Posts

Showing posts from April, 2023

মৃত্যু যজ্ঞ

মৃত্যু যজ্ঞ দেবপ্রসাদ জানা তবে যজ্ঞ হোক! মৃত্যু যজ্ঞ। ওহে অভিমন্যু চেয়ে দেখো  সপ্তরথী মেঘেরা আজো তোমাকে ঘিরে রাখে। চেয়ে থাকে তোমার দিকে মৃত্যুর দূতের মতো। একটা সর্বগ্রাসী ক্ষুধা যা মৃত্যুকেও খায়। মৃত্যুর দেহরস থেকে পুষ্টি শুষে নেয়, বাঁচার নব মন্ত্র গুলো মনস্থ করে নেয় সর্বদা। কুরুক্ষেত্রে একা অভিমন্যু সপ্তরথে সপ্তরথীর  সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটিয়ে ছিলে বটে। জীবনের পঞ্চরস থেকে প্রাণ শুষে নিয়ে প্রাণপণ মৃত্যুকে মহিমান্বিত করে—একাবীর। হে অভিমন্যু ফিরে দেখো লক্ষ লক্ষ অভিমন্যু- আজ কালো মেঘের অন্তঃস্থলে। কস্মিন কালেও মৃত্যু  তোমাকে স্পর্শ করবে না। আসলে জীবন মৃত্যু দুটোই এক সরলরেখায় চলে। তবে ক্ষুধার যজ্ঞে আহুতি হয়ে যায় মৃত্যু।  তবে যজ্ঞ হোক! আহুতি হোক।  পাঞ্চ ভৌতিক দেহটার। বিনাশ হোক  মৃত্যুভয়। ঠিক তোমার মতো কুরুক্ষেত্রে।

নজরুলের প্রমীলা ।

নজরুলের প্রমীলা । . কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যের পিছনে এক অনন্য অনুপ্রেরণাদায়ী নজরুলের  স্ত্রী প্রমীলা দেবী।  নজরুল যদি কোন নারীকে সবচেয়ে বেশী ভালোবেসে থাকেন তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রমীলা দেবীকে।  . প্রমীলা দেবীর আসল নাম ছিলো আশালতা সেনগুপ্ত। ডাকনাম দোলনা। তবে আদর করে অনেকে ডাকতেন দুলি নামে।  . প্রমীলা দেবী ছিলেন তাঁর বাবার  দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান। বাবাকে হারিয়েছিলেন শৈশবেই। কাকার সংসারে বেড়ে উঠা তাঁর।  কুমিল্লায় যখন রাজনৈতিক মিছিল বেরিয়েছে, তখন কিশোরী দুলি তাতেও অংশ নিয়েছেন বলে জানা যায়। সেই সময় এক চৈত্র মাসের শেষে কান্দিরপাড়ের সেই বাড়িতেই এসেছিলেন নজরুল।  মাত্র কদিনের জন্য এসেছিলেন নজরুল কিন্তু সেই কদিন বাড়ির হাওয়ায় ঝড় তুলে তিনি আবার ঝড়ের গতিতেই চলে গেলেন দৌলতপুর নামে এক গ্রামে। সেখান থেকে দেড় মাস পরেই খবর এল, নুরুদার বিয়ে।  বাড়ির অন্যদের সঙ্গে প্রমীলা ও গিয়েছিলেন।  কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সেই রাতেই বিয়েটা হতে হতে ভেঙে গেল। তার পরই নুরুদা আর প্রমীলার চাচাতো ভাই বীরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত আষাঢ়ের সেই জোছনারাতে কান্দিরপাড়ে চলে যান। পরে...

