে সারাদিন এমনি বেহাল। মাটিতে দাঁড়াবে কেল্লা,সবুজ বাঁশের  নকল বুঁদির মধ্যে ছিল,গুপ্ত তরবারি  হে নির্ভিক তিতূমীর,জাগালে কাদের এরা যে ক্ষুধার্ত,খোঁজে তরি তরকারি। ক্ষিদের জ্বালায় এরা,মাটি কামড়ায় অশ্রু দিয়ে সেচ দেয়, নারীর শরীর পথের ধারেই এরা, প্রত্যহ দাঁড়ায়। খরিদার দর হাঁকে,মূল্য করবীর। ফসলের আগে এরা,নিজেদের বেচে, বিধাতার পরিহাস,ওরা নেই বেঁচে।

সনেট।। ঠিকানায়।।-১৭৬

 ।।ঠিকানায়।। দেবপ্রসাদ জানা ০৩.০১.২০২১ তোমার শেষ ঠিকানা,কবে খুঁজে পাবো?  আমিতো রাখিনি লিখে,আমার খাতায়। বলোনিতো প্রিয়তমা,আমি কবে যাবো, শুধু চোখের আড়ালে,থাকি যন্ত্রণায়। অহর্নিশ বাকরুদ্ধ, নীলকন্ঠ হয়ে। কত যন্ত্রণার মাঝে,রই চিরকাল বলার চেষ্টা করিনি,কোনদিন ভয়ে উৎকন্ঠায় প্রত্যহ,কাটে আজকাল। অশ্রু ধারা বয়ে যেত,নিঝুম আঁধারে  প্রহর কাটলে তুমি,চলে যেতে চাও। অবাক চোখে থেকেছি চেয়ে,ঐ দুয়ারে অসীম আকাশ থেকে,যদি ফিরে চাও। আত্মক্ষতে ফেরাব না,মুখ কোনদিন। পৃথিবী ফেরালো মুখ,তুমি উদাসীন।

সনেট।। নারী।।-১৭৫

     ।। নারী।। দেবপ্রসাদ জানা   ০২.০১.২০২০ রাতের আঁধারে নারী,রূপসী সুন্দরী। পৌষালী জোছনা ভরা,রাতের সমুদ্র। বিষাদময় আঁধারে,মল্লিকা প্রহরী। অহমিকা মরীচিকা,ছায়াহীন রুদ্র। উর্বষী মেনকা রম্ভা,এই তিন জনে। স্বর্গমর্ত্য পাতালের, অপরূপ নারী, সব যেন এক লাগে,মল্লিকার বনে। রাতের আঁধারে লাগে,সমান সুন্দরী। অনুপম আভরণে, আগমন তার, অভিনয়ে অবিচল, করে তারা খেলা অবোধ পুরুষ জাতি,কি বুঝিবে আর। অন্তর্গত শূণ্যতায়,কাটে দুই বেলা। সরল সোহাগ ভরা, ছলনায় মতি। করজোড়ে নমষ্কার,অভাগার গতি।

সনেট।। শেষ বিশে।।-১৭৪

 ।।শেষ বিশে।। দেবপ্রসাদ জানা   ০১.০১.২০২১ দূর হলো বিষে ভরা,বিশের বছর নিষ্পাপ সহস্র প্রাণ,করে গেল শেষ অভিশপ্ত দুই কুড়ি ভেঙ্গে গেল ঘর। আমাজনে দাবানল,আমফানে ক্লেশ। মহামারী অনাহারে,কম্পিত ধরণী  মৃত্যুর মহা প্লাবন দেখেছে মানুষ  কত প্রাণ বলিদান, ধর্ষিত রমণী। মাঠ ফাটে খরা লেগে,কৃষক বেহুঁস। বিশের বিষে,গ্রহণ লেগে, অন্ধকার  পৃথিবী যেন লুকিয়ে গেল,কোন বনে? মুখোস পরে ঘরের কোনে,অনাহার আশায় আশায় বর্ষ বিদায় ক্রন্দনে। সুখের বন্ধন গুলো,ছিঁড়ে দিয়ে শেষে, বলে গেল,বেশ ভালো,থাকবে একুশে।