Posts

Showing posts from May, 2023

ভুলে থাকা

ভুলে যাবো সবই ভুলে যাবো সময়ের সিড়ি ভাঙতে ভাঙতে সবই ভুলে যাবো। বাবার শূন্যতার পাশে এই স্তব্ধ থাকা । মায়ের ছিন্ন কাপড়ে মুখে লাকিয়ে স্তন পান করা। ভাই-এর জ্যোৎস্নাময় হাসি বোনের চন্দন মাখা হাতের গন্ধ । তোমার চোখের আগুনে পোড়া রাত্রি-দিন, স্বপ্ন, চির বন্ধনের সাতোহীন টান, সবই ভুলে যাবো, সব ভুলে যাবো। ফল ঝরার শব্দ মনে রাখে না গাছ । পথ চলার ছন্দ মনে রাখে না জীবন । সিড়ি ভাঙার গতিও মিলিয়ে যায়, ছন্দহীন শরীরে ছায়ে যায় মৃত্যুর নিঃশ্বাস, ক্ষয়— বুকের ভিতরে জন্ম নেওয়া নদীও স্রোতহীন, সবই ভুলে যাবো ভুলেই যাবো । আজ আছি, কাল থাকবো না, এতদিন ছিলাম সন্দেরের হাত ছাঁয়ে সন্দরের ঘরে, প্রেমে-অপ্রেমে, ভালোবাসায় সন্ধিতে ছিলাম, একদিন থাকবো না । করতলে চাঁদ রেখে নিবিড় ঘ ভুলে যাবো। পৃথিবীর আলো-বাতাস-অন্ধকার, তোমার ছন্দময় পদধূলি ভুলে যাবো । শব্দে ভুলবো না, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের হাতে গালি, যা তুমি এক জীবন ধরে শূন্যে থেকে নীরবে দিয়েছ । ৫২

নজরুল

সোমনাথ বসু * ১৯৩০ সাল। মে মাসের তারিখ বুধবারা প্রচণ্ড গরম। সকাল থেকেই গাছের পাতা স্তন। কলকাতার আকাশে- বাতাস সোমন যেন গুমোট হয়ে আছে। এন্টালির ৮/১ পালবাগান লেনের বাড়িতে আনচান করছেন কবি। বসন্ত রোগে আক্রান্ত ছেলে বুলবুলো শরীরটা বেশ খারাপ। ডাক্তার, কবিরাজ, বদিকোনও কিছুই বাদ রাখেননি তিনি। কিন্তু ক্রমশই মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে বহুলা আটকের বুলবুল। বিকেলের দিকে একরাম বললেন, "দমদমের কাছে এক সাধু থাকেন। বসন্তে আক্রান্ত রোগীদের তিনি করে তুলছেন। দেরি না করেই কবি সেখানে পাঠালেন মুখ সঙ্গী মইনুদ্দিন ও শাপিন সিংহকে। কাতর কণ্ঠে আবেদন তাঁর, যে করেই হোক একবার তাঁকে নিয়ে । ন এলেন, তবে তখন রাত অনেক হয়েছে। শান্তিদের ডাক শুনে দৌড়ে এলেনা করি। নরমালেই মইনুদ্দিনের কধি তোরা সাধু কি মরদেহে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে। একবার ন্যা, দু'বার নয়। বারবার একই কথা বলে চলেছেন কবি। বাকিরা বিহুল। সাধু আসার মিনিট দশেক আগেই বুলবুলের মৃত্যু হয়। পাতাবিকভাবেই এরপর ভেঙে পড়েন। নজরুল। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই, পুত্রশোক কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এর ঠিক মাস তিনেক পরে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় মুর্শিদাবাদের লালগোলা বিদ্যালয়ের হেডমাস...

