Posts

Showing posts from December, 2023

হে সুন্দরী

হে সুন্দরী দেবপ্রসাদ জানা হে সুন্দরী- কি এমন আছে,  তোমার দেহ বল্লভের? মহার্ঘ অভ্যঞ্জনে চর্চিত তোমার দেহ, কিসে এত ভালো তোমার ভালোবাসার মন,  তোমার অধরে লাল লালিমায় লিপ্ত হই? আনন্দশৈল সুরভিশয্যায় দেখে আমি অভিভূত, আরক্তগৌর তোমার  দেহবর্ণ,  অসংখ্যের মধ্যেও তুমি অ-দোসর।  সোনায় গড়া পুতুল তোমার  মুখখানি,  ঘন চুল কাকের চেয়েও কালো।  চক্ষু যেন ভরানদীর প্রান্তচারী পারাবতের চক্ষু প্রেয়সী আমার, যেন হরিণশিশু, নবস্নাত অবিকল মেঘপুঞ্জে ঢাকা পূর্ণশশী। মধুর কন্ঠস্বরে, কেশতৈল গন্ধে আমি দিশাহারা। হে সুন্দরী স্বর্গপুস্পের স্তবক যেন দ্রাক্ষাবনে বিকশিত ভোরের সূর্যের মতো নির্মল। এ প্রেমের দায়ে যে আমি সর্বস্ব হারাব। প্রেম যে লেলিহান শিখা,  মৃত্যুর মতো শক্তিমান। কেমনে এই প্লাবন,  এই প্রেমস্রোত রোধ করি বলো?

মহামিলন

মহামিলন দেবপ্রসাদ জানা ২৩.১২.২০২৩ আহা মহীপালগণ, সভার ভিতরে।  রত্নরূপে খ্যাত এরা, দেশদেশান্তরে। কলম সৈনিক-এর, সভার বর্ণনে।  কটা কথা লিখে যাই, আমার লিখনে। সভার ভিতরে রূপ, করি দরশন।  ঝরিছে যে কাব্যসুধা, ভারি বরষণ। পাঠমাত্র রোমাঞ্চিত, হয় কলেবর।  ধন্য ধন্য কাব্য-শক্তি, রসের সাগর। কলম সৈনিক সব, গাঢ় নীল বেশে। যেথায় আপন সাজে, স্নিগ্ধ পরিবেশে।  দেখিতে বিচিত্র শোভা, লোক দলে দলে। বাহা-রে আহা-রে দেখি, এই সভা স্থলে। মঞ্চে বসে আছে যিনি, সভা অধিপতি। গোলাপ ফুটেছে মাঝে, করিব আরতি। নানা শোভা চারিদিকে, দেখিতে দেখিতে।  মনের আয়না চোখ, হাসে পুলকিতে। ক্রমে ক্রমে কবিগণ, খুলি ছয় দ্বার।  উপনীত সুবিস্তারে, যেথা সিংহদ্বার ।  অতিশয় পুরাতন, কীর্ত্তির প্রকাশ।  আসিয়াছে কত কবি, কাব্যের নিবাস। প্রকাশিত হবে আজ, বই অঙ্গীকার। মুরারিমোহন বাবু, খুলিবেন দ্বার। একক কাব্যের কথা, বলিব এবার। চল্লিশ জনের কাব্য, হইবে প্রচার। স্মৃতি পুরস্কারের যেন, ভারি এক মেলা। শুভ্রনীল এসে আজ, করে যাবে খেলা। তুলসী জানার স্মৃতি, কাব্যগ্রন্থ ভরে। কত শত কবিরা যে, আলোর নজরে। বিশ্বনাথ চৌধুরীর, পাবে পরিচ...

মেয়েটা হাঁটছে

মেয়েটা হাঁটছে দেবপ্রসাদ জানা একটা মেয়ে হাঁটছে।  পায়ে পায়ে একের পর এক বিপদ পেরিয়ে, মাইলের পর মাইল।  ওর সাথে আরও অনেক ছেলেমেয়েরাও হাঁটছে। ওরা সকলের স্বপ্ন সফলের দাবিতে হাঁটছে।  ক্রমাগত ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাঁটছে। বিচার চাইতে,  অধিকার ছিনিয়ে নিতে হাঁটছে।  দুর্নীতির বিষাক্ত নীল গহ্বর থেকে - মানুষকে মুক্তি দিতে।  সেই নীল পঙ্কিল বিষে ঢাকা সাদা কাপড়ের থেকে, চোখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য হাঁটছে।  একেবারে আটপৌরে পোষাকে হাঁটছে।  কোটি টাকার বিলাসবহুল যাত্রা নয়,  সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় হাঁটছে।  কিন্তু কেন? রাস্তায় পাত পেড়ে ডাল-ভাত, খিচুড়ি- ওদের প্রাণ, ওদের স্বপ্ন। বিকৃত  উপেক্ষার প্রতি- তীব্র ঘৃণা নিয়ে হাঁটছে।  দৃঢ় সংকল্প নিয়ে যুবক যুবতী সহ এ মেয়ে হাঁটবে, আরও হাঁটবে।  ওকে অনেক হাঁটতে হবে,  আরও অনেকটা পথ হেঁটে পেরোতে হবে।  ওর গন্তব্যের পথে অনেক অনেক বাধা। তবু হাঁটবে স্বপ্নের পথ ধরে- নীল দিগন্তের দিকে। যেখানে স্বপ্ন হারিয়ে যায় না  কিছুটা পথের ভাষায়,  সহজ সরল প্রাঞ্জল মানুষের ভাষায়।  এ মেয়ে যুক্তি, তথ্য দিয়ে ...

