Posts

Showing posts from January, 2024

নীরবে কাঁদি আমি

নীরবে কাঁদি আমি দেবপ্রসাদ জানা ৩০.১.২০২৪ নীরবে কাঁদি এখনো আরো একটাদিন বাকি তোমার যাওয়ার দিনখানি। তুমি রাত নির্ভর নিদ্রায়,  তোমার ডান হাতের চেটোয় হাত দিয়ে হিম পরশ, বাইরে সেদিন উষ্ণতা নয়, অশান্ত অশ্বের লাগাম টেনে - দাঁড়িয়ে গেছো, সময়ের ফুটপাতে। নিঃশব্দে হারিয়ে গেছো, আবেগের প্রফুল্লতায় আদি-অন্তের  দুর্বোধ্য কুয়াশার চাদর বিছিয়ে রেখেছো রাত ভোর, না ভোর হয়নি সেদিন- সূর্যও ওঠেনি সকালে তবু সকাল হয়েছিল,  তোমার শরীরটাকে নিয়ে যাওয়ার-  তাড়া দিলো সব, আমি ধরেছিলাম তোমার হাতটা ডান হাতটা, না আমি না তুমিই ধরেছিলে শক্ত করে হৃদয়ের প্রদীপখানা নিভিয়ে দিয়ে অশান্ত অবাধ্য শরীরটাকে দূর করে দিয়ে মেঘলা আকাশে অন্ধকার রাত্রির কালো অন্ধকারে- দ্রুত চলে গেলে, ভালো থাকিস্ বলে। কিন্তু তুমি দেখতে পাওয়া না পথ, এই অন্ধকার পথে কি করে গেলে? নিরুপায় আমি, তোমার হাতটা ধরে আছি বটে, হাঁটতে পারিনি তোমার সাথে। নক্ষত্রে হালকা আলোয় গুছিয়ে হেঁটে গেলে নিশিথ অন্ধকারে গা ছোঁয়া আলো মেখে  হাজার নক্ষত্রকে সাক্ষী করে। দুর্বোধ্য উত্তরে বোবা কান্নার, সুর বেজে উঠেছিল। অন্ধকারে লালিত আলোর ভ্রূণ  তাই নীড় হারা ...

মা

মা দেবপ্রসাদ জানা সন্ধ্যা নামলো ধীরে। অন্ধকার গ্রাস করছে গোটা পৃথিবীকে। আর সময় নেই, নদীর কাছে, স্পর্শ করলাম হাতে, হিমশীতল  বুকের কাছে হাত দুটো জড়ো করা। ফুরিয়ে যাওয়া আলোর দিকে চেয়ে,  এক পলকে। সামনে যেন স্রোতস্বিনী তটিনী,  যেন কিশোরীর চঞ্চলতা। স্টিলের থালায় একমুঠো ভাত। একটু ডাল মেখে - আলু সেদ্ধভাত মুখে তুলে দিতে চাই। আদরে কোল ঘেসে আসে মা, যেন ছোট্ট শিশুটি মায়ের আদর পেতে চাইছে। পিছনে ঘনিয়ে আসা অন্ধকার, দিন যাপনের ক্লান্তি তার সর্বাঙ্গে। ওই বুঝি নদী ডাক দিয়ে বলে,  এসো হাত ধরো,  ওই অমানিশার অন্ধকারে, হারিয়ে যাই। ক্ষেত পেরিয়ে, গ্রামের পথ ছাড়িয়ে, নীলাআকাশ আর জল  যেখানে গলাগলি করে, সেই মোহনায়। নীলঅন্ধকার ডাকে, ঘুমের দেশে। সময় হলো শান্তির দেশে যাবার। ঐ দেখো আকাশ আর মাটি কালো চাদরে জড়িয়ে নিয়েছে শরীর, সময় হলো নিজেকে আড়াল করার। ছুটে চলা জীবনের স্রোত, স্তব্ধ মোহানায়। আলো এসে যদি হাত ধরে স্বর্গরোহণের তরে। মহাপ্রস্থানের পথে নিয়ে যায়- আকাশের ঐ স্থির নক্ষত্রের আলো এসে তাঁর হাত স্পর্শ করলো, আলো আর আঁধারের সঙ্গমে- দূরে বহুদূরে যেতে দেখেছি মায়ের- দেহহীন আত্মা প...