মহাকাব্য রহস্য

মহাকাব্য ‘মহাভারত’  অনন্ত রহস্যের খনি। কাহিনি-বিন্যাসের জটিলতায় যেমন ততোধিক জটিল চরিত্রচিত্রণে, বেদব্যাস রচিত এই মহাকাব্য যুগে যুগে মানুষকে বিস্মিত করেছে। ‘মহাভারত’-এর বিবিধ বিস্ময়ের মধ্যে অন্যতম হল এই কাব্যে বর্ণিত বেশ কিছু চরিত্রের জন্মবৃত্তান্ত। বার বার দেখা গিয়েছে যে, ‘মহাভারত’-এর অধিকাংশ কুশীলবের জন্মই তথাকথিত স্বাভাবিক উপায়ে হয়নি। এখানে তেমনই কিছু চরিত্রের জন্ম বৃত্তান্ত উপস্থাপন করা হল। ‘মহাভারত’-এর সব থেকে জটিল এবং রহস্যময় চরিত্র সম্ভবত তার রচয়িতা ব্যাসদেব। তিনি নিজে এই মহাকাব্য লিখছেন, আবার তিনিই এই কাব্যের অন্যতম প্রধান চরিত্র। তিনি না থাকলে এই কাব্য যেমন লিখিত হয় না, তেমনই এই কাব্যের কাহিনির মূল চরিত্রদের জন্মের পিছনে সক্রিয় ছিলেন তিনিই। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের নিজের জন্মকাহিনিও কম রোমাঞ্চকর নয়। ব্যাসদেবের পিতা পরাশর মুনি এবং মাতা ধীবরকন্যা সত্যবতী। পরাশর তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে যমুনা নদী পার হওয়ার উদ্দেশে নৌকায় ওঠেন। সেই নৌকা চালাচ্ছিলেন সত্যবতী। অতীব রূপবতী সত্যবতীকে দেখে পরাশর কামার্ত হলেন এবং ধীবরকন্যাকে তাঁর কাম নিবৃত্তির জন্য অনুরোধ করলেন। সত্যবতী জানালেন, তিনি পরাশরের প...

শৈ

শিল্পকলা বা আর্টের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সহজাত। মানবমনের সূক্ষ্ম সুন্দর অনুভূতিকে নাড়া দিতে পারার অদ্ভুত সক্ষমতাই শিল্পের অনন্য শক্তি যাতে প্রভাবিত হয় বলেই কেউ নিজে সরাসরি নতুন শিল্প সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ হয়, আবার কেউ সৃষ্ট শিল্পের সৌন্দর্য একান্ত নিজের মত করে অনুধাবন করার মাঝেই অপার আনন্দ খুঁজে পায়। আমি মূলত এই দ্বিতীয়গোত্রের মানুষ- নিজের একাডেমিক ও প্রফেশনাল জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও সবসময় শখ ছিল আলাদাভাবে সময় করে পছন্দের কিছু শিল্পকর্মকে একান্ত নিজের মত করে উপভোগ করার। ছোটবেলায় স্ট্যাম্প, ভিউকার্ড, বিদেশি কয়েন কেনা বা সংগ্রহের পাশাপাশি গল্পের বই, কমিকস, ম্যাগাজিন কিনে বা সংগ্রহ করে পড়ার মত নানা ধরনের শখ ছিল। কিছু কিছু শখ এখন আর আগের মত নেই বা থাকলেও আগের মাত্রায় নেই। একসময় মনভরে টেবিল টেনিস, ক্রিকেট খেলেছি-টেবিল টেনিসে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডও ছিল কিন্তু একাডেমিক বা প্রফেশনাল কারণে খেলাধুলার সে শখ অনেকদিন হলো মেটাতে পারছিনা। গল্পের বই পড়ার ধরনে একটু পরিবর্তন এলেও অন্যতম প্রিয় শখ হিসেবে সেটা এখনো টিকে আছে। তবে শিল্পকলার যে শাখাটিকে সেই স্কুল জীবন হতে আজো পর্যন্ত এক অনন্য ভালোবাসায় দেহ-মন-সত্ত...

শৈশব

কতই না মজাদার, স্মৃতিময় কেটেছে আমাদের শৈশবকাল। কাবাডি, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, নৌকাবাইচ, বদন, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদিসহ কত রকম খেলা নানা নামে পরিচিত বিভিন্ন গ্রামে, অঞ্চলে। এছাড়াও সময় কাটানোর মতো কত্তো মজাদার মাধ্যম ছিল! দাদা-দাদির কাছে রাতের বেলা বসে পরিবারের সবাই দেও-পরীদের গল্প শুনতাম। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুমার ঝুলি, আলিফ লায়লা তো ছিলই। এসব বিনোদন শিশুদের দৈহিক, মানসিক বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখত। সবচেয়ে বড় কথা হলো—এসব সুস্থ বিনোদন পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তুলত, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করত নিবিড়ভাবে। দুঃখের বিষয় হলো, এসব বিনোদনের স্থলে আজকের দিনে জায়গা করে নিয়েছে ভিডিও গেম ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অপরিমিত আসক্তি, যা আমাদের তরুণসমাজ ও শিশুদের দেহ-মনের ওপর হুমকি। সারা বিশ্ব জুড়েই এসব মাধ্যমের নানা ক্ষতিকারক দিক নিয়ে গবেষণা চলছে। কতিপয় গেম অতিমাত্রায় খেললে মস্তিষ্কে ক্ষতিকর হরমোন ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসব ভিডিও গেম, ভিনদেশি কার্টুন ছবি আমাদের বাচ্চাদের নিজ ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আরো একটি কারণ পরিবেশ ও পর্যাপ্ত উপকরণের অভাব। অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের শিশুদের শৈশব থ...

শৈশবের একাল সেকাল

শৈশবের একাল সেকাল দেবপ্রসাদ জানা শৈশবের একাল সেকাল লিখতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ে আমাদের সব থেকে প্রিয় টিভিও মোবাইলের কথা। আমরা যারা ৮০ এর দিকে জন্মেছি এবং যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা গ্রামের গাছপালায় সমৃদ্ধ সুন্দর দৃশ্য দেখেছি আবার শহরের সবচেয়ে অত্যাধুনিক দৃশ্যও দেখেছি। এখন তোমরা ঘরে বসে স্মার্ট টেলিভিশন, স্মার্ট ফোনে শত শত চ্যানেল ঘুরিয়ে  মুহূর্তেই দেশ বিদেশের খবর পাচ্ছ। অথচ তখনকার সময়ে শুধু রেডিও, যদিও সাদাকালো টিভিও ছিল একটু ধনী পরিবারে।  বাড়ির চালে বা লম্বা বাঁশের ওপরে লাগান  থাকত এন্টেনা সেটা ঘুরিয়ে চ্যানেল ধরা হত।  সে হাস্যকর মুহূর্ত ছিল, প্রতি রবিবার দুপুরে বাংলা ছবি, আলিফ লায়লা কিংবা বড় কোন অনুষ্ঠান থাকলে সেই সাদাকালো টিভি বাড়ির উঠানে বসানো হত। আর ঐ বাড়ির উঠানে পড়শির নারী পুরুষ সকলে উঠানে বসে টিভি দেখত। মাঝে মাঝে টিভির ছবি হারিয়ে গেলে আবার সেই এন্টেনা ঘুরিয়ে ছবি আনার চেষ্টা করা হতো। সাদাকালো টিভির মধ্যে তখন শুয়োপোকার মতো কি সব ঘুরতো।  তোমরা যে এখন কোথাও গেলে হরদম সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করো, বিয়েতে  ভিডিও করো আরও কত কি।  তখনকার সময়ে কি হত...

অর্জুন হনুমান

ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির শিবিরে আসিয়া। গোবিন্দে কহেন তিনি, করিয়া বিনয়। করিছেন পিতামহ, গুনিয়া গুনিয়া। সৈন্যের নিধন করে, আনিছে প্রলয়। অর্জুন বলেন শুনো, ভ্রাতা নৃপবর। অকারণ চিন্তা কেন, করহ রাজন। তীর্থ পর্যটনে আমি, ভ্রমি দণ্ডধর। দ্বারকাভবনে দেখি সুগন্ধে কানন। সুগন্ধি কনকপদ্ম, ছিল দ্বারকায়। সত্রাজিত নন্দিনীকে দেন দামোদর। দেখিয়া রুক্মিনী মনে ক্রোধ দরশায়। ত্যজিবে শরীর তার, বদ্ধ পরিকর। এ সব বৃত্তান্ত জানি, দেব নারায়ণ। পুষ্পহেতু মোরে আজ্ঞা দিলেন তখন। কহিলাম সেই পুষ্প আছে কোনখানে। যদি কহ দ্রুত যাবো, আনিবারে স্বামী। হরি কহিলেন আছে, কদলীর বনে। সেইক্ষণে ধনুর্বাণ, লইলাম আমি। গেলাম কদলীবনে, অতি শীঘ্রগামী। ভ্রমিতে ভ্রমিতে দেখি,পুষ্প মনোহর। রক্ষক রয়েছে চার,  মর্কট বানর। পুষ্প তুলিবারে আমি যাইনু যখন। দেখিয়া তাহারা মোরে করিল বারণ।। না মানিয়া পুষ্প আমি তুলি নিজ মনে। দেখিয়া ছুটিয়া তারা গেল চারিজনে।। গিয়া হনুমাণে সব কহে সমাচার। শ্রুতমাত্র আসে তথা পবন কুমার।। আমারে দেখিয়া বলে হয়ে ক্রোধ মন। অন্যায়ী কিরাত চোর শুন রে বচন।। যাইবে শমন পুরী ইচ্ছা হৈল তোর। সে কারণে পুষ্প তোল উদ্যানেতে মোর।। ইন্দ্র চন্দ্র দেবগণ নাহি ...