শুভেচ্ছা বার্তা

শুভেচ্ছা বার্তা  একুশ শতকে পৌঁছে যখন আমরা মহাকাশে স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা করছি, এমন কি স্বর্গের সিঁড়ি তৈরি করার মতো প্রকল্পের কথা ভাবছি, ভবিষ্যতে নতুন নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনায় মগ্ন রয়েছি, সারস্বত জগতে যখন নিত্য-নতুন বিষয় বিকশিত হচ্ছে, প্রগতিশীলতার যুগে কবিতার বই নিয়ে হইচই বা কবিতা নিয়ে ভাবার মতো সামান্য বিষয় সত্যিই ধৃষ্টতা। কিন্তু কথা হচ্ছে, প্রগতি মানে যদি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া বোঝায় তবে তা তখনই সম্ভব, যখন পেছন থেকে আলো এসে সম্মুখের পথকে আলোকিত করে।  বাঙ্গালা সাহিত্যের আর যে কিছু অভাব থাকুক, কাব্যের অভাব নেই। বিদ্যাপতির সময় হইতে আজ পর্যন্ত, বাঙ্গালী কবিরা কাব্যের বৃষ্টি করে আসছেন। এ মহাসমুদ্রে শিশিরবিন্দু প্রয়োজন হয়তো ছিল না। আমার বিশ্বাস আছে যে, অনেক স্থানে পদ্যের অপেক্ষা গদ্য কাব্য উপযোগী। বিষয় বিশেষে  কাব্যের উপযোগী হইতে পারে, কিন্তু অনেক স্থানে গদ্যের ব্যবহারই ভালো। যে স্থানে ভাষা ভাবের গৌরবে আপনা আপনি ছন্দে বিন্যস্ত হইতে চায়, কেবল সেই স্থানেই পদ্য ব্যবহার করা ভালো । নহিলে কেবল কবিনাম কিনিবার জন্য ছন্দ মিলাইতে বসা এক প্রকার সং সাজিতে বসা। কাব্যের গদ্যের উপযোগিতার উ...

অসাধারণ

অসাধারণ  দেবপ্রসাদ জানা সাধারণ মানুষ আমরা? না আমরা সাধারণ নয়, আমরা গড়েছি পৃথিবীর ঘর আমাদের হাত ধরে এসেছে ফসল  আমরা এনেছি গাছের ফল। কত মিল, কত কারখানায়- জন্মেছে নতুন নতুন পোষাক নতুন শাড়ি, আমাদের হাতে যাদু আছে,  খরা মাটিতে ফলেছে সবুজ ফসল। ফুটেছে ফুল, ভরেছে মাঠ,মহাজনের উঠান,  আমাদের মাথার ঘামে গড়ে ওঠে ইমারত। হাতের জোরে চলে ট্রেন, ওড়ে এরোপ্লেন। জলে চলে জাহাজ। মালিকের ঘরে আসে নতুন আসবাব, মালকিনের চন্দ্রহার, তার ছেলে আমপেলা। নিত্য নতুন পোষাকের রঙ মিলিয়ে জুতো। মহাজনের ঘরে বাড়ে নতুন গুদামঘর। যে আগুনে পুড়ে তৈরী করি ইস্পাত, সেই ইস্পাতের এক টুকরোও  আমাদের ঘরকে শক্তি দেয়নি, শক্ত করেনি। তবু আমরা গড়ি, তবু আমরা ঘাম ঝরাই। আমরা কাজ করি তাদের জন্য, যারা আমাদের উপর চেপে- ঘোরাবে প্রভুর দণ্ড। তবু দেখো আমাদের ঘরে চাল নেই ঘরের চালা নেই, পেট ভর্তি ভাত নেই, বোতল ভরা জল নেই,  আমরা যে - একশ চল্লিশ কোটি মানুষ, কিছু মানুষকে  ধনবান করতে এসেছি। তবু আমরা সাধারণ? অসাধারণ নই।