মলাটের বুকে

মলাটের বুকে দেবপ্রসাদ জানা বই-এর সাথে বই মেলায় ঘুরেছি দৈনিক। সাথে ছিল কলম সাথি, কলম সৈনিক। নিভৃতে কথা বলি, কলমের সাথে, কথা যায় উড়ে উড়ে, পুষ্পক রথে। কত কথা  আকথা কেন কয়ে যাই? সময়ের সাথে কত, বন্ধু খুঁজে পাই। মিষ্টি কথা তেতো কথা, কত যে আলাপ। স্বল্পভাষী, মিতভাষী লোকের প্রলাপ। আরো কত খাওয়া দাওয়া চা কফি ফাউ। পেট ভরে দিয়েছে গন্ধে, বিরিয়ানী চাউ। কলমটা কথা কয়, কালির আঁচড়ে। কথার বাঁধুনি শব্দ, শুধু ঝরে পড়ে। কলমের কথা বোঝে কলমের সাথি। আপনজন হয়ে ওঠে, আনন্দে মাতি। কত বই কত স্টল কত শব্দে গাঁথা। মলাটের বুকে চাপা, কবিদের ব্যথা।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত পার্কস্ট্রিট সিমেট্রি। শিয়ালদহ স্টেশনের দিক দিয়ে গেলে লোয়ার সার্কুলার রোড ধরে মৌলালি, এন্টালি মোড় পেরিয়ে জোড়া গির্জা, মল্লিকবাজার হয়ে পার্কস্ট্রিট মোড়ের আগে ঐ রাস্তার পরেই সিমেট্রির গেট। বাঁ দিকে তাকালেই তাঁর আবক্ষ মূর্তি। নীচে সেই বিখ্যাত প্রয়াণলেখ, “দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে, তিষ্ঠ ক্ষণকাল এ সমাধিস্থলে…..”।  তিনি মহাকবি মাইকেল মধু্সূদন দত্ত। জায়গাটি আপামর বাঙালির তীর্থস্বরূপ, অথচ বাংলা ভাষা সাহিত্যের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় তথা বাঙালি অস্মিতা বিষয়ে সচেতনতার অভাবে অল্পসংখ্যক কিছু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রস্থল হিসেবে রয়ে গেছে।  ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন মাইকেল মধুসূদন দত্তের (Michael Madhusudan Dutt) মৃত্যুর একদিন পর, কবির চিরসঙ্গী, তিনদিন আগে মৃতা স্ত্রী হেনরিয়েটার সমাধির পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় বন্ধু গৌরদাস বসাকের চেষ্টায়। কবির স্বজাতি, বাঙালিয়ানা ইত্যাদি বিতর্কে এংলিকান চার্চের পাদ্রিরা শেষকৃত্যে আসতে চাইছিলেন না। তাঁর শেষ কবিতা, প্রয়াণলেখের আকুতিতে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তাঁর স্বদেশ, মা বাবা, এমনকি স্বধর্মের প্রতি অনুরাগ! লিখেছিলেন— “জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি...

রক্ত দাও

রক্ত দাও দেবপ্রসাদ জানা হে দুরন্ত ঘোড়া ছুটে চলো, ছুটে চলো- জনপ্লাবনে গ্রাম থেকে নগরে- অধিকার বুঝে নিতে। উত্তপ্ত হাতের চাপে গুঁড়িয়ে দাও বন্দুকের নল। "আমাকে রক্ত দাও,আমি স্বাধীনতা দেবো" যুগ চেতনার সেই পরম পাওয়া- মরণে মেলেনি ছুটি। কেঁপে কেঁপে ওঠেছে শত্রু। আওয়াজ তুলেছো শহীদ সাথী স্পর্শে। ওরা নির্ভীক ওরা দুর্দম, ভয় ভীতি টেনে ছিঁড়ে, মুখোশ খুলেছ দুর্নীতির। দৃপ্ত স্লোগানে রাজপথ শিক্ষার অধিকার - চেয়েছো তুমি। শিকল ভাঙার মন্ত্র কণ্ঠে গেয়েছো স্বাধীনতার গান। চেতনায় শান দিয়েছ বিপ্লবের প্রস্তরে।  ঐ রক্ত নিশানের প্রহরীরা জাগছে। তোমার হাতের স্পর্শে জেগেছে দেশ। ইস্পাতে বর্ম ঢাকা তোমার বুক। অগ্নিগর্ভ বীজ ছিল সঞ্চিত। তা জ্বলে রক্তে জ্বলে কর্মে- বিদ্যুৎ রোপণ করেছিলে অলক্ষ্যে  ক্ষয়িষ্ণু দেহে প্রতি কোষে কোষে। তুমি যে শাপভ্রষ্ট দেবতাত্মা খণ্ডিত জ্যোতিষ্ক।

