7



অসলার সেই পরিস্থিতিটা বদলে দিলেন। তিনি ফুলের ব্যবস্থা করার থেকে শুরু করে হাসপাতালের দেওয়ালের রং হালকা আভাযুক্ত রঙে পরিবর্তিত করলেন। এবার তিনি রোগীদের দিকে ফিরলেন। তিনি তাদের খুব কম ওষুধ  দিতেন। কিন্তু প্রবল ভাবে আশাবাদী আশ্বাসের কথা বলতেন ।  যেটাতে মানসিক চাপ মুক্ত করত।এই সাইকোসোমাটিক চিকিৎসার ( এই সংজ্ঞা বর্তমানে বলা   হয়, সেসময়ে বই সংজ্ঞা কেউ কল্পনা করতে পারেনি।) ওষুধ দিতেন।
তিনি একবার লিখেছিলেন লর্ডস বয়ং স্টে অ্যানে ডি বিউ প্রেতে, এই অলৌকিক পরিস্থিতি সত্যিই নির্ণায়ক ভাবে বাস্তবে পরিণত হয়। আমরা চিকিৎসকেরা একই ক্ষমতা বা শক্তি প্রতিদিন ব্যবহার করতাম। তা মৃতদের জাগিয়ে তুলতে পারত না, তা কোন নতুন চক্ষু বসিয়ে দিত না, বা একটা ভাঙ্গা হাড় কে জুড়ে দিত না। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠার বিশ্বাস ও সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে তা পরিস্থিতি বিশেষে গুরুত্ব পূর্ণ হয়ে উঠত।
মোস্ট্রেলের এক ডাক্তার তাঁর স্মৃতির কারণে বলেছিলেন, ম্যাকগিল এর চিরস্থায়ী দুরারোগ্য রোগীদের শয্যা খালি হতে শুরু করে, দুর্ঘটনার পরিবর্তে সুস্থ হয়। নতুন রোগীরাও অল্প সময়ে সুস্থ হয়। এই ধরণের শক্তিশালী চিকিৎসার নিদর্শন, এর আগে পরিলক্ষিত হয়নি।
এই ধরণের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারে অসলারের খ্যাতি কানাডার বাইরের পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁকে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার প্রস্তাব দেয়। তিনি মনস্থির করতে না পেরে একটা মুদ্রা ছুঁড়ে ভাগ্য পরীক্ষা করেন, এবং সেটা হেড হয় পেনসিলভানিয়ার পক্ষে।
পেনসিলভানিয়ায় অসলারের ছাত্ররা ভেবে ঠিক করতে না, মাস্টারি উচ্চতার খেলোয়াড় মানসিকতার বিরল কেশ কিন্তু ঘন কুয়াশা গোছের। এবং নেকটাইযের ক্ষেত্রে দারুণ শৌখিন কানাডার মানুষটি কিভাবে দেখবে। তিনি বক্তৃতা করার মঞ্চে না ওঠে, সেটা সে সময় অন্য অধ্যাপকেরা করতেন। তিনি বাড়ি থেকে লিখে আনা বক্তৃতা করা পছন্দ করতেন না, এবং কোন রোগী না থাকলে বই দেখে অধ্যাপনা করতেও ভালোবাসতেন না। 
তিনি সহজ সরল ভাষায় বক্তৃতা দিতেন। তিনি এক ক্ষীন রোগা ব্যক্তিকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রক্তাল্পতা রোগের রোগীকে কেমন দেখতে হয়, অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগী কেমন দেখতে হয়, তা বোঝাতেন। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেলে কোথাও রোগীর বিছানার পাশে নিয়ে উদাহরণ সহ শিক্ষা দেওয়া হতো না।
ছাত্রদের কাছে রোগীকে নিয়ে আসার ব্যাপারে তৃপ্ত না হয়ে ছাত্রদের রোগীর কাছে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করতেন। এই প্রথম কোন হাসপাতালে ছাত্রদের বাড়ির লোককে, হাসপাতালের নার্স, এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক দের স্বাধীনভাবে হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হলো। রোগীদের রোগের বিবরণ পড়া রোগীকে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পেলো ছাত্ররা। ভুল হলে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে দ্বারা সংশোধন করার অভিজ্ঞতা লাভ করতে থাকে। অসলার যেমন ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন তাই হল। রোগীরা আরো ভালো এবং নিবিড় শুশ্রুষা ও সেবা পেতে লাগল। জনস হপকিন্স নামে এক রাজকুমার অছি পরিষদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্ব শ্রেষ্ঠ হাসপাতালে এবং মেডিকেলে পঠন পাঠন স্কুলের গৃহ নির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন। তখন সেখানে মেডিসিন বিভাগে এক শিক্ষকের সন্ধান করা হলে তারা উইলিয়াম অসলারকে নির্বাচন করেন। যদিও তিনি তার চল্লিশতম জন্মদিনে পদার্পণ করেননি।১৮৮৯ সালে যেদিন সেই হাসপাতালের দ্বারোদ্ঘটন হয় তখন থেকে জুবা চিকিৎসকরা সেখানে যুক্ত হতে থাকে। ডাঃ অসলার এর ছাত্রদের সারা মার্কিন দেশে তল্লাশি করা হয় চিকিৎসক হিসাবে। 
ডাঃ অসলার হাসপাতালের ওয়ার্ডে পরিদর্শন করতে আসতেন, নটার সময়, সেটাই হাসপাতালের সবথেকে বড় কর্ম যুদ্ধ হয়ে ওঠে। নার্সরা, হাউস স্টাফের, ও বহিরাগত ভিজিটের ডাক্তাররা তাঁর আসার জন্য  উদগ্রীব হয়ে উঠত। 

Comments

Popular posts from this blog

দুঃখটাকে এবার

মহাঋষি শুক্রাচার্য্য

রবীন্দ্রনাথের প্রতি সুকান্ত