মৃত্যুর প্রহরী

মৃত্যুর প্রহরী  দেবপ্রসাদ জানা ৩০,৪,২০২১ শ্মাশানে, কামাল গাছির মোড়ে,মহা শ্মশান। মৃতদেহ লাইন দিয়ে শুয়ে আছে, এক এক করে লাইন দিয়ে - আগুনের অপেক্ষায় - যারা ভেতরে, তারা চেঁচাচ্ছে। শ্মাশান প্রহরী ডোম - তাদের সাবধান করছে চিৎকার কোরো না ভগবান জেগে যাবেন। কে স্বর্গে যাবেন? কে নরকগামি হবেন, সব ঠিক করবেন তিনি - যিনি এখন ঘুমোচ্ছেন।  ব্রহ্মার এখন রাত্রি,তার ঘুমের সময়। এক কল্প শেষে উঠবেন,এক কল্প এক যুগ। সারাদিন পরিশ্রম করে,পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন,আপনাদের জন্য- গড়েছেন পশুপাখি, গাছগাছালি,  আগুণের বুকে পা রেখে যারা যাচ্ছেন। জ্বালা যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন, মনে রাখুন সময় অনেক বাকি। মরণ এগোচ্ছে,আগুন জ্বলছে ধিকি ধিকি। জীবনের অসীমতা ছুঁয়ে, পেন্সিলে লেখা হচ্ছে আত্মকথা। নীরবতা রক্ষা করুন, মরণে বিপুলতায় ভগবান ক্লান্ত। নিদ্রামগ্ন। 

জয়দ্রথ উপাখ্যান।

অর্জ্জুন বলেন কৃষ্ণ কহিলা বিধান।। কৃপা করি কহ জয়দ্রথ উপাখ্যান। ভূমে মুণ্ড ফেলিলে সে মরে সেইক্ষণে।। হেন বর কেবা দিল সিন্ধুর নন্দনে। শ্রীকৃষ্ণ বলেন শুন বীর ধনঞ্জয়।। জয়দ্রথ হয় সিন্ধুরাজের তনয়। বহুকাল জয়দ্রথ সেবিল শঙ্করে।। অনাহারে তপ করে অরণ্য ভিতরে। নানা উপহার দিয়া সেবিল মহেশ।। তৃষ্ট হয়ে বর তারে যাচেন বিশেষ। বর মাগ জয়দ্রথ যেই মনোনীত।। এত শুনি জয়দ্রথ হৈল আনন্দিত। জয়দ্রথ বলে যদি মোরে দিবা বর।। এক দিবেদন করি তোমার গোচর। মম শির কাটি যেই ফেলিবে ধরণী।। তার মুণ্ড খণ্ড খণ্ড হইবে তখনি। শঙ্কর বলেন এই বর লহ তুমি।। সে মরিবে তব মুণ্ড যে ফেলিবে ভূমি। স্থির প্রণমিয়া বীর আনন্দিত মন।। আপনার দেশে গেল সিন্ধুর নন্দন। সে কারণে ধনঞ্জয় তোমা কহিলাম।। তব রক্ষা হেতু এইরূপ করিলাম। ভূমে মুণ্ড ফেলি তার জনক মরিল।।

বাঙালি

অধম বাঙ্গালি হয়ে,  মর্কটের অবতার, বাঙালি নাম তার। রূপ গুণ রসে ভরা, বাঙালির মসকরা। ইংরেজি বাংলায় ফেঁদে, কবিতা লিখি কেঁদে কেঁদে। বাংলা ভাষায় অনাচার,  বাঙালির কোন পাপে? বিধাতার কোন শাপে? দশ দশটি অবতার, কেউ নয় আপনার। মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, বলোতো আছে কেহ? এরা সব জানোয়ার, এর বেশি বলব কি আর? নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম,বুদ্ধ, বলরাম। কল্কি এখনো আসেনি  মায়ের আঁচলে বাঁধা  পুত্রগণ  গর্ভে করিলে ধারণ ? বঙ্গদেশ ডুবাবারে, মেঘে কিম্বা পারাবারে, ছিল না কি জলরাশি ?  কে শোষিল  আপনা ধ্বংসিতে রাগে কতই শকতি লাে নাহি কি শকতি তত বাঙ্গালি শরীরে ? কেন আর জ্বলে আলো বঙ্গের মন্দিরে ?