কি সুখে

আগুনে আগুন জ্বেলে, পুড়িতেছি নিজে। কোথায় রাখিব আজ, এ দুখের ভার। কথা নাহি কহে প্রিয়া, সে যে আছে কাজে। কারে দিবো আজ মোর, অশ্রু উপহার।  এ অজানিত সুখ, এ দুঃখ অজানা,-    বাধাহীন এ উৎসবে মানে না যে মানা।    সকল সুখের রাশি পুষ্প হ’য়ে ফুটে,    সব দুঃখ আজ মোর গীত হ’য়ে উঠে!    বিচিত্র এ গীত লোক, পুষ্পের কানন!-    কি জানি কেমন করে কাঁপিছে এমন!-    কোথায় রাখিব বল অন্তরের ভার,    তোমার উৎসবে আজি, হে সিন্ধু আমার!

জগন্নাথ

হৃদয়ের অধীশ্বর দেব জগন্নাথ।   হৃদয় আসনে নিত্য বিরাজিত দেব। আর্ত তাপিত অর্থার্থী অনাথের নাথ। নিরাশ্রয় সকলের, একমাত্র  আশ্রয়, একমাত্র আশা-ভরসাস্থল, একমাত্র আপনজন। সকলের তরে তাঁর কৃপাদৃষ্টি, তাঁর করুণাশিস্ স্বতঃ বর্ষিত। ভক্ত ও শরণাগতের কল্যাণে তাঁর অপার মহিমার কথা বলে শেষ করা যায় না। আর তাই তাঁরই প্রসাদে তাঁর নিত্যলীলাস্থল শ্রীক্ষেত্র বা শ্রীশ্রীজগন্নাথ ক্ষেত্র বা পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের মহিমাও অপার ও অনন্ত। অনন্ত মহিমাময় শ্রীক্ষেত্রে জীবকল্যাণে শ্রীশ্রীজগন্নাথের নিত্যলীলার শুরু যে কবে থেকে - তা বলা বড়ই কঠিন। শাস্ত্রের বিবরণ অনুযায়ী তা আজ থেকে অনেক অনেক দিন আগেকার কথা। তখন থেকেই জীবপ্রেমে বিগলিত ভগবান শ্রীহরি সেখানে নিত্য জীবে দয়া করে চলেছেন- জীবে দয়াই তাঁর ধর্ম, জীবে দয়াই তাঁর কর্ম - এই মহান ব্রত নিয়ে। শ্রীক্ষেত্রে শ্রীভগবানের দীর্ঘ অবস্থানকে কেন্দ্র করে আবিষ্কৃত অনাবিষ্কৃত অবাঞ্ছিত ঘটনার ঘনঘটাও বড় কম নয়। সেই ঘনঘটায় অবশ্যই আছে বহু মতবাদের প্লাবন; আছে বিদেশী, বিধর্মীর বিদ্বেষবহ্নি। সে-সব নিয়ে আলোচনা এখানে নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু অবশ্যই বলা প্রয়োজন- যাতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে ...

বন্ধুকের নল

বন্ধুকের নল দেবপ্রসাদ জানা কার অশ্রুজলে, ঘামে, রক্তে  ভিজে পিচ্ছিল হয়ে গেল পথ- তুমি মিথ্যার এভারেস্ট এ বসে আছো দলাদলি হানাহানি, বোমার বিস্ফোরণে তোমার ভাষা হয়ে গেছে বিকৃত। খনির খনিজগুলো এখনো পড়ে আছে,  বাতাসে তার বিষ উড়ছে। মাঠের গভীর থেকে কান্না উঠে আসে। কারখানায় কারখানায় লড়াই শ্রমিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকের। চাষীর বিরুদ্ধে চাষী। এক বৃহৎ একান্নবর্তি পরিবার,  চিড় খেয়ে চৌচির...কার অপরাধে? কোন অদৃশ্য শত্রু এই বিষ ফেনিয়ে তুলছে? ওহে শুভ্রবসনা কার নামে শপথ নেবে? ইতিহাস হেরে গেছে, মহাভারত হেরে গেছে। যে কূটনৈতিক হাসি,  তোমার মুখমণ্ডলে লুকিয়ে আছে, সব চুরমার ক'রে দাও চিরদিনের মতো। পাগলাগারদ ঘেঁষা অপরিণত মস্তিষ্কের বুলিতে -বিপ্লবের পথ ভগ্নস্তূপে ভ'রে গেছে অস্ত্র নাও ঐক্যের,  অস্ত্র নাও আধুনিকতম বিপ্লবের। বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দাও,  তোমার আসল শত্রুর দিকে- নিত্যনতুন রূপকথার গুঞ্জনে কান পাতা দায়, গৃহস্থের ঘর থেকে মৃতদেহ চলে গেল। নীল জোছনায় মৃত্যুর স্বপ্ন বাসা বাঁধে মনে। এই বাঘবন্দী খেলা আর কতদিন? এই যন্ত্রণা এই শব্দহীন সমুদ্র তরঙ্গে আত্মহননের চিন্তা, এ-পথ তোমার নয়।