হে ঘোর রজনী,

হে ঘোর রজনী দেবপ্রসাদ জানা হে ঘোর রজনী,  কৃষ্ণবর্ণ তমসাচ্ছন্ন মেঘের ঘনঘটা, আঙ্গিনার কোণে আমি একলা নিঃসঙ্গ। তোমার বিদ্বেষে আমার প্রাণ ফাটে। হে সই তমসা, কি আর বলিব তোরে, হে অভিমানী, দূরের স্টেশনে দাঁড়িয়ে  ভয়ঙ্কর অভিমান বুকে নিয়ে,  কেন অপেক্ষা করো নীরবে নিভৃতে। যে কৃষ্ণচূড়ার নিচে দিবসে তোমার দু’চোখে ! নীল জলরাশি রোদ্দুরে উন্মুখ, দুলে উঠতো অশান্ত  হাওয়ায়, ছুটে যেতো দক্ষিণ দিগন্তে ।  কিছুই তো অবশিষ্ট নেই,  বড় বড় চোখ দুটি ছাড়া,  তাকালে মনে পড়ে- তোমার নির্মমতায় স্বপ্নের সমাধি। এখনো উঠানে শীতের তমিস্রা, অপরাহ্নে তোমার স্পর্শে- গোধূলির বিমর্ষ আলোয় পড়ে আছি কখন হারাবো রাত চাপচাপ অন্ধকার তার প্রতীক্ষায় । পরিশ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি বাতাসের হিম সম্ভাষণে। মনে পড়ে কত রাত জেগে,  ঘুমচোখে প্রিয় শব্দের আশায় চোখে আশার আলো জ্বালিয়ে  জোসনাময় পথে অপার বাৎসল্যে উঠোনে আজ পৌষের চাঁদ ওঠেনি বারান্দায় আশ্চর্য গহিন কণ্ঠে কে যেন বড় আদরে রাত্রির দরজা খুলে প্রভাত নিয়ে এলো বুকের নিবিড় আশ্রয়ে।

আমি বললাম বাঃ

আমি বললাম বাঃ দেবপ্রসাদ জানা প্রতিদিনের মতো আজও  বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি,  দূর থেকে একটা সুগন্ধি  আতরের গন্ধ বাতাস বয়ে আনছে। নাকের আর চোখের ভারি মিল এক পলকে চোখের মনি ঘুরে গেল আতরের গন্ধের পথ ধরে। হলুদ শাড়ি লাল ব্লাউজের ভেতরে বেশ আঁটোসাঁটো করে বাঁধা, এক অপরূপ সুন্দরী - চোখ পড়তেই চোখে চোখে আলাপ সুন্দর ঠোঁটের ফাঁক বেয়ে ধেয়ে এলো মৃদু হাসির হালকা বাতাস। চোখে চোখ মিলিয়ে  কি যে কথা হলো বুঝিনি। অফিসের বাস এখনো আসেনি  সেদিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ করে একটা চড় গালের ওপর এসে আর্তনাদ করে উঠলো। যে চোখ প্রথমে দেখেছিল সে তার দরজা বন্ধ করে দিলো। যে নাকের মন্ত্রণায় চোখের এই কীর্তি, সে তার কাজ থেকে ক্ষণিকের ছুটি নিল। আমি বললাম বাঃ !

মায়ের ছেলে

মায়ের ছেলে দেবপ্রসাদ জানা ভোর না হতে মায়ের ডাক। মাথায় ঢোকে পড়ার ঝাঁক। হাঁক দিয়ে যে, বলছে মায়। ঘুমোবি কত?  বেলা যায়। সকাল হতেই সোনার ছেলে। বইয়ের পাতায় হেসেখেলে। পরীক্ষা তোর কেমন ছেলে। ঘুমোস কেন? পড়া ফেলে। অনেক হলো অঙ্ক কষা। পরীক্ষা শেষে ফের বসা। মোবাইলের এমন দশা। বই নয় যে ফোনের নেশা। পরীক্ষা শেষ আছি ঘরে। ছেলেরা সব ফোনটা ধরে। তবুও মায়ের শাসন চলে। একই ফোনে, কি আর চলে। একটা দিন কোথায় যেন। মায়ের দেখা পাইনি যেন। বেরিয়ে দেখি, বাড়ির দিকে। অবাক চোখে, ছাদের দিকে। মায়ের মতো পাবো কাকে? স্বপ্ন শুধুই, মায়ের চোখে। মা যে আমার চোখের মনি। মায়ের স্বপ্নে আমি ঋণী।