ওগো সুন্দরী

ওগো সুন্দরী  হে প্রাণবন্ধু, প্রাণপ্রিয় সাথি মোর তুমি কথা দিয়েছিলে ফিরে আসবে আবার তোমার শুভ্র বসনের সাজ কোমরে সোনালী কোমরবন্ধন নেশা লেগে যায় তোমার রূপের 

পঞ্চাশ বছর পরে

পঞ্চাশ বছর পরে দেবপ্রসাদ জানা হয়তো পঞ্চাশ বছর পরে  আমি আর থাকবো না হয়তো বললাম এই জন্য বাঁচার ইচ্ছা আছে অনেক কিন্তু প্রকৃতি সাথ দেবে না দাঁত পড়ে যাচ্ছে, চুল পেকে যাচ্ছে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে জানান দিচ্ছে আর বেশিদিন নয়-এ ভবের খেলা সাঙ্গ করো  হে লোভী মানব তোমার আয়ু মাত্র ষাট বছর পঞ্চাশ পার করেই গুণতে থাকি দিন,  আর কতদিন আর কতদিন। তবু লোভ হয় এই সুন্দর পৃথিবীর বুকে আরো যদি কটাদিন থেকে যেতে পারতাম। তাই পঞ্চাশ বছর পরে আমি থাকব না এ পৃথিবীতে জলও থাকবে না নয়তো ভরে যাবে জলে জলে যে জল পান করা যাবে না হয়তো মানুষ আরো উন্নতির পথে এগোবে বুলেট ট্রেনে চড়বে, রোবট সব কাজ করে দেবে হয়তো কোনো বিভেদ থাকবে না। জাতধর্ম উচু নিচু,  এ দল ও দল, এ রঙ ও রঙ কিছুই থাকবে না একজন আর একজনের সামনাসামনি দেখাও হয়তো হবে না, বৃক্ষ থাকবে না শুধু যন্ত্র, জ্বলবে কৃত্রিম সূর্য,  হয়তো চাঁদ হবে পৃথিবী,  চন্দ্রযান যাবে দিনে চারবার চাঁদে পৃথিবীতে দৈনিক যাতায়াত। সব নাকে মাস্ক পরে ঘুরবে,  অক্সিজেন সিলিণ্ডার পিঠে করে, আকাশে মেঘ থাকবে না, সূর্যকে ঘিরে রাখবে মোটা তিরপলে ওখানে তৈরি হবে শক্তি, জীবনের শক্তি। বিক...

চাঁদ এনেছ

চাঁদ এনেছ দেবপ্রসাদ জানা এবেলা চাঁদ এনেছো, নিশীথে নীরবে, গোবিষ্ঠালিপ্ত উঠানে, যত্নে রেখে দিয়ো। প্রদীপ জ্বলছে ঘরে, সেখানে কি হবে? আঁধার এসেছে দ্বারে, সেথা রেখে দিয়ো। প্রদীপ জ্বলছে আজ, সন্ধ্যাবেলা হতে। যদি নিভে যায় রাতে, চাঁদ তুলে নিয়ো। প্রদীপের পাশে রেখো, ভালো হবে তাতে। কুলুঙ্গীর পরে তুমি, স্থান করে দিয়ো। কি চাঁদ এনেছ তুমি, দ্বিতীয়ার নাকি? পূর্ণিমার চাঁদ ভারি, চকমকে আলো। দ্বিতীয়ার হলে তবে, চাপা দিয়ে রাখি। সাঁঝের বেলায় পেলে, হতো বড় ভালো। আহা রে কি কষ্টে ছিলে চাঁদ,মেঘে ঢাকা। ঝড়ে জলে আমফানে, তবু আলো দিলে। বর্ষা রাতে শীতে ছিলে, ঘুরে গেল চাকা। গরীবের ঘরে তুমি, কত ভালো ছিলে? ভেঙে ভেঙে নিয়ে গেল, ধনীদের ঘরে। ইচ্ছে মতো দিনে রাতে, ঘরে করে আলো। পরাধীন হলে কেন? ধনীদের ডরে। গোবিষ্ঠালিপ্ত উঠান, অন্ধ হয়ে